সু চির জীবনের অজানা অধ্যায় by রাইসুল ইসলাম
মিয়ানমারে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের আপোষহীন নেত্রী অং সান সু চি’র সংগ্রামী জীবন নিয়ে সম্প্রতি দ্য লেডি নামে চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে। কিন্তু তার ব্যক্তিগত জীবনের একটি আকর্ষণীয় একই সাথে বেদনাবিধুর অধ্যায় অনেকেরই অজানা। অক্সফোর্ড পড়ুয়া একজন আদর্শ গৃহিণী থেকে মিয়ানমারের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের অগ্নিকন্যাতে পরিণত হওয়া সু চি’র জীবন চলচ্চিত্রের থেকে কম রোমাঞ্চকর নয়।
চার বছর আগে যখন তার জীবনকে প্রথম সেলুলয়েডের ফিতায় বাঁধার পরিকল্পনা করা হয় তখন উদ্যোক্তারা কল্পনাও করেনি, সু চি’র সংগ্রামী জীবন কাহিনীর অন্তরালে লুকিয়ে আছে একটি অসামান্য প্রেমের কাহিনী।
সেই কাহিনীর ভাঁজে ভাঁজে লুকিয়ে থাকা অসামান্য আত্মত্যাগ আর ভালবাসা হলিউডের সেরা রোমান্টিক সিনেমার কাহিনীকেও হার মানায়।
ভাবুন তো, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পৃথিবীর পূর্ব প্রান্তের একটি অখ্যাত অনগ্রসর দেশের এক সুন্দরী কিন্তু লাজুক মেয়ের সঙ্গে দেখা হয়ে গেল পশ্চিমের এক আবেগপ্রবণ টগবগে যুবকের।
আসল কাহিনীটি এরকম:
মাইকেল এরিসের জন্য ব্যাপারটি ছিল এক কথায় প্রথম দর্শনে প্রেম। সু চিকে তিনি প্রথম ভালবাসার কথা জানান তুষার ঢাকা হিমালয় পর্বত বেষ্টিত ছোট্ট দেশ ভুটানে।
হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত রহস্যময়, ছোট্ট কিন্তু অপরুপ দেশটি ছিল তখন মূল পৃথিবী থেকে অনেক দূরে, যেন এক রুপকথার দেশ।
তিনি তখন ভুটানের রাজ পরিবারের গৃহশিক্ষক হিসেবে চাকরি করেন। এদেশটির প্রতি অন্য রকম একটা মোহ ছিল তার। সেই মোহ থেকেই এখানে স্থিতু হন এরিস।
এই প্রিয় ভূমিতেই সু চিকে মনের কথা জানালেন তিনি ।
এরিসের প্রস্তাবে রাজি হন সু চি। তবে এক শর্তে; যদি মাতৃভূমি তাকে কখনোও প্রয়োজন মনে করে তাহলে স্থায়ীভাবে তিনি ফিরে আসবেন দেশে। এরিস তো সঙ্গে সঙ্গে রাজি।
অনতিবিলম্বে সু চি প্রেমিকা থেকে হয়ে গেলেন ঘরণী। পরের ষোল বছর সু চি ছিলেন পতি অন্তঃপ্রাণ এক গৃহবধূ। এর মধ্যে এই দম্পতির ঘর আসে দু’টি পুত্র সন্তান।
তার পর সু চি সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য পিতৃভূমি মিয়ানমারে আসেন। কিন্তু এর পর আর স্বামীর ঘরে ফেরা হয়নি তার।
পরের কাহিনী সবাই জানে। শুরু হল গণতান্ত্রিক আন্দোলনের এক আখ্যান। কিন্তু যা জানা হয়নি তা হল, এর নিচে চাপা পড়া এক স্ত্রী অন্তঃপ্রাণ অসহায় স্বামীর আর্তনাদ আর দীর্ঘশ্বাসের মর্মান্তিক অধ্যায়।
মিয়ানমারে গণতান্ত্রিক আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন সু চি। এই বিচ্ছেদের আর সমাপ্তি ঘটেনি। সু চি মিয়ানমারে ফেরার পরের দশ বছর এরিসের দিন কেটেছে সামরিক শাসকদের হাত থেকে স্ত্রীকে নিরাপদ রাখতে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালানোর মধ্য দিয়ে।
