প্রাকৃতিক সম্পদ-গ্যাস উৎপাদন অংশীদারি চুক্তির সহজ পাঠ by ম. তামিম
প্রথমেই যে প্রশ্নটি সবার মনে দেখা দেয় সেটা হলো, বিদেশি তেল কোম্পানির সঙ্গে আমাদের চুক্তির প্রয়োজনীয়তার বিষয়। অংশীদারি চুক্তির ধারণাটি এসেছে ইন্দোনেশিয়ার বর্গাচাষিদের চুক্তি থেকে, যা কিনা আমাদের দেশেও চলে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। ইন্দোনেশিয়াই ১৯৬৮ সালে প্রথম তেল-গ্যাস উৎপাদনের অংশীদারি চুক্তি স্বাক্ষর করে।
আরেকটি উদাহরণ দেওয়া যায় আবাসনশিল্পকে দিয়ে। জমির মালিক একটি পয়সাও খরচ না করে, কোনো রকম ঝুঁকি না নিয়ে বিনিয়োগকারী ডেভেলপারকে দিয়ে জায়গাভেদে ৪০ থেকে ৬০ শতাংশ ফ্ল্যাটের মালিক হয়ে যান। মালিক কিন্তু ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ঠিকাদার-ইঞ্জিনিয়ার নিয়োগ করে বাড়িটি নিজেই করতে পারতেন, কিন্তু এখানে একটা বিশাল অর্থায়নের ঝুঁকি আছে। গ্যাস উৎপাদন অংশীদারি চুক্তি করার অনেক কারণ আছে। যেমন—লোকবলের অভাব, প্রযুক্তির অভাব বা অর্থের অভাব। পৃথিবীতে ৫০টির অধিক দেশে এ চুক্তি বা কিছুটা ভিন্ন প্রকৃতির চুক্তি বিদ্যমান আছে—ধনী বা দরিদ্র সব দেশ মিলিয়েই। এ রকম একটি চুক্তি অবশ্যই বর্গা চাষ বা আবাসনশিল্পের মতো এত সহজ নয়। তবে বর্গা চাষে চাষি যেমন ঋণ নিয়ে বীজ, সার, সেচ, শ্রম দিয়ে উৎপাদনে যান, যার সাফল্য অনেকাংশেই প্রকৃতির ওপর নির্ভরশীল, সেখানে একটা ঝুঁকি থেকেই যায়। উৎপাদনে ব্যর্থ হলে এর সব দায়দায়িত্ব চাষির এবং সাফল্যে জমির মালিক তাঁর অংশটুকু ভোগ করেন। গ্যাস উৎপাদনের অংশীদারি অনেকটা এ রকমই, অর্থাৎ গ্যাস বা তেল অনুসন্ধানে ব্যর্থ হলে এর সম্পূর্ণ খরচ তেল কোম্পানি বহন করবে; বাংলাদেশ সরকারের কোনো রকম দায়দায়িত্ব থাকবে না। তবে সফল হলে জমির মালিকের মতো একতরফা শুধু লাভ গ্রহণের সুযোগ নেই। সে ক্ষেত্রে সরকারকে কোম্পানির সম্পূর্ণ বিনিয়োগ ফিরিয়ে দিতে হবে (সরকার নিজে করতে গেলে যে খরচটা নিজেকে ব্যয় করতে হতো) এবং তারপর লাভের গ্যাসের একটি অংশ (তার ঝুঁকি নেওয়ার পুরস্কার হিসেবে) কোম্পানিকে দিতে হবে। গ্যাস অনুসন্ধানের আরও অনেক রকমের চুক্তি আছে (লাইসেন্স বা কনসেশন, তৃতীয় পক্ষ ইত্যাদি), তবে বেশির ভাগ দরিদ্র দেশে অংশীদারি চুক্তি জনপ্রিয়। কারণ, এটি সম্পূর্ণভাবে অর্থায়নের ঝুঁকিমুক্ত এবং সম্পদের মালিকানা শতভাগ রাষ্ট্রের অধীনে থাকে। তা ছাড়া হিসাব বা খরচের মারপ্যাঁচও তুলনামূলকভাবে কম।
গ্যাসের বণ্টন ও খরচ প্রদান: খুব সহজ ভাষায়, এ চুক্তির ব্যাখ্যা দিতে গেলে একটি সংখ্যার মাধ্যমে দেওয়া যেতে পারে। ধরা যাক, কোম্পানি ১০০ মিলিয়ন ডলার খরচ করে এক ট্রিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস আবিষ্কার করেছে এবং সেটা উন্নয়ন করে উৎপাদনে আনতে আরও ১০০ মিলিয়ন ডলার লেগেছে। এ ক্ষেত্রে মোট খরচ (Cost Recovery) ২০০ মিলিয়ন ডলার। ধরা যাক, প্রথম বছর উৎপাদিত গ্যাস বিক্রি করে ১০০ মিলিয়ন ডলার উপার্জিত হয়েছে। খরচ (CR) বাবদ কোম্পানি সর্বোচ্চ (৫৫%) ৫৫ মিলিয়ন ডলার নিতে পারবে এবং বাকি ৪৫ মিলিয়ন ডলার মুনাফা গ্যাস (Profit Gas) ধরা হবে। এই লাভের গ্যাস একটি উৎপাদনের স্তরের ভিত্তিতে বাংলাদেশ ও কোম্পানির মধ্যে ভাগ হবে। ২০০৮ সালের সমুদ্র-গ্যাসের চুক্তি অনুযায়ী, নিম্নোক্ত ছকের মতো লাভের গ্যাস ভাগ হবে।
