ভ্রমণ যখন ফলপ্রসূ by আদনান মুকিত
বাজারে রসাল ফলের সমারোহ। রস+আলো বাহিনী কি চুপচাপ বসে থাকতে পারে? এ জন্যই যথাযথ মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে গত ১৭ জুন মানিকগঞ্জের বালিয়াটি রাজবাড়িতে অনুষ্ঠিত হলো রস+আলোর বার্ষিক ফলাহার ‘ফলান্ন ২০১১’। কথা ছিল গাড়ি ছাড়বে সকাল আটটায়। আটটা মানে আটটা।
এক মিনিট এদিক-ওদিক হলে গাড়ি মিস, রাজবাড়ি মিস। সৈয়দ রাকিব ব্যাংকার মানুষ, নয়টা-পাঁচটা অফিস করেন, তিনিই কেবল আটটার আগে কারওয়ান বাজারে এসে পৌঁছালেন। সঙ্গে ভাতের বাটিসদৃশ ক্যামেরার বাক্স, আর জুনায়েদ ভাই। তাঁরা এসে দেখলেন, কোথাও কেউ নেই। ভোর থেকেই ঝুম বৃষ্টি, আমরা আরামে বাসায় ঘুমাচ্ছি। কিন্তু আমাদের আরাম তাঁদের সহ্য হলো না। মোবাইল হাতে তুলে নিয়ে প্রত্যেকের ঘুম ভাঙালেন।
বৃষ্টির মধ্যেই আসতে শুরু করল সবাই। তাওহিদ ভাই এসেই আমার মনের কথাটা বললেন, ‘চলো, নাশতা খাই।’ খাওয়া শেষে বিলও দিলেন উনি। আর সবাই যখন বৃষ্টি-কাদার মধ্যে ফল কিনতে যাচ্ছিলেন, উনি আমাকে বললেন, ‘তুমি গাড়িতে গিয়ে বসো।’ কী মহান মানুষ! আমি ওনাকে নোবেল দেওয়ার জন্য অনুরোধ করতাম, কিন্তু বিতর্কের ভয়ে করলাম না। গাড়িতে গিয়ে বসে রইলাম।
দেশে যত ধরনের ফল হয় সব এনে মজুদ করার পর ছাড়ল গাড়ি। আটটার ভ্রমণ শুরু হলো সাড়ে ১০টায়। সবার কণ্ঠে ফলান্নের থিম সং—আমরা খাব ফল একদিন, ও হো বুকের গভীরে, আছে প্রত্যয়, আমরা খাব ফল একদিন! দলনেতা সিমু ভাই অনুপস্থিত। মাইক্রোবাসে জায়গা কম তো, তাই অভিনেতা সুমন পাটওয়ারিকে নিয়ে তিনি আলাদা গাড়িতে যাচ্ছেন।
গাবতলী পার হওয়ার আগেই পেছনের সিটে বসা কার্টুনিস্ট রকি ভাই একটা পেয়ারা বের করলেন। সবাই বাধা দিল, ‘এখন সব খেয়ে ফেললে পরে কী খাব? রাখ।’ রকি ভাইয়ের দাবি এটা তাঁর গাছের পেয়ারা। শুধু এটাই নয়, গাড়ির সব ফলই তাঁর গাছের। এ দেশের অধিকাংশ গাছ তিনি লাগিয়েছেন। এমনকি মাইক্রোবাসটাও নাকি তাঁর গাছের! গাছ যারই হোক, আমি দুটো পেয়ারা ডাউনলোড দিয়ে পেটের ভেতরে সেভ করলাম।
আমি বসেছিলাম মাঝখানের সিটে। সামনে ফাল্গুনি। তার সামনে লিচু, পেয়ারা, লটকন, তালের শাঁস আরও কত কি! আমার হিংসাই হচ্ছিল। সামনে গিয়ে বসলে কত্ত ভালো হতো। ফাল্গুনির নির্বিকার ভাব দেখে অবাক হয়েছিলাম। পরে মনে হলো, উনি ডায়েট কন্ট্রোল করছেন। তবে ডায়েট কন্ট্রোলের কথা বলছিলেন মেহেদী মাহমুদ আকন্দ ভাই। দুটো শিঙাড়া (বড়), গোটা দশেক তালের শাঁস আর পেয়ারা খেয়ে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলে বললেন, ‘আর খাব না, ডায়েট করছি তো!’ পেছন থেকে অনেকে বলছিল, ম্যাজিস্ট্রেট হওয়ার পর থেকে নাকি মেহেদী ভাইয়ের খিদে বেড়ে গেছে!
