সহজিয়া কড়চা-ষষ্ঠ সংসদের ইতিহাস পাঠ করা প্রয়োজন by সৈয়দ আবুল মকসুদ
নিকোলাস কোপার্নিকাস (১৪৭৩-১৫৪৩) মানুষের যুক্তিবুদ্ধি সম্পর্কে বলতে গিয়ে বলেছেন, ‘আমি এ কথা বিশ্বাস করতে বাধ্য নই যে, যে বিধাতা মানুষকে সুবুদ্ধি, যুক্তিশীলতা ও আক্কেলজ্ঞান দিয়েছেন, তিনিই আবার তা বর্জন করার অধিকারও তাকে দিয়েছেন।’
এই মহান জ্যোতির্বিজ্ঞানীর জাতীয়তা নিয়ে মতপার্থক্য রয়েছে। জার্মানরা দাবি করে, তিনি জার্মান; পোলিশদের দাবি, তিনি পোলিশ। উত্তর: জার্মানির একেবারে পুব প্রান্তে থর্ন শহরে তাঁর জন্ম। সেকালে সেখানে জার্মানরাও বাস করত, পোলিশ জাতিসত্তার মানুষও ছিল। তাঁর তত্ত্ব সঠিক হওয়ায় জার্মানরা বলে, তিনি আমাদেরই লোক; পোলিশরা দাবি করে, তিনি পোলিশ না হয়ে পারেনই না। যদি তিনি ভুল করতেন, কোনো পক্ষেই তাঁর দাবিদার খুঁজে পাওয়া যেত না।
হতভাগ্য কোপার্নিকাস, ভুল না করেও যাঁকে ক্ষমা চাইতে হয়েছিল—ঠিক একালে যেমন স্বৈরতান্ত্রিক রাষ্ট্রে ভুল না করেও আদালতে ক্ষমা চাইতে হয়—মানুষের সুবুদ্ধি, যুক্তিশীলতা ও কাণ্ডজ্ঞানের ওপর জোর দিয়েছিলেন। পৃথিবীর রাজনৈতিক নেতারাও মানুষ এবং যেহেতু তাঁরা অগণিত মানুষের প্রতিনিধিত্ব করেন, তাঁদের সুবুদ্ধি, কাণ্ডজ্ঞান ও যুক্তিশীলতা যে কিছুটা বেশি থাকবে, তাতে সন্দেহ কি! কিন্তু তাঁরা যদি ওই মৌলিক মানবিক গুণকে বর্জন করাই শ্রেয় মনে করেন, তাহলে সাধারণ মানুষের কষ্টের শেষ থাকে না।
গণতন্ত্র হলো সমঝোতামূলক রাজনৈতিক ব্যবস্থা—আপসমূলক রাজনীতি। গণতন্ত্র সংখ্যাগরিষ্ঠের স্বৈরতন্ত্র নয় এবং সংখ্যালঘিষ্ঠের যুক্তিবুদ্ধি-বিবর্জিত আস্ফাালনও নয়। তার মাঝামাঝি একটা ব্যবস্থা, যেখানে সংখ্যায় যাঁরা কম, তাঁরা সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতৃত্ব মেনে নেন এবং সরকারি দল বিরোধী দলের যুক্তিশীল পরামর্শ গ্রহণ করে উপকৃত হয়। সরকারি দল ও বিরোধী দল তীর-বল্লম, ঢাল-তলোয়ার নিয়ে দুদিকে দাঁড়িয়ে হায়দারি হাঁক হাঁকতে থাকলে তা আর গণতন্ত্র থাকে না।
আল্লাহর অশেষ রহমতে যদি নির্বাচন হয়, তাহলে তা হবে অন্তত আড়াই বছর পর। নির্বাচন জাতীয় জীবনের অসংখ্য কর্মকাণ্ডের একটি। নির্বাচন ছাড়া রাষ্ট্রের আরও বহু কাজকাম রয়েছে। কিন্তু আড়াই বছর পরের সম্ভাব্য সেই ব্যাপারটি নিয়ে দুটি দল যা শুরু করেছে, তার তুলনা দ্বিতীয় আর কোথাও খুঁজে পাওয়া যায় না। সেই নির্বাচন কেমন সরকারের অধীনে হবে, তা নিয়ে চলছে বিতর্ক। বুদ্ধিমান ও বিজ্ঞ মানুষের তর্কবিতর্ক উপভোগ্য, কিন্তু তার বিপরীত শ্রেণীর মানুষের তর্কাতর্কি শুধু দুর্বিষহ নয়, তা ভীতির সঞ্চার করে। কোনো গুরুতর ব্যাপারে বিতর্কে এক ধরনের রস আছে, কূটতর্ক জন্ম দেয় বিতৃষ্ণার।