ছক দেখে বোঝা যাচ্ছে, উৎপাদন যত বৃদ্ধি পাবে, ওপরের স্তরগুলোয় বাংলাদেশের মুনাফার অংশ ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাবে। প্রথম বছরের মতো দ্বিতীয় বছরেও কোম্পানি আরও ৫৫ শতাংশ তাদের খরচের অংশ নিয়ে নেবে এবং বাকি গ্যাস (টাকা) মুনাফা গ্যাসের নিয়মানুযায়ী ভাগ হবে। ২০০ মিলিয়ন খরচ উঠতে এ ক্ষেত্রে ৩ দশমিক ৬ বছর লাগবে। সাধারণত প্রতিবছরই কিছু খরচ যাবে, যেটা মোট খরচ হিসেবে স্বীকৃতি পায়। এটা ৫ থেকে ১০ শতাংশ হতে পারে। তাহলে দেখা যাচ্ছে, এ ক্ষেত্রে ৩ দশমিক ৬ বছর পরই সম্পূর্ণ উৎপাদিত গ্যাসের ৯০-৯৫ শতাংশই মুনাফা গ্যাস হিসেবে পরিগণিত হবে। তখন এই গ্যাস ওপরের ছক অনুযায়ী বণ্টিত হবে। উল্লেখ্য, যদি প্রতিবছর ১০০ মিলিয়নের জায়গায় ৫০ মিলিয়ন ডলার আয় হয়, তাহলে খরচের টাকা উঠতে ৭ দশমিক ২ বছর লাগবে। উৎপাদন ২৫ মিলিয়ন হলে খরচ উঠতে লেগে যাবে ১৪ দশমিক ৪ বছর।
এযাবৎ গ্যাসের হিস্যা ও মূল্য: যেকোনো ব্যবসার ক্ষেত্রেই অনেক বিনিয়োগ করে যদি কম মুনাফা হয়, তখন মূলধন তুলতেই হিমশিম খেতে হয় এবং দীর্ঘ সময় লাগে। আবার কম বিনিয়োগে অধিক মুনাফা হলে মূলধন দ্রুত উঠে আসে। কোম্পানি যদি অনেক খরচ করে কম গ্যাস পায়, তাহলে খরচ ওঠানোর সময় দীর্ঘ হতে পারে, আবার তার বিপরীতও ঘটতে পারে। অবশ্যই কম বিনিয়োগে বেশি গ্যাস পেলে বাংলাদেশের লাভ বেশি।
পেট্রোবাংলা থেকে তথ্য-উপাত্ত নিয়ে ২০০৭ সাল পর্যন্ত বিনিয়োগ হিসাব করে ২০০৮ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত বাংলাদেশে বিদ্যমান গ্যাস উৎপাদন চুক্তিগুলোর একটি আনুমানিক চিত্র বিবেচনায় নিলে আমরা দেখব যে ৬৬০ মিলিয়ন ডলার খরচ করে মাত্র শূন্য দশমিক ৬ ট্রিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পাওয়ায় সাঙ্গুতে বাংলাদেশ পেয়েছে মাত্র ২০ শতাংশ গ্যাস। এতে দামও পড়েছে সর্বোচ্চ। অন্যদিকে জালালাবাদে ৭০ শতাংশ গ্যাস পেয়ে এর গড় মূল্য সবচেয়ে কম পড়েছে। মৌলভীবাজারের মতোই বিবিয়ানা ও বাঙ্গুরায় Cost Recovery শেষে সামষ্টিকভাবে বাংলাদেশের পক্ষে গ্যাস থাকবে ৫০ শতাংশের বেশি। ইতিমধ্যে বিবিয়ানার মজুদ ২ দশমিক ৪ ট্রিলিয়ন ঘনফুট থেকে ৪ ট্রিলিয়ন ঘনফুটে উন্নীত হয়েছে, যাতে বাংলাদেশের হিস্যা আরও বৃদ্ধি পাবে। সামগ্রিক বিবেচনায় চুক্তিগুলো যেভাবে ডিজাইন করা হয়েছে, সেভাবেই চলছে এবং দেশের ফ্রি গ্যাসসহ গড় মূল্য প্রতি হাজার ঘনফুটে ১ দশমিক ৫ ডলার। বাপেক্স তাদের নিজস্ব হিসাব অনুযায়ী, নতুন গ্যাসক্ষেত্র থেকে এক ডলারের নিচে গ্যাস উৎপাদন করতে পারবে না। সমুদ্রে অনুসন্ধানের টাকা, প্রযুক্তি, লোকবল কোনোটাই তাদের নেই এবং সেটা করতে যাওয়া বাংলাদেশের পক্ষে উড়োজাহাজ তৈরির চেষ্টা করার মতো হঠকারিতা হবে; যাতে বিনা কারণে অজস্র টাকা ও সময় ব্যয় হবে। সবাই যদি সবকিছুতেই বিশেষ ব্যুৎপত্তি লাভ করতে যায়, তাহলে বিশ্ব অর্থনীতির মূল ভিত্তিই ভেঙে পড়বে।
