প্রতিক্রিয়া-গ্যাস চুক্তি দেশের স্বার্থ রক্ষা করবে না by কল্লোল মোস্তফা
গত ২২ জুন প্রথম আলোয় অধ্যাপক ম. তামিম ‘গ্যাস উৎপাদন অংশীদারি চুক্তির সহজ পাঠ’ শীর্ষক লেখায় উৎপাদন অংশীদারি চুক্তির অধীনে গ্যাসের মালিকানা ও রপ্তানির বিধান বিষয়ে যে মতামত রেখেছেন, তার সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে কিছু কথা বলা জরুরি মনে করছি।
গ্যাসের মালিকানার তর্ক: বছর-বছর ৫৫ শতাংশ হারে গ্যাস কোম্পানি কস্ট রিকভারি হিসেবে নিতে থাকলে কয়েক বছর পরই কোম্পানির বিনিয়োগের বা খরচের পুরোটা উঠে আসবে বলে আশাবাদ প্রকাশ করেছেন ম. তামিম। তাঁর আশাবাদ অনুসারে কয়েক বছর পর এভাবে পুরো কস্ট রিকভারি হয়ে যাওয়ার পর প্রায় ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশ গ্যাসই হয়ে যাবে প্রোফিট গ্যাস বা লাভের গ্যাস, যার ৫৫ থেকে ৮০ শতাংশ মালিকানা পেট্রোবাংলার থাকায় সামষ্টিকভাবে বাংলাদেশের পক্ষে থাকবে ৫০ শতাংশের বেশি।
প্রথম কথা, কস্ট রিকভারির পর প্রোফিট গ্যাসের ৫৫ থেকে ৮০ শতাংশ মালিকানা পেট্রোবাংলার হলেও সম্পূর্ণ গ্যাসের কত ভাগ মালিকানা পেট্রোবাংলা পেল, তা হিসাব করতে গেলে কস্ট রিকভারি পর্যায়ে কত পরিমাণ গ্যাস পেট্রোবাংলা পেল, সে হিসাবও করতে হবে। কস্ট রিকভারি পর্যায়ে ৫৫ শতাংশ গ্যাস কস্ট রিকভারি গ্যাস হিসেবে কোম্পানির ভাগে গেলে এবং বাকি ৪৫ শতাংশ গ্যাস সমান অনুপাতে ভাগাভাগি হলে কস্ট রিকভারি পর্যায়ে কোম্পানির ভাগে পড়বে ৫৫+২২.৫ = ৭৭.৫ শতাংশ গ্যাস এবং পেট্রোবাংলার ভাগে পড়বে ২২.৫ শতাংশ গ্যাস। কাজেই কস্ট রিকভারি পর্যায়ের পর প্রোফিট গ্যাস পর্যায়ে ৮০ শতাংশ গ্যাস পেট্রোবাংলা পাওয়ার মানে এই নয় যে পেট্রোবাংলা মোট গ্যাসের ৮০ শতাংশ পেল। ম. তামিম উল্লিখিত বিবিয়ানার কস্ট রিকভারি পর্যায় পার হওয়ার পর উত্তোলিত গ্যাসের ৫০ শতাংশ গ্যাস পেট্রোবাংলা পাওয়ার মানে তাই পুরো গ্যাসের ৫০ শতাংশ পাওয়া নয়।
দ্বিতীয় কথা হলো, বাস্তবে বিদেশি কোম্পানিগুলো নানাভাবে বাড়তি খরচ দেখিয়ে কস্ট রিকভারি পর্যায় দীর্ঘায়িত করে। ফলে বাংলাদেশের ভাগে কার্যত মোট উত্তোলিত গ্যাসের ২০-৩০ শতাংশের বেশি জুটবে না। বাংলাদেশের স্থলভাগে এবং অগভীর সমুদ্রে এভাবে বাড়তি খরচ দেখিয়ে কস্ট রিকভারি পর্যায় দীর্ঘায়িত করার বিভিন্ন নজির আছে:
মাগুরছড়ায় অক্সিডেন্টাল ১৯৯৫ সালে সিসমিক সার্ভে এবং তিনটি কূপ খননের জন্য প্রথমে এক কোটি ৮৮ লাখ ডলারের হিসাব দিলেও ১৯৯৭ সাল নাগাদ চারবার সংশোধনের মাধ্যমে তা চার কোটি ৯১ লাখ ৪০ হাজার ডলারে পরিণত হয়। এবং এই খরচের হিসাব কূপ খননের খরচের হিসাব ছাড়াই।
অগভীর সমুদ্রের সাঙ্গু গ্যাসক্ষেত্রে কেয়ার্নের কস্ট রিকভারির হিসাবটা দেখা যাক। বিডিংয়ের সময় ১০.৮১ মিলিয়ন ডলার প্রকল্প ব্যয় দেখানো হলেও একের পর এক সংশোধনী বাজেট দিয়ে শেষ পর্যন্ত ব্যয় দাঁড়ায় ৬৬০ মিলিয়ন ডলার। ফলে এই গ্যাসক্ষেত্র থেকে বাংলাদেশ মাত্র ২০ শতাংশ গ্যাস পায়। পেট্রোবাংলার এপ্রিল মাসের এমআইএস রিপোর্ট থেকে দেখা যায়, এ বছরের এপ্রিলে মোট ১৩.৮৩৪ এমএমসিএম গ্যাসের মধ্যে কেয়ার্নের ভাগে পড়ে ১১.০৭৫ এমএমসিএম গ্যাস অর্থাৎ বাংলাদেশের ভাগে পড়ে মাত্র ২.৭৫৯ এমএমসিএম, যা মোট গ্যাসের মাত্র ১৯.৯৪ শতাংশ।
একই রিপোর্ট অনুসারে টাল্লোর বাঙ্গুরা গ্যাসক্ষেত্রটিতে এপ্রিল মাসে মোট উৎপাদন হয় ৮৩.৪৮৪ এমএমসিএম, যার মধ্যে টাল্লোর কস্ট রিকভারি ও প্রোফিট গ্যাসের ভাগ ছিল ৫৫.৪৭৭ এমএমসিএম। সুতরাং পেট্রোবাংলার প্রোফিট গ্যাস হলো ২৮.০০৭ এমএমসিএম, যা মোট গ্যাসের মাত্র ৩৩.৫৪ শতাংশ।
গভীর সমুদ্রের বিশাল খরচের কথা বলে নানাভাবে যে কেয়ার্নের সাঙ্গু গ্যাসক্ষেত্রের মতো কস্ট রিকভারি পর্যায় দীর্ঘায়িত করে বেশির ভাগ গ্যাসই কনোকোফিলিপস নিয়ে নেবে না, তার নিশ্চয়তা কী?
তৃতীয়ত, যে মডেল পিএসসি ২০০৮ অনুসারে কনোকোফিলিপসের সঙ্গে সাম্প্রতিক পিএসসি চুক্তি হয়েছে, তার আর্টিক্যাল ১৫.৫.৪-এ বলা আছে, প্রথম ১০ বছর বাংলাদেশ কোনো অবস্থাতেই সর্বমোট বিপণনযোগ্য গ্যাসের ২০ শতাংশের বেশি দাবি করতে পারবে না, ১১তম বছরের মাথায় কোম্পানি রাজি হলে পেট্রোবাংলা ৩০ শতাংশ দাবি করতে পারবে। চুক্তির আর্টিক্যাল ১৫.৫.২ অনুসারে, গ্যাসকূপের দৈনন্দিন অপারেশনাল কাজে ব্যবহারের গ্যাস বাদ দিয়ে সব গ্যাসই বিপণনযোগ্য গ্যাস। এখন চুক্তির আর্টিক্যাল ১৫.৪ অনুযায়ী কোম্পানি যদি বছরে মোট গ্যাসের ৭.