জন্মদিন-বন্ধুকে একাত্তরের শুভেচ্ছা by সালমা খান
আজ নোবেল বিজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের ৭১তম জন্মদিন। ১৯৪০ সালের ২৮ জুন চট্টগ্রামের এক সমৃদ্ধ পরিবারে ইউনূসের জন্ম। বর্তমান বাংলাদেশে সম্ভবত ইউনূসই একমাত্র ব্যক্তি, যাঁকে সারা বিশ্ব চেনে। বঞ্চিত ও দারিদ্র্যপ্রপীড়িত জনগণকে দারিদ্র্যসীমা থেকে উত্তরণের লাগসই কর্মকৌশল হিসেবে ক্ষুদ্রঋণের সফল ব্যবহার ও তার পাশাপাশি শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও
নারীর ক্ষমতায়নসহ মৌলিক সামাজিক পরিবর্তনে ইতিবাচক সূচক সৃষ্টিতে ইউনূসের অবদান বিশ্বস্বীকৃত। শুধু দেশেই নয়, সমগ্র বিশ্বে ইউনূস আজ আশা ও উত্তরণের নাম, সম্ভাবনার প্রতীক। ইউনূসের সঙ্গে আমার পরিচয় প্রায় ৪০ বছর আগে, যখন আমি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে আমার কর্মজীবন শুরু করি। ১৯৭২ সালে বিদেশ থেকে ফিরে ইউনূস বিশ্ববিদ্যালয়ের একই বিভাগে যোগ দেন।
গ্রামীণ ব্যাংকের প্রাতিষ্ঠানিক যাত্রা ১৯৮৩ সালে শুরু হলেও দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে ইউনূসের সংগ্রাম শুরু হয় ১৯৭৪ সালে, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়সংলগ্ন জোবরা গ্রাম থেকে এবং দীর্ঘ ৩৭ বছরের দুর্বিনীত ও নিরন্তর পথপরিক্রমায় অনেক সময়ই তাঁকে কাছ থেকে দেখার সুযোগ হয়েছে আমার।
মুক্তিযুদ্ধে আমরা বাংলাদেশে যে বৈষম্যহীন ও সব নাগরিকের মানবিক মর্যাদাভিত্তিক রাষ্ট্র বির্নিমাণের স্বপ্ন দেখেছিলাম, যে স্বপ্ন আমাদের অধিকাংশের মধ্যে অজান্তে বিলীন হতে চলেছিল, ইউনূসকে সদা ব্যস্ত দেখেছি সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথ খুঁজতে। ১৯৭৬ সালে প্রকল্প হিসেবে গ্রামীণ ব্যাংকের সৃষ্টি। নারীর দুঃখ, কষ্ট, আনন্দ, বেদনা আমরা অনেকেই উপলব্ধি করতাম অসহায়কের ভূমিকায়, জন্ম থেকেই দেখে আসছি। কিন্তু ইউনূস এ সমস্যার নিষ্পাদন করতে উদ্যোগী হয়েছেন, সমাজসৃষ্ট সমস্যাকে সামাজিক কাঠামো পরিবর্তনের মাধ্যমেই সুরাহা করতে পদক্ষেপ নিয়েছেন, যা ছিল এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ। ইউনূস তাঁর সৃষ্ট গ্রামীণ ব্যাংকের মাধ্যমে কেবল দরিদ্র জনগণ তথা নারীর অর্থনৈতিক মুক্তি দেওয়ার পাশাপাশি তাঁদের স্বাস্থ্য, সন্তানের শিক্ষা, নারীর দৈনন্দিন জীবনের কর্মভার লাঘব থেকে শুরু করে যৌতুক প্রথা পরিহার, স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা নির্মাণ ইত্যাদি করে দিয়েছেন।
