মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে একদিন by সুচিত্রা সরকার
এখানে এসে আমার খুব ভালো লেগেছে। দেশ স্বাধীন করতে তাঁরা কত কষ্ট করেছে তা বুঝতে পারলাম।’ ভাঙা ভাঙা গলায় এমনটাই জানাল প্রথম শ্রেণীর শিক্ষার্থী জেনিফা। ও এসেছে বড় ভাই শরীফের হাত ধরে। শরীফ জানান, ‘আমি চাই ও এখন থেকেই মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানুক। তাই নিয়ে এলাম।’
১৯৯৬ সালে ঢাকার সেগুনবাগিচায় এই জাদুঘর প্রতিষ্ঠার পর থেকেই এখানে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করছে। তারা মূলত তথ্য ও আলামত সংরক্ষণ ও প্রদর্শণ এবং ঢাকার বাইরে বিভিন্ন কর্মসূচিতে স্বেচ্ছাসেবকের ভূমিকা পালন করে। নিজেদের পড়ালেখার ফাঁকে তারা যে সময়টুকু অবসর পায়, সে সময় জাদুঘরে সেচ্ছাসেবকের কাজ করে।
বর্তমানে বিভিন্নভাবে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করছে প্রায় ২০০ জন শিক্ষার্থী।
জাদুঘরের উঠানে কথা হলো তাদেরই কয়েকজনের সঙ্গে।
‘ছোটবেলা থেকেই মুক্তিযুদ্ধের চলচ্চিত্র আমাকে টানত। সেসব দেখে আমার কান্না চলে আসত। তারপর একদিন আমার এক বন্ধু “মুক্তির উৎসব”-এ নিয়ে আসে। তারপর থেকে আমি এখানে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করি।’ বললেন আহছানিয়া মিশনের শিক্ষার্থী নাহিদ।
একটু ভেবে জিমানা আহমেদ বলেন, ‘আসলে, এটা তো কোনো চাকরি বা খণ্ডকালীন কাজও নয়। অন্তত আমরা তা ভাবি না। আমি এখানে এসেছি মনের টানে।’
এতক্ষণ শুনছিলেন কাজী আওয়াল। তিনি বলেন, ‘আগে মুক্তিযুদ্ধ মানেই ভাবতাম পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সঙ্গে সশস্ত্র যুদ্ধ। আর যুদ্ধ শুধু অতটুকুতে সীমাবদ্ধ নয়। এখন বুঝি, যুদ্ধে অস্ত্রের পাশাপাশি বুদ্ধিবৃত্তিক অবদানও অনেক গুরুত্বপূর্ণ। সে কারণেই তখন মুজিবনগর সরকার, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র, স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল, জাগরণ পদযাত্রা কী ধরনের ভূমিকা রেখেছিল তা বুঝতে পারি।’
নীতা হঠাৎ সবার মাঝখান থেকে বক্তৃতার ভঙ্গিতে বলেন, ‘আমরাও এ রকম একটি পদযাত্রা করেছি।’
শুনতে চাই মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের পদযাত্রা সম্পর্কে। নীতা বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের এই ভাবনাকে ভিত্তি করে আমরা দশজনের একটা দল নিয়ে “তরুণের পদযাত্রা” করি। সেখানে আমরা ঢাকা থেকে সুনামগঞ্জ পর্যন্ত ৪৫০ কিলোমিটার গিয়েছিলাম পায়ে হেঁটে। বিভিন্ন জেলার স্কুলে গিয়ে আমরা মুক্তিযুদ্ধের কথা জানিয়েছিলাম। পরিকল্পনা রয়েছে সব কটি বিভাগীয় শহরে আমরা যাব।’
আলোচনা সবার আবেগকে নাড়া দিয়েছে এরই মধ্যে। ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বিপাশা জানান, ‘ভাবলে শিহরিত হই, এখানে কাজ করছি বলেই প্রাচীনকালের নানা নিদর্শন আমি নিজ হাতে স্পর্শ করার সৌভাগ্য অর্জন করছি। আমরা গত পরশু শহীদ সেলিনা পারভীনের বুকের হাড় এক্সেশান করেছি। আমি ওটা হাতে নিয়ে কয়েক মুহূর্ত দাঁড়িয়ে ছিলাম।’ তাকিয়ে দেখি গত পরশুর জল আজও ওর চোখ ভিজিয়ে দিয়েছে।