মহামান্য সুপ্রিম কোর্ট তত্ত্বাবধায়ক সরকার সম্পর্কে একটি রায় দিয়েছেন। এবং সে সঙ্গে দিয়েছেন একটি পর্যবেক্ষণ ও পরামর্শ। অর্থাৎ গণতান্ত্রিক সংবিধানের সঙ্গে অনির্বাচিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা সাংঘর্ষিক, সুতরাং তা অসাংবিধানিক। তবে রাজনৈতিক বাস্তবতায় আরও দুটি নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দ্বারা হতে পারে।ওই রায় ঘোষণার পর সরকারি ও বিরোধী দলের নেতারা মহামান্য আদালতের রায় পর্যালোচনা করে কী ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে, তা নির্ধারণ করতে পারতেন। সেখানে দ্বিমত দেখা দিলেও সমঝোতার মাধ্যমে একটি সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারতেন। কারণ, সিদ্ধান্তে তাঁদের পৌঁছাতেই হবে; রাষ্ট্রীয় জীবনে সিদ্ধান্তহীনতা বলে কোনো শব্দ নেই।
সরকার গঠনের পর থেকেই আওয়ামী লীগের কয়েকজন নব্য নেতা প্রকাশ্য সভা-সমাবেশেই বলাবলি করছিলেন: তত্ত্বাবধায়ক সরকার রাখার আর প্রয়োজন নেই। তা নিয়ে বাদ-প্রতিবাদ শুরু হয়। এবং বিরোধী দলের সম্ভবত এই ধারণা জন্মে যে, আওয়ামী লীগ আগামী নির্বাচন[গুলো]টি নিজেরাই করতে চায়। সচেতন মানুষও মনে করল, নিজেদের নির্বাচন নিজেরা করলে ২৪৩ আসনপ্রাপ্তি রোধ করার সাধ্যি বিধাতারও থাকবে না। মহাজোট থেকে বামদের ঝেঁটিয়ে বিদায় করা হবে। এবং জাতীয় পার্টি পাবে ৩৫ আসন। বিএনপি ১৭ আসন নিয়ে সংসদকক্ষের তিন নম্বর কাতারে ঠাঁই নেবে। তিন-চারটি আসন দেওয়া হবে ‘স্বাধীনতার সপক্ষে’র হুজুরদের।
এর মধ্যে আদালতের রায় ঘোষিত হওয়ায় মহাজোটের সামনে আর কোনো বাধাই রইল না। বিএনপি দেখতে পেল, তার সামনে চীনের মহাপ্রাচীর। প্রধানমন্ত্রী বললেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন করার সুযোগ নেই রায়ের আলোকে। সে আলো যত উজ্জ্বলই হোক, বিরোধীদলীয় নেতা চোখে দেখলেন অন্ধকার। কিন্তু অন্ধকারে চোখ বন্ধ করে রাখার পাত্রী তিনি নন। চোখ লাল করে বললেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া আর কিছু মানি না, দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাব না।’ প্রত্যুত্তরে আওয়ামী লীগের নেতারা বললেন, ‘আমাদের তত্ত্বে যখন সায় দিচ্ছেন না, নির্বাচন নির্বাচিত সরকারের অধীনেই হবে। সেই নির্বাচন প্রতিহত করার শক্তি কারও নেই।’
শেষ বাক্যটি টেলিভিশন সেট থেকে তীরের বেগে বেরিয়ে যখন আমার কানে মিসাইলের মতো আঘাত হানল, আমি হতভম্ব হয়ে গেলাম। পৃথিবীর কোনো ক্ষমতাসীন দলের গণতান্ত্রিক নেতাদের মুখ দিয়ে এ ধরনের কথা গত আড়াই শ বছরে উচ্চারিত হয়েছে বলে আমার জানা নেই। এবং একদলীয় নির্বাচন প্রতিহত করার শক্তি পৃথিবীর অন্য কোনো দেশের মানুষের আছে কি নেই, তা জানি না; কিন্তু বাংলার মানুষের বিলকুল আছে। এই পলিমাটির মানুষ বড়ই তেঁদড়।
১৯৯৫-এর শেষ এবং ১৯৯৬-এর জানুয়ারিতে আওয়ামী লীগের এই নব্য নেতারা কোথায় ছিলেন, আমার স্মরণ নেই। আমরা দেশেই ছিলাম। আলাদা মর্নিংওয়াক বা সান্ধ্যকালীন হাঁটার প্রয়োজন হয়নি ছয়টি মাস। যত বড়লোক বা বড় অফিসারই হোন না কেন, শ্রীচরণই ছিল ভরসা। কোটি টাকা দামের গাড়ি মৃত তিমি মাছের মতো পড়ে থাকত গ্যারেজে বা পোর্চের নিচে। ‘আরব্য বসন্ত’-এর চেয়েও উত্তাল সেই আন্দোলন। নেতৃত্ব আওয়ামী লীগের। তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার জন্য লাগাতার আন্দোলন-অবরোধ শুধু নয়, নাটক মঞ্চায়ন।
