বর্তমান ইসি বিভক্ত ডিসিসির নির্বাচন করবে না : সিইসি-হঠাৎ আইনি জটিলতার উদ্ভব

র্তমান নির্বাচন কমিশন (ইসি) বিভক্ত ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের নির্বাচন করবে না। কমিশনের মেয়াদের মধ্যে নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাকি দায়িত্ব পরবর্তী ইসির ঘাড়ে চাপিয়ে যেতেও রাজি নন নির্বাচন কমিশনাররা। গতকাল সোমবার ইসির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার ড. এ টি এম শামসুল হুদা। আজ স্থানীয় সরকার বিভাগকেও ইসির এ সিদ্ধান্ত আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়ে


দেওয়া হবে। নির্বাচন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ইসির এ সিদ্ধান্তের ফলে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের নির্বাচন নিয়ে আইনি জটিলতা তৈরি হলো।
'স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) সংশোধিত আইন-২০১১' অনুসারে সিটি করপোরেশন বিভক্ত করে একাধিক সিটি করপোরেশন গঠন করলে ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন সম্পন্ন করতে হবে। এ ছাড়া এ ধরনের সিটি করপোরেশনে ৯০ দিনের বেশি প্রশাসক রাখা যাবে না। এখন ইসির সিদ্ধান্তের ফলে নির্বাচন অনুষ্ঠানের সময় ও প্রশাসকরে মেয়াদ_এ দুটি ক্ষেত্রেই আইন সংশোধন ছাড়া বিকল্প কোনো পথ থাকছে না। তবে সিইসি জানিয়েছেন, ইসি আইন সংশোধনের জন্য কোনো প্রস্তাব দেবে না। যা করার তা সরকারকেই করতে হবে।
তিন কারণে ইসির 'না' : ড. এ টি এম শামসুল হুদা গতকাল জানান, তিনটি কারণে ইসি এ নির্বাচন না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রথম কারণ হলো বর্তমান ইসির মেয়াদ শেষ হয়ে আসছে এবং সে কারণে ঢাকার দুই সিটির নির্বাচন সম্পন্ন করে যাওয়ার মতো যথেষ্ট সময় হাতে নেই। দ্বিতীয় কারণ হলো ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করতে গেলে নির্বাচনে ইভিএম (ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন) ব্যবহারের ধারাবাহিকতা রক্ষা হবে না এবং তৃতীয় কারণ হলো জনবল সংকট।
ড. হুদা বলেন, 'বিভক্ত ডিসিসির নির্বাচন অবশ্যই হতে হবে। কিন্তু আমাদের হাতে যে সময় আছে তাতে দুই ভাগে নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করতে পারছি না। আবার আমরা নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করে বিদায় নিলে তাতে পরবর্তী নির্বাচন কমিশনের অসুবিধা হতে পারে।'
সিইসি জানান, বিদায়ী ইসি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে গেছে আর নতুন ইসি সে নির্বাচন সম্পন্ন করেছে_এমন দৃষ্টান্ত নেই। এ ছাড়া অন্য সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের মতোই ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে ইভিএমে নির্বাচন চায় ইসি। স্বল্প সময়ে নির্বাচন করতে গেলে ইভিএম বাদ দিয়ে আবার ব্যালট পেপার পদ্ধতিতে ভোট নিতে হবে।
সিইসি আরো বলেন, '১৮০ দিনে নির্বাচন হলে ইভিএমে নির্বাচন করা যাবে। ইভিএম ছাড়া ঢাকার নির্বাচনে ভোটগ্রহণ যুক্তিসংগত মনে করি না। স্বল্প সময়ে এ নির্বাচন করতে হলে আগের মতোই করতে হবে। কিন্তু বর্তমান ইসি আইনি কাঠামোসহ ইভিএম নিয়ে অনেক সংস্কার এনেছে। ৯০ দিনে নির্বাচন করতে গেলে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য যেসব সংস্কার আনা হয়েছে, তাতে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হতে পারে।'
