ইসলামে জাকাত বিধান by জহির উদ্দিন বাবর
ইসলামী অর্থনীতির অন্যতম মৌলিক বৈশিষ্ট্য হচ্ছে সম্পদের সুষম বণ্টন। সম্পদের সুষম বণ্টনের জন্য ইসলাম যেসব ব্যবস্থা উপহার দিয়েছে তার অন্যতম 'জাকাত'। মানুষের হাতে সম্পদ পুঞ্জীভূত হয়ে পড়লে সমাজে ব্যাপক অর্থনৈতিক বৈষম্য দেখা দেয়।
ফলে মানুষের অভাব-অনটন বেড়ে যায়, আইন-শৃঙ্খলার অবনতি হয়, মানুষের নৈতিক চরিত্রের বিপর্যয় ঘটে। এসব সমস্যা থেকে মানব জাতিকে রক্ষার লক্ষ্যে মহান আল্লাহ প্রত্যেক ধনী মুসলমানের ওপর জাকাত ফরজ করেছেন। আল্লাহ বলেন, 'তাদের (ধনীদের) সম্পদ থেকে সাদাকা (জাকাত) গ্রহণ করুন।'
সমস্ত মুসলমান এ বিষয়ে একমত যে, জাকাত একটি ফরজ বিধান। সুতরাং জাকাত ফরজ জেনেও যদি কেউ তা অস্বীকার করে তাহলে সে কাফের হয়ে যাবে। আর যে জাকাত দিতে কৃপণতা করবে বা পরিমাণের চেয়ে কম দেবে সে লাঞ্ছনা ও কঠিন শাস্তির উপযুক্ত হবে। পবিত্র কোরআনে ৩২টি আয়াতে সরাসরি জাকাতের কথা বলা হয়েছে।
জাকাতের কিছু বিধান
স্বাধীন পূর্ণবয়স্ক সম্পদশালী মুসলমানের ওপর জাকাত ফরজ। যেসব সম্পদের মালিকানা সুনির্দিষ্ট নয় তার ওপর জাকাত নেই। যেমন_ সরকারি মালিকানাধীন ধনসম্পদ। যে ঋণ ফেরত পাওয়ার আদৌ আশা নেই তার ওপর জাকাত ধার্য হবে না। তবে যদি ফেরত পাওয়া যায় তাহলে এর জাকাত দিতে হবে। জাকাতের জন্য সম্পদ অবশ্যই উৎপাদনক্ষম বা বর্ধনশীল হতে হবে। এ শর্তের আলোকে ব্যক্তিগত ব্যবহারের আসবাবপত্রের ওপর জাকাত নেই। কিন্তু কৃষিজাত ফসল, মধু, ব্যবসার পণ্য, নগদ অর্থ, ব্যবসায়ের উদ্দেশ্যে কেনা মালপত্র বর্ধনশীল। তাই এগুলোর ওপর জাকাত ধার্য হবে।
উল্লেখ্য, সোনা-রূপাও বর্ধনশীল বস্তুর
অন্তর্ভুক্ত।
নিসাব পরিমাণ সম্পদ থাকলেই শরিয়ত তাকে ধনী বা সম্পদশালী বলে। প্রয়োজনীয় ব্যয় বাদে সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপা (প্রায় ৬১৩ গ্রাম) বা সাড়ে সাত তোলা সোনা (প্রায় ৮৮ গ্রাম) বা এর সমমূল্যের সম্পদকে 'নিসাব' বলা হয়। মূল্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে গরিবদের জন্য যা অধিকতর লাভজনক তার মূল্য ধরতে হবে।
কারও কাছে নিসাব পরিমাণ সম্পদ এক বছর থাকলে সে সম্পদের জাকাত দিতে হয়। এক্ষেত্রে বছরের শুরুতে এবং শেষে সম্পদ হাতে থাকলেই হবে, মাঝে না থাকলেও জাকাত দিতে হবে। যদি যৌথভাবে দুই বা ততোধিক ব্যক্তি কোনো সম্পদের মালিক হয় তাহলে তাদের প্রত্যেকেরই সম্পদে নিজ নিজ অংশের জাকাত পরিশোধ করতে হবে। বিদেশে অবস্থিত জাকাতযোগ্য সম্পদেরও জাকাত দিতে হবে। সম্পদ দেশে আর সম্পদের মালিক দেশের বাইরে থাকলে সে সম্পদেরও জাকাত দিতে হবে।