আবহাওয়া ভারী হতেই আনন্দের বার্তা নিয়ে এলেন মাহমুদ— জাদুঘরের আরেক স্বেচ্ছাসেবক।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি দল এসেছে জাদুঘর পরিদর্শন করতে। আমরাও তাদের অনুসরণ করলাম।
দোতলার একটা ছবির সামনে এসে চৈতী তাঁর কণ্ঠস্বর একটু কমিয়ে দিলেন। গোপনীয়তার জন্য নয়। এই ঘটনা বর্ণনা করতে গেলে সব সময়ই তাঁর গলা কাঁপে।
“চার মাসের রেহানাকে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বুটের তলায় পিসে মেরেছে। তার অপরাধ, তার বাবা মুক্তিযোদ্ধা।” ঘটনাটি শুনে জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আসা ইলানা বলেন, ‘আমি বুঝতে পারছি না, এটা কী করে সম্ভব!’
স্বেচ্ছাসেবক মির্জা দেখালেন একটা নিদর্শন। এক বীরাঙ্গনার বাবার চিঠি। বঙ্গবন্ধুকে লেখা। ‘...আমি আমার এই বীরাঙ্গনা মেয়েকে নিয়া খুব অসুবিধায় আছি। শুনিতে পাইলাম এই দেশের ২ লক্ষ নির্যাতিত বীরাঙ্গনা পুনর্বাসনের জন্য আপনি আলাদা দপ্তর খুলিয়াছেন।...’
উপলব্ধি করতে অসুবিধা হয় না, কিসের প্রেরণায় তাড়িত হয়ে এই তরুণেরা এখানে স্বেচ্ছাসেবকের কাজ করছে।
এই তরুণ স্বেচ্ছাসেবকদের কাজকর্ম সম্পর্কে আরও জানতে চাই মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের অন্যতম ট্রাস্টি মফিদুল হকের কাছে। তিনি বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের প্রজন্ম ধীরে ধীরে বিলীয়মান হয়ে যাবে। তখন মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ছড়িয়ে দেওয়ার দায়িত্ব পালন করবে এখনকার তরুণেরা। আমরা মুক্তিযুদ্ধের জীয়নকাঠি তরুণদের হাতে তুলে দিয়েছি।’
বর্তমানে বিভিন্নভাবে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করছে প্রায় ২০০ জন শিক্ষার্থী।
জাদুঘরের উঠানে কথা হলো তাদেরই কয়েকজনের সঙ্গে।
‘ছোটবেলা থেকেই মুক্তিযুদ্ধের চলচ্চিত্র আমাকে টানত। সেসব দেখে আমার কান্না চলে আসত। তারপর একদিন আমার এক বন্ধু “মুক্তির উৎসব”-এ নিয়ে আসে। তারপর থেকে আমি এখানে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করি।’ বললেন আহছানিয়া মিশনের শিক্ষার্থী নাহিদ।
একটু ভেবে জিমানা আহমেদ বলেন, ‘আসলে, এটা তো কোনো চাকরি বা খণ্ডকালীন কাজও নয়। অন্তত আমরা তা ভাবি না। আমি এখানে এসেছি মনের টানে।’
এতক্ষণ শুনছিলেন কাজী আওয়াল। তিনি বলেন, ‘আগে মুক্তিযুদ্ধ মানেই ভাবতাম পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সঙ্গে সশস্ত্র যুদ্ধ। আর যুদ্ধ শুধু অতটুকুতে সীমাবদ্ধ নয়। এখন বুঝি, যুদ্ধে অস্ত্রের পাশাপাশি বুদ্ধিবৃত্তিক অবদানও অনেক গুরুত্বপূর্ণ। সে কারণেই তখন মুজিবনগর সরকার, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র, স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল, জাগরণ পদযাত্রা কী ধরনের ভূমিকা রেখেছিল তা বুঝতে পারি।’