জনবল সমস্যা সম্পর্কে সিইসি জানান, ইসি স্থানীয় সরকারের নির্বাচনগুলো নিজস্ব লোকবল (রিটার্নিং কর্মকর্তা ও পর্যবেক্ষক) দিয়ে করাতে চায়। বর্তমানে কুমিল্লা নির্বাচনে ইসির বেশির ভাগ কর্মকর্তা ব্যস্ত। এ অবস্থায় ঢাকার দুই সিটির নির্বাচন করতে গেলে ইসি নিজস্ব জনবলের সংকটে পড়বে।
'প্রস্তুতি রেখে যাব' : সিইসি জানান, তাঁর নেতৃত্বাধীন ইসির মেয়াদে ঢাকার দুই সিটির নির্বাচন না হলেও নতুন ইসির অধীনে নির্বাচন করার সব প্রস্তুতি রেখে যাবেন তাঁরা। তিনি নিজে এবং নির্বাচন কমিশনার ছহুল হোসাইন ৫ ফেব্রুয়ারি ইসি থেকে বিদায় নেবেন। নতুন সিইসি ও নতুন নির্বাচন কমিশনার নিযুক্ত হবেন ৬ ফেব্রুয়ারি। নতুন ওই ইসির জন্য বর্তমান ইসি এ দুই সিটির নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতিমূলক কাজগুলো করে যাবে।
ড. এ টি এম শামসুল হুদা বলেন, 'নতুনরা এসে সব রেডি পাবে। তাদের যেন অসুবিধা না হয়, সে জন্য সব ধরনের প্রস্তুতিমূলক কাজ আমরা করতে থাকব। তারা এসে যেন সহজে নির্বাচন করতে পারে।' সিইসি জানান, ঢাকার দুই সিটির নির্বাচন না হলেও বর্তমান ইসির মেয়াদে কুমিল্লা নির্বাচন শেষ হওয়ার পর নরসিংদীর পৌর মেয়র পদে নির্বাচনটি সম্পন্ন করা হবে।
প্রধান বিরোধী দলসহ বিভিন্ন মহলের বিরোধিতা সত্ত্বেও গত ২৯ ডিসেম্বর স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইন সংশোধনের বিল জাতীয় সংসদে পাস করে সরকার। এর মধ্য দিয়ে ঢাকা সিটি করপোরেশন ভেঙে ঢাকা উত্তর ও ঢাকা দক্ষিণ নামে দুটি সিটি করপোরেশন করা হয়। গত ১ ডিসেম্বর সংশোধিত এ আইনের গেজেট প্রকাশের পর গত ৪ ডিসেম্বর দুই করপোরেশনের ওয়ার্ডের তালিকা প্রকাশ করে প্রজ্ঞাপনও জারি করে স্থানীয় সরকার বিভাগ। এদিন নির্বাচন কমিশনকে স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে অনুরোধ জানানো হয়, আইন অনুযায়ী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে। সরকার এ দুই সিটি করপোরেশনের প্রশাসক নিয়োগের কাজও সম্পন্ন করে।
এদিকে নির্বাচন কমিশনার মুহাম্মদ ছহুল হোসাইন ও এম সাখাওয়াত হোসেন আগে থেকেই বলে আসছিলেন, তাঁরা তাঁদের মেয়াদে এ নির্বাচন অনুষ্ঠানে আগ্রহী নন। গত ৩০ নভেম্বর এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ৯০ দিনের মধ্যে এ নির্বাচন করা দুঃসাধ্য। ৪ ডিসেম্বর স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে নির্বাচন কমিশনকে ঢাকার দুই সিটির নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধপত্র হাতে পাওয়ার আগেই নির্বাচন কমিশনার মুহাম্মদ ছহুল হোসাইন বলেন, 'সংশোধিত আইনে ৯০ দিনের মধ্যে (আগামী ২৯ ফেব্রুয়ারির মধ্যে) ঢাকার নতুন দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচন করতে বলা হলেও নির্বাচন কমিশন তা করতে চায় না। বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ প্রায় শেষ হয়ে যাওয়া এ ক্ষেত্রে বড় বাধা হয়ে আছে।'
সিইসি দেশের বাইরে থাকায় এ বিষয়ে ইসির আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্তটি ঝুলে ছিল। সিইসি গত ১০ ডিসেম্বর দেশে ফেরার পর গতকাল নেতিবাচক ওই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।

No comments

Powered by Blogger.