বিএনপি যেনতেন প্রকারে আর এক বা একাধিক মেয়াদ ক্ষমতায় থাকতে চায়। সাধারণ মানুষ যারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে, তারা তাকে সে সুযোগ দিতে নারাজ। ২৫ বছরে আমরা জাতীয় নাট্যশালা প্রতিষ্ঠিত করতে পারিনি, কিন্তু ১৯৯৬-এর শুরুতে রাতারাতি স্থায়ী রঙ্গমঞ্চ স্থাপিত হলো প্রেসক্লাবের সামনে। সেখানে দিনে ও রাতে এমন সব নাটক অভিনীত হতে লাগল, যা শেক্সপিয়ারিয়ান ট্র্যাজেডিকেও হার মানায়। অভিনেতা-অভিনেত্রী বহু, শুধু সংস্কৃতিজগতের মানুষ নয়। সরকারি কর্মকর্তাদের চোখেও স্বপ্ন টলমল করছিল। সচিবালয়ের ভেতরের চত্বরেও নাটক হতে থাকল। শুধু তাই নয়, বড়কর্তারাও গণতন্ত্র বাঁচাতে চাকরিবিধি লঙ্ঘন করে মালকোঁচা মেরে বেরিয়ে এলেন প্রেসক্লাবের সামনের রঙ্গমঞ্চে। সেখানে যে অমোঘ বাণীটি ঘোষিত হলো তা হলো: সরকারি কর্মচারীরা দলবাজি করার প্রাতিষ্ঠানিক অধিকার অর্জন করেছে। তবে সব দলের নয়, প্রজাতন্ত্রেরও নয়, দুটি দলের ভৃত্য হওয়ার অঙ্গীকার ঘোষিত হলো।
একদলীয় নির্বাচনের কী পরিণাম, তা আশরাফ সাহেবের চেয়ে বেগম জিয়া ভালো জানেন। ১৯৯৫ সালের ২৪ নভেম্বর পঞ্চম জাতীয় সংসদ ভেঙে দেওয়ার পর সংবিধান অনুযায়ী ১৯৯৬-এর ২১ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ষষ্ঠ সংসদ নির্বাচন সম্পন্নের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা ছিল। সেই পরিপ্রেক্ষিতে দলীয় সরকার ১৫ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন করে। আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগীরা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে নির্বাচন বর্জন করে। পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে বাজে ও কারচুপির নির্বাচন হয়। বিএনপি পায় ২৭৮টি আসন। সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসেবে বিএনপি সরকার গঠন করে। ১৯ মার্চ সংসদ অধিবেশন বসে। আওয়ামী লীগের দাবি অনুযায়ী ২১ মার্চ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিধানসংবলিত ত্রয়োদশ সংশোধনী বিল পাস হয়। বিল পাসের পর সংসদের অধিবেশন ৩১ মার্চ পর্যন্ত মুলতবি করা হয়। এর মধ্যে প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার পদত্যাগের দাবি উঠলে তিনি ৩০ মার্চ রাষ্ট্রপতি আবদুর রহমান বিশ্বাসের কাছে লিখিতভাবে সংসদ ভেঙে দেওয়ার অনুরোধ করেন। সেদিন খালেদা জিয়ার ইতিবাচক ভূমিকাটিরও ঐতিহাসিক তাৎপর্য রয়েছে। তাঁকে খাটো করে দেখা যাবে না। তাঁর পক্ষকালের প্রধানমন্ত্রিত্ব ছিল সম্পূর্ণ সাংবিধানিক।