গ্রামীণ ব্যাংক প্রকল্পের পাঁচ বছরের মাথায় ১৯৮২ সালে ইউনিসেফের নারী উন্নয়ন শাখার উদ্যোগে গ্রামীণ ব্যাংকের নারী গ্রুপ লিডারদের প্রশিক্ষণের প্রভাবের ওপর একটি মূল্যায়নের দায়িত্ব বর্তায় আমার ওপর। দেখে অবাক হয়েছি, এমনকি রক্ষণশীল চট্টগ্রাম ও টাঙ্গাইলের নারীদের মধ্যে কী অভাবনীয় পরিবর্তন—নতুন করে যেন তাঁরা নিজেদের আবিষ্কার করছেন। তাঁর সৃষ্ট গ্রামীণ ব্যাংক কেবল গরিব নারীদের কর্মসংস্থানের পথ দেখায়নি, তাঁদের স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথও দেখিয়েছে। তাই আজ গ্রামীণ ব্যাংকের ৮৩ লাখ দরিদ্র নারী আত্মকর্মসংস্থানের মাধ্যমে শুধু ভাগ্যকেই জয় করেননি, তাঁদের সন্তানদের উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করার প্রয়াস নিয়েছেন, যার প্রমাণ মেলে ৫২ হাজার উচ্চশিক্ষা ঋণগ্রহীতার স্বপ্নপূরণের পথচলায়, যাদের মধ্যে অনেকেই হয়তো একদিন এ দেশের নেতৃত্ব দেবে।
গ্রামীণ ব্যাংকের একটি বড় সাফল্য শুধু অর্থ লেনদেনের পরিধির মধ্যে আবদ্ধ না থাকা। গ্রামীণ কল্যাণের ৫৩টি স্বাস্থ্যকেন্দ্র, দুটি চক্ষু হাসপাতাল এবং আলট্রাসনোগ্রাম মেশিনসমৃদ্ধ গ্রামীণ মাতৃমঙ্গল ক্লিনিক এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ। গ্রামীণ ব্যাংকের ধারণানির্ভর আরও বহু প্রতিষ্ঠানের জনক ইউনূস, যেমন—গ্রামীণ শক্তি, গ্রামীণফোন, গ্রামীণ চেক, গ্রামীণ মৎস্য, গ্রামীণ তথ্যপ্রযুক্তি; যার আওতায় আরও ৩৫ লাখ পরিবার দারিদ্র্য উত্তরণের পথের অভিযাত্রী। দরিদ্র জনগণকে সামাজিক উন্নয়নের আওতায় আনার গ্রামীণ ব্যাংকের সাফল্যের ধারাবাহিকতায় বহির্বিশ্বের দেশসমূহকে সহায়তার উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করা হয় গ্রামীণ ট্রাস্ট।
গ্রামীণ ট্রাস্টের মাধ্যমে এশিয়া, ইউরোপ, মধ্য-উত্তর আমেরিকা, দক্ষিণ আমেরিকা ও আফ্রিকার আরও ১০০টির অধিক দেশে গ্রামীণ ব্যাংক মডেলে দারিদ্র্য নিরসনের কাজ চলছে, যার মধ্যে ভারত, চীন ও আমেরিকাও রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন ও বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন ইউনূসের কাজের বিশিষ্ট গুণগ্রাহী। নিরলস কর্মজীবনে ইউনূস শুধু গ্রামীণ ব্যাংককেই একটি বিশ্ব-প্রতিষ্ঠান হিসেবে তৈরি করেননি, বিশ্বজুড়ে বঞ্চনা ও দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে এক লড়াকু সৈনিক হিসেবে নিজেকে পরিচিত করেছেন। তাই নোবেল জয়ের আগে থেকেই বিপুল বিশ্ব দুই হাত বাড়িয়ে তাঁকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে—বাংলাদেশের নাগরিক স্বীকৃতি পেয়েছে বিশ্ব নাগরিকের বিরল কর্মমানের। বাংলাদেশের গর্ব যে বার্লিন প্রাচীর ভাঙার কুড়ি বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সমগ্র বিশ্বের মধ্য থেকে ইউনূসই আমন্ত্রিত হলেন। নেলসন ম্যান্ডেলার ৯০তম জন্মদিনের একমাত্র বক্তা ছিলেন ইউনূস। ভারতীয় পার্লামেন্টের যৌথ অধিবেশনের হীরেন মুখার্জি স্মারক বক্তৃতার বক্তাও ছিলেন ইউনূস।
