চৈতন্যের মুক্ত বাতায়ন-বাঙালিত্বের প্রতি ভারতের দৃষ্টিভঙ্গি ও বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রাম by যতীন সরকার
কোনোই সন্দেহ নেই যে আমাদের মুক্তিসংগ্রামে সমর্থনের ক্ষেত্রে বিশাল রাষ্ট্র ভারতের সব গোষ্ঠীর প্রকৃতি ও দৃষ্টিভঙ্গি এক ও অভিন্ন ছিল না। এসবের মধ্যেও সর্বতোভাবে পশ্চিমবঙ্গের বাংলাভাষী মানুষদের মনোভঙ্গি ছিল ভারতের অন্যান্য অঞ্চলের মানুষদের মনোভঙ্গি থেকে সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র। পশ্চিমবঙ্গের বাংলাভাষী মানুষেরা ভারতের যে অংশেই বসবাস করুক না কেন, তাদের সবার মনোভঙ্গিতে ছিল প্রায় একই রকমের আবেগ।
তাদের মতো এ রকম আবেগ সে দেশের অন্য কোনো জাতিগোষ্ঠীর ভেতরই ছিল না। ওই সব জাতিগোষ্ঠীর মানুষদের চৈতন্যে আবেগ নয়, নানা রকম যুক্তিরই ছিল প্রাধান্য। অন্যদিকে বাংলাভাষী মানুষেরা চালিত হয়েছিল বাঙালিত্বের আবেগে। তাদের কাছে বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রাম ছিল বাঙালিত্ব প্রতিষ্ঠারই সংগ্রাম। বিশেষ করে কলকাতার বিভিন্ন প্রচারমাধ্যমে (বিশেষ করে বেতারে) 'এপার বাংলা ওপার বাংলা'র অভিন্নতার কথাই বিশেষ জোরেশোরে প্রতিনিয়ত প্রচারিত হচ্ছিল। সে প্রচারের তোড়ে অন্য অঞ্চলের বা অন্য জাতিগোষ্ঠীর মানুষের যুক্তিজাল সম্পূর্ণ ছিন্নভিন্ন হয়ে গিয়েছিল।
ভারত রাষ্ট্রের অধিবাসী বাঙালিদের এ রকম অবস্থান রাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় শাসকদের মধ্যে ভয়ের কাঁপন সৃষ্টি করে। বিশেষ করে সেই শাসকগোষ্ঠীর কট্টর দক্ষিণপন্থীদের মধ্যে। তবে ভয় পেলেও সেই ভয়কে জয় করার কৌশল সন্ধানেও তারা ভেতরে ভেতরে তৎপর হয়ে ওঠে। সেই তৎপরতাই স্বাধীন বাংলাদেশের জন্য সংগ্রামে নিয়োজিত প্রধান দল আওয়ামী লীগের একটি অংশের মধ্যে সঞ্চারিত করে দিতে সক্ষম হয় বাংলাদেশের মুক্তিবাহিনীর সমান্তরালে 'মুজিব বাহিনী' গঠনের মধ্য দিয়ে। সেই সঙ্গে খন্দকার মোশতাক ও তাঁর শয়তান সঙ্গীদের কার্যকলাপের প্রতিও তারা লক্ষ রাখে। তাদের বিশ্বাসঘাতকতামূলক কার্যকলাপকে পুরো সফল হতেও যেমন দেয় না, তেমনি ওরা যাতে মুক্তিসংগ্রামের মূল ধারাটি থেকে অপসৃত হয়ে না যায় তারও ব্যবস্থা করে রাখে।
ভারত রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে বাস করা বাঙালিরা সেদিন বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামীদের সঙ্গে এমনই একাত্ম হয়ে গিয়েছিল যে তারা যেন বঙ্গবন্ধুকে তাদেরও নেতা বলে ধরে নিয়েছিল। সেই বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ডাককে যেন তাদের জন্যও পালনীয় আদেশ বলে শিরোধার্য করে নিয়েছিল। এ রকম অনেক ভারতীয় বাঙালির সঙ্গে আমারও আলাপ হয়েছিল। তাঁদের কেউ কেউ তো এমনও বলেছিলেন যে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার যদি স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় সক্রিয়ভাবে এগিয়ে না আসে, তাহলে তাঁরা ভারত রাষ্ট্র থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতেও বিন্দুমাত্র দ্বিধা করবেন না। তাঁদের এ মনোভঙ্গিটি ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারও সর্বতোভাবে উপলব্ধি করেছিল। তাই সে সরকার সে সময় তাঁদের ঘাঁটাতে সাহস করেনি এবং খুব সাবধানতার সঙ্গে এগিয়েছিল ও অনেক কৌশলী পদক্ষেপে কুশলতা প্রদর্শন করেছিল।