৫ শতাংশ হারে (পেট্রোবাংলা অনুমতি দিলে এর চেয়েও বেশি পরিমাণে গ্যাস উত্তোলনের সুযোগ রাখা হয়েছে) গ্যাস উত্তোলন করতে থাকে তাহলে ১৩.৩৩ বছরের মাথাতেই সব গ্যাস উত্তোলিত হয়ে যাবে। ফলে কস্ট রিকভারি আর প্রোফিট গ্যাসের ভাগাভাগি অনুসারে পেট্রোবাংলার ভাগে যতটুকু গ্যাসই পড়ুক না কেন, কার্যত আর্টিক্যাল ১৫.৫.৪ অনুযায়ী পেট্রোবাংলা ২০ শতাংশের বেশি গ্যাস পাবে না।
রপ্তানির বিধান ও রপ্তানির সম্ভাবনা: ম. তামিমকে ধন্যবাদ তিনি রপ্তানির প্রশ্নে বেশ খোলাখুলিভাবেই স্বীকার করেছেন: ‘বিপুল অর্থ বিনিয়োগ করে যদি বিপুল গ্যাস পাওয়ার ১ শতাংশ সম্ভাবনাও থাকে, সে ক্ষেত্রে কোম্পানি তার বিনিয়োগকৃত মূলধন দ্রুততম সময়ে তুলে আনতে চাইবে।...রপ্তানির সুদূরপ্রসারী একটি সুযোগ অথবা নিশ্চিত গ্যাস কেনার প্রতিশ্রুতি তাই যেকোনো আন্তর্জাতিক গ্যাস অনুসন্ধান চুক্তির অংশ।’ চুক্তিবিরোধীদের আপত্তিটা ঠিক এখানেই, রপ্তানির এই ‘সুদূরপ্রসারী’ সুযোগ কাজে লাগিয়ে, কোম্পানি তার বিনিয়োগকৃত মূলধন দ্রুততম সময়ে তুলে আনার জন্য, গ্যাস এমন বেশি পরিমাণে উত্তোলন করতে শুরু করবে যে পেট্রোবাংলা বাধ্য হবে তাকে ‘বাড়তি’ গ্যাস রপ্তানির অনুমতি দিতে। বিষয়টা একটু ব্যাখ্যা করা যাক। কনোকোফিলিপসকে দেওয়া ১০ ও ১১ নম্বর ব্লকের কাছে মিয়ানমার ৭ টিসিএফ এবং ভারত ১৪ টিসিএফ গ্যাস আবিষ্কার করেছে। এখন বাংলাদেশের অংশেও যদি একইভাবে ৭ টিসিএফের মতো গ্যাস আবিষ্কৃত হয় তাহলে আর্টিক্যাল ১৫.৪ অনুযায়ী কোম্পানি ৭.৫ শতাংশ হারে (যদিও পিএসসিতে গভীর সমুদ্রের ক্ষেত্রে এর চেয়েও বেশি হারে গ্যাস উত্তোলনের সুযোগ রাখা হয়েছে) গ্যাস তুলতে পারবে বছরে ০.৫২৫ টিসিএফ বা ৫২৫ বিসিএফ। তাহলে দৈনিক উত্তোলন করতে পারবে ৫২৫/৩৬৫ = ১.৪৩৮ বিসিএফ।
আবার বাংলাদেশে বর্তমানে গ্যাসের ঘাটতি ৫০০ মিলিয়ন কিউবিক ফুট (এমএমসিএফ)। বছরে ৭ শতাংশ চাহিদা বৃদ্ধি ধরলে পাঁচ বছর পর যদি গ্যাস আবিষ্কৃত ও উত্তোলিত হয়, তখন গ্যাসের চাহিদা হবে দৈনিক ৭৫০ এমএমসিএফ বা ০.৭৫ বিসিএফ।