বিশ্বজুড়ে ইউনূসের স্বীকৃতির তালিকাও সুদীর্ঘ। বাংলাদেশের জাতীয় পর্যায়ে আটটি পুরস্কার পেয়েছেন, যার মধ্যে ১৯৭৮ সালে প্রেসিডেন্ট অ্যাওয়ার্ড, ১৯৮৭ সালে স্বাধীনতা পুরস্কার এবং ১৯৯৫ সালে প্রাপ্ত সেন্ট্রাল ব্যাংক পুরস্কার অন্তর্ভুক্ত। ২০০৬ সালে নোবেল পুরস্কার ব্যতিরেকে এযাবৎ ইউনূস ৯৯টি আন্তর্জাতিক পুরস্কার পেয়েছেন, যার মধ্যে ফিলিপাইনের ম্যাগসাইসাই অ্যাওয়ার্ড, ভারতের ইন্দিরা গান্ধী প্রাইজ, আমেরিকার গান্ধী ইনস্টিটিউটের মহাত্মা গান্ধী অ্যাওয়ার্ড, আমেরিকার প্রেসিডেন্সিয়াল মেডেল অব ফ্রিডম অ্যাওয়ার্ড, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের নেসটার্ড অ্যাওয়ার্ড, সুইজারল্যান্ডের আগাখান অ্যাওয়ার্ড, রোটারি অ্যাওয়ার্ড অন্তর্ভুক্ত। ইউনূসই একমাত্র ব্যক্তি, যিনি বিশ্বের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে ৪৫টি সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি পেয়েছেন।
বাংলাদেশে বর্তমানে সামাজিক ও জাতীয়ভাবে বিশিষ্ট ব্যক্তিদের জন্মদিন উদ্যাপনের যে সুরেওয়াজ চালু হয়েছে, সে ক্ষেত্রে ইউনূসের জন্মদিন জাতীয়ভাবে অথবা ন্যূনতম সুশীল সমাজের দ্বারা উদ্যাপিত হওয়ার যথেষ্ট যৌক্তিকতা রয়েছে। তা সত্ত্বেও ইউনূসের ৭০ বছরের মাথায় পৌঁছানোর জন্য যে খেসারত দিতে হলো, আশা করি, একাত্তরের শুভ কামনায় তা পূরণ হবে। যাঁর অন্তর্দৃষ্টি আছে, সৃষ্টি করার ক্ষমতা আছে, তিনিই সৃষ্টি করবেন। সৃষ্টিশীল মানুষ দেশ, কাল, সময়, বয়স—সবকিছুর ঊর্ধ্বে। নিয়মের বেড়িতে তাঁদের বাঁধতে গেলে ক্ষতি সমাজের, দেশের, বিশ্বের। প্রিয় বন্ধু ইউনূসকে শুভ জন্মদিন।
সালমা খান
গ্রামীণ ব্যাংকের প্রাতিষ্ঠানিক যাত্রা ১৯৮৩ সালে শুরু হলেও দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে ইউনূসের সংগ্রাম শুরু হয় ১৯৭৪ সালে, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়সংলগ্ন জোবরা গ্রাম থেকে এবং দীর্ঘ ৩৭ বছরের দুর্বিনীত ও নিরন্তর পথপরিক্রমায় অনেক সময়ই তাঁকে কাছ থেকে দেখার সুযোগ হয়েছে আমার।
মুক্তিযুদ্ধে আমরা বাংলাদেশে যে বৈষম্যহীন ও সব নাগরিকের মানবিক মর্যাদাভিত্তিক রাষ্ট্র বির্নিমাণের স্বপ্ন দেখেছিলাম, যে স্বপ্ন আমাদের অধিকাংশের মধ্যে অজান্তে বিলীন হতে চলেছিল, ইউনূসকে সদা ব্যস্ত দেখেছি সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথ খুঁজতে। ১৯৭৬ সালে প্রকল্প হিসেবে গ্রামীণ ব্যাংকের সৃষ্টি। নারীর দুঃখ, কষ্ট, আনন্দ, বেদনা আমরা অনেকেই উপলব্ধি