সেই কুশলতাকে কাজে লাগিয়েই বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামকে তাঁরা সর্বতোভাবে সহায়তা দিয়েছিল। কিন্তু স্বাধীন রাষ্ট্ররূপে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠার সঙ্গে সঙ্গেই তারা বাঙালিত্বের রাশ টেনে ধরে। স্বাধীন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন যখন ভারতের কেন্দ্রীয় শাসকদের দ্বারা একাত্তরের ডিসেম্বরেই সর্বপ্রথম সংবর্ধিত হয়েছিলেন, তখনই সেই শাসকদের বক্তব্য ছিল যে তাঁরা স্বাধীন 'মুসলিম বাংলা'র সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলবেন। তাজউদ্দীন সঙ্গে সঙ্গে ওই 'মুসলিম বাংলা' কথাটির প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন যে বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় কার্যকলাপে কেনোরূপ সাম্প্রদায়িকতার স্থান হবে না, সেই কার্যকলাপ চালিত হবে অসাম্প্রদায়িক ও ধর্মনিরপেক্ষ বাঙালিত্বের ওপর ভর করে। কথাটি ভারতের কেন্দ্রীয় শসকগোষ্ঠীর যে মনঃপূত হয়নি, তা সে সময়েই বোঝা গিয়েছিল। তাঁরা অগৌণে 'এপার বাংলা ওপার বাংলা'র অভিন্নতার প্রচার বন্ধ করে দেয়। এর বিপরীতে বাংলাদেশ রাষ্ট্রটির নানাবিধ স্বাতন্ত্র্যের কথাই তুলে ধরতে থাকে, বাংলাদেশে যে মুসলমানরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ এবং মুসলিম কৃষ্টি-সংস্কৃতির ধারক_এ বিষয়টির ওপরই জোর দেয়।
এ রকম জোর দেওয়ার প্রকৃত হেতুটি উপলব্ধির জন্য অতীত ইতিহাসের দিকে অবশ্যই নজর ফেরাতে হবে, অতীত যে 'ভুবনে ভুবনে গোপনে গোপনে' কাজ করে যায়, সে কথাটিও স্মরণে আনতে হবে। স্মরণ করতে হবে যে এ রকম কাজ করার ভেতর অতীতের ইতিবাচক উপাদানের মতো নেতিবাচক উপাদানগুলোও সমানভাবেই উপস্থিত থাকে।
আমরা জানি, ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে একটি প্রচণ্ড আন্দোলন হয়েছিল। সেই আন্দোলনে কিছু কিছু মুসলিম বুদ্ধিজীবী সংযুক্ত হয়েছিলেন যদিও, তবু আন্দোলনটি পরিচালিত হয়েছিল হিন্দুদেরই নেতৃত্বে এবং তাতে হিন্দু ধর্মীয় পৌরাণিক ঐতিহ্যকেই বিশেষ কাজে লাগানো হয়েছিল। দেশকে কল্পনা করা হয়েছিল হিন্দু দেবীরূপে। সেই দেবীর আরাধনার মন্ত্রও স্বাভাবিকভাবেই আহরণ করা হয়েছিল হিন্দু ঐতিহ্য থেকে। আরাধনাকারীরা বুক চিরে রক্ত বের করে সেই রক্ত দেবীর পায়ে উৎসর্গ করে দেবীর শৃঙ্খলমুক্তির শপথ গ্রহণ করত। হিন্দু ধর্মগ্রন্থ গীতার উপদেশ ছিল তাদের প্রেরণার উৎস।
এ রকম ভাবনা ও কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সংযুক্ত হওয়া তো কোনো মুসলমানের পক্ষে একেবারেই অসম্ভব। তাই তাদের অন্যতর পন্থা খুঁজে নিতে হয়, চলে যেতে হয় হিন্দুদের একেবারে বিপরীত অবস্থানে। সে অবস্থানটিও কোনোমতেই সুস্থতার ধারক হতে পারে না এবং তা হয়ওনি। চূড়ান্ত অসুস্থতাই মুসলিম নেতৃত্বের ওপর ভর করে বসে। তারই প্রকাশ ঘটে ১৯০৬ সালে 'মুসলিম লীগ' প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে। ব্রিটিশ সরকার নানাভাবে এই মুসলিম লীগকে সহায়তা দিতে থাকে এবং তাদের 'ভাগ করে শাসন করা'র কৌশলকে কাজে লাগিয়ে মুসলিম নেতৃত্বকে হিন্দু-বিরোধিতায় প্ররোচিত করে। তবে এ রকম প্ররোচনার সুযোগ যে ব্রিটিশবিরোধিতার আন্দোলন-সংগ্রামে ধর্মের ব্যবহারের মধ্য দিয়ে হিন্দুরাই করে দেয়_সে সত্যটিকেও অস্বীকার করা যাবে না কোনো মতেই।