একদলীয় নির্বাচন আমরা বলছি বটে, বস্তুত তা একদলীয় ছিল না। ষষ্ঠ নির্বাচনে ‘৪২টি দল’ অংশ নিয়েছিল। তা সত্ত্বেও খালেদা জিয়ার শপথ অনুষ্ঠানে বিদেশি কূটনীতিকেরা যোগ দেননি দু-একটি গৌণ দেশের ছাড়া। বহির্বিশ্বে ওই নির্বাচনের কোনো বৈধতা ছিল না। এবারও যদি বিএনপিকে বাদ দিয়ে আওয়ামী লীগ নির্বাচন করে, সেখানে ১৪ দুগুণে ২৮ দল শুধু নয়, ৫৬ দল পাওয়া যাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য। কিন্তু সেই নির্বাচনকে পৃথিবীর কোনো দেশই বৈধতা দেবে না।
মহাজোট মনে করছে, আমেরিকা ও ভারত পক্ষে আছে; কোনো চিন্তা নেই। ভুল ধারণা। ভারতের মতো মজবুত গণতান্ত্রিক দেশ অন্ধের মতো কাউকে সমর্থন দেবে না। কোনো নেতার সঙ্গে ভারত সরকারের ব্যক্তিগত সম্পর্ক যত উষ্ণই হোক, রাষ্ট্রের জনগণের গণতান্ত্রিক চেতনার বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক ভারত দাঁড়াতে পারে না। আর আমেরিকা? সে কী করবে, তা এ মুহূর্তে বারাক হোসেন ওবামাও বলতে পারবেন না। ঠিক সময় তাঁরা ঠিক কাজটি করবেন; দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পর থেকে যা সুচারুভাবে করছেন।
ভারত নেপালে যা করতে পারে, বাংলাদেশে তা পারে না। নেপাল হিন্দুপ্রধান রাষ্ট্র। বাংলাদেশ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রাষ্ট্র। এখানে ব্যক্তি বা দলবিশেষকে রক্ষার জন্য অযাচিত হস্তক্ষেপ করলে সেটা হবে তার জন্য ক্ষতিকর। বহির্বিশ্বে তার গণতান্ত্রিক ও শান্তিবাদী ভাবমূর্তি চূর্ণ হবে।
তত্ত্বাবধায়ক বিষয়টি সাংবিধানিক ও আইনগত। কিন্তু তার চেয়েও বেশি রাজনৈতিক। আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় পাওয়া যায়নি। তবে আইনি জটিলতার যদি মীমাংসা হয়েও যায়, তাহলেও আগামী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সর্বদলগ্রহণযোগ্য ভাগ্যবিড়ম্বিত প্রধান উপদেষ্টা কে হবেন, তা কোনো জ্যোতিষীর পক্ষেও বলা সম্ভব নয়। যিনি হবেন, তাঁর হয়তো মাথা ফাটবে না; কিন্তু তাঁর ‘হতে-যাওয়ার’ যে প্রক্রিয়া, তাতে মাথা ফাটা নয়, জীবন যাবে কত জনের, তা বলা মুশকিল। তবে সবচেয়ে বেশি লাভবান হবে দামি গাড়ি প্রস্তুতকারী কোম্পানিগুলো।
বিজ্ঞ ও বিখ্যাত সংবিধান-বিশেষজ্ঞেরা বলেছেন, ‘রায় ঘোষণার মুহূর্ত থেকেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল হয়ে গেছে।’ এ বক্তব্যের সঙ্গে আমরা মাথা চুলকে ও ঢোক গিলে যতই মিনমিন করে দ্বিমত পোষণ করি না কেন—তা কোনো কাজে আসবে না। মোরগের কল্লা কোপ দিয়ে কাটার পর তাকে আধা জীবিত মনে করা নির্বুদ্ধিতা। এখন জীবিত মোরগ চাইলে বাজার থেকে কিনে আনতে হবে। হাটবাজার থেকে মোরগ কিনে আনা মানে সংবিধান সংশোধন করে ব্যবস্থাটির আইনি-প্রক্রিয়ার সুরাহা করা। গলাকাটা মোরগের ঠ্যাং ধরে টানাটানি করে লাভ হবে না।
ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেওয়ার কথা বলা হয় না, কিন্তু ইতিহাস পাঠ করার উপদেশ দেওয়া হয় প্রতিদিন। জাতির গোটা ইতিহাস নয়—একটি নির্দিষ্ট সময়ের ইতিহাস। কারণ, অল্প সময়ের ইতিহাস পাঠ করতে সময় লাগবে কম। ষষ্ঠ জাতীয় সংসদের মেয়াদ ছিল ১২ দিন মাত্র। ওই সংসদের জন্মের পটভূমি, জন্ম ও মৃত্যুর ইতিহাস পাঠ করুন। তবে গড়গড় করে পাঠ করলে হবে না, মনোযোগ দিয়ে পাঠ করতে হবে এবং তা থেকে শিক্ষা নিতে হবে। ষষ্ঠ সংসদের জন্ম-মৃত্যুবৃত্তান্ত পড়তে হবে কোপার্নিকাস কথিত যে আক্কেল, মেধা ও যুক্তিশীলতা বিধাতা মানুষকে দান করেছেন, সেগুলোর সুষ্ঠু প্রয়োগ করে।
সৈয়দ আবুল মকসুুদ: গবেষক, প্রাবন্ধিক ও কলাম লেখক।
হতভাগ্য কোপার্নিকাস, ভুল না করেও যাঁকে ক্ষমা চাইতে হয়েছিল—ঠিক একালে যেমন স্বৈরতান্ত্রিক রাষ্ট্রে ভুল না করেও আদালতে ক্ষমা চাইতে হয়—মানুষের সুবুদ্ধি, যুক্তিশীলতা ও কাণ্ডজ্ঞানের ওপর জোর দিয়েছিলেন। পৃথিবীর রাজনৈতিক নেতারাও মানুষ এবং যেহেতু তাঁরা অগণিত মানুষের প্রতিনিধিত্ব করেন, তাঁদের সুবুদ্ধি, কাণ্ডজ্ঞান ও যুক্তিশীলতা যে কিছুটা বেশি থাকবে, তাতে সন্দেহ কি! কিন্তু তাঁরা যদি ওই মৌলিক মানবিক গুণকে বর্জন করাই শ্রেয় মনে করেন, তাহলে সাধারণ মানুষের কষ্টের শেষ থাকে না।
গণতন্ত্র হলো সমঝোতামূলক রাজনৈতিক ব্যবস্থা—আপসমূলক রাজনীতি। গণতন্ত্র সংখ্যাগরিষ্ঠের স্বৈরতন্ত্র নয় এবং সংখ্যালঘিষ্ঠের যুক্তিবুদ্ধি-বিবর্জিত আস্ফাালনও নয়। তার মাঝামাঝি একটা ব্যবস্থা, যেখানে সংখ্যায় যাঁরা কম, তাঁরা সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতৃত্ব মেনে নেন এবং সরকারি দল বিরোধী দলের যুক্তিশীল পরামর্শ গ্রহণ করে উপকৃত হয়। সরকারি দল ও বিরোধী দল তীর-বল্লম, ঢাল-তলোয়ার নিয়ে দুদিকে দাঁড়িয়ে হায়দারি হাঁক হাঁকতে থাকলে তা আর গণতন্ত্র থাকে না।
আল্লাহর অশেষ রহমতে যদি নির্বাচন হয়, তাহলে তা হবে অন্তত আড়াই বছর পর। নির্বাচন জাতীয় জীবনের অসংখ্য কর্মকাণ্ডের একটি। নির্বাচন ছাড়া রাষ্ট্রের আরও বহু কাজকাম রয়েছে। কিন্তু আড়াই বছর পরের সম্ভাব্য সেই ব্যাপারটি নিয়ে দুটি দল যা শুরু করেছে, তার তুলনা দ্বিতীয় আর কোথাও খুঁজে পাওয়া যায় না। সেই নির্বাচন কেমন সরকারের অধীনে হবে, তা নিয়ে চলছে বিতর্ক। বুদ্ধিমান ও বিজ্ঞ মানুষের তর্কবিতর্ক উপভোগ্য, কিন্তু তার বিপরীত শ্রেণীর মানুষের তর্কাতর্কি শুধু দুর্বিষহ নয়, তা ভীতির সঞ্চার করে। কোনো গুরুতর ব্যাপারে বিতর্কে এক ধরনের রস আছে, কূটতর্ক জন্ম দেয় বিতৃষ্ণার।
মহামান্য সুপ্রিম কোর্ট তত্ত্বাবধায়ক সরকার সম্পর্কে একটি রায় দিয়েছেন। এবং সে সঙ্গে দিয়েছেন একটি পর্যবেক্ষণ ও পরামর্শ। অর্থাৎ গণতান্ত্রিক সংবিধানের সঙ্গে অনির্বাচিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা সাংঘর্ষিক, সুতরাং তা অসাংবিধানিক। তবে রাজনৈতিক বাস্তবতায় আরও দুটি নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দ্বারা হতে পারে।ওই রায় ঘোষণার পর সরকারি ও বিরোধী দলের নেতারা মহামান্য আদালতের রায় পর্যালোচনা করে কী ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে, তা নির্ধারণ করতে পারতেন। সেখানে দ্বিমত দেখা দিলেও সমঝোতার মাধ্যমে একটি সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারতেন। কারণ, সিদ্ধান্তে তাঁদের পৌঁছাতেই হবে; রাষ্ট্রীয় জীবনে সিদ্ধান্তহীনতা বলে কোনো শব্দ নেই।