রপ্তানি: ২০০৮ সালে সমুদ্রে অনুসন্ধানের চুক্তিতে রপ্তানির সুযোগ তৃতীয় ধাপ হিসেবে বর্তমানে বিদ্যমান প্রতিটি চুক্তির মতো একই রকমভাবে আছে। প্রথম শর্ত হচ্ছে, কোম্পানির খরচ (CR) ও লাভের (PG) গ্যাস সম্পূর্ণটাই বাংলাদেশের কাছে বিক্রি করতে হবে। যদি বাংলাদেশ কিনতে অপারগতা প্রকাশ করে, সে ক্ষেত্রে দেশের ভেতরই তৃতীয় পক্ষের কাছে বিক্রি করতে হবে। যদি সেটা না হয়, তা হলে তরলীকৃত গ্যাসের আকারে কোম্পানি সেটা রপ্তানি করতে পারবে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ চাইলে সম্পূর্ণ গ্যাসের সর্বোচ্চ ২০ শতাংশ তার নিজের ব্যবহারের জন্য রাখতে পারবে। ১৯৯৯ সালে ৪ ট্রিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস আবিষ্কার করেও ইউনিকল বা শেভরন সুযোগ থাকা সত্ত্বেও তরলী করে রপ্তানি করতে পারেনি। তারা ২০০৭ পর্যন্ত অপেক্ষা করে বাংলাদেশেই ওই গ্যাস বাজারজাত করেছে। এর মূল কারণ, সমুদ্র থেকে এত দূরে ওই প্রকল্প অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক ছিল না। একইভাবে গভীর সমুদ্রে বিপুল পরিমাণ গ্যাস আবিষ্কার না করলে তরলীকরণের মাধ্যমে রপ্তানি করা সম্ভব নয়। পৃথিবীর প্রতিটি চুক্তিতেই শর্ত সাপেক্ষে রপ্তানির সুযোগ রাখা আছে। বিপুল অর্থ বিনিয়োগ করে যদি বিপুল গ্যাস পাওয়ার ১ শতাংশ সম্ভাবনাও থাকে, সে ক্ষেত্রে কোম্পানি তার বিনিয়োগকৃত মূলধন দ্রুততম সময়ে তুলে আনতে চাইবে। কোনো ব্যবসায়ীই বিপুল পরিমাণ টাকা লগ্নি করে বছরের পর বছর বসে থাকতে চাইবে না। রপ্তানির সুদূরপ্রসারী একটি সুযোগ অথবা নিশ্চিত গ্যাস কেনার প্রতিশ্রুতি তাই যেকোনো আন্তর্জাতিক গ্যাস অনুসন্ধান চুক্তির অবধারিত অংশ। তা না হলে কোনো বিদেশি কোম্পানি এখানে আসবে না।
পাইপলাইন: চুক্তির পাইপলাইন অংশে পরিষ্কার বলা আছে, গভীর সমুদ্রের গ্যাস বাংলাদেশের গ্যাস পরিমাপের স্থানে পাইপলাইনের মাধ্যমে পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব কোম্পানির। এই পাইপলাইন কোম্পানির খরচের একটি অংশ হবে। এতে Cost Recovery সময় দীর্ঘায়িত হবে এবং গ্যাসের মূল্যও বৃদ্ধি পাবে। কিন্তু এর পরও গ্যাসের গড় মূল্য হাজার ঘন ফুটে পাঁচ-ছয় ডলারের বেশি হবে না, যেটা আমদানিকৃত তরল গ্যাসের (১২ ডলার/হাজার ঘনফুট) অর্ধেকেরও কম মূল্য।