কিন্তু স্ত্রী বিচ্ছেদের পর বেশি দিন বাঁচেননি এরিস। এর মধ্যেই ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান তিনি।
কিন্তু সামরিক সরকার শত আবেদন সত্ত্বেও সু চিকে একটিবারের জন্য স্বামীকে দেখতে যেতে দেয়নি। এমনকি মৃত্যুর পরেও না। মুমূর্ষু স্বামীকে শেষ বিদায়টিও জানাতে পারেননি সু চি।
এতদিন মিয়ানমারের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের ইতিহাসে মাইকেল এরিসের এই নীরব আত্মত্যাগ ছিল পর্দার অন্তরালে।
আসলে এর মূলে ছিল এরিসের প্রচার বিমুখতা। তিনি সারাজীবন নিজেকে আর সন্তানদের প্রচারের আলো থেকে দূরে সরিয়ে রেখেছিলেন।
তার মৃত্যুর পর এখন পরিবার এবং বন্ধুরা অনুভব করছেন, এই আত্মত্যাগের কাহিনী পৃথিবীকে জানানো উচিত।
মিয়ানমারের স্বাধীনতা আন্দোলনের নায়ক জেনারেল অং সান যখন গুপ্তহত্যার শিকার হন তখন সু চির বয়স মাত্র দুই বছর। সু চি বড় হয়ে উঠেছেন বাবার মহান আদর্শ অনুসরণে ।
১৯৬৪ সালে কুটনীতিক মায়ের সঙ্গে পড়াশোনার জন্য ভারত যান। শরীরের রন্ধ্রে রন্ধ্রে রাজনীতিকের রক্ত তাই সু চি পড়াশোনার বিষয়বস্তু হিসেবে বেছে নেন অর্থনীতি, রাজনীতি আর দর্শন ।
মেধাবী সু চি পড়াশোনা করেন অক্সফোর্ডে। সেখানে তার অভিভাবক লর্ড গোর বুথ তাকে পরিচয় করিয়ে দেন যুবক মাইকেল এরিসের সঙ্গে।
ডারহামে ইতিহাসের ছাত্র মাইকেল ছিলেন বেশ আকর্ষণীয় যুবক। প্রাচ্যের রহস্যময় রাজ্য ভুটানের প্রতি ছিল তার ব্যাপক আগ্রহ। মূলত ওই সময়েই সু চি এরিসের অন্তরের মধ্যে বহমান প্রাচ্যের প্রতি ভালবাসার সন্ধান পান ।
কিন্তু এরিসকে ভালবাসলেও সু চি দেশের প্রতি তার কর্তব্য ভুলে যাননি। তিনি যখন এরিসের প্রস্তাবে সম্মতি দেন তখন এরিসকে শর্ত দেন, যদি দেশ কখনও তাকে ডাকে তবে সেখানে ফিরে যেতে বাধা দেওয়া যাবে না।
মাইকেল যিনি আগে থেকেই প্রাচ্যের রহস্যময়তায় বিমুগ্ধ, যার কাছে সু চি ছিলেন প্রাচ্য দেশীয় এক অসহায় রাজকন্যা, বর্বরদের কারণে পিতৃহারা, রাজ্যহারা। তিনি এক বাক্যে রাজি হয়েছিলেন।
এই দম্পতির ষোল বছরের দাম্পত্য জীবন ছিল কানায় কানায় ভরা। একজন আদর্শ প্রাচ্য দেশীয় গৃহবধূর প্রতিটি কর্তব্যই সু চি সম্পন্ন করেছেন অত্যন্ত নিপুনতার সঙ্গে। এই সময়ের মধ্যে তার কোল জুড়ে আসে দুই সন্তান আলেকজান্ডার এবং কিম। সন্তানদের প্রতি সু চি ছিলেন মমতাময়ী আর একই সঙ্গে কর্তব্য পরায়ণ। সু চির রান্নার হাতও নাকি খুব চমৎকার। তিনি পরিবারের রান্না নিজের হাতেই করতেন ।
কিন্তু এ সুখ বেশি দিন সয়নি। এর পরের কাহিনী শুধুই এক সংগ্রামের ইতিহাস। দেশের ডাকে সাড়া দিয়ে সু চির মিয়ানমার গমন অতঃপর সামরিক শাসকদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে গিয়ে একাধিকবার কারাবরণ। তারপর দীর্ঘ দিন গৃহবন্দি।
এই সব ঘটনার আড়ালে হারিয়েই গেছে এরিসের হাহাকার।
হলিউডের সেরা কোনও রোমান্টিক চলচ্চিত্রের কাহিনীর সঙ্গে যেন হুবহু মিলে য়ায়। ‘রোমান হলিডে’ কিংবা ‘ফেয়ার ওয়েল টু দ্য আর্মস’ ছবিগুলো শেষ হলে দর্শকের ভেতরের চাপা কান্না যখন গুমরে ওঠে সু চি আর এরিসের কাহিনী কি তার থেকে কম আবেগময়!