ব্যবসার মালপত্রের জাকাত নিরূপণকালে বছর সমাপ্তির দিনে যে সম্পদ থাকবে তাই সারা বছর ছিল ধরে নিয়ে তার ওপর জাকাত দিতে হবে। বছর শেষে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানির যে স্থিতিপত্র তৈরি করা হয় এতে সাকুল্য দেনা-পাওনা যেমন_ মূলধন সম্পদ, চলতি মূলধন, অর্জিত মুনাফা, ক্যাশে ও ব্যাংকে রক্ষিত নগদ অর্থ, দোকানে ও গুদামে রক্ষিত মালপত্র, কাঁচামাল, প্রক্রিয়ায় অবস্থিত মাল, প্রস্তুতকৃত মাল, ঋণ, দেনা-পাওনা যাবতীয় হিসাব আনতে হবে। এসবের মধ্য থেকে স্থায়ী মূলধন সামগ্রী যেমন_ মেশিন, দালান, জমিসহ ব্যাংক ঋণ, ক্রেডিট কার্ডে খরিদকৃত মাল ও অন্যান্য ঋণ বাদ দিয়ে অবশিষ্ট সম্পদের ওপর জাকাত দিতে হবে। ব্যবসার উদ্দেশ্যে খরিদকৃত জমি, মেশিন বা অন্যান্য সম্পদেরও জাকাত দিতে হবে। যেহেতু হাতে ও ব্যাংকে রক্ষিত নগদ অর্থ ছাড়াও সঞ্চয়পত্র, সিকিউরিটি, শেয়ার সার্টিফিকেট ইত্যাদি নগদ অর্থ বলে গণ্য হয় সেহেতু শেয়ারের মূল্য ধরার ক্ষেত্রে মছলা হলো, যাদের কোম্পানির লভ্যাংশ (উরারফবহফ) অর্জন করা উদ্দেশ্য নয়, বরং শেয়ার কিনেছেন বেচাকেনা করে লাভবান (ঈধঢ়রঃধষ এধরহ) হওয়ার উদ্দেশ্যে, তারা শেয়ারের বাজারদর (গধৎশবঃ ঠধষঁব) ধরে জাকাত হিসাব করবেন।
দ্বীনি ইলম শিখছে বা শেখাচ্ছে এমন ব্যক্তি যদি জাকাতের হকদার হয় তাহলে এ শ্রেণীকে জাকাত দেওয়া সবচেয়ে উত্তম। তারপর জাকাত পাওয়ার অধিক হকদার নিজের আত্মীয়স্বজনের মধ্য থেকে যারা জাকাত খেতে পারবে তারা। তারপর যেসব বন্ধুবান্ধব ও প্রতিবেশী জাকাত খেতে পারবে তারা। তারপর জাকাতের অন্য হকদাররা।
জাকাত না দেওয়ার পরিণাম
পবিত্র কোরআনে এসেছে, 'যারা সোনা-রূপা পুঞ্জীভূত করে তার জাকাত দেয় না তাদের যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির সংবাদ দিন, যেদিন জাহান্নামের আগুনে তা উত্তপ্ত করা হবে এবং তা দিয়ে তাদের কপাল, পার্শ্বদেশ ও পিঠে দাগ দেওয়া হবে। সেদিন বলা হবে, এটিই তা যা তোমরা নিজেদের জন্য পুঞ্জীভূত করেছিলে। সুতরাং তোমরা যা পুঞ্জীভূত করেছিলে তা আস্বাদন করো।' (সূরা তাওবা)