১৯০৬ সালে বাংলার বুকে মুসলিম লীগ দ্বিজাতিতত্ত্বের যে চারাগাছটি রোপণ করেছিল, সেটিতে সার প্রয়োগে ও জলসিঞ্চনে ব্রিটিশ রাজই বেড়ে উঠতে সাহায্য করে। হিন্দু-মুসলমানের সাম্প্রদায়িকতা এমন পর্যায়ে পেঁৗছায় যে বিশ শতকের বিশের দশকের গোড়ায় খেলাফত ও অসহযোগ আন্দোলনের অত্যন্ত অল্প সময় ছাড়া আর কোনো দিন এ দেশের কোনো রাজনৈতিক আন্দোলন-সংগ্রামই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ভিত্তিতে চালিত হতে পারেনি। এই দুই সম্প্রদায়ের বিদ্বেষ চূড়ান্ত পর্যায়ে উপনীত হয় ১৯৪৬ সালে। সে বছর যে ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সংঘটিত হয়, তারই বিষাক্ত পরিণতি দেশ বিভাগ ও পাকিস্তানের মতো একটি জঘন্য সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা। সে সময়ে যুক্তবঙ্গ প্রতিষ্ঠার অত্যন্ত সুসঙ্গত প্রস্তাবও হালে পানি পায় না। যে হিন্দু নেতাদের প্রণোদনায় ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী দুর্বার আন্দোলন গড়ে ওঠে, মূলত সেই নেতাদের উত্তরসূরিদের জেদেই ঘটে ১৯৪৭ সালের বাংলা বিভাগ। ইতিহাসের কী নির্মম পরিহাস!
অথচ পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই সে সময়কার পূর্ব পাকিস্তানের সচেতন ও সহৃদয় মুসলমানের মধ্যে দ্বিজাতিতত্ত্ববিরোধী বাঙালি জাতিসত্তার চৈতন্যের উন্মেষ ঘটতে শুরু করে। নবীন কবিরা মুসলিম পুনরুত্থানের পশ্চাৎমুখী চিন্তা সম্পূর্ণ প্রত্যাখ্যান করেন। তাঁদের কবিতা হয়ে ওঠে অসাম্প্রদায়িক, আধুনিক ও প্রগতিশীল। পণ্ডিতদের গবেষণাও নিয়োজিত হয় সাম্প্রদায়িকতা-বিরোধী জাতিসত্তার সন্ধানে। এমনকি, ডক্টর শহীদুল্লাহর বিবেচনায়ও 'মুসলমান' পরিচয় গৌণ হয়ে গেল, মুখ্য হয়ে উঠল বাঙালি পরিচয়। দ্ব্যর্থহীন ভাষায় তিনি জানিয়ে দিলেন_'মা প্রকৃতি আমাদের চেহারায় বাঙালিত্বের এমন ছাপ মেরে দিয়েছেন যা টিকি লুঙ্গি দাড়ি দিয়ে কিছুতেই ঢেকে দেওয়া যাবে না।'
প্রগতিবাদী মহলে শহীদুল্লাহর এই বক্তব্য বিপুলভাবে অভিনন্দিত হলো। কিন্তু তাই বলে পাকিস্তান-প্রেমিক দ্বিজাতিতত্ত্ববাদীদের প্রতাপ সে সময়ে মোটেই খর্ব হয়নি। তাদের মুখপত্ররূপে তখন সক্রিয় ছিল 'আজাদ পত্রিকা'। আমার এখনো স্মরণ আছে যে 'আজাদ' শহীদুল্লাহর সে সময়কার নানা বক্তব্য নিয়ে তুলকালাম কাণ্ড বাধিয়ে দিয়েছিল, তাঁকে নিয়ে ব্যঙ্গ-বিদ্রূপের তুফান ছুটিয়েছিল। ডক্টর শহীদুল্লাহ অনেক আরবি-ফারসি শব্দেরই বাংলা অনুবাদের পক্ষপাতী ছিলেন। এটি নিয়েও তাঁকে বিদ্রূপ করে বলা হয়েছিল_"তাহলে তো 'ডক্টর শহীদুল্লাহ' নামটিরও অনুবাদ করে নিয়ে 'কবিরাজ বলিনারায়ণ' লিখতে হবে।"
তবে যতই ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ করা হোক না কেন, বাঙালিত্বের বোধে যারা উদ্দীপ্ত হয়েছিলেন, তাঁদের অনুপ্রেরণায়ই এ দেশের রাজনীতি অন্যতর রূপ পরিগ্রহ করে, দেশটি ক্রমেই স্বাধীনতার দিকে অগ্রসর হতে থাকে এবং একসময় সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ঘটে।