নীতা হঠাৎ সবার মাঝখান থেকে বক্তৃতার ভঙ্গিতে বলেন, ‘আমরাও এ রকম একটি পদযাত্রা করেছি।’
শুনতে চাই মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের পদযাত্রা সম্পর্কে। নীতা বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের এই ভাবনাকে ভিত্তি করে আমরা দশজনের একটা দল নিয়ে “তরুণের পদযাত্রা” করি। সেখানে আমরা ঢাকা থেকে সুনামগঞ্জ পর্যন্ত ৪৫০ কিলোমিটার গিয়েছিলাম পায়ে হেঁটে। বিভিন্ন জেলার স্কুলে গিয়ে আমরা মুক্তিযুদ্ধের কথা জানিয়েছিলাম। পরিকল্পনা রয়েছে সব কটি বিভাগীয় শহরে আমরা যাব।’
আলোচনা সবার আবেগকে নাড়া দিয়েছে এরই মধ্যে। ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বিপাশা জানান, ‘ভাবলে শিহরিত হই, এখানে কাজ করছি বলেই প্রাচীনকালের নানা নিদর্শন আমি নিজ হাতে স্পর্শ করার সৌভাগ্য অর্জন করছি। আমরা গত পরশু শহীদ সেলিনা পারভীনের বুকের হাড় এক্সেশান করেছি। আমি ওটা হাতে নিয়ে কয়েক মুহূর্ত দাঁড়িয়ে ছিলাম।’ তাকিয়ে দেখি গত পরশুর জল আজও ওর চোখ ভিজিয়ে দিয়েছে।
আবহাওয়া ভারী হতেই আনন্দের বার্তা নিয়ে এলেন মাহমুদ— জাদুঘরের আরেক স্বেচ্ছাসেবক।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি দল এসেছে জাদুঘর পরিদর্শন করতে। আমরাও তাদের অনুসরণ করলাম।
দোতলার একটা ছবির সামনে এসে চৈতী তাঁর কণ্ঠস্বর একটু কমিয়ে দিলেন। গোপনীয়তার জন্য নয়। এই ঘটনা বর্ণনা করতে গেলে সব সময়ই তাঁর গলা কাঁপে।
“চার মাসের রেহানাকে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বুটের তলায় পিসে মেরেছে। তার অপরাধ, তার বাবা মুক্তিযোদ্ধা।” ঘটনাটি শুনে জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আসা ইলানা বলেন, ‘আমি বুঝতে পারছি না, এটা কী করে সম্ভব!’
স্বেচ্ছাসেবক মির্জা দেখালেন একটা নিদর্শন। এক বীরাঙ্গনার বাবার চিঠি। বঙ্গবন্ধুকে লেখা। ‘...আমি আমার এই বীরাঙ্গনা মেয়েকে নিয়া খুব অসুবিধায় আছি। শুনিতে পাইলাম এই দেশের ২ লক্ষ নির্যাতিত বীরাঙ্গনা পুনর্বাসনের জন্য আপনি আলাদা দপ্তর খুলিয়াছেন।...’
উপলব্ধি করতে অসুবিধা হয় না, কিসের প্রেরণায় তাড়িত হয়ে এই তরুণেরা এখানে স্বেচ্ছাসেবকের কাজ করছে।
এই তরুণ স্বেচ্ছাসেবকদের কাজকর্ম সম্পর্কে আরও জানতে চাই মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের অন্যতম ট্রাস্টি মফিদুল হকের কাছে। তিনি বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের প্রজন্ম ধীরে ধীরে বিলীয়মান হয়ে যাবে। তখন মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ছড়িয়ে দেওয়ার দায়িত্ব পালন করবে এখনকার তরুণেরা। আমরা মুক্তিযুদ্ধের জীয়নকাঠি তরুণদের হাতে তুলে দিয়েছি।’
No comments