এখন কনোকোফিলিপস যদি সাত টিসিএফের গ্যাসক্ষেত্র থেকে দৈনিক ১.৪৩৮ বিসিএফ গ্যাস তুলতে শুরু করে তখন বাংলাদেশ সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে পারবে ০.৭৫ বিসিএফ, যার পরও দৈনিক অতিরিক্ত থাকবে ১.৪৩৮-০.৭৫ = ০.৬৮৮ বিসিএফ বা ৬৮৮ এমএমসিএফ গ্যাস, যা ব্যবহার করে এলএনজি প্ল্যান্ট বসিয়ে বার্ষিক ৫.৩৭৫ মিলিয়ন মেট্রিক টন (এমটিপিএ) এলএনজি উৎপাদন করা সম্ভব।
বাংলাদেশ তার অভ্যন্তরীণ খাতে যখন এই ‘বাড়তি’ গ্যাস ব্যবহার করতে পারবে না তখন কী হবে? চুক্তি অনুসারে পেট্রোবাংলা তখন এই গ্যাস এলএনজি আকারে রপ্তানির অনুমতি দিতে বাধ্য হবে।
কল্লোল মোস্তফা: প্রকৌশলী।
প্রথম কথা, কস্ট রিকভারির পর প্রোফিট গ্যাসের ৫৫ থেকে ৮০ শতাংশ মালিকানা পেট্রোবাংলার হলেও সম্পূর্ণ গ্যাসের কত ভাগ মালিকানা পেট্রোবাংলা পেল, তা হিসাব করতে গেলে কস্ট রিকভারি পর্যায়ে কত পরিমাণ গ্যাস পেট্রোবাংলা পেল, সে হিসাবও করতে হবে। কস্ট রিকভারি পর্যায়ে ৫৫ শতাংশ গ্যাস কস্ট রিকভারি গ্যাস হিসেবে কোম্পানির ভাগে গেলে এবং বাকি ৪৫ শতাংশ গ্যাস সমান অনুপাতে ভাগাভাগি হলে কস্ট রিকভারি পর্যায়ে কোম্পানির ভাগে পড়বে ৫৫+২২.৫ = ৭৭.৫ শতাংশ গ্যাস এবং পেট্রোবাংলার ভাগে পড়বে ২২.৫ শতাংশ গ্যাস। কাজেই কস্ট রিকভারি পর্যায়ের পর প্রোফিট গ্যাস পর্যায়ে ৮০ শতাংশ গ্যাস পেট্রোবাংলা পাওয়ার মানে এই নয় যে পেট্রোবাংলা মোট গ্যাসের ৮০ শতাংশ পেল। ম. তামিম উল্লিখিত বিবিয়ানার কস্ট রিকভারি পর্যায় পার হওয়ার পর উত্তোলিত গ্যাসের ৫০ শতাংশ গ্যাস পেট্রোবাংলা পাওয়ার মানে তাই পুরো গ্যাসের ৫০ শতাংশ পাওয়া নয়।
দ্বিতীয় কথা হলো, বাস্তবে বিদেশি কোম্পানিগুলো নানাভাবে বাড়তি খরচ দেখিয়ে কস্ট রিকভারি পর্যায় দীর্ঘায়িত করে। ফলে বাংলাদেশের ভাগে কার্যত মোট উত্তোলিত গ্যাসের ২০-৩০ শতাংশের বেশি জুটবে না। বাংলাদেশের স্থলভাগে এবং অগভীর সমুদ্রে এভাবে বাড়তি খরচ দেখিয়ে কস্ট রিকভারি পর্যায় দীর্ঘায়িত করার বিভিন্ন নজির আছে:
মাগুরছড়ায় অক্সিডেন্টাল ১৯৯৫ সালে সিসমিক সার্ভে এবং তিনটি কূপ খননের জন্য প্রথমে এক কোটি ৮৮ লাখ ডলারের হিসাব দিলেও ১৯৯৭ সাল নাগাদ চারবার সংশোধনের মাধ্যমে তা চার কোটি ৯১ লাখ ৪০ হাজার ডলারে পরিণত হয়। এবং এই খরচের হিসাব কূপ খননের খরচের হিসাব ছাড়াই।