করতাম অসহায়কের ভূমিকায়, জন্ম থেকেই দেখে আসছি। কিন্তু ইউনূস এ সমস্যার নিষ্পাদন করতে উদ্যোগী হয়েছেন, সমাজসৃষ্ট সমস্যাকে সামাজিক কাঠামো পরিবর্তনের মাধ্যমেই সুরাহা করতে পদক্ষেপ নিয়েছেন, যা ছিল এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ। ইউনূস তাঁর সৃষ্ট গ্রামীণ ব্যাংকের মাধ্যমে কেবল দরিদ্র জনগণ তথা নারীর অর্থনৈতিক মুক্তি দেওয়ার পাশাপাশি তাঁদের স্বাস্থ্য, সন্তানের শিক্ষা, নারীর দৈনন্দিন জীবনের কর্মভার লাঘব থেকে শুরু করে যৌতুক প্রথা পরিহার, স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা নির্মাণ ইত্যাদি করে দিয়েছেন।
গ্রামীণ ব্যাংক প্রকল্পের পাঁচ বছরের মাথায় ১৯৮২ সালে ইউনিসেফের নারী উন্নয়ন শাখার উদ্যোগে গ্রামীণ ব্যাংকের নারী গ্রুপ লিডারদের প্রশিক্ষণের প্রভাবের ওপর একটি মূল্যায়নের দায়িত্ব বর্তায় আমার ওপর। দেখে অবাক হয়েছি, এমনকি রক্ষণশীল চট্টগ্রাম ও টাঙ্গাইলের নারীদের মধ্যে কী অভাবনীয় পরিবর্তন—নতুন করে যেন তাঁরা নিজেদের আবিষ্কার করছেন। তাঁর সৃষ্ট গ্রামীণ ব্যাংক কেবল গরিব নারীদের কর্মসংস্থানের পথ দেখায়নি, তাঁদের স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথও দেখিয়েছে। তাই আজ গ্রামীণ ব্যাংকের ৮৩ লাখ দরিদ্র নারী আত্মকর্মসংস্থানের মাধ্যমে শুধু ভাগ্যকেই জয় করেননি, তাঁদের সন্তানদের উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করার প্রয়াস নিয়েছেন, যার প্রমাণ মেলে ৫২ হাজার উচ্চশিক্ষা ঋণগ্রহীতার স্বপ্নপূরণের পথচলায়, যাদের মধ্যে অনেকেই হয়তো একদিন এ দেশের নেতৃত্ব দেবে।
গ্রামীণ ব্যাংকের একটি বড় সাফল্য শুধু অর্থ লেনদেনের পরিধির মধ্যে আবদ্ধ না থাকা। গ্রামীণ কল্যাণের ৫৩টি স্বাস্থ্যকেন্দ্র, দুটি চক্ষু হাসপাতাল এবং আলট্রাসনোগ্রাম মেশিনসমৃদ্ধ গ্রামীণ মাতৃমঙ্গল ক্লিনিক এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ। গ্রামীণ ব্যাংকের ধারণানির্ভর আরও বহু প্রতিষ্ঠানের জনক ইউনূস, যেমন—গ্রামীণ শক্তি, গ্রামীণফোন, গ্রামীণ চেক, গ্রামীণ মৎস্য, গ্রামীণ তথ্যপ্রযুক্তি; যার আওতায় আরও ৩৫ লাখ পরিবার দারিদ্র্য উত্তরণের পথের অভিযাত্রী। দরিদ্র জনগণকে সামাজিক উন্নয়নের আওতায় আনার গ্রামীণ ব্যাংকের সাফল্যের ধারাবাহিকতায় বহির্বিশ্বের দেশসমূহকে সহায়তার উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করা হয় গ্রামীণ ট্রাস্ট।