বর্তমানে সমুদ্রে পাইপলাইন তৈরির খরচের যে আনুমানিক হিসাব তাতে দেখা যায়, ১ ইঞ্চি ব্যাসের প্রতি মাইল পাইপলাইন তৈরিতে খরচ পড়বে ৮০ হাজার থেকে এক লাখ ডলার। গড় ধরে ১০০ মাইলের একটি ৩০ ইঞ্চি পাইপলাইন তৈরিতে খরচ পড়বে ২৭০ মিলিয়ন ডলার। মাত্র শূন্য দশমিক ৫ বা এক ট্রিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পেলে সেটা মাটিতে আনতে প্রতি হাজার ঘনফুটে তিন ডলার খরচ পড়ে যাবে। কিন্তু দুই ট্রিলিয়ন পেলে সেটা ১ দশমিক ৫ ডলার বা তার নিচে নেমে আসবে। আন্তর্জাতিক বাজারে গ্যাসের মূল্য, দেশীয় বাজারে চাহিদা ইত্যাদির ভিত্তিতেই যদি অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক হয়, তখনই ছোট ক্ষেত্রের উন্নয়ন হবে, তা না হলে আবিষ্কৃত অবস্থায়ই তা পড়ে থাকবে। নিশ্চিতভাবেই তা তরল করে রপ্তানির কোনো সম্ভাবনাই নেই।
অসম চুক্তি?: বাংলাদেশে একটি অনুসন্ধানী কূপ খনন করতে আনুমানিক ১০০ কোটি টাকা লাগে। এখন যদি একজন বিনিয়োগকারীকে বলা হয় যে এক জায়গায় ৫০ শতাংশ গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা আছে এবং তা পাওয়া গেলে ১৫০ কোটি টাকা দেওয়া হবে, সে ক্ষেত্রে বিনিয়োগকারী মহা চিন্তায় পড়ে যাবেন। কারণ, না পাওয়া গেলে ১০০ কোটি টাকা কূপের গর্তে পড়ে যাবে। ১৭০ কোটি টাকা বললে তিনি হয়তো রাজি হয়ে যাবেন। একইভাবে ৮০ শতাংশ গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা থাকলে তাঁকে হয়তো ১৩০ কোটির প্রতিশ্রুতি দেওয়া হবে। তেল-গ্যাসের সব চুক্তিই এই ঝুঁকি-পুরস্কারের ভারসাম্য। ইংল্যান্ডে রাষ্ট্র পায় ৫ শতাংশ আবার মধ্যপ্রাচ্যে কুয়েত বা সৌদি আরবে রাষ্ট্র পায় ৯৫ শতাংশ। ইন্দোনেশিয়ায় এলাকাভিত্তিতে রাষ্ট্র ১০ থেকে ৭০ শতাংশ পায়। এসবই তেল বা গ্যাস প্রাপ্তির ঝুঁকির ওপর নির্ভরশীল। এই ঝুঁকি রাষ্ট্র যেমন নির্ণয় করে, তেমনি তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে প্রতিটি বিনিয়োগকারী কোম্পানিও তৈরি করে। যখন রাষ্ট্র ও কোম্পানির নির্ণীত ঝুঁকি এবং তার সম্ভাব্য পুরস্কার কাছাকাছি হয়, তখনই কোম্পানি বিনিয়োগে আগ্রহী হবে। এখানে সৌদি আরব, ভারত বা অন্য কোনো দেশের পুরস্কারের সঙ্গে বাংলাদেশের পুরস্কারের তুলনা করাটা বোকামি।
পুরস্কারটা সাধারণত একটা প্যাকেজ হিসেবে প্রতিশ্রুত হয়, যেখানে প্রতিবছর খরচ তুলে নেওয়ার পরিমাণ, মুনাফা গ্যাসের বণ্টন, যন্ত্রপাতি, ব্যক্তিগত আয়, লাভের ওপর ট্যাক্স, বিভিন্ন ধরনের বোনাস ইত্যাদির সমন্বয়ে এই প্যাকেজ তৈরি হয়। পেট্রোবাংলা এ অঞ্চলের বহু দেশের চুক্তির শর্ত, বাংলাদেশের বিদ্যমান চুক্তি, বাংলাদেশের গ্যাসপ্রাপ্তির ঝুঁকি ইত্যাদি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেই সমুদ্র-গ্যাস ২০০৮ চুক্তি প্যাকেজটি তৈরি করেছে। বিস্তারিত তথ্য না জেনে সাধারণত কারও পক্ষে একে অসম আখ্যায়িত করা ধৃষ্টতা ছাড়া কিছুই নয়। বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ চুক্তির ভারসাম্য যাচাইয়ের একটি মাপকাঠি। সেদিক থেকে এ চুক্তি মোটামুটি ভারসাম্যপূর্ণ। অর্থাৎ দুই পক্ষেরই লাভ আছে (Win-Win)।