তালের শাঁস সব শেষ। আবার কেনার জন্য গাড়ি থামানো হলো। কেনার আগেই চারটা তালের শাঁস পেটে চালান করে দিয়ে মেহেদী ভাই বললেন, ‘কোনো ভেজাল আছে কি না তা টেস্ট করছি। ম্যাজিস্ট্রেট তো!’ হঠাৎ আমাদের মনে হলো খেলাধুলা ভ্রমণের অংশ। ফলের সঙ্গে একটা বলও কেনা হলো।
রকি ভাই দ্বিতীয় ডেউয়াটি শেষ করার আগেই আমরা রাজবাড়িতে পৌঁছে গেলাম। ফল-বল সব গাড়িতে রেখে দল বেঁধে ভেতরে ঢুকেই শুরু করলাম ফটোসেশন। রাকিব ভাই ভাতের বাটি থেকে তাঁর দামি ক্যামেরা বের করলেন। সেই ক্যামেরাতে আছে রং ফর্সাকারী ক্রিম। শ্যামলা-কালো সবার ছবিই আসে সাদা। একটা কাকের ছবি তুললাম, সবাই ভাবল ওটা শান্তির পায়রা! একটু পর সিমু ভাই, সুমন ভাই, গায়ক সাহেদ ভাইও ফটোসেশনে যোগ দিলেন। সব মিলিয়ে ৩৩ জনের গ্রুপ ছবি।
এরপরই ১৯ প্রজাতির রসাল ফল নিয়ে পুকুরঘাটে বসে পড়ল সবাই। আমি বের করলাম ফুটবল। জানতাম, বলে দু-একটা লাথি দিলেই সবাই তার পেছনে ছুটবে। সেই চান্সে আমি লটকনের দখল নেব। তা-ই হলো। তাওহিদ ভাই, কিশোর ভাই ফল খাওয়া বাদ দিয়ে বল নিয়ে মাঠে নেমে গেলেন। শুরুতেই তাওহিদ ভাই ডান পায়ে জোরালো শট নিলেন। বল গিয়ে লাগল রাজবাড়ির জানালায়। ভাবলাম ঐতিহাসিক জানালা শেষ। কিন্তু না, জানালা ঠিকই আছে। ফেটে গেছে বল। আগের কালের ইট-সুড়কি যে কত শক্ত তা বুঝলাম। বলের সঙ্গে আমার প্ল্যানটাও গেল। ফাটা বল দিয়ে তো আর খেলা হয় না। ফলের দিকে মনোযোগ দিল সবাই। বল ফেলে এসে দেখি লটকন শেষ! বলও গেল, ফলও গেল।
সবাই ফল খেতে ব্যস্ত। সাহেদ ভাই হঠাৎ মঞ্চ টাইপের একটা জায়গায় উঠে দাঁড়ালেন। ভাবলাম ফল নিয়ে কোনো গান গাইবেন, তা না। উনি নেতাদের মতো ভাষণ দেওয়া শুরু করলেন। ‘প্রিয় প্রজা, আমার রাজ্যে তোমাদের স্বাগতম, তোমরা ফল খাও, কিন্তু রাজ্যের কোনো অনিষ্ট কোরো না। পোকামাকড় মেরো না। ওরা আমাদের বন্ধু।’ সিমু ভাই বললেন, সাহেদ ভাইয়ের এটা একটা রোগ। রাজবাড়ি দেখলেই নাকি তাঁর এমন রাজা রাজা বোধ হয়!