সেই স্বাধীনতা অর্জনে ভারতের সহযোগিতার স্বীকৃতি দিয়েও বারবারই সে দেশের কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন অংশের বিভিন্ন রকমের চিন্তা-চেতনার কথা উল্লেখ করেছি এবং সে প্রসঙ্গেই বাঙালিত্বের প্রতি তাদের মনোভঙ্গির কথাটিও তুলে এনেছি। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর সেই মনোভঙ্গিকে ভারতের কায়েমি স্বার্থবাদীরা আরো সূক্ষ্ম ও মজবুত করে তোলে। আর এ কাজে তারা সহযোগিতা করে বাংলাদেশেরই প্রতিক্রিয়াশীল ও ধর্মান্ধ গোষ্ঠীগুলোকে। এই গোষ্ঠীগুলো পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় নেতাদের মতোই স্বাধীন বাংলাদেশকে 'মুসলিম বাংলা' নামে অভিহিত করত। বিশেষ করে বঙ্গবন্ধু নিহত হওয়ার পর 'মুসলিম বাংলা জিন্দাবাদ' ধ্বনিটিকে তারা বেশ জোরেশোরে উচ্চারণ করতে থাকে।
কিন্তু একপর্যায়ে তারা উপলব্ধি করে যে 'মুসলিম বাংলা' কথাটি বাংলাদেশের বিপুল জনগোষ্ঠীর কাছে গৃহীত হবে না। তাই তারা গ্রহণ করে 'বাংলাদেশি' শব্দটি। এই 'বাংলাদেশি' শব্দটির উদ্ভাবক ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারভুক্ত কায়েমি স্বার্থবাদী গোষ্ঠীর সহযোগী পশ্চিমবঙ্গের এক বাঙালি সন্তান। এ সম্পর্কে আমার এক ধীমান বন্ধু 'জামান মাহফুজ' ছদ্মনামে ১৯৯১ সালে 'আজকের কাগজ' পত্রিকায় একটি চিঠি প্রকাশ করেন। ওই বন্ধু নিজে যেহেতু তাঁর আসল নামটি কাউকে জানাননি, তাই আমিও আর সেটি ফাঁস করে দিলাম না। চিঠিতে তিনি লিখেছিলেন_
"বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ভুট্টো একে 'মুসলিম বাংলা' বলতেন। সেই সময় ভারতীয় সাংবাদিক শ্রীবসন্ত চ্যাটার্জি 'ইনসাইড বাংলাদেশ টুডে' (১৯৭৪) নামে একটি বই লেখেন। তাতে তিনি বলেন, 'মুসলিম বংলা' স্লোগান এই মুহূর্তে অর্থাৎ এত বাঙালির মৃত্যুর পর বাংলাদেশের বাঙালিরা নেবে না। তবে খুব লাগসই শব্দ হবে 'বাংলাদেশি', যা অর্থের (কনটেন্টের) দিক থেকে মুসলিম বাংলাই। ওই 'বাংলাদেশি' কথাটি সাধারণ ও স্বল্প শিক্ষিত মানুষ দ্রুত গ্রহণ করবে বলে শ্রী চ্যাটার্জির মনে হয়। এই আইডিয়া দ্রুত লুফে নেয় বাংলাদেশের স্বাধীনতাবিরোধী সাংবাদিক ও বিএনপির সাবেক মন্ত্রী মরহুম খন্দকার আবদুল হামিদ ও তাঁরই উপদেশে জেনারেল জিয়া।
তাই নিঃসন্দেহে বলা যায়, 'বাংলাদেশি' জাতীয়তাবাদের স্বপ্নদ্রষ্টা জুলফিকার আলী ভুট্টো ও এর জনক শ্রীবসন্ত চ্যাটার্জি। এটি একটি ভারত-পাকিস্তান যৌথ প্রোডাকশন। গোটা ব্যাপারটাই চক্রান্ত। 'বাঙালি' এ ধারণা গ্রহণ করে দুই বাংলার মানুষ কখনো ঐক্য অনুভব না করে এবং পশ্চিম বাংলায় বিছিন্নতাবাদী আন্দোলন গড়ে না ওঠে, সেটাই ছিল ভারত এবং ইন্দিরা গান্ধীর ইচ্ছা। সেই ইচ্ছার কাছেই আত্মসমর্পণ করেন জিয়া।"
হিন্দু এবং মুসলমান সাম্প্রদায়িকতার হাত থেকে বাঙালিত্বকে রক্ষার দায়িত্ব তরুণ প্রজন্ম অবশ্যই গ্রহণ করবে_এ রকম ঐতিহাসিক আশাবাদ পোষণের পেছনে ইতিহাসের যুক্তি ও সমর্থন আছে নিশ্চয়ই।
লেখক : শিক্ষাবিদ
