মত দ্বিমত-দুই মেয়াদে তত্ত্বাবধায়ক সরকারই থাকতে হবে by এমাজউদ্দীন আহমদ
আগামী নির্বাচন কার অধীনে হবে, এ নিয়ে সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে বিতর্ক চলছে। এ প্রেক্ষাপটে দুই শিক্ষাবিদ ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানীর অভিমত এখানে ছাপা হলো। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে যে রায় দিয়েছেন, তা শুধু নজিরবিহীন নয়, অনভিপ্রেতও বটে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার কী পরিবেশে তৈরি হয়েছিল, তা কে না জানে।
সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগও নিশ্চয়ই তা জানেন। এখন এমন একটি পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে, যা জাতীয় স্বার্থের পরিপন্থী। এমনকি দুই মেয়াদে নির্বাচন করার যে বিধান রাখা হয়েছে, সেখানেও একটা স্ববিরোধিতা রয়েছে। সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে এ রকম হতে পারে, তা আমি কখনো শুনিনি; অন্য কোথাও হয়েছে বলে জানি না।
দুদকের চেয়ারম্যানের যে কথা, দুদক একটি নখদন্তহীন; আবার জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান যেমনটা বলছেন, তাঁর হাত-পা বাঁধা, অন্যদিকে আমাদের সাংবিধানিক তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার প্রথম প্রধান উপদেষ্টা বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান যেমনটা বলেছেন, সব মিলিয়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবস্থা যেমনটা দাঁড়াচ্ছে, সেটা কী করে মোকাবিলা করা হবে কিংবা একটি শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন কী করে গঠিত হবে—আজকে যদি সুপ্রিম কোর্টের রায়ে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধানেরা কী করে নির্বাচিত বা নিয়োগ পাবেন, সে বিষয়ে যদি কথা থাকত, তাহলে না হয় একটা কথা ছিল। কিন্তু সেটাও তো নেই।
যতক্ষণ পর্যন্ত সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে একটা সহমত প্রতিষ্ঠিত না হয়, সে পর্যন্ত সংসদীয় গণতন্ত্র উজ্জ্বল হতে পারে না। তাই আলোচনার দরজা নিশ্চয়ই খোলা থাকছে। এটা খোলা থাকতে হবে। বিরোধী দল যেভাবে একটা গোঁ ধরে বসে আছে, সেটাও পরিস্থিতিকে স্বাভাবিক হতে দিচ্ছে না। বিরোধী দলের উচিত সংসদে গিয়ে আলোচনায় শামিল হওয়া। বিরোধী দলের সদস্যসংখ্যা যা-ই হোক না কেন, সংসদে উপস্থিত হয়ে তাঁদের বক্তব্য শক্তভাবে উপস্থাপন করা দরকার। হয়তো পরিবেশ তাঁদের মতো হবে না, কিন্তু সে জন্য তাঁরা সংসদে যোগদান থেকে বিরত থাকতে পারেন না। সরকারি দল তাঁদের কথা না শুনতে পারে, জাতি শুনতে পারবে। তারা বুঝতে পারবে।
আমি সারা জীবন ছাত্রছাত্রীদের পড়িয়ে এসেছি—সংবিধান সংশোধনের একমাত্র দায়দায়িত্ব জাতীয় সংসদের। এর বাইরে অন্য কোনো সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের এ ধরনের এখতিয়ার থাকতে পারে না। যদি সংবিধানের কোনো বিধান ভঙ্গ হওয়ার ফলে নাগরিকের অধিকার ক্ষুণ্ন হয়, তাহলে উচ্চ আদালতের বক্তব্য গ্রহণযোগ্যতা পায়। কিন্তু তাঁরা যেভাবে সংবিধানকে টেনেহিঁচড়ে নষ্ট করেছেন, সেভাবে করার কোনো দরকার ছিল না। তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রশ্নে আপিল বিভাগও কিন্তু একমত হতে পারেননি। তাঁরা দ্বিধাবিভক্ত মত দিয়েছেন। এ ক্ষেত্রে তাঁদের কোনো মতৈক্য ছিল না।