ফল খেতে খেতে সন্ধ্যা হয়ে গেল। ফলের অবশিষ্ট অংশ আমরা ঘাটের পাশের এক জায়গায় রেখে দিলাম। রকি ভাই লাফিয়ে উঠে বললেন, ‘ঠিক এভাবেই আমি সারা দেশে বনায়ন করেছিলাম। আজ থেকে বহু বছর পরে এই পুকুরঘাট যখন ফলগাছে ভরে যাবে তখন সবাই এই বাড়িকে বলবে ফলবাড়ি। ভুলে যাবে রকিকে...।’
আমরাও তা ভুলে রওনা দিলাম ঢাকার পথে। রকি ভাই সামনেই বসলেন। ফল শেষ, পেছনে বসাটা ফলপ্রসূ হবে না। তবে আমাদের ভ্রমণটা ফলপ্রসূই হয়েছিল। জুনায়েদ ভাইয়ের কণ্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে বলতে হয়, ‘আমরা শক্তি আমরা বল (ফাটা), আমরা খাইলাম ফল!’
বৃষ্টির মধ্যেই আসতে শুরু করল সবাই। তাওহিদ ভাই এসেই আমার মনের কথাটা বললেন, ‘চলো, নাশতা খাই।’ খাওয়া শেষে বিলও দিলেন উনি। আর সবাই যখন বৃষ্টি-কাদার মধ্যে ফল কিনতে যাচ্ছিলেন, উনি আমাকে বললেন, ‘তুমি গাড়িতে গিয়ে বসো।’ কী মহান মানুষ! আমি ওনাকে নোবেল দেওয়ার জন্য অনুরোধ করতাম, কিন্তু বিতর্কের ভয়ে করলাম না। গাড়িতে গিয়ে বসে রইলাম।
দেশে যত ধরনের ফল হয় সব এনে মজুদ করার পর ছাড়ল গাড়ি। আটটার ভ্রমণ শুরু হলো সাড়ে ১০টায়। সবার কণ্ঠে ফলান্নের থিম সং—আমরা খাব ফল একদিন, ও হো বুকের গভীরে, আছে প্রত্যয়, আমরা খাব ফল একদিন! দলনেতা সিমু ভাই অনুপস্থিত। মাইক্রোবাসে জায়গা কম তো, তাই অভিনেতা সুমন পাটওয়ারিকে নিয়ে তিনি আলাদা গাড়িতে যাচ্ছেন।
গাবতলী পার হওয়ার আগেই পেছনের সিটে বসা কার্টুনিস্ট রকি ভাই একটা পেয়ারা বের করলেন। সবাই বাধা দিল, ‘এখন সব খেয়ে ফেললে পরে কী খাব? রাখ।’ রকি ভাইয়ের দাবি এটা তাঁর গাছের পেয়ারা। শুধু এটাই নয়, গাড়ির সব ফলই তাঁর গাছের। এ দেশের অধিকাংশ গাছ তিনি লাগিয়েছেন। এমনকি মাইক্রোবাসটাও নাকি তাঁর গাছের! গাছ যারই হোক, আমি দুটো পেয়ারা ডাউনলোড দিয়ে পেটের ভেতরে সেভ করলাম।
আমি বসেছিলাম মাঝখানের সিটে। সামনে ফাল্গুনি। তার সামনে লিচু, পেয়ারা, লটকন, তালের শাঁস আরও কত কি! আমার হিংসাই হচ্ছিল। সামনে গিয়ে বসলে কত্ত ভালো হতো। ফাল্গুনির নির্বিকার ভাব দেখে অবাক হয়েছিলাম। পরে মনে হলো, উনি ডায়েট কন্ট্রোল করছেন। তবে ডায়েট কন্ট্রোলের কথা বলছিলেন মেহেদী মাহমুদ আকন্দ ভাই। দুটো শিঙাড়া (বড়), গোটা দশেক তালের শাঁস আর পেয়ারা খেয়ে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলে বললেন, ‘আর খাব না, ডায়েট করছি তো!’ পেছন থেকে অনেকে বলছিল, ম্যাজিস্ট্রেট হওয়ার পর থেকে নাকি মেহেদী ভাইয়ের খিদে বেড়ে গেছে!