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) সূত্রে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেছেন, 'যে ব্যক্তি তার সম্পদের জাকাত আদায় করবে না, কিয়ামতের দিন আল্লাহতাআলা তার গলায় সাপ ঝুলিয়ে দেবেন।' সুতরাং যাদের ওপর জাকাত ফরজ হয়েছে তাদের উচিত এক্ষেত্রে গড়িমসি না করে গরিবের হক যথাস্থানে পেঁৗছে দেওয়া।
zahirbabor@yahoo.com
সমস্ত মুসলমান এ বিষয়ে একমত যে, জাকাত একটি ফরজ বিধান। সুতরাং জাকাত ফরজ জেনেও যদি কেউ তা অস্বীকার করে তাহলে সে কাফের হয়ে যাবে। আর যে জাকাত দিতে কৃপণতা করবে বা পরিমাণের চেয়ে কম দেবে সে লাঞ্ছনা ও কঠিন শাস্তির উপযুক্ত হবে। পবিত্র কোরআনে ৩২টি আয়াতে সরাসরি জাকাতের কথা বলা হয়েছে।
জাকাতের কিছু বিধান
স্বাধীন পূর্ণবয়স্ক সম্পদশালী মুসলমানের ওপর জাকাত ফরজ। যেসব সম্পদের মালিকানা সুনির্দিষ্ট নয় তার ওপর জাকাত নেই। যেমন_ সরকারি মালিকানাধীন ধনসম্পদ। যে ঋণ ফেরত পাওয়ার আদৌ আশা নেই তার ওপর জাকাত ধার্য হবে না। তবে যদি ফেরত পাওয়া যায় তাহলে এর জাকাত দিতে হবে। জাকাতের জন্য সম্পদ অবশ্যই উৎপাদনক্ষম বা বর্ধনশীল হতে হবে। এ শর্তের আলোকে ব্যক্তিগত ব্যবহারের আসবাবপত্রের ওপর জাকাত নেই। কিন্তু কৃষিজাত ফসল, মধু, ব্যবসার পণ্য, নগদ অর্থ, ব্যবসায়ের উদ্দেশ্যে কেনা মালপত্র বর্ধনশীল। তাই এগুলোর ওপর জাকাত ধার্য হবে।
উল্লেখ্য, সোনা-রূপাও বর্ধনশীল বস্তুর
অন্তর্ভুক্ত।
নিসাব পরিমাণ সম্পদ থাকলেই শরিয়ত তাকে ধনী বা সম্পদশালী বলে। প্রয়োজনীয় ব্যয় বাদে সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপা (প্রায় ৬১৩ গ্রাম) বা সাড়ে সাত তোলা সোনা (প্রায় ৮৮ গ্রাম) বা এর সমমূল্যের সম্পদকে 'নিসাব' বলা হয়। মূল্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে গরিবদের জন্য যা অধিকতর লাভজনক তার মূল্য ধরতে হবে।
কারও কাছে নিসাব পরিমাণ সম্পদ এক বছর থাকলে সে সম্পদের জাকাত দিতে হয়। এক্ষেত্রে বছরের শুরুতে এবং শেষে সম্পদ হাতে থাকলেই হবে, মাঝে না থাকলেও জাকাত দিতে হবে। যদি যৌথভাবে দুই বা ততোধিক ব্যক্তি কোনো সম্পদের মালিক হয় তাহলে তাদের প্রত্যেকেরই সম্পদে নিজ নিজ অংশের জাকাত পরিশোধ করতে হবে। বিদেশে অবস্থিত জাকাতযোগ্য সম্পদেরও জাকাত দিতে হবে। সম্পদ দেশে আর সম্পদের মালিক দেশের বাইরে থাকলে সে সম্পদেরও জাকাত দিতে হবে।