উপরিউক্ত তথ্য নিয়ে কারও মনে কোনো সন্দেহ থাকলে তিনি পেট্রোবাংলার ওয়েবসাইটে ২০০৮ সালের সমুদ্রে অনুসন্ধান মডেল চুক্তিটি দেখতে পারেন। একই সঙ্গে বিভিন্ন কোম্পানির বিনিয়োগ, গ্যাসের মূল্য, খরচের পরিমাণ ইত্যাদি তথ্য পেট্রোবাংলা থেকে সংগ্রহ করতে পারেন। তথ্য অধিকার আইনের পর এগুলো সংগ্রহ করা কঠিন কিছু নয়। সাদা চোখে গ্যাস উৎপাদন অংশীদারি চুক্তির মধ্যে দেশ বিকিয়ে দেওয়ার কোনো নমুনা দেখা যায় না। ১৩ বছর ধরে এ চুক্তির মাধ্যমে পেট্রোবাংলা গ্যাস কিনছে, দেশের অর্থনীতিতে বিরাট অবদান রাখছে। এ চুক্তির কোনো নির্দিষ্ট ক্ষতিকারক দিক এখন পর্যন্ত কেউ দেখাতে পারেনি। আইপিপিরা বিদ্যুৎ বিক্রি করে প্রায় ১৫ বছর ধরে বিপুল পরিমাণ অর্থ ডলার করে বাইরে নিয়ে যাচ্ছে, মোবাইল ফোন কোম্পানিগুলো আরও অধিক মুনাফা দেশের বাইরে নিয়ে যাচ্ছে। তাতে দেশের স্বার্থ বিকোচ্ছে না, অথচ ১৩ বছর ধরে চলা বিদ্যমান গ্যাস উৎপাদন অংশীদারি চুক্তির চেয়েও উন্নততর ২০০৮ সালের সমুদ্রে গ্যাস অনুসন্ধান চুক্তির বিরোধিতা মোটেই বোধগম্য নয়।
ড. ম. তামিম: অধ্যাপক, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)।
mtamim@buet.ac.bd
গ্যাসের বণ্টন ও খরচ প্রদান: খুব সহজ ভাষায়, এ চুক্তির ব্যাখ্যা দিতে গেলে একটি সংখ্যার মাধ্যমে দেওয়া যেতে পারে। ধরা যাক, কোম্পানি ১০০ মিলিয়ন ডলার খরচ করে এক ট্রিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস আবিষ্কার করেছে এবং সেটা উন্নয়ন করে উৎপাদনে আনতে আরও ১০০ মিলিয়ন ডলার লেগেছে। এ ক্ষেত্রে মোট খরচ (Cost Recovery) ২০০ মিলিয়ন ডলার। ধরা যাক, প্রথম বছর উৎপাদিত গ্যাস বিক্রি করে ১০০ মিলিয়ন ডলার উপার্জিত হয়েছে। খরচ (CR) বাবদ কোম্পানি সর্বোচ্চ (৫৫%) ৫৫ মিলিয়ন ডলার নিতে পারবে এবং বাকি ৪৫ মিলিয়ন ডলার মুনাফা গ্যাস (Profit Gas) ধরা হবে। এই লাভের গ্যাস একটি উৎপাদনের স্তরের ভিত্তিতে বাংলাদেশ ও কোম্পানির মধ্যে ভাগ হবে। ২০০৮ সালের সমুদ্র-গ্যাসের চুক্তি অনুযায়ী, নিম্নোক্ত ছকের মতো লাভের গ্যাস ভাগ হবে।
ছক দেখে বোঝা যাচ্ছে, উৎপাদন যত বৃদ্ধি পাবে, ওপরের স্তরগুলোয় বাংলাদেশের মুনাফার অংশ ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাবে। প্রথম বছরের মতো দ্বিতীয় বছরেও কোম্পানি আরও ৫৫ শতাংশ তাদের খরচের অংশ নিয়ে নেবে এবং বাকি গ্যাস (টাকা) মুনাফা গ্যাসের নিয়মানুযায়ী ভাগ হবে। ২০০ মিলিয়ন খরচ উঠতে এ ক্ষেত্রে ৩ দশমিক ৬ বছর লাগবে। সাধারণত প্রতিবছরই কিছু খরচ যাবে, যেটা মোট খরচ হিসেবে স্বীকৃতি পায়। এটা ৫ থেকে ১০ শতাংশ হতে পারে। তাহলে দেখা যাচ্ছে, এ ক্ষেত্রে ৩ দশমিক ৬ বছর পরই সম্পূর্ণ উৎপাদিত গ্যাসের ৯০-৯৫ শতাংশই মুনাফা গ্যাস হিসেবে পরিগণিত হবে। তখন এই গ্যাস ওপরের ছক অনুযায়ী বণ্টিত হবে। উল্লেখ্য, যদি প্রতিবছর ১০০ মিলিয়নের জায়গায় ৫০ মিলিয়ন ডলার আয় হয়, তাহলে খরচের টাকা উঠতে ৭ দশমিক ২ বছর লাগবে। উৎপাদন ২৫ মিলিয়ন হলে খরচ উঠতে লেগে যাবে ১৪ দশমিক ৪ বছর।