গ্রামীণ ট্রাস্টের মাধ্যমে এশিয়া, ইউরোপ, মধ্য-উত্তর আমেরিকা, দক্ষিণ আমেরিকা ও আফ্রিকার আরও ১০০টির অধিক দেশে গ্রামীণ ব্যাংক মডেলে দারিদ্র্য নিরসনের কাজ চলছে, যার মধ্যে ভারত, চীন ও আমেরিকাও রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন ও বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন ইউনূসের কাজের বিশিষ্ট গুণগ্রাহী। নিরলস কর্মজীবনে ইউনূস শুধু গ্রামীণ ব্যাংককেই একটি বিশ্ব-প্রতিষ্ঠান হিসেবে তৈরি করেননি, বিশ্বজুড়ে বঞ্চনা ও দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে এক লড়াকু সৈনিক হিসেবে নিজেকে পরিচিত করেছেন। তাই নোবেল জয়ের আগে থেকেই বিপুল বিশ্ব দুই হাত বাড়িয়ে তাঁকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে—বাংলাদেশের নাগরিক স্বীকৃতি পেয়েছে বিশ্ব নাগরিকের বিরল কর্মমানের। বাংলাদেশের গর্ব যে বার্লিন প্রাচীর ভাঙার কুড়ি বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সমগ্র বিশ্বের মধ্য থেকে ইউনূসই আমন্ত্রিত হলেন। নেলসন ম্যান্ডেলার ৯০তম জন্মদিনের একমাত্র বক্তা ছিলেন ইউনূস। ভারতীয় পার্লামেন্টের যৌথ অধিবেশনের হীরেন মুখার্জি স্মারক বক্তৃতার বক্তাও ছিলেন ইউনূস।
বিশ্বজুড়ে ইউনূসের স্বীকৃতির তালিকাও সুদীর্ঘ। বাংলাদেশের জাতীয় পর্যায়ে আটটি পুরস্কার পেয়েছেন, যার মধ্যে ১৯৭৮ সালে প্রেসিডেন্ট অ্যাওয়ার্ড, ১৯৮৭ সালে স্বাধীনতা পুরস্কার এবং ১৯৯৫ সালে প্রাপ্ত সেন্ট্রাল ব্যাংক পুরস্কার অন্তর্ভুক্ত। ২০০৬ সালে নোবেল পুরস্কার ব্যতিরেকে এযাবৎ ইউনূস ৯৯টি আন্তর্জাতিক পুরস্কার পেয়েছেন, যার মধ্যে ফিলিপাইনের ম্যাগসাইসাই অ্যাওয়ার্ড, ভারতের ইন্দিরা গান্ধী প্রাইজ, আমেরিকার গান্ধী ইনস্টিটিউটের মহাত্মা গান্ধী অ্যাওয়ার্ড, আমেরিকার প্রেসিডেন্সিয়াল মেডেল অব ফ্রিডম অ্যাওয়ার্ড, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের নেসটার্ড অ্যাওয়ার্ড, সুইজারল্যান্ডের আগাখান অ্যাওয়ার্ড, রোটারি অ্যাওয়ার্ড অন্তর্ভুক্ত। ইউনূসই একমাত্র ব্যক্তি, যিনি বিশ্বের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে ৪৫টি সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি পেয়েছেন।
বাংলাদেশে বর্তমানে সামাজিক ও জাতীয়ভাবে বিশিষ্ট ব্যক্তিদের জন্মদিন উদ্যাপনের যে সুরেওয়াজ চালু হয়েছে, সে ক্ষেত্রে ইউনূসের জন্মদিন জাতীয়ভাবে অথবা ন্যূনতম সুশীল সমাজের দ্বারা উদ্যাপিত হওয়ার যথেষ্ট যৌক্তিকতা রয়েছে। তা সত্ত্বেও ইউনূসের ৭০ বছরের মাথায় পৌঁছানোর জন্য যে খেসারত দিতে হলো, আশা করি, একাত্তরের শুভ কামনায় তা পূরণ হবে। যাঁর অন্তর্দৃষ্টি আছে, সৃষ্টি করার ক্ষমতা আছে, তিনিই সৃষ্টি করবেন। সৃষ্টিশীল মানুষ দেশ, কাল, সময়, বয়স—সবকিছুর ঊর্ধ্বে। নিয়মের বেড়িতে তাঁদের বাঁধতে গেলে ক্ষতি সমাজের, দেশের, বিশ্বের। প্রিয় বন্ধু ইউনূসকে শুভ জন্মদিন।
সালমা খান
No comments