ভাবুন তো, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পৃথিবীর পূর্ব প্রান্তের একটি অখ্যাত অনগ্রসর দেশের এক সুন্দরী কিন্তু লাজুক মেয়ের সঙ্গে দেখা হয়ে গেল পশ্চিমের এক আবেগপ্রবণ টগবগে যুবকের।
আসল কাহিনীটি এরকম:
মাইকেল এরিসের জন্য ব্যাপারটি ছিল এক কথায় প্রথম দর্শনে প্রেম। সু চিকে তিনি প্রথম ভালবাসার কথা জানান তুষার ঢাকা হিমালয় পর্বত বেষ্টিত ছোট্ট দেশ ভুটানে।
হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত রহস্যময়, ছোট্ট কিন্তু অপরুপ দেশটি ছিল তখন মূল পৃথিবী থেকে অনেক দূরে, যেন এক রুপকথার দেশ।
তিনি তখন ভুটানের রাজ পরিবারের গৃহশিক্ষক হিসেবে চাকরি করেন। এদেশটির প্রতি অন্য রকম একটা মোহ ছিল তার। সেই মোহ থেকেই এখানে স্থিতু হন এরিস।
এই প্রিয় ভূমিতেই সু চিকে মনের কথা জানালেন তিনি ।
এরিসের প্রস্তাবে রাজি হন সু চি। তবে এক শর্তে; যদি মাতৃভূমি তাকে কখনোও প্রয়োজন মনে করে তাহলে স্থায়ীভাবে তিনি ফিরে আসবেন দেশে। এরিস তো সঙ্গে সঙ্গে রাজি।
অনতিবিলম্বে সু চি প্রেমিকা থেকে হয়ে গেলেন ঘরণী। পরের ষোল বছর সু চি ছিলেন পতি অন্তঃপ্রাণ এক গৃহবধূ। এর মধ্যে এই দম্পতির ঘর আসে দু’টি পুত্র সন্তান।
তার পর সু চি সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য পিতৃভূমি মিয়ানমারে আসেন। কিন্তু এর পর আর স্বামীর ঘরে ফেরা হয়নি তার।
পরের কাহিনী সবাই জানে। শুরু হল গণতান্ত্রিক আন্দোলনের এক আখ্যান। কিন্তু যা জানা হয়নি তা হল, এর নিচে চাপা পড়া এক স্ত্রী অন্তঃপ্রাণ অসহায় স্বামীর আর্তনাদ আর দীর্ঘশ্বাসের মর্মান্তিক অধ্যায়।
মিয়ানমারে গণতান্ত্রিক আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন সু চি। এই বিচ্ছেদের আর সমাপ্তি ঘটেনি। সু চি মিয়ানমারে ফেরার পরের দশ বছর এরিসের দিন কেটেছে সামরিক শাসকদের হাত থেকে স্ত্রীকে নিরাপদ রাখতে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালানোর মধ্য দিয়ে।
কিন্তু স্ত্রী বিচ্ছেদের পর বেশি দিন বাঁচেননি এরিস। এর মধ্যেই ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান তিনি।
কিন্তু সামরিক সরকার শত আবেদন সত্ত্বেও সু চিকে একটিবারের জন্য স্বামীকে দেখতে যেতে দেয়নি। এমনকি মৃত্যুর পরেও না। মুমূর্ষু স্বামীকে শেষ বিদায়টিও জানাতে পারেননি সু চি।
এতদিন মিয়ানমারের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের ইতিহাসে মাইকেল এরিসের এই নীরব আত্মত্যাগ ছিল পর্দার অন্তরালে।