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা নিয়ে আদালতের রায়ের কারণে যে ধরনের পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটেছে, তার কোনো তুলনা বা নজির আমরা মনে করতে পারি না। পূর্ণাঙ্গ রায় এখন পর্যন্ত বেরোল না, অথচ সংবিধান ছাপিয়ে ফেলা হলো। পঞ্চম সংশোধনী মামলার রায়ে যে নির্দেশনা দেওয়া হয়নি, সেই নির্দেশনা পুনর্মুদ্রিত সংবিধানে এসে গেল। তাহলে কোন কর্তৃত্ববলে কী করে এমন অভাবনীয় ঘটনা ঘটতে পারল, তা আমরা বুঝতে পারি না। তাই সামগ্রিকভাবে আমি ভীত এবং শঙ্কিত। সব মিলিয়ে একটা সংকট ছাড়া আমি আর কিছু দেখতে পারছি না। একটা অশনিসংকেত ছাড়া অন্য কিছু যে ভাবব, তার তো কোনো সুযোগ দেখছি না।
নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের একটি প্রশ্ন আসন্ন। কারণ, বর্তমানে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের যে কমিশন রয়েছে, তার মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু কী প্রক্রিয়ায় নতুন কমিশনারদের নিয়োগ দেওয়া হবে, তা আমরা ধারণা করতে পারি না। সে কারণে বলছিলাম, এ বিষয়েও যদি উচ্চ আদালতের একটা নির্দেশনা থাকত, তাহলে একটা যৌক্তিকতা খুঁজে পেতাম। এ দেশের প্রতি তাদের যদি মায়া থাকত, তাদের যদি সুচিন্তিত মতামত থাকত, তাহলে আমরা এ বিষয়েও একটা বক্তব্য পেতাম। সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হলে একটা মতৈক্যের প্রয়োজন হবে। শুধু নির্বাচন কমিশনের কথাই বলি কেন, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন অর্থাৎ সব সাংবিধানিক সংস্থায় নিয়োগ কীভাবে হবে, সে বিষয়ে আদালত যদি একটা বক্তব্য রাখতেন, তাহলে আমরা তাঁদের দায়িত্ব-কর্তব্য সম্পর্কে আস্থাশীল হওয়ার একটা সুযোগ পেতাম।
আবারও বলব, সব মিলিয়ে জাতির সামনে একটি সংকট ঘনায়মান। সুপ্রিম কোর্টের রায়ের কারণে জাতীয় রাজনীতি আজ যে অবস্থায় পড়েছে, সেটা জাতির জন্য দুর্ভাগ্যজনক।
বিরোধী দলকে অবশ্যই সংসদে যেতে হবে। একই সঙ্গে বলব, সংসদে স্থায়ী কমিটির সভাপতি সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত ও আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ অন্তর্বর্তী সরকার নিয়ে আলাপ-আলোচনার যে বক্তব্য রেখেছেন, তাও কিন্তু স্পষ্ট নয়। এখন আর অস্ট্রেলিয়ার সাবেক গভর্নর স্যার স্টিফেন নিনিয়ানের ফর্মুলা কার্যকর করার সুযোগ দেখি না। পৃথিবীতে একটি মাত্র উদাহরণ (যুক্তরাষ্ট্র) রয়েছে, যেখানে সরকারপ্রধান নির্বাচিত হন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি বা ইলেকটোরাল কলেজ দ্বারা। এ ছাড়া অন্যান্য গণতান্ত্রিক দেশে (যেমন—ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানি, ভারত) নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক বা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে যাঁরা থাকেন, তাঁরা অনির্বাচিত বলেই গণ্য হচ্ছেন। তাঁরা কিন্তু সেই মেয়াদে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির মর্যাদা ভোগ করেন না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের দ্বারা নির্বাচন পরিচালনার যে ইঙ্গিত করেছেন, তাতে মনে হয়, ক্ষমতাসীন দলই নির্বাচনকালীন সরকারে থাকবে। কিন্তু বাংলাদেশের বাস্তবতায় বিদায়ী প্রধানমন্ত্রীকে রেখে নির্বাচনকালীন সরকার সম্ভব নয় এবং সেটা আওয়ামী লীগই প্রতিষ্ঠিত করেছে। ১৯৯৪ থেকে ১৯৯৬ পর্যন্ত তাঁদের যে আন্দোলন, তার সারকথা ছিল এটাই—অবিশ্বাস ও অনাস্থার মাত্রা অত্যন্ত প্রবল।