সরকার গঠনের পর থেকেই আওয়ামী লীগের কয়েকজন নব্য নেতা প্রকাশ্য সভা-সমাবেশেই বলাবলি করছিলেন: তত্ত্বাবধায়ক সরকার রাখার আর প্রয়োজন নেই। তা নিয়ে বাদ-প্রতিবাদ শুরু হয়। এবং বিরোধী দলের সম্ভবত এই ধারণা জন্মে যে, আওয়ামী লীগ আগামী নির্বাচন[গুলো]টি নিজেরাই করতে চায়। সচেতন মানুষও মনে করল, নিজেদের নির্বাচন নিজেরা করলে ২৪৩ আসনপ্রাপ্তি রোধ করার সাধ্যি বিধাতারও থাকবে না। মহাজোট থেকে বামদের ঝেঁটিয়ে বিদায় করা হবে। এবং জাতীয় পার্টি পাবে ৩৫ আসন। বিএনপি ১৭ আসন নিয়ে সংসদকক্ষের তিন নম্বর কাতারে ঠাঁই নেবে। তিন-চারটি আসন দেওয়া হবে ‘স্বাধীনতার সপক্ষে’র হুজুরদের।
এর মধ্যে আদালতের রায় ঘোষিত হওয়ায় মহাজোটের সামনে আর কোনো বাধাই রইল না। বিএনপি দেখতে পেল, তার সামনে চীনের মহাপ্রাচীর। প্রধানমন্ত্রী বললেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন করার সুযোগ নেই রায়ের আলোকে। সে আলো যত উজ্জ্বলই হোক, বিরোধীদলীয় নেতা চোখে দেখলেন অন্ধকার। কিন্তু অন্ধকারে চোখ বন্ধ করে রাখার পাত্রী তিনি নন। চোখ লাল করে বললেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া আর কিছু মানি না, দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাব না।’ প্রত্যুত্তরে আওয়ামী লীগের নেতারা বললেন, ‘আমাদের তত্ত্বে যখন সায় দিচ্ছেন না, নির্বাচন নির্বাচিত সরকারের অধীনেই হবে। সেই নির্বাচন প্রতিহত করার শক্তি কারও নেই।’
শেষ বাক্যটি টেলিভিশন সেট থেকে তীরের বেগে বেরিয়ে যখন আমার কানে মিসাইলের মতো আঘাত হানল, আমি হতভম্ব হয়ে গেলাম। পৃথিবীর কোনো ক্ষমতাসীন দলের গণতান্ত্রিক নেতাদের মুখ দিয়ে এ ধরনের কথা গত আড়াই শ বছরে উচ্চারিত হয়েছে বলে আমার জানা নেই। এবং একদলীয় নির্বাচন প্রতিহত করার শক্তি পৃথিবীর অন্য কোনো দেশের মানুষের আছে কি নেই, তা জানি না; কিন্তু বাংলার মানুষের বিলকুল আছে। এই পলিমাটির মানুষ বড়ই তেঁদড়।
১৯৯৫-এর শেষ এবং ১৯৯৬-এর জানুয়ারিতে আওয়ামী লীগের এই নব্য নেতারা কোথায় ছিলেন, আমার স্মরণ নেই। আমরা দেশেই ছিলাম। আলাদা মর্নিংওয়াক বা সান্ধ্যকালীন হাঁটার প্রয়োজন হয়নি ছয়টি মাস। যত বড়লোক বা বড় অফিসারই হোন না কেন, শ্রীচরণই ছিল ভরসা। কোটি টাকা দামের গাড়ি মৃত তিমি মাছের মতো পড়ে থাকত গ্যারেজে বা পোর্চের নিচে। ‘আরব্য বসন্ত’-এর চেয়েও উত্তাল সেই আন্দোলন। নেতৃত্ব আওয়ামী লীগের। তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার জন্য লাগাতার আন্দোলন-অবরোধ শুধু নয়, নাটক মঞ্চায়ন।
