রহস্যময় বর্ষার আগমন, ঘুষ দেওয়া চলছেই
পৃথিবীতে সম্পদ সীমিত হলেও অভাব এবং রহস্যময় ঘটনা অসীম। বর্ষাকালের আগমনটাই তো একটা বিরাট রহস্য। প্রতিবছরই বর্ষাকাল আসছে। আওয়ামী লিগ, বিএনপি কিংবা তত্ত্বাবধায়ক—যে সরকারই ক্ষমতায় থাকুক না কেন, বর্ষাকাল আসবেই। অত্যন্ত রহস্যময় ব্যাপার। আমাদের দেশে একটা অন্য রকম ঐতিহ্য আছে।
এক সরকারের আমলে কোনো কিছু হলে অন্য সরকার এসে তা বন্ধ করে দেয়। কেউ কেউ অনেক কিছুর নামও বদলে ফেলে। তবে বর্ষাকালের নাম কেউ বদলাতে পারেনি। বর্ষাকালকে কেউ দাবিয়েও রাখতে পারেনি। প্রতিবছরের মতো এবারও একেবারে আষাঢ়ের এক তারিখেই বর্ষাকাল চলে এসেছে। অবশ্য না এসেও কোনো উপায় ছিল না। ঋতু হলেও একটা দায়িত্ব তো আছেই। বর্ষা না এলে কত লোক যে না খেয়ে মারা যেত, তার কোনো হিসাব কি পরিসংখ্যান বোর্ডের কাছে আছে? নিশ্চয়ই নেই। এ রকম কিছু হলে সবচেয়ে ক্ষতি হতো দেশের আপামর ছাতা ব্যবসায়ীদের। বর্ষা না এলে ছাতার ব্যবহারই তো উঠে যেত। তা ছাড়া জেলে সম্প্রদায়ের মানুষও পড়ত হুমকির মুখে। এমনিতেই আমাদের নদী-খাল সব দখল হয়ে যাচ্ছে। অবশিষ্ট যা আছে তাতেও বর্ষাকাল ছাড়া তেমন পানি থাকে না। ফলে মাছও থাকে না। তাই কমবেশি সবাই চায় বর্ষা আসুক। পোস্টম্যান আসতে দেরি করলেও বর্ষাকাল কখনোই দেরি করে না, সময়মতোই আসে। তার পরও বর্ষাকালকে আসার জন্য অনেকে ঘুষও সাধে, যা খুবই অন্যায় এবং অপমানজনক। ‘আয় বৃষ্টি ঝেঁপে, ধান দেব মেপে...’ এই ছড়াটি তার বড় প্রমাণ। তবে বর্ষাকাল অবশ্য বাংলা সিনেমার পুলিশ অফিসারের মতোই সৎ, ঘুষের ধারে-কাছে যায় না। কিন্তু ছড়াটার মাধ্যমেই বোঝা যায়, বাঙালিদের ঘুষ দেওয়ার অভ্যাসটা নতুন কিছু নয়। আবহমানকাল থেকেই তারা ঘুষ আদান-প্রদান করছে। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হলো, কোমলমতি শিশুদের বইয়েও এই ছড়া শোভা পেয়ে আসছে। অর্থাৎ শিশুকাল থেকেই মানুষকে ঘুষ দেওয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। কী ভয়ংকর ব্যাপার! শিশুদের মন কাদামাটির মতো নরম। ওদের যা শেখানো হবে, তা-ই শিখবে। এ জন্যই তো বড় হয়ে ওরা ঘুষ খায়। অথচ কর্তৃপক্ষ এ বিষয়টি নিয়ে কিছু ভাবছে না। ভাববে কীভাবে? তারাও তো...! আশা করি, কর্তৃপক্ষ এই অভিশপ্ত শেকল ছিঁড়ে ঘুষ দেওয়া-নেওয়া নির্মূল করে দেশবাসীর কাছে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।
No comments