এযাবৎ গ্যাসের হিস্যা ও মূল্য: যেকোনো ব্যবসার ক্ষেত্রেই অনেক বিনিয়োগ করে যদি কম মুনাফা হয়, তখন মূলধন তুলতেই হিমশিম খেতে হয় এবং দীর্ঘ সময় লাগে। আবার কম বিনিয়োগে অধিক মুনাফা হলে মূলধন দ্রুত উঠে আসে। কোম্পানি যদি অনেক খরচ করে কম গ্যাস পায়, তাহলে খরচ ওঠানোর সময় দীর্ঘ হতে পারে, আবার তার বিপরীতও ঘটতে পারে। অবশ্যই কম বিনিয়োগে বেশি গ্যাস পেলে বাংলাদেশের লাভ বেশি।
পেট্রোবাংলা থেকে তথ্য-উপাত্ত নিয়ে ২০০৭ সাল পর্যন্ত বিনিয়োগ হিসাব করে ২০০৮ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত বাংলাদেশে বিদ্যমান গ্যাস উৎপাদন চুক্তিগুলোর একটি আনুমানিক চিত্র বিবেচনায় নিলে আমরা দেখব যে ৬৬০ মিলিয়ন ডলার খরচ করে মাত্র শূন্য দশমিক ৬ ট্রিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পাওয়ায় সাঙ্গুতে বাংলাদেশ পেয়েছে মাত্র ২০ শতাংশ গ্যাস। এতে দামও পড়েছে সর্বোচ্চ। অন্যদিকে জালালাবাদে ৭০ শতাংশ গ্যাস পেয়ে এর গড় মূল্য সবচেয়ে কম পড়েছে। মৌলভীবাজারের মতোই বিবিয়ানা ও বাঙ্গুরায় Cost Recovery শেষে সামষ্টিকভাবে বাংলাদেশের পক্ষে গ্যাস থাকবে ৫০ শতাংশের বেশি। ইতিমধ্যে বিবিয়ানার মজুদ ২ দশমিক ৪ ট্রিলিয়ন ঘনফুট থেকে ৪ ট্রিলিয়ন ঘনফুটে উন্নীত হয়েছে, যাতে বাংলাদেশের হিস্যা আরও বৃদ্ধি পাবে। সামগ্রিক বিবেচনায় চুক্তিগুলো যেভাবে ডিজাইন করা হয়েছে, সেভাবেই চলছে এবং দেশের ফ্রি গ্যাসসহ গড় মূল্য প্রতি হাজার ঘনফুটে ১ দশমিক ৫ ডলার। বাপেক্স তাদের নিজস্ব হিসাব অনুযায়ী, নতুন গ্যাসক্ষেত্র থেকে এক ডলারের নিচে গ্যাস উৎপাদন করতে পারবে না। সমুদ্রে অনুসন্ধানের টাকা, প্রযুক্তি, লোকবল কোনোটাই তাদের নেই এবং সেটা করতে যাওয়া বাংলাদেশের পক্ষে উড়োজাহাজ তৈরির চেষ্টা করার মতো হঠকারিতা হবে; যাতে বিনা কারণে অজস্র টাকা ও সময় ব্যয় হবে। সবাই যদি সবকিছুতেই বিশেষ ব্যুৎপত্তি লাভ করতে যায়, তাহলে বিশ্ব অর্থনীতির মূল ভিত্তিই ভেঙে পড়বে।
রপ্তানি: ২০০৮ সালে সমুদ্রে অনুসন্ধানের চুক্তিতে রপ্তানির সুযোগ তৃতীয় ধাপ হিসেবে বর্তমানে বিদ্যমান প্রতিটি চুক্তির মতো একই রকমভাবে আছে। প্রথম শর্ত হচ্ছে, কোম্পানির খরচ (CR) ও লাভের (PG) গ্যাস সম্পূর্ণটাই বাংলাদেশের কাছে বিক্রি করতে হবে। যদি বাংলাদেশ কিনতে অপারগতা প্রকাশ করে, সে ক্ষেত্রে দেশের ভেতরই তৃতীয় পক্ষের কাছে বিক্রি করতে হবে। যদি সেটা না হয়, তা হলে তরলীকৃত গ্যাসের আকারে কোম্পানি সেটা রপ্তানি করতে পারবে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ চাইলে সম্পূর্ণ গ্যাসের সর্বোচ্চ ২০ শতাংশ তার নিজের ব্যবহারের জন্য রাখতে পারবে। ১৯৯৯ সালে ৪ ট্রিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস আবিষ্কার করেও ইউনিকল বা শেভরন সুযোগ থাকা