অগভীর সমুদ্রের সাঙ্গু গ্যাসক্ষেত্রে কেয়ার্নের কস্ট রিকভারির হিসাবটা দেখা যাক। বিডিংয়ের সময় ১০.৮১ মিলিয়ন ডলার প্রকল্প ব্যয় দেখানো হলেও একের পর এক সংশোধনী বাজেট দিয়ে শেষ পর্যন্ত ব্যয় দাঁড়ায় ৬৬০ মিলিয়ন ডলার। ফলে এই গ্যাসক্ষেত্র থেকে বাংলাদেশ মাত্র ২০ শতাংশ গ্যাস পায়। পেট্রোবাংলার এপ্রিল মাসের এমআইএস রিপোর্ট থেকে দেখা যায়, এ বছরের এপ্রিলে মোট ১৩.৮৩৪ এমএমসিএম গ্যাসের মধ্যে কেয়ার্নের ভাগে পড়ে ১১.০৭৫ এমএমসিএম গ্যাস অর্থাৎ বাংলাদেশের ভাগে পড়ে মাত্র ২.৭৫৯ এমএমসিএম, যা মোট গ্যাসের মাত্র ১৯.৯৪ শতাংশ।
একই রিপোর্ট অনুসারে টাল্লোর বাঙ্গুরা গ্যাসক্ষেত্রটিতে এপ্রিল মাসে মোট উৎপাদন হয় ৮৩.৪৮৪ এমএমসিএম, যার মধ্যে টাল্লোর কস্ট রিকভারি ও প্রোফিট গ্যাসের ভাগ ছিল ৫৫.৪৭৭ এমএমসিএম। সুতরাং পেট্রোবাংলার প্রোফিট গ্যাস হলো ২৮.০০৭ এমএমসিএম, যা মোট গ্যাসের মাত্র ৩৩.৫৪ শতাংশ।
গভীর সমুদ্রের বিশাল খরচের কথা বলে নানাভাবে যে কেয়ার্নের সাঙ্গু গ্যাসক্ষেত্রের মতো কস্ট রিকভারি পর্যায় দীর্ঘায়িত করে বেশির ভাগ গ্যাসই কনোকোফিলিপস নিয়ে নেবে না, তার নিশ্চয়তা কী?
তৃতীয়ত, যে মডেল পিএসসি ২০০৮ অনুসারে কনোকোফিলিপসের সঙ্গে সাম্প্রতিক পিএসসি চুক্তি হয়েছে, তার আর্টিক্যাল ১৫.৫.৪-এ বলা আছে, প্রথম ১০ বছর বাংলাদেশ কোনো অবস্থাতেই সর্বমোট বিপণনযোগ্য গ্যাসের ২০ শতাংশের বেশি দাবি করতে পারবে না, ১১তম বছরের মাথায় কোম্পানি রাজি হলে পেট্রোবাংলা ৩০ শতাংশ দাবি করতে পারবে। চুক্তির আর্টিক্যাল ১৫.৫.২ অনুসারে, গ্যাসকূপের দৈনন্দিন অপারেশনাল কাজে ব্যবহারের গ্যাস বাদ দিয়ে সব গ্যাসই বিপণনযোগ্য গ্যাস। এখন চুক্তির আর্টিক্যাল ১৫.৪ অনুযায়ী কোম্পানি যদি বছরে মোট গ্যাসের ৭.৫ শতাংশ হারে (পেট্রোবাংলা অনুমতি দিলে এর চেয়েও বেশি পরিমাণে গ্যাস উত্তোলনের সুযোগ রাখা হয়েছে) গ্যাস উত্তোলন করতে থাকে তাহলে ১৩.৩৩ বছরের মাথাতেই সব গ্যাস উত্তোলিত হয়ে যাবে। ফলে কস্ট রিকভারি আর প্রোফিট গ্যাসের ভাগাভাগি অনুসারে পেট্রোবাংলার ভাগে যতটুকু গ্যাসই পড়ুক না কেন, কার্যত আর্টিক্যাল ১৫.৫.৪ অনুযায়ী পেট্রোবাংলা ২০ শতাংশের বেশি গ্যাস পাবে না।