তালের শাঁস সব শেষ। আবার কেনার জন্য গাড়ি থামানো হলো। কেনার আগেই চারটা তালের শাঁস পেটে চালান করে দিয়ে মেহেদী ভাই বললেন, ‘কোনো ভেজাল আছে কি না তা টেস্ট করছি। ম্যাজিস্ট্রেট তো!’ হঠাৎ আমাদের মনে হলো খেলাধুলা ভ্রমণের অংশ। ফলের সঙ্গে একটা বলও কেনা হলো।
রকি ভাই দ্বিতীয় ডেউয়াটি শেষ করার আগেই আমরা রাজবাড়িতে পৌঁছে গেলাম। ফল-বল সব গাড়িতে রেখে দল বেঁধে ভেতরে ঢুকেই শুরু করলাম ফটোসেশন। রাকিব ভাই ভাতের বাটি থেকে তাঁর দামি ক্যামেরা বের করলেন। সেই ক্যামেরাতে আছে রং ফর্সাকারী ক্রিম। শ্যামলা-কালো সবার ছবিই আসে সাদা। একটা কাকের ছবি তুললাম, সবাই ভাবল ওটা শান্তির পায়রা! একটু পর সিমু ভাই, সুমন ভাই, গায়ক সাহেদ ভাইও ফটোসেশনে যোগ দিলেন। সব মিলিয়ে ৩৩ জনের গ্রুপ ছবি।
এরপরই ১৯ প্রজাতির রসাল ফল নিয়ে পুকুরঘাটে বসে পড়ল সবাই। আমি বের করলাম ফুটবল। জানতাম, বলে দু-একটা লাথি দিলেই সবাই তার পেছনে ছুটবে। সেই চান্সে আমি লটকনের দখল নেব। তা-ই হলো। তাওহিদ ভাই, কিশোর ভাই ফল খাওয়া বাদ দিয়ে বল নিয়ে মাঠে নেমে গেলেন। শুরুতেই তাওহিদ ভাই ডান পায়ে জোরালো শট নিলেন। বল গিয়ে লাগল রাজবাড়ির জানালায়। ভাবলাম ঐতিহাসিক জানালা শেষ। কিন্তু না, জানালা ঠিকই আছে। ফেটে গেছে বল। আগের কালের ইট-সুড়কি যে কত শক্ত তা বুঝলাম। বলের সঙ্গে আমার প্ল্যানটাও গেল। ফাটা বল দিয়ে তো আর খেলা হয় না। ফলের দিকে মনোযোগ দিল সবাই। বল ফেলে এসে দেখি লটকন শেষ! বলও গেল, ফলও গেল।
সবাই ফল খেতে ব্যস্ত। সাহেদ ভাই হঠাৎ মঞ্চ টাইপের একটা জায়গায় উঠে দাঁড়ালেন। ভাবলাম ফল নিয়ে কোনো গান গাইবেন, তা না। উনি নেতাদের মতো ভাষণ দেওয়া শুরু করলেন। ‘প্রিয় প্রজা, আমার রাজ্যে তোমাদের স্বাগতম, তোমরা ফল খাও, কিন্তু রাজ্যের কোনো অনিষ্ট কোরো না। পোকামাকড় মেরো না। ওরা আমাদের বন্ধু।’ সিমু ভাই বললেন, সাহেদ ভাইয়ের এটা একটা রোগ। রাজবাড়ি দেখলেই নাকি তাঁর এমন রাজা রাজা বোধ হয়!
ফল খেতে খেতে সন্ধ্যা হয়ে গেল। ফলের অবশিষ্ট অংশ আমরা ঘাটের পাশের এক জায়গায় রেখে দিলাম। রকি ভাই লাফিয়ে উঠে বললেন, ‘ঠিক এভাবেই আমি সারা দেশে বনায়ন করেছিলাম। আজ থেকে বহু বছর পরে এই পুকুরঘাট যখন ফলগাছে ভরে যাবে তখন সবাই এই বাড়িকে বলবে ফলবাড়ি। ভুলে যাবে রকিকে...।’
আমরাও তা ভুলে রওনা দিলাম ঢাকার পথে। রকি ভাই সামনেই বসলেন। ফল শেষ, পেছনে বসাটা ফলপ্রসূ হবে না। তবে আমাদের ভ্রমণটা ফলপ্রসূই হয়েছিল। জুনায়েদ ভাইয়ের কণ্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে বলতে হয়, ‘আমরা শক্তি আমরা বল (ফাটা), আমরা খাইলাম ফল!’
No comments