এই মুহূর্তে দরকার সুপ্রিম কোর্টের রায়ের আলোকেই দুই মেয়াদে নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রস্তুতির পাশাপাশি এ ব্যবস্থা কী করে ত্রুটিমুক্ত করা যায়, সে ব্যাপারে চিন্তাভাবনা শুরু করা। আশা করব, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের শুভবুদ্ধির উদয় হবে। তাঁরা অন্তত আরও দুই মেয়াদে সাধারণ নির্বাচন বিদ্যমান তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠানে সম্মত হবেন। যদি তাঁরা তা না করেন, তাহলে জাতীয় জীবনে বিশৃঙ্খলা নেমে আসতে বাধ্য।
অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ: সাবেক উপাচার্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
দুদকের চেয়ারম্যানের যে কথা, দুদক একটি নখদন্তহীন; আবার জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান যেমনটা বলছেন, তাঁর হাত-পা বাঁধা, অন্যদিকে আমাদের সাংবিধানিক তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার প্রথম প্রধান উপদেষ্টা বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান যেমনটা বলেছেন, সব মিলিয়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবস্থা যেমনটা দাঁড়াচ্ছে, সেটা কী করে মোকাবিলা করা হবে কিংবা একটি শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন কী করে গঠিত হবে—আজকে যদি সুপ্রিম কোর্টের রায়ে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধানেরা কী করে নির্বাচিত বা নিয়োগ পাবেন, সে বিষয়ে যদি কথা থাকত, তাহলে না হয় একটা কথা ছিল। কিন্তু সেটাও তো নেই।
যতক্ষণ পর্যন্ত সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে একটা সহমত প্রতিষ্ঠিত না হয়, সে পর্যন্ত সংসদীয় গণতন্ত্র উজ্জ্বল হতে পারে না। তাই আলোচনার দরজা নিশ্চয়ই খোলা থাকছে। এটা খোলা থাকতে হবে। বিরোধী দল যেভাবে একটা গোঁ ধরে বসে আছে, সেটাও পরিস্থিতিকে স্বাভাবিক হতে দিচ্ছে না। বিরোধী দলের উচিত সংসদে গিয়ে আলোচনায় শামিল হওয়া। বিরোধী দলের সদস্যসংখ্যা যা-ই হোক না কেন, সংসদে উপস্থিত হয়ে তাঁদের বক্তব্য শক্তভাবে উপস্থাপন করা দরকার। হয়তো পরিবেশ তাঁদের মতো হবে না, কিন্তু সে জন্য তাঁরা সংসদে যোগদান থেকে বিরত থাকতে পারেন না। সরকারি দল তাঁদের কথা না শুনতে পারে, জাতি শুনতে পারবে। তারা বুঝতে পারবে।
আমি সারা জীবন ছাত্রছাত্রীদের পড়িয়ে এসেছি—সংবিধান সংশোধনের একমাত্র দায়দায়িত্ব জাতীয় সংসদের। এর বাইরে অন্য কোনো সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের এ ধরনের এখতিয়ার থাকতে পারে না। যদি সংবিধানের কোনো বিধান ভঙ্গ হওয়ার ফলে নাগরিকের অধিকার ক্ষুণ্ন হয়, তাহলে উচ্চ আদালতের বক্তব্য গ্রহণযোগ্যতা পায়। কিন্তু তাঁরা যেভাবে সংবিধানকে টেনেহিঁচড়ে নষ্ট করেছেন, সেভাবে করার কোনো দরকার ছিল না। তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রশ্নে আপিল বিভাগও কিন্তু একমত হতে পারেননি। তাঁরা দ্বিধাবিভক্ত মত দিয়েছেন। এ ক্ষেত্রে তাঁদের কোনো মতৈক্য ছিল না।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা নিয়ে আদালতের রায়ের কারণে যে ধরনের পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটেছে, তার কোনো তুলনা বা নজির আমরা মনে করতে পারি না। পূর্ণাঙ্গ রায় এখন পর্যন্ত বেরোল না, অথচ সংবিধান ছাপিয়ে ফেলা হলো। পঞ্চম সংশোধনী মামলার রায়ে যে নির্দেশনা দেওয়া হয়নি, সেই নির্দেশনা পুনর্মুদ্রিত সংবিধানে এসে গেল। তাহলে কোন কর্তৃত্ববলে কী করে এমন অভাবনীয় ঘটনা ঘটতে পারল, তা আমরা বুঝতে পারি না। তাই সামগ্রিকভাবে আমি ভীত এবং শঙ্কিত। সব মিলিয়ে একটা সংকট ছাড়া আমি আর কিছু দেখতে পারছি না। একটা অশনিসংকেত ছাড়া অন্য কিছু যে ভাবব, তার তো কোনো সুযোগ দেখছি না।
নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের একটি প্রশ্ন আসন্ন। কারণ, বর্তমানে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের যে কমিশন রয়েছে, তার মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু কী প্রক্রিয়ায় নতুন কমিশনারদের নিয়োগ দেওয়া হবে, তা আমরা ধারণা করতে পারি না। সে কারণে বলছিলাম, এ বিষয়েও যদি উচ্চ আদালতের একটা নির্দেশনা থাকত, তাহলে একটা যৌক্তিকতা খুঁজে পেতাম। এ দেশের প্রতি তাদের যদি মায়া থাকত, তাদের যদি সুচিন্তিত মতামত থাকত, তাহলে আমরা এ বিষয়েও একটা বক্তব্য পেতাম। সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হলে একটা মতৈক্যের প্রয়োজন হবে। শুধু নির্বাচন কমিশনের কথাই বলি কেন, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন অর্থাৎ সব সাংবিধানিক সংস্থায় নিয়োগ কীভাবে হবে, সে বিষয়ে আদালত যদি একটা বক্তব্য রাখতেন, তাহলে আমরা তাঁদের দায়িত্ব-কর্তব্য সম্পর্কে আস্থাশীল হওয়ার একটা সুযোগ পেতাম।
আবারও বলব, সব মিলিয়ে জাতির সামনে একটি সংকট ঘনায়মান। সুপ্রিম কোর্টের রায়ের কারণে জাতীয় রাজনীতি আজ যে অবস্থায় পড়েছে, সেটা জাতির জন্য দুর্ভাগ্যজনক।
বিরোধী দলকে অবশ্যই সংসদে যেতে হবে। একই সঙ্গে বলব, সংসদে স্থায়ী কমিটির সভাপতি সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত ও আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ অন্তর্বর্তী সরকার নিয়ে আলাপ-আলোচনার যে বক্তব্য রেখেছেন, তাও কিন্তু স্পষ্ট নয়। এখন আর অস্ট্রেলিয়ার সাবেক গভর্নর স্যার স্টিফেন নিনিয়ানের ফর্মুলা কার্যকর করার সুযোগ দেখি না। পৃথিবীতে একটি মাত্র উদাহরণ (যুক্তরাষ্ট্র) রয়েছে, যেখানে সরকারপ্রধান নির্বাচিত হন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি বা ইলেকটোরাল কলেজ দ্বারা। এ ছাড়া অন্যান্য গণতান্ত্রিক দেশে (যেমন—ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানি, ভারত) নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক বা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে যাঁরা থাকেন, তাঁরা অনির্বাচিত বলেই গণ্য হচ্ছেন। তাঁরা কিন্তু সেই মেয়াদে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির মর্যাদা ভোগ করেন না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের দ্বারা নির্বাচন পরিচালনার যে ইঙ্গিত করেছেন, তাতে মনে হয়, ক্ষমতাসীন দলই নির্বাচনকালীন সরকারে থাকবে। কিন্তু বাংলাদেশের বাস্তবতায় বিদায়ী প্রধানমন্ত্রীকে রেখে নির্বাচনকালীন সরকার সম্ভব নয় এবং সেটা আওয়ামী লীগই প্রতিষ্ঠিত করেছে। ১৯৯৪ থেকে ১৯৯৬ পর্যন্ত তাঁদের যে আন্দোলন, তার সারকথা ছিল এটাই—অবিশ্বাস ও অনাস্থার মাত্রা অত্যন্ত প্রবল।
এই মুহূর্তে দরকার সুপ্রিম কোর্টের রায়ের আলোকেই দুই মেয়াদে নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রস্তুতির পাশাপাশি এ ব্যবস্থা কী করে ত্রুটিমুক্ত করা যায়, সে ব্যাপারে চিন্তাভাবনা শুরু করা। আশা করব, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের শুভবুদ্ধির উদয় হবে। তাঁরা অন্তত আরও দুই মেয়াদে সাধারণ নির্বাচন বিদ্যমান তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠানে সম্মত হবেন। যদি তাঁরা তা না করেন, তাহলে জাতীয় জীবনে বিশৃঙ্খলা নেমে আসতে বাধ্য।
অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ: সাবেক উপাচার্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
No comments