ভারত রাষ্ট্রের অধিবাসী বাঙালিদের এ রকম অবস্থান রাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় শাসকদের মধ্যে ভয়ের কাঁপন সৃষ্টি করে। বিশেষ করে সেই শাসকগোষ্ঠীর কট্টর দক্ষিণপন্থীদের মধ্যে। তবে ভয় পেলেও সেই ভয়কে জয় করার কৌশল সন্ধানেও তারা ভেতরে ভেতরে তৎপর হয়ে ওঠে। সেই তৎপরতাই স্বাধীন বাংলাদেশের জন্য সংগ্রামে নিয়োজিত প্রধান দল আওয়ামী লীগের একটি অংশের মধ্যে সঞ্চারিত করে দিতে সক্ষম হয় বাংলাদেশের মুক্তিবাহিনীর সমান্তরালে 'মুজিব বাহিনী' গঠনের মধ্য দিয়ে। সেই সঙ্গে খন্দকার মোশতাক ও তাঁর শয়তান সঙ্গীদের কার্যকলাপের প্রতিও তারা লক্ষ রাখে। তাদের বিশ্বাসঘাতকতামূলক কার্যকলাপকে পুরো সফল হতেও যেমন দেয় না, তেমনি ওরা যাতে মুক্তিসংগ্রামের মূল ধারাটি থেকে অপসৃত হয়ে না যায় তারও ব্যবস্থা করে রাখে।
ভারত রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে বাস করা বাঙালিরা সেদিন বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামীদের সঙ্গে এমনই একাত্ম হয়ে গিয়েছিল যে তারা যেন বঙ্গবন্ধুকে তাদেরও নেতা বলে ধরে নিয়েছিল। সেই বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ডাককে যেন তাদের জন্যও পালনীয় আদেশ বলে শিরোধার্য করে নিয়েছিল। এ রকম অনেক ভারতীয় বাঙালির সঙ্গে আমারও আলাপ হয়েছিল। তাঁদের কেউ কেউ তো এমনও বলেছিলেন যে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার যদি স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় সক্রিয়ভাবে এগিয়ে না আসে, তাহলে তাঁরা ভারত রাষ্ট্র থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতেও বিন্দুমাত্র দ্বিধা করবেন না। তাঁদের এ মনোভঙ্গিটি ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারও সর্বতোভাবে উপলব্ধি করেছিল। তাই সে সরকার সে সময় তাঁদের ঘাঁটাতে সাহস করেনি এবং খুব সাবধানতার সঙ্গে এগিয়েছিল ও অনেক কৌশলী পদক্ষেপে কুশলতা প্রদর্শন করেছিল।
সেই কুশলতাকে কাজে লাগিয়েই বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামকে তাঁরা সর্বতোভাবে সহায়তা দিয়েছিল। কিন্তু স্বাধীন রাষ্ট্ররূপে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠার সঙ্গে সঙ্গেই তারা বাঙালিত্বের রাশ টেনে ধরে। স্বাধীন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন যখন ভারতের কেন্দ্রীয় শাসকদের দ্বারা একাত্তরের ডিসেম্বরেই সর্বপ্রথম সংবর্ধিত হয়েছিলেন, তখনই সেই শাসকদের বক্তব্য ছিল যে তাঁরা স্বাধীন 'মুসলিম বাংলা'র সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলবেন। তাজউদ্দীন সঙ্গে সঙ্গে ওই 'মুসলিম বাংলা' কথাটির প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন যে বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় কার্যকলাপে কেনোরূপ সাম্প্রদায়িকতার স্থান হবে না, সেই কার্যকলাপ চালিত হবে অসাম্প্রদায়িক ও ধর্মনিরপেক্ষ বাঙালিত্বের ওপর ভর করে। কথাটি ভারতের কেন্দ্রীয় শসকগোষ্ঠীর যে মনঃপূত হয়নি, তা সে সময়েই বোঝা গিয়েছিল। তাঁরা অগৌণে 'এপার বাংলা ওপার বাংলা'র অভিন্নতার প্রচার বন্ধ করে দেয়। এর বিপরীতে বাংলাদেশ রাষ্ট্রটির নানাবিধ স্বাতন্ত্র্যের কথাই তুলে ধরতে থাকে, বাংলাদেশে যে মুসলমানরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ এবং মুসলিম কৃষ্টি-সংস্কৃতির ধারক_এ বিষয়টির ওপরই জোর দেয়।
