চারদিক-শিশুদের জন্য পথনাটক by মো. সাইফুল্লাহ
সোনারগাঁও মোড়ে পপকর্ন বিক্রি করে ছোট্ট ছেলে মাসুম। ১৪ জুন প্রতিদিনকার মতো পপকর্ন বিক্রি করতে পথে নেমে সে লক্ষ করল, সার্ক ফোয়ারার উল্টো পাশে সড়কদ্বীপের ওপর কিসের যেন জটলা। পায়ে পায়ে এগিয়ে গেল সে। দেখল মাইক্রোফোন, ক্যামেরা, সাউন্ড বক্স—সব মিলিয়ে বেশ বড়সড় আয়োজন। ভয়ে ভয়ে উঁকি দিচ্ছিল সে।
এমন সময় এক ভদ্রমহিলা কাছে ডেকে নিলেন তাকে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই মাসুমের নোংরা শার্টটার ওপর পরিয়ে দেওয়া হলো রংচঙে নতুন একটা টি-শার্ট। মাসুমের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, সে পড়তে জানে না। জানলে নিশ্চয়ই সে পড়ে নিতে পারত টি-শার্টটির গায়ে লেখা আছে, ‘আমরা শিশু। আমাদের একটাই কাজ। হাসি হাসি খেলা খেলা। গান গেয়ে লেখাপড়া।’
১২ জুন ছিল ‘শিশুশ্রমের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ দিবস’। দিবসটি সামনে রেখে শিশুশ্রমের বিরুদ্ধে আন্দোলনের অংশ হিসেবে ব্যতিক্রমধর্মী একটি পথনাটকের আয়োজন করে ‘ব্ল্যাক ট্রুথ ফাউন্ডেশন’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান। ১৪ জুন একই সঙ্গে, একই সময়ে ঢাকার ব্যস্ততম তিনটি সড়ক—সোনারগাঁও মোড়, শাহবাগ মোড় ও বিজয় সরণি মোড়ের সড়কদ্বীপে আয়োজন করা হয় এই অনুষ্ঠানের। ‘ব্ল্যাক ট্রুথ ফাউন্ডেশন’-এর প্রতিষ্ঠাতা, নাট্যব্যক্তিত্ব রোকেয়া প্রাচী বলেন, ‘যেসব শিশু কখনো স্কুলের মুখ দেখেনি, আমরা তাদের স্কুলের ঠিকানা খুঁজে দিতে চাই। এখনই যদি শিশুশ্রম রোধ করা না যায়, ২০১৫ সাল নাগাদ শিশুশ্রমিকের সংখ্যা হবে ১০ লাখ। আমরা চাই “শিশুশ্রমিক” শব্দটি মুছে যাক, শুধু “শিশু” শব্দটি বেঁচে থাকুক।’ রোকেয়া প্রাচীর সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করতে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন আবৃত্তিকার শিমুল মুস্তাফা এবং রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী চঞ্চল খান। শিমুল মুস্তাফা বলেন, ‘আমরা যারা একটু সচ্ছল, তারা চাইলেই অন্তত একটি শিশুকে লেখাপড়া করানোর দায়িত্ব নিতে পারি।’ অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন সমাজসেবী ওয়াহিদা বানু ও ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সৈয়দ মিজানুর রহমান। তাঁরা শিশুশ্রমের বিরুদ্ধে সবাইকে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানান। অনুষ্ঠান চলাকালীন আয়োজকেরা রাস্তায় সে সময়ে কর্মরত শিশুশ্রমিকদের টি-শার্ট উপহার দেন।
বক্তাদের বক্তব্য শেষে ‘ব্ল্যাক ট্রুথ ফাউন্ডেশন’-এর থিয়েটার গ্রুপের শিশুরা আমরা শিশু নামে একটি নাটক মঞ্চস্থ করে। নাটকের শুরুতে বেশ কিছু শিশু রঙিন মুখোশ পরে মঞ্চে প্রবেশ করে। মঞ্চজুড়ে তারা নেচে-খেলে বেড়ায়। এমন সময় কালো কাপড়ে ঢাকা একটি চরিত্র মঞ্চে আসে। খুলে ফেলে শিশুদের রঙিন মুখোশ। বদলে যায় শিশুগুলোর হাসি-খুশি মুখ। রাজ্যের ক্লান্তি নিয়ে তারা পানি, চকলেট, লেবু, পপকর্ন ইত্যাদি ফেরি করতে শুরু করে। নাটকের এ পর্যায়ে দেখানো হয়, কীভাবে এসব শিশুশ্রমিক তাদের মালিকদের দ্বারা নির্যাতিত হয়। নাটকে শিশুরা তিনটি ভিন্ন ভিন্ন পরিবারের চিত্র তুলে ধরে, যার মাধ্যমে কীভাবে শিশুরা শিশুশ্রমের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে, তা তুলে ধরা হয়। নাটকের শেষে দেখা যায়, রাস্তায় গাড়ির হর্ন, মানুষের কোলাহলকে ছাপিয়ে স্কুলের ঘণ্টা ওদের বিচলিত করে, ওরাও স্কুলে পড়তে চায়। নাটকটি পরিচালনা করেছেন মুস্তাফিজ শাহীন।
পুরো অনুষ্ঠানেই আয়োজকদের সঙ্গে ছিল উৎসাহী দর্শকের ভিড়। দর্শকদের মধ্যে দাঁড়িয়ে নাটক উপভোগ করছিল মাসুমও। নাটক শেষ হতেই কোন ফাঁকে সে আবার ছুটে গেল রাস্তায়। ইতস্তত ছোটাছুটি করে সে টোকা দেয় সিগন্যালে অপেক্ষারত শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত গাড়িগুলোর জানালায়।
শুধু কি জানালায়, মনেও কি টোকা দিয়ে যায় না...?!