রপ্তানির বিধান ও রপ্তানির সম্ভাবনা: ম. তামিমকে ধন্যবাদ তিনি রপ্তানির প্রশ্নে বেশ খোলাখুলিভাবেই স্বীকার করেছেন: ‘বিপুল অর্থ বিনিয়োগ করে যদি বিপুল গ্যাস পাওয়ার ১ শতাংশ সম্ভাবনাও থাকে, সে ক্ষেত্রে কোম্পানি তার বিনিয়োগকৃত মূলধন দ্রুততম সময়ে তুলে আনতে চাইবে।...রপ্তানির সুদূরপ্রসারী একটি সুযোগ অথবা নিশ্চিত গ্যাস কেনার প্রতিশ্রুতি তাই যেকোনো আন্তর্জাতিক গ্যাস অনুসন্ধান চুক্তির অংশ।’ চুক্তিবিরোধীদের আপত্তিটা ঠিক এখানেই, রপ্তানির এই ‘সুদূরপ্রসারী’ সুযোগ কাজে লাগিয়ে, কোম্পানি তার বিনিয়োগকৃত মূলধন দ্রুততম সময়ে তুলে আনার জন্য, গ্যাস এমন বেশি পরিমাণে উত্তোলন করতে শুরু করবে যে পেট্রোবাংলা বাধ্য হবে তাকে ‘বাড়তি’ গ্যাস রপ্তানির অনুমতি দিতে। বিষয়টা একটু ব্যাখ্যা করা যাক। কনোকোফিলিপসকে দেওয়া ১০ ও ১১ নম্বর ব্লকের কাছে মিয়ানমার ৭ টিসিএফ এবং ভারত ১৪ টিসিএফ গ্যাস আবিষ্কার করেছে। এখন বাংলাদেশের অংশেও যদি একইভাবে ৭ টিসিএফের মতো গ্যাস আবিষ্কৃত হয় তাহলে আর্টিক্যাল ১৫.৪ অনুযায়ী কোম্পানি ৭.৫ শতাংশ হারে (যদিও পিএসসিতে গভীর সমুদ্রের ক্ষেত্রে এর চেয়েও বেশি হারে গ্যাস উত্তোলনের সুযোগ রাখা হয়েছে) গ্যাস তুলতে পারবে বছরে ০.৫২৫ টিসিএফ বা ৫২৫ বিসিএফ। তাহলে দৈনিক উত্তোলন করতে পারবে ৫২৫/৩৬৫ = ১.৪৩৮ বিসিএফ।
আবার বাংলাদেশে বর্তমানে গ্যাসের ঘাটতি ৫০০ মিলিয়ন কিউবিক ফুট (এমএমসিএফ)। বছরে ৭ শতাংশ চাহিদা বৃদ্ধি ধরলে পাঁচ বছর পর যদি গ্যাস আবিষ্কৃত ও উত্তোলিত হয়, তখন গ্যাসের চাহিদা হবে দৈনিক ৭৫০ এমএমসিএফ বা ০.৭৫ বিসিএফ।
এখন কনোকোফিলিপস যদি সাত টিসিএফের গ্যাসক্ষেত্র থেকে দৈনিক ১.৪৩৮ বিসিএফ গ্যাস তুলতে শুরু করে তখন বাংলাদেশ সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে পারবে ০.৭৫ বিসিএফ, যার পরও দৈনিক অতিরিক্ত থাকবে ১.৪৩৮-০.৭৫ = ০.৬৮৮ বিসিএফ বা ৬৮৮ এমএমসিএফ গ্যাস, যা ব্যবহার করে এলএনজি প্ল্যান্ট বসিয়ে বার্ষিক ৫.৩৭৫ মিলিয়ন মেট্রিক টন (এমটিপিএ) এলএনজি উৎপাদন করা সম্ভব।
বাংলাদেশ তার অভ্যন্তরীণ খাতে যখন এই ‘বাড়তি’ গ্যাস ব্যবহার করতে পারবে না তখন কী হবে? চুক্তি অনুসারে পেট্রোবাংলা তখন এই গ্যাস এলএনজি আকারে রপ্তানির অনুমতি দিতে বাধ্য হবে।
কল্লোল মোস্তফা: প্রকৌশলী।
No comments