সত্ত্বেও তরলী করে রপ্তানি করতে পারেনি। তারা ২০০৭ পর্যন্ত অপেক্ষা করে বাংলাদেশেই ওই গ্যাস বাজারজাত করেছে। এর মূল কারণ, সমুদ্র থেকে এত দূরে ওই প্রকল্প অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক ছিল না। একইভাবে গভীর সমুদ্রে বিপুল পরিমাণ গ্যাস আবিষ্কার না করলে তরলীকরণের মাধ্যমে রপ্তানি করা সম্ভব নয়। পৃথিবীর প্রতিটি চুক্তিতেই শর্ত সাপেক্ষে রপ্তানির সুযোগ রাখা আছে। বিপুল অর্থ বিনিয়োগ করে যদি বিপুল গ্যাস পাওয়ার ১ শতাংশ সম্ভাবনাও থাকে, সে ক্ষেত্রে কোম্পানি তার বিনিয়োগকৃত মূলধন দ্রুততম সময়ে তুলে আনতে চাইবে। কোনো ব্যবসায়ীই বিপুল পরিমাণ টাকা লগ্নি করে বছরের পর বছর বসে থাকতে চাইবে না। রপ্তানির সুদূরপ্রসারী একটি সুযোগ অথবা নিশ্চিত গ্যাস কেনার প্রতিশ্রুতি তাই যেকোনো আন্তর্জাতিক গ্যাস অনুসন্ধান চুক্তির অবধারিত অংশ। তা না হলে কোনো বিদেশি কোম্পানি এখানে আসবে না।
পাইপলাইন: চুক্তির পাইপলাইন অংশে পরিষ্কার বলা আছে, গভীর সমুদ্রের গ্যাস বাংলাদেশের গ্যাস পরিমাপের স্থানে পাইপলাইনের মাধ্যমে পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব কোম্পানির। এই পাইপলাইন কোম্পানির খরচের একটি অংশ হবে। এতে Cost Recovery সময় দীর্ঘায়িত হবে এবং গ্যাসের মূল্যও বৃদ্ধি পাবে। কিন্তু এর পরও গ্যাসের গড় মূল্য হাজার ঘন ফুটে পাঁচ-ছয় ডলারের বেশি হবে না, যেটা আমদানিকৃত তরল গ্যাসের (১২ ডলার/হাজার ঘনফুট) অর্ধেকেরও কম মূল্য।
বর্তমানে সমুদ্রে পাইপলাইন তৈরির খরচের যে আনুমানিক হিসাব তাতে দেখা যায়, ১ ইঞ্চি ব্যাসের প্রতি মাইল পাইপলাইন তৈরিতে খরচ পড়বে ৮০ হাজার থেকে এক লাখ ডলার। গড় ধরে ১০০ মাইলের একটি ৩০ ইঞ্চি পাইপলাইন তৈরিতে খরচ পড়বে ২৭০ মিলিয়ন ডলার। মাত্র শূন্য দশমিক ৫ বা এক ট্রিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পেলে সেটা মাটিতে আনতে প্রতি হাজার ঘনফুটে তিন ডলার খরচ পড়ে যাবে। কিন্তু দুই ট্রিলিয়ন পেলে সেটা ১ দশমিক ৫ ডলার বা তার নিচে নেমে আসবে। আন্তর্জাতিক বাজারে গ্যাসের মূল্য, দেশীয় বাজারে চাহিদা ইত্যাদির ভিত্তিতেই যদি অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক হয়, তখনই ছোট ক্ষেত্রের উন্নয়ন হবে, তা না হলে আবিষ্কৃত অবস্থায়ই তা পড়ে থাকবে। নিশ্চিতভাবেই তা তরল করে রপ্তানির কোনো সম্ভাবনাই নেই।
অসম চুক্তি?: বাংলাদেশে একটি অনুসন্ধানী কূপ খনন করতে আনুমানিক ১০০ কোটি টাকা লাগে। এখন যদি একজন বিনিয়োগকারীকে বলা হয় যে এক জায়গায় ৫০ শতাংশ গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা আছে এবং তা পাওয়া গেলে ১৫০ কোটি টাকা দেওয়া হবে, সে ক্ষেত্রে বিনিয়োগকারী মহা চিন্তায় পড়ে যাবেন। কারণ, না পাওয়া গেলে ১০০ কোটি টাকা কূপের গর্তে পড়ে যাবে। ১৭০ কোটি টাকা বললে তিনি হয়তো রাজি হয়ে যাবেন। একইভাবে ৮০ শতাংশ গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা থাকলে তাঁকে হয়তো ১৩০ কোটির প্রতিশ্রুতি দেওয়া হবে। তেল-গ্যাসের সব চুক্তিই এই ঝুঁকি-পুরস্কারের ভারসাম্য। ইংল্যান্ডে রাষ্ট্র পায় ৫ শতাংশ আবার মধ্যপ্রাচ্যে কুয়েত বা সৌদি আরবে রাষ্ট্র পায় ৯৫ শতাংশ। ইন্দোনেশিয়ায় এলাকাভিত্তিতে রাষ্ট্র ১০ থেকে ৭০ শতাংশ পায়। এসবই তেল বা গ্যাস প্রাপ্তির ঝুঁকির ওপর নির্ভরশীল। এই ঝুঁকি রাষ্ট্র যেমন নির্ণয় করে, তেমনি তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে প্রতিটি বিনিয়োগকারী কোম্পানিও তৈরি করে। যখন রাষ্ট্র ও কোম্পানির নির্ণীত ঝুঁকি এবং তার সম্ভাব্য পুরস্কার কাছাকাছি হয়, তখনই কোম্পানি বিনিয়োগে আগ্রহী হবে। এখানে সৌদি আরব, ভারত বা অন্য কোনো দেশের পুরস্কারের সঙ্গে বাংলাদেশের পুরস্কারের তুলনা করাটা বোকামি।
পুরস্কারটা সাধারণত একটা প্যাকেজ হিসেবে প্রতিশ্রুত হয়, যেখানে প্রতিবছর খরচ তুলে নেওয়ার পরিমাণ, মুনাফা গ্যাসের বণ্টন, যন্ত্রপাতি, ব্যক্তিগত আয়, লাভের ওপর ট্যাক্স, বিভিন্ন ধরনের বোনাস ইত্যাদির সমন্বয়ে এই প্যাকেজ তৈরি হয়। পেট্রোবাংলা এ অঞ্চলের বহু দেশের চুক্তির শর্ত, বাংলাদেশের বিদ্যমান চুক্তি, বাংলাদেশের গ্যাসপ্রাপ্তির ঝুঁকি ইত্যাদি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেই সমুদ্র-গ্যাস ২০০৮ চুক্তি প্যাকেজটি তৈরি করেছে। বিস্তারিত তথ্য না জেনে সাধারণত কারও পক্ষে একে অসম আখ্যায়িত করা ধৃষ্টতা ছাড়া কিছুই নয়। বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ চুক্তির ভারসাম্য যাচাইয়ের একটি মাপকাঠি। সেদিক থেকে এ চুক্তি মোটামুটি ভারসাম্যপূর্ণ। অর্থাৎ দুই পক্ষেরই লাভ আছে (Win-Win)।
উপরিউক্ত তথ্য নিয়ে কারও মনে কোনো সন্দেহ থাকলে তিনি পেট্রোবাংলার ওয়েবসাইটে ২০০৮ সালের সমুদ্রে অনুসন্ধান মডেল চুক্তিটি দেখতে পারেন। একই সঙ্গে বিভিন্ন কোম্পানির বিনিয়োগ, গ্যাসের মূল্য, খরচের পরিমাণ ইত্যাদি তথ্য পেট্রোবাংলা থেকে সংগ্রহ করতে পারেন। তথ্য অধিকার আইনের পর এগুলো সংগ্রহ করা কঠিন কিছু নয়। সাদা চোখে গ্যাস উৎপাদন অংশীদারি চুক্তির মধ্যে দেশ বিকিয়ে দেওয়ার কোনো নমুনা দেখা যায় না। ১৩ বছর ধরে এ চুক্তির মাধ্যমে পেট্রোবাংলা গ্যাস কিনছে, দেশের অর্থনীতিতে বিরাট অবদান রাখছে। এ চুক্তির কোনো নির্দিষ্ট ক্ষতিকারক দিক এখন পর্যন্ত কেউ দেখাতে পারেনি। আইপিপিরা বিদ্যুৎ বিক্রি করে প্রায় ১৫ বছর ধরে বিপুল পরিমাণ অর্থ ডলার করে বাইরে নিয়ে যাচ্ছে, মোবাইল ফোন কোম্পানিগুলো আরও অধিক মুনাফা দেশের বাইরে নিয়ে যাচ্ছে। তাতে দেশের স্বার্থ বিকোচ্ছে না, অথচ ১৩ বছর ধরে চলা বিদ্যমান গ্যাস উৎপাদন অংশীদারি চুক্তির চেয়েও উন্নততর ২০০৮ সালের সমুদ্রে গ্যাস অনুসন্ধান চুক্তির বিরোধিতা মোটেই বোধগম্য নয়।
ড. ম. তামিম: অধ্যাপক, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)।
mtamim@buet.ac.bd
No comments