এ রকম জোর দেওয়ার প্রকৃত হেতুটি উপলব্ধির জন্য অতীত ইতিহাসের দিকে অবশ্যই নজর ফেরাতে হবে, অতীত যে 'ভুবনে ভুবনে গোপনে গোপনে' কাজ করে যায়, সে কথাটিও স্মরণে আনতে হবে। স্মরণ করতে হবে যে এ রকম কাজ করার ভেতর অতীতের ইতিবাচক উপাদানের মতো নেতিবাচক উপাদানগুলোও সমানভাবেই উপস্থিত থাকে।
আমরা জানি, ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে একটি প্রচণ্ড আন্দোলন হয়েছিল। সেই আন্দোলনে কিছু কিছু মুসলিম বুদ্ধিজীবী সংযুক্ত হয়েছিলেন যদিও, তবু আন্দোলনটি পরিচালিত হয়েছিল হিন্দুদেরই নেতৃত্বে এবং তাতে হিন্দু ধর্মীয় পৌরাণিক ঐতিহ্যকেই বিশেষ কাজে লাগানো হয়েছিল। দেশকে কল্পনা করা হয়েছিল হিন্দু দেবীরূপে। সেই দেবীর আরাধনার মন্ত্রও স্বাভাবিকভাবেই আহরণ করা হয়েছিল হিন্দু ঐতিহ্য থেকে। আরাধনাকারীরা বুক চিরে রক্ত বের করে সেই রক্ত দেবীর পায়ে উৎসর্গ করে দেবীর শৃঙ্খলমুক্তির শপথ গ্রহণ করত। হিন্দু ধর্মগ্রন্থ গীতার উপদেশ ছিল তাদের প্রেরণার উৎস।
এ রকম ভাবনা ও কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সংযুক্ত হওয়া তো কোনো মুসলমানের পক্ষে একেবারেই অসম্ভব। তাই তাদের অন্যতর পন্থা খুঁজে নিতে হয়, চলে যেতে হয় হিন্দুদের একেবারে বিপরীত অবস্থানে। সে অবস্থানটিও কোনোমতেই সুস্থতার ধারক হতে পারে না এবং তা হয়ওনি। চূড়ান্ত অসুস্থতাই মুসলিম নেতৃত্বের ওপর ভর করে বসে। তারই প্রকাশ ঘটে ১৯০৬ সালে 'মুসলিম লীগ' প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে। ব্রিটিশ সরকার নানাভাবে এই মুসলিম লীগকে সহায়তা দিতে থাকে এবং তাদের 'ভাগ করে শাসন করা'র কৌশলকে কাজে লাগিয়ে মুসলিম নেতৃত্বকে হিন্দু-বিরোধিতায় প্ররোচিত করে। তবে এ রকম প্ররোচনার সুযোগ যে ব্রিটিশবিরোধিতার আন্দোলন-সংগ্রামে ধর্মের ব্যবহারের মধ্য দিয়ে হিন্দুরাই করে দেয়_সে সত্যটিকেও অস্বীকার করা যাবে না কোনো মতেই।
১৯০৬ সালে বাংলার বুকে মুসলিম লীগ দ্বিজাতিতত্ত্বের যে চারাগাছটি রোপণ করেছিল, সেটিতে সার প্রয়োগে ও জলসিঞ্চনে ব্রিটিশ রাজই বেড়ে উঠতে সাহায্য করে। হিন্দু-মুসলমানের সাম্প্রদায়িকতা এমন পর্যায়ে পেঁৗছায় যে বিশ শতকের বিশের দশকের গোড়ায় খেলাফত ও অসহযোগ আন্দোলনের অত্যন্ত অল্প সময় ছাড়া আর কোনো দিন এ দেশের কোনো রাজনৈতিক আন্দোলন-সংগ্রামই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ভিত্তিতে চালিত হতে পারেনি। এই দুই সম্প্রদায়ের বিদ্বেষ চূড়ান্ত পর্যায়ে উপনীত হয় ১৯৪৬ সালে। সে বছর যে ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সংঘটিত হয়, তারই বিষাক্ত পরিণতি দেশ বিভাগ ও পাকিস্তানের মতো একটি জঘন্য সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা। সে সময়ে যুক্তবঙ্গ প্রতিষ্ঠার অত্যন্ত সুসঙ্গত প্রস্তাবও হালে পানি পায় না। যে হিন্দু নেতাদের প্রণোদনায় ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী দুর্বার আন্দোলন গড়ে ওঠে, মূলত সেই নেতাদের উত্তরসূরিদের জেদেই ঘটে ১৯৪৭ সালের বাংলা বিভাগ। ইতিহাসের কী নির্মম পরিহাস!