মো. সাইফুল্লাহ
১২ জুন ছিল ‘শিশুশ্রমের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ দিবস’। দিবসটি সামনে রেখে শিশুশ্রমের বিরুদ্ধে আন্দোলনের অংশ হিসেবে ব্যতিক্রমধর্মী একটি পথনাটকের আয়োজন করে ‘ব্ল্যাক ট্রুথ ফাউন্ডেশন’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান। ১৪ জুন একই সঙ্গে, একই সময়ে ঢাকার ব্যস্ততম তিনটি সড়ক—সোনারগাঁও মোড়, শাহবাগ মোড় ও বিজয় সরণি মোড়ের সড়কদ্বীপে আয়োজন করা হয় এই অনুষ্ঠানের। ‘ব্ল্যাক ট্রুথ ফাউন্ডেশন’-এর প্রতিষ্ঠাতা, নাট্যব্যক্তিত্ব রোকেয়া প্রাচী বলেন, ‘যেসব শিশু কখনো স্কুলের মুখ দেখেনি, আমরা তাদের স্কুলের ঠিকানা খুঁজে দিতে চাই। এখনই যদি শিশুশ্রম রোধ করা না যায়, ২০১৫ সাল নাগাদ শিশুশ্রমিকের সংখ্যা হবে ১০ লাখ। আমরা চাই “শিশুশ্রমিক” শব্দটি মুছে যাক, শুধু “শিশু” শব্দটি বেঁচে থাকুক।’ রোকেয়া প্রাচীর সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করতে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন আবৃত্তিকার শিমুল মুস্তাফা এবং রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী চঞ্চল খান। শিমুল মুস্তাফা বলেন, ‘আমরা যারা একটু সচ্ছল, তারা চাইলেই অন্তত একটি শিশুকে লেখাপড়া করানোর দায়িত্ব নিতে পারি।’ অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন সমাজসেবী ওয়াহিদা বানু ও ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সৈয়দ মিজানুর রহমান। তাঁরা শিশুশ্রমের বিরুদ্ধে সবাইকে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানান। অনুষ্ঠান চলাকালীন আয়োজকেরা রাস্তায় সে সময়ে কর্মরত শিশুশ্রমিকদের টি-শার্ট উপহার দেন।
বক্তাদের বক্তব্য শেষে ‘ব্ল্যাক ট্রুথ ফাউন্ডেশন’-এর থিয়েটার গ্রুপের শিশুরা আমরা শিশু নামে একটি নাটক মঞ্চস্থ করে। নাটকের শুরুতে বেশ কিছু শিশু রঙিন মুখোশ পরে মঞ্চে প্রবেশ করে। মঞ্চজুড়ে তারা নেচে-খেলে বেড়ায়। এমন সময় কালো কাপড়ে ঢাকা একটি চরিত্র মঞ্চে আসে। খুলে ফেলে শিশুদের রঙিন মুখোশ। বদলে যায় শিশুগুলোর হাসি-খুশি মুখ। রাজ্যের ক্লান্তি নিয়ে তারা পানি, চকলেট, লেবু, পপকর্ন ইত্যাদি ফেরি করতে শুরু করে। নাটকের এ পর্যায়ে দেখানো হয়, কীভাবে এসব শিশুশ্রমিক তাদের মালিকদের দ্বারা নির্যাতিত হয়। নাটকে শিশুরা তিনটি ভিন্ন ভিন্ন পরিবারের চিত্র তুলে ধরে, যার মাধ্যমে কীভাবে শিশুরা শিশুশ্রমের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে, তা তুলে ধরা হয়। নাটকের শেষে দেখা যায়, রাস্তায় গাড়ির হর্ন, মানুষের কোলাহলকে ছাপিয়ে স্কুলের ঘণ্টা ওদের বিচলিত করে, ওরাও স্কুলে পড়তে চায়। নাটকটি পরিচালনা করেছেন মুস্তাফিজ শাহীন।
পুরো অনুষ্ঠানেই আয়োজকদের সঙ্গে ছিল উৎসাহী দর্শকের ভিড়। দর্শকদের মধ্যে দাঁড়িয়ে নাটক উপভোগ করছিল মাসুমও। নাটক শেষ হতেই কোন ফাঁকে সে আবার ছুটে গেল রাস্তায়। ইতস্তত ছোটাছুটি করে সে টোকা দেয় সিগন্যালে অপেক্ষারত শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত গাড়িগুলোর জানালায়।
শুধু কি জানালায়, মনেও কি টোকা দিয়ে যায় না...?!
মো. সাইফুল্লাহ
No comments