আসলে এর মূলে ছিল এরিসের প্রচার বিমুখতা। তিনি সারাজীবন নিজেকে আর সন্তানদের প্রচারের আলো থেকে দূরে সরিয়ে রেখেছিলেন।
তার মৃত্যুর পর এখন পরিবার এবং বন্ধুরা অনুভব করছেন, এই আত্মত্যাগের কাহিনী পৃথিবীকে জানানো উচিত।
মিয়ানমারের স্বাধীনতা আন্দোলনের নায়ক জেনারেল অং সান যখন গুপ্তহত্যার শিকার হন তখন সু চির বয়স মাত্র দুই বছর। সু চি বড় হয়ে উঠেছেন বাবার মহান আদর্শ অনুসরণে ।
১৯৬৪ সালে কুটনীতিক মায়ের সঙ্গে পড়াশোনার জন্য ভারত যান। শরীরের রন্ধ্রে রন্ধ্রে রাজনীতিকের রক্ত তাই সু চি পড়াশোনার বিষয়বস্তু হিসেবে বেছে নেন অর্থনীতি, রাজনীতি আর দর্শন ।
মেধাবী সু চি পড়াশোনা করেন অক্সফোর্ডে। সেখানে তার অভিভাবক লর্ড গোর বুথ তাকে পরিচয় করিয়ে দেন যুবক মাইকেল এরিসের সঙ্গে।
ডারহামে ইতিহাসের ছাত্র মাইকেল ছিলেন বেশ আকর্ষণীয় যুবক। প্রাচ্যের রহস্যময় রাজ্য ভুটানের প্রতি ছিল তার ব্যাপক আগ্রহ। মূলত ওই সময়েই সু চি এরিসের অন্তরের মধ্যে বহমান প্রাচ্যের প্রতি ভালবাসার সন্ধান পান ।
কিন্তু এরিসকে ভালবাসলেও সু চি দেশের প্রতি তার কর্তব্য ভুলে যাননি। তিনি যখন এরিসের প্রস্তাবে সম্মতি দেন তখন এরিসকে শর্ত দেন, যদি দেশ কখনও তাকে ডাকে তবে সেখানে ফিরে যেতে বাধা দেওয়া যাবে না।
মাইকেল যিনি আগে থেকেই প্রাচ্যের রহস্যময়তায় বিমুগ্ধ, যার কাছে সু চি ছিলেন প্রাচ্য দেশীয় এক অসহায় রাজকন্যা, বর্বরদের কারণে পিতৃহারা, রাজ্যহারা। তিনি এক বাক্যে রাজি হয়েছিলেন।
এই দম্পতির ষোল বছরের দাম্পত্য জীবন ছিল কানায় কানায় ভরা। একজন আদর্শ প্রাচ্য দেশীয় গৃহবধূর প্রতিটি কর্তব্যই সু চি সম্পন্ন করেছেন অত্যন্ত নিপুনতার সঙ্গে। এই সময়ের মধ্যে তার কোল জুড়ে আসে দুই সন্তান আলেকজান্ডার এবং কিম। সন্তানদের প্রতি সু চি ছিলেন মমতাময়ী আর একই সঙ্গে কর্তব্য পরায়ণ। সু চির রান্নার হাতও নাকি খুব চমৎকার। তিনি পরিবারের রান্না নিজের হাতেই করতেন ।
কিন্তু এ সুখ বেশি দিন সয়নি। এর পরের কাহিনী শুধুই এক সংগ্রামের ইতিহাস। দেশের ডাকে সাড়া দিয়ে সু চির মিয়ানমার গমন অতঃপর সামরিক শাসকদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে গিয়ে একাধিকবার কারাবরণ। তারপর দীর্ঘ দিন গৃহবন্দি।
এই সব ঘটনার আড়ালে হারিয়েই গেছে এরিসের হাহাকার।
হলিউডের সেরা কোনও রোমান্টিক চলচ্চিত্রের কাহিনীর সঙ্গে যেন হুবহু মিলে য়ায়। ‘রোমান হলিডে’ কিংবা ‘ফেয়ার ওয়েল টু দ্য আর্মস’ ছবিগুলো শেষ হলে দর্শকের ভেতরের চাপা কান্না যখন গুমরে ওঠে সু চি আর এরিসের কাহিনী কি তার থেকে কম আবেগময়!
No comments