অথচ পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই সে সময়কার পূর্ব পাকিস্তানের সচেতন ও সহৃদয় মুসলমানের মধ্যে দ্বিজাতিতত্ত্ববিরোধী বাঙালি জাতিসত্তার চৈতন্যের উন্মেষ ঘটতে শুরু করে। নবীন কবিরা মুসলিম পুনরুত্থানের পশ্চাৎমুখী চিন্তা সম্পূর্ণ প্রত্যাখ্যান করেন। তাঁদের কবিতা হয়ে ওঠে অসাম্প্রদায়িক, আধুনিক ও প্রগতিশীল। পণ্ডিতদের গবেষণাও নিয়োজিত হয় সাম্প্রদায়িকতা-বিরোধী জাতিসত্তার সন্ধানে। এমনকি, ডক্টর শহীদুল্লাহর বিবেচনায়ও 'মুসলমান' পরিচয় গৌণ হয়ে গেল, মুখ্য হয়ে উঠল বাঙালি পরিচয়। দ্ব্যর্থহীন ভাষায় তিনি জানিয়ে দিলেন_'মা প্রকৃতি আমাদের চেহারায় বাঙালিত্বের এমন ছাপ মেরে দিয়েছেন যা টিকি লুঙ্গি দাড়ি দিয়ে কিছুতেই ঢেকে দেওয়া যাবে না।'
প্রগতিবাদী মহলে শহীদুল্লাহর এই বক্তব্য বিপুলভাবে অভিনন্দিত হলো। কিন্তু তাই বলে পাকিস্তান-প্রেমিক দ্বিজাতিতত্ত্ববাদীদের প্রতাপ সে সময়ে মোটেই খর্ব হয়নি। তাদের মুখপত্ররূপে তখন সক্রিয় ছিল 'আজাদ পত্রিকা'। আমার এখনো স্মরণ আছে যে 'আজাদ' শহীদুল্লাহর সে সময়কার নানা বক্তব্য নিয়ে তুলকালাম কাণ্ড বাধিয়ে দিয়েছিল, তাঁকে নিয়ে ব্যঙ্গ-বিদ্রূপের তুফান ছুটিয়েছিল। ডক্টর শহীদুল্লাহ অনেক আরবি-ফারসি শব্দেরই বাংলা অনুবাদের পক্ষপাতী ছিলেন। এটি নিয়েও তাঁকে বিদ্রূপ করে বলা হয়েছিল_"তাহলে তো 'ডক্টর শহীদুল্লাহ' নামটিরও অনুবাদ করে নিয়ে 'কবিরাজ বলিনারায়ণ' লিখতে হবে।"
তবে যতই ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ করা হোক না কেন, বাঙালিত্বের বোধে যারা উদ্দীপ্ত হয়েছিলেন, তাঁদের অনুপ্রেরণায়ই এ দেশের রাজনীতি অন্যতর রূপ পরিগ্রহ করে, দেশটি ক্রমেই স্বাধীনতার দিকে অগ্রসর হতে থাকে এবং একসময় সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ঘটে।
সেই স্বাধীনতা অর্জনে ভারতের সহযোগিতার স্বীকৃতি দিয়েও বারবারই সে দেশের কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন অংশের বিভিন্ন রকমের চিন্তা-চেতনার কথা উল্লেখ করেছি এবং সে প্রসঙ্গেই বাঙালিত্বের প্রতি তাদের মনোভঙ্গির কথাটিও তুলে এনেছি। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর সেই মনোভঙ্গিকে ভারতের কায়েমি স্বার্থবাদীরা আরো সূক্ষ্ম ও মজবুত করে তোলে। আর এ কাজে তারা সহযোগিতা করে বাংলাদেশেরই প্রতিক্রিয়াশীল ও ধর্মান্ধ গোষ্ঠীগুলোকে। এই গোষ্ঠীগুলো পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় নেতাদের মতোই স্বাধীন বাংলাদেশকে 'মুসলিম বাংলা' নামে অভিহিত করত। বিশেষ করে বঙ্গবন্ধু নিহত হওয়ার পর 'মুসলিম বাংলা জিন্দাবাদ' ধ্বনিটিকে তারা বেশ জোরেশোরে উচ্চারণ করতে থাকে।