বিএনপি যেনতেন প্রকারে আর এক বা একাধিক মেয়াদ ক্ষমতায় থাকতে চায়। সাধারণ মানুষ যারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে, তারা তাকে সে সুযোগ দিতে নারাজ। ২৫ বছরে আমরা জাতীয় নাট্যশালা প্রতিষ্ঠিত করতে পারিনি, কিন্তু ১৯৯৬-এর শুরুতে রাতারাতি স্থায়ী রঙ্গমঞ্চ স্থাপিত হলো প্রেসক্লাবের সামনে। সেখানে দিনে ও রাতে এমন সব নাটক অভিনীত হতে লাগল, যা শেক্সপিয়ারিয়ান ট্র্যাজেডিকেও হার মানায়। অভিনেতা-অভিনেত্রী বহু, শুধু সংস্কৃতিজগতের মানুষ নয়। সরকারি কর্মকর্তাদের চোখেও স্বপ্ন টলমল করছিল। সচিবালয়ের ভেতরের চত্বরেও নাটক হতে থাকল। শুধু তাই নয়, বড়কর্তারাও গণতন্ত্র বাঁচাতে চাকরিবিধি লঙ্ঘন করে মালকোঁচা মেরে বেরিয়ে এলেন প্রেসক্লাবের সামনের রঙ্গমঞ্চে। সেখানে যে অমোঘ বাণীটি ঘোষিত হলো তা হলো: সরকারি কর্মচারীরা দলবাজি করার প্রাতিষ্ঠানিক অধিকার অর্জন করেছে। তবে সব দলের নয়, প্রজাতন্ত্রেরও নয়, দুটি দলের ভৃত্য হওয়ার অঙ্গীকার ঘোষিত হলো।
একদলীয় নির্বাচনের কী পরিণাম, তা আশরাফ সাহেবের চেয়ে বেগম জিয়া ভালো জানেন। ১৯৯৫ সালের ২৪ নভেম্বর পঞ্চম জাতীয় সংসদ ভেঙে দেওয়ার পর সংবিধান অনুযায়ী ১৯৯৬-এর ২১ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ষষ্ঠ সংসদ নির্বাচন সম্পন্নের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা ছিল। সেই পরিপ্রেক্ষিতে দলীয় সরকার ১৫ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন করে। আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগীরা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে নির্বাচন বর্জন করে। পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে বাজে ও কারচুপির নির্বাচন হয়। বিএনপি পায় ২৭৮টি আসন। সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসেবে বিএনপি সরকার গঠন করে। ১৯ মার্চ সংসদ অধিবেশন বসে। আওয়ামী লীগের দাবি অনুযায়ী ২১ মার্চ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিধানসংবলিত ত্রয়োদশ সংশোধনী বিল পাস হয়। বিল পাসের পর সংসদের অধিবেশন ৩১ মার্চ পর্যন্ত মুলতবি করা হয়। এর মধ্যে প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার পদত্যাগের দাবি উঠলে তিনি ৩০ মার্চ রাষ্ট্রপতি আবদুর রহমান বিশ্বাসের কাছে লিখিতভাবে সংসদ ভেঙে দেওয়ার অনুরোধ করেন। সেদিন খালেদা জিয়ার ইতিবাচক ভূমিকাটিরও ঐতিহাসিক তাৎপর্য রয়েছে। তাঁকে খাটো করে দেখা যাবে না। তাঁর পক্ষকালের প্রধানমন্ত্রিত্ব ছিল সম্পূর্ণ সাংবিধানিক।
একদলীয় নির্বাচন আমরা বলছি বটে, বস্তুত তা একদলীয় ছিল না। ষষ্ঠ নির্বাচনে ‘৪২টি দল’ অংশ নিয়েছিল। তা সত্ত্বেও খালেদা জিয়ার শপথ অনুষ্ঠানে বিদেশি কূটনীতিকেরা যোগ দেননি দু-একটি গৌণ দেশের ছাড়া। বহির্বিশ্বে ওই নির্বাচনের কোনো বৈধতা ছিল না। এবারও যদি বিএনপিকে বাদ দিয়ে আওয়ামী লীগ নির্বাচন করে, সেখানে ১৪ দুগুণে ২৮ দল শুধু নয়, ৫৬ দল পাওয়া যাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য। কিন্তু সেই নির্বাচনকে পৃথিবীর কোনো দেশই বৈধতা দেবে না।