ব্যবসার মালপত্রের জাকাত নিরূপণকালে বছর সমাপ্তির দিনে যে সম্পদ থাকবে তাই সারা বছর ছিল ধরে নিয়ে তার ওপর জাকাত দিতে হবে। বছর শেষে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানির যে স্থিতিপত্র তৈরি করা হয় এতে সাকুল্য দেনা-পাওনা যেমন_ মূলধন সম্পদ, চলতি মূলধন, অর্জিত মুনাফা, ক্যাশে ও ব্যাংকে রক্ষিত নগদ অর্থ, দোকানে ও গুদামে রক্ষিত মালপত্র, কাঁচামাল, প্রক্রিয়ায় অবস্থিত মাল, প্রস্তুতকৃত মাল, ঋণ, দেনা-পাওনা যাবতীয় হিসাব আনতে হবে। এসবের মধ্য থেকে স্থায়ী মূলধন সামগ্রী যেমন_ মেশিন, দালান, জমিসহ ব্যাংক ঋণ, ক্রেডিট কার্ডে খরিদকৃত মাল ও অন্যান্য ঋণ বাদ দিয়ে অবশিষ্ট সম্পদের ওপর জাকাত দিতে হবে। ব্যবসার উদ্দেশ্যে খরিদকৃত জমি, মেশিন বা অন্যান্য সম্পদেরও জাকাত দিতে হবে। যেহেতু হাতে ও ব্যাংকে রক্ষিত নগদ অর্থ ছাড়াও সঞ্চয়পত্র, সিকিউরিটি, শেয়ার সার্টিফিকেট ইত্যাদি নগদ অর্থ বলে গণ্য হয় সেহেতু শেয়ারের মূল্য ধরার ক্ষেত্রে মছলা হলো, যাদের কোম্পানির লভ্যাংশ (উরারফবহফ) অর্জন করা উদ্দেশ্য নয়, বরং শেয়ার কিনেছেন বেচাকেনা করে লাভবান (ঈধঢ়রঃধষ এধরহ) হওয়ার উদ্দেশ্যে, তারা শেয়ারের বাজারদর (গধৎশবঃ ঠধষঁব) ধরে জাকাত হিসাব করবেন।
দ্বীনি ইলম শিখছে বা শেখাচ্ছে এমন ব্যক্তি যদি জাকাতের হকদার হয় তাহলে এ শ্রেণীকে জাকাত দেওয়া সবচেয়ে উত্তম। তারপর জাকাত পাওয়ার অধিক হকদার নিজের আত্মীয়স্বজনের মধ্য থেকে যারা জাকাত খেতে পারবে তারা। তারপর যেসব বন্ধুবান্ধব ও প্রতিবেশী জাকাত খেতে পারবে তারা। তারপর জাকাতের অন্য হকদাররা।
জাকাত না দেওয়ার পরিণাম
পবিত্র কোরআনে এসেছে, 'যারা সোনা-রূপা পুঞ্জীভূত করে তার জাকাত দেয় না তাদের যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির সংবাদ দিন, যেদিন জাহান্নামের আগুনে তা উত্তপ্ত করা হবে এবং তা দিয়ে তাদের কপাল, পার্শ্বদেশ ও পিঠে দাগ দেওয়া হবে। সেদিন বলা হবে, এটিই তা যা তোমরা নিজেদের জন্য পুঞ্জীভূত করেছিলে। সুতরাং তোমরা যা পুঞ্জীভূত করেছিলে তা আস্বাদন করো।' (সূরা তাওবা)
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) সূত্রে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেছেন, 'যে ব্যক্তি তার সম্পদের জাকাত আদায় করবে না, কিয়ামতের দিন আল্লাহতাআলা তার গলায় সাপ ঝুলিয়ে দেবেন।' সুতরাং যাদের ওপর জাকাত ফরজ হয়েছে তাদের উচিত এক্ষেত্রে গড়িমসি না করে গরিবের হক যথাস্থানে পেঁৗছে দেওয়া।
zahirbabor@yahoo.com
No comments