কিন্তু একপর্যায়ে তারা উপলব্ধি করে যে 'মুসলিম বাংলা' কথাটি বাংলাদেশের বিপুল জনগোষ্ঠীর কাছে গৃহীত হবে না। তাই তারা গ্রহণ করে 'বাংলাদেশি' শব্দটি। এই 'বাংলাদেশি' শব্দটির উদ্ভাবক ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারভুক্ত কায়েমি স্বার্থবাদী গোষ্ঠীর সহযোগী পশ্চিমবঙ্গের এক বাঙালি সন্তান। এ সম্পর্কে আমার এক ধীমান বন্ধু 'জামান মাহফুজ' ছদ্মনামে ১৯৯১ সালে 'আজকের কাগজ' পত্রিকায় একটি চিঠি প্রকাশ করেন। ওই বন্ধু নিজে যেহেতু তাঁর আসল নামটি কাউকে জানাননি, তাই আমিও আর সেটি ফাঁস করে দিলাম না। চিঠিতে তিনি লিখেছিলেন_
"বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ভুট্টো একে 'মুসলিম বাংলা' বলতেন। সেই সময় ভারতীয় সাংবাদিক শ্রীবসন্ত চ্যাটার্জি 'ইনসাইড বাংলাদেশ টুডে' (১৯৭৪) নামে একটি বই লেখেন। তাতে তিনি বলেন, 'মুসলিম বংলা' স্লোগান এই মুহূর্তে অর্থাৎ এত বাঙালির মৃত্যুর পর বাংলাদেশের বাঙালিরা নেবে না। তবে খুব লাগসই শব্দ হবে 'বাংলাদেশি', যা অর্থের (কনটেন্টের) দিক থেকে মুসলিম বাংলাই। ওই 'বাংলাদেশি' কথাটি সাধারণ ও স্বল্প শিক্ষিত মানুষ দ্রুত গ্রহণ করবে বলে শ্রী চ্যাটার্জির মনে হয়। এই আইডিয়া দ্রুত লুফে নেয় বাংলাদেশের স্বাধীনতাবিরোধী সাংবাদিক ও বিএনপির সাবেক মন্ত্রী মরহুম খন্দকার আবদুল হামিদ ও তাঁরই উপদেশে জেনারেল জিয়া।
তাই নিঃসন্দেহে বলা যায়, 'বাংলাদেশি' জাতীয়তাবাদের স্বপ্নদ্রষ্টা জুলফিকার আলী ভুট্টো ও এর জনক শ্রীবসন্ত চ্যাটার্জি। এটি একটি ভারত-পাকিস্তান যৌথ প্রোডাকশন। গোটা ব্যাপারটাই চক্রান্ত। 'বাঙালি' এ ধারণা গ্রহণ করে দুই বাংলার মানুষ কখনো ঐক্য অনুভব না করে এবং পশ্চিম বাংলায় বিছিন্নতাবাদী আন্দোলন গড়ে না ওঠে, সেটাই ছিল ভারত এবং ইন্দিরা গান্ধীর ইচ্ছা। সেই ইচ্ছার কাছেই আত্মসমর্পণ করেন জিয়া।"
হিন্দু এবং মুসলমান সাম্প্রদায়িকতার হাত থেকে বাঙালিত্বকে রক্ষার দায়িত্ব তরুণ প্রজন্ম অবশ্যই গ্রহণ করবে_এ রকম ঐতিহাসিক আশাবাদ পোষণের পেছনে ইতিহাসের যুক্তি ও সমর্থন আছে নিশ্চয়ই।
লেখক : শিক্ষাবিদ
No comments