মহাজোট মনে করছে, আমেরিকা ও ভারত পক্ষে আছে; কোনো চিন্তা নেই। ভুল ধারণা। ভারতের মতো মজবুত গণতান্ত্রিক দেশ অন্ধের মতো কাউকে সমর্থন দেবে না। কোনো নেতার সঙ্গে ভারত সরকারের ব্যক্তিগত সম্পর্ক যত উষ্ণই হোক, রাষ্ট্রের জনগণের গণতান্ত্রিক চেতনার বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক ভারত দাঁড়াতে পারে না। আর আমেরিকা? সে কী করবে, তা এ মুহূর্তে বারাক হোসেন ওবামাও বলতে পারবেন না। ঠিক সময় তাঁরা ঠিক কাজটি করবেন; দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পর থেকে যা সুচারুভাবে করছেন।
ভারত নেপালে যা করতে পারে, বাংলাদেশে তা পারে না। নেপাল হিন্দুপ্রধান রাষ্ট্র। বাংলাদেশ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রাষ্ট্র। এখানে ব্যক্তি বা দলবিশেষকে রক্ষার জন্য অযাচিত হস্তক্ষেপ করলে সেটা হবে তার জন্য ক্ষতিকর। বহির্বিশ্বে তার গণতান্ত্রিক ও শান্তিবাদী ভাবমূর্তি চূর্ণ হবে।
তত্ত্বাবধায়ক বিষয়টি সাংবিধানিক ও আইনগত। কিন্তু তার চেয়েও বেশি রাজনৈতিক। আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় পাওয়া যায়নি। তবে আইনি জটিলতার যদি মীমাংসা হয়েও যায়, তাহলেও আগামী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সর্বদলগ্রহণযোগ্য ভাগ্যবিড়ম্বিত প্রধান উপদেষ্টা কে হবেন, তা কোনো জ্যোতিষীর পক্ষেও বলা সম্ভব নয়। যিনি হবেন, তাঁর হয়তো মাথা ফাটবে না; কিন্তু তাঁর ‘হতে-যাওয়ার’ যে প্রক্রিয়া, তাতে মাথা ফাটা নয়, জীবন যাবে কত জনের, তা বলা মুশকিল। তবে সবচেয়ে বেশি লাভবান হবে দামি গাড়ি প্রস্তুতকারী কোম্পানিগুলো।
বিজ্ঞ ও বিখ্যাত সংবিধান-বিশেষজ্ঞেরা বলেছেন, ‘রায় ঘোষণার মুহূর্ত থেকেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল হয়ে গেছে।’ এ বক্তব্যের সঙ্গে আমরা মাথা চুলকে ও ঢোক গিলে যতই মিনমিন করে দ্বিমত পোষণ করি না কেন—তা কোনো কাজে আসবে না। মোরগের কল্লা কোপ দিয়ে কাটার পর তাকে আধা জীবিত মনে করা নির্বুদ্ধিতা। এখন জীবিত মোরগ চাইলে বাজার থেকে কিনে আনতে হবে। হাটবাজার থেকে মোরগ কিনে আনা মানে সংবিধান সংশোধন করে ব্যবস্থাটির আইনি-প্রক্রিয়ার সুরাহা করা। গলাকাটা মোরগের ঠ্যাং ধরে টানাটানি করে লাভ হবে না।
ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেওয়ার কথা বলা হয় না, কিন্তু ইতিহাস পাঠ করার উপদেশ দেওয়া হয় প্রতিদিন। জাতির গোটা ইতিহাস নয়—একটি নির্দিষ্ট সময়ের ইতিহাস। কারণ, অল্প সময়ের ইতিহাস পাঠ করতে সময় লাগবে কম। ষষ্ঠ জাতীয় সংসদের মেয়াদ ছিল ১২ দিন মাত্র। ওই সংসদের জন্মের পটভূমি, জন্ম ও মৃত্যুর ইতিহাস পাঠ করুন। তবে গড়গড় করে পাঠ করলে হবে না, মনোযোগ দিয়ে পাঠ করতে হবে এবং তা থেকে শিক্ষা নিতে হবে। ষষ্ঠ সংসদের জন্ম-মৃত্যুবৃত্তান্ত পড়তে হবে কোপার্নিকাস কথিত যে আক্কেল, মেধা ও যুক্তিশীলতা বিধাতা মানুষকে দান করেছেন, সেগুলোর সুষ্ঠু প্রয়োগ করে।
সৈয়দ আবুল মকসুুদ: গবেষক, প্রাবন্ধিক ও কলাম লেখক।
No comments