অস্থির বাজার-মূল্য সহনশীল করতেই হবে
বাজারে সরকার নির্ধারিত দামে চিনি ও ভোজ্যতেল বিক্রি হবে, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক শেষে রোববার এমন আশ্বাস মিলেছে ব্যবসায়ীদের তরফে। চরম অস্থির বাজার নিয়ন্ত্রণে আনতে তা কতটা কার্যকর হবে তা নিয়ে নানা মহলে সংশয় যথেষ্ট এবং এর মূলে রয়েছে নিকট ও দূর অতীতের তিক্ত অভিজ্ঞতা।
সরকার ও ব্যবসায়ী মহল থেকেই বলা হচ্ছে, বাজারে তেল-চিনি-ডালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহে কোনো ঘাটতি নেই। রমজানের বর্ধিত চাহিদা সরবরাহের জন্যও বাজার প্রস্তুত। কিন্তু বাস্তবতা একেবারেই ভিন্ন। গত কয়েক দিনে বিশেষভাবে চিনি ও ভোজ্যতেলের পাইকারি ও খুচরা বাজারে এমন 'নাই নাই রব' শোনা যাচ্ছিল যে, বিপুলসংখ্যক মানুষের মনে শঙ্কা সৃষ্টি হয়, রমজান মাসের দিনগুলো ভালো কাটবে তো? পরিস্থিতি যে কতটা উদ্বেগজনক হয়ে পড়েছিল সেটা বোঝা যায় স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ অপরিহার্য হয়ে ওঠায়। তিনি সরাসরি ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দের কাছে প্রশ্ন রাখেন : 'আপনারা তো এক মাস আগেই কথা দিয়ে গেলেন, রমজানে পণ্য মূল্য বাড়াবেন না। হঠাৎ চিনির দাম বাড়িয়ে দিলেন কেন?' ব্যবসায়ীরা যতই ডিলার ও পরিবেশক পদ্ধতির মধ্যে দ্বিধাদ্বন্দ্ব, কয়েকটি পরিশোধন কারখানা বন্ধ থাকা এবং হরতালের অজুহাত দেখান না কেন, বাজারে অস্থিরতার মূলে রয়েছে একশ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ীর ফটকাবাজির মনোভাব। তারা নির্বিচারে ক্রেতাদের পকেট কেটেছেন এবং পরিস্থিতি সামাল দিতে শেষ পর্যন্ত সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে হস্তক্ষেপ করতে হয়েছে। জরুরি আইনের সময়কালের তিক্ত অভিজ্ঞতা স্মরণে রেখে বর্তমান সরকার স্বাভাবিক ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ডে তেমন করে সংশ্লিষ্ট হতে চায় না। বরং ব্যবসাবান্ধব ভাবমূর্তি বজায় রাখতেই তাদের আগ্রহ। তারা এটাও জানে, হুকুম জারি করে বাজার নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। যেসব পণ্যের চাহিদা আমদানির মাধ্যমে পূরণ করা হয়, তার মূল্য নির্ভর করে বিশ্ব বাজারের ওপর। সেখানে দাম বাড়লে ব্যবসায়ীরা চাইলেও দেশের বাজারে 'ক্রেতাবান্ধব' হওয়া সম্ভব নয়। এ ক্ষেত্রে বরং বেশি করণীয় থাকে সরকারের। তারা শুল্ক-কর কমিয়ে দিতে পারে কিংবা ভর্তুকি দিতে পারে। সরকারি সংস্থা টিসিবির মাধ্যমেও বাজারে পরোক্ষ হস্তক্ষেপ করা যায়। দুর্ভাগ্যজনকভাবে এ প্রতিষ্ঠানটি এ পর্যন্ত নিজের অসহায়ত্ব ব্যতিরেকে আর কিছুই প্রকাশ করতে পারেনি। এ অবস্থায় ব্যবসায়ীদের ওপর ভোক্তাদের নির্ভরতা প্রকট এবং কখনও কখনও তারা রীতিমতো জিম্মিদশায় পরিণত হয়। চিনি ও ভোজ্যতেলের ক্ষেত্রে গত কয়েক দিনে ঠিক এটাই ঘটেছে। এটা সহজেই বোধগম্য যে, পরিস্থিতি খুবই উদ্বেগজনক পর্যায়ে পেঁৗছেছিল বলেই মাত্র এক মাসের ব্যবধানে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর বাজারদর স্থিতিশীল করায় দ্বিতীয়বার উদ্যোগী হতে হয়েছে। তিনি সরবরাহের ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা থাকলে তা নিরসনে পদক্ষেপ গ্রহণের কথা জানিয়েছেন। এখন করণীয় মূলত ব্যবসায়ীদেরই। বাজারদর স্থিতিশীল করার যে প্রতিশ্রুতি তারা দিয়েছেন, সেটা রক্ষা করতে হবে। পাইকারি ও খুচরা বাজারে মূল্যের যে অস্বাভাবিক তারতম্য প্রায়ই প্রকট হয়ে ওঠে, তা দূর করার ক্ষেত্রেও চাই সক্রিয় পদক্ষেপ। এটাও প্রত্যাশিত যে, তাদের এ তৎপরতা শুধুু যেন ভোজ্যতেল ও চিনিতে সীমাবদ্ধ না থাকে। সরকার ও ব্যবসায়ী সবার কাছে নিশ্চয়ই এ বার্তা রয়েছে, নিত্যপ্রয়োজনীয় অনেক ধরনের পণ্যের বাজার এতই অযৌক্তিকভাবে বেড়েছে যে, আমজনতার অসহায়ত্ব এখন ক্ষোভে পরিণত হয়েছে।
No comments