যুবকের সম্পত্তি অধিগ্রহণ করতে যাচ্ছে কমিশন

যুব কর্মসংস্থান সোসাইটির (যুবক) স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি অধিগ্রহণ করতে যাচ্ছে সংস্থাটির ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকদের অর্থ ফেরত দেওয়ার জন্য গঠিত কমিশন। এ জন্য যুবকের অ্যাকাউন্টে কী পরিমাণ অর্থ জমা আছে, তা জানতে চেয়ে বাংলাদেশ ব্যাংককে চিঠি দিয়েছে কমিশন। একই সঙ্গে বিভিন্ন প্রকল্পের বিপরীতে সারাদেশে যুবকের যে জমি রয়েছে তার স্বত্বদখল যাচাইয়ের কাজ শুরু করা হচ্ছে। এ জন্য স্বরাষ্ট্র, ভূমি, আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক এবং জনপ্রশাসন


মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতা চেয়েছে কমিশন। সম্প্রতি যুবক কমিশনের চেয়ারম্যান মোঃ রফিকুল ইসলাম চিঠি পাঠিয়ে এসব সহযোগিতা চেয়েছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।
সূত্র জানায়, যুবকের গ্রাহকদের পাওনা পরিশোধের পদ্ধতি অথবা কৌশল নির্ণয়ের জন্য কমিশন কার্যক্রম শুরু করেছে। ব্যাংকে যুবকের অ্যাকাউন্টে নগদ টাকা জমা আছে কি-না তা জানতে চেয়ে বাংলাদেশ ব্যাংককে চিঠি লেখা হয়েছে। একই সঙ্গে জমির স্বত্বদখল যাচাইয়েরও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক ও অন্যান্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো কমিশনের চিঠিতে বলা হয়েছে, ড. ফরাস উদ্দিন কমিশনে উলি্লখিত ২ লাখ ৬৭ হাজার ৩৩০ গ্রাহকের বিপরীতে যুবকে জমা অর্থের পরিমাণ ২ হাজার ১৪৭ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। কিন্তু প্রকৃত গ্রাহকসংখ্যা ও তাদের জমা হওয়া অর্থের পরিমাণ আরও বেশি। এরই মধ্যে বহুসংখ্যক গ্রাহক কমিশনে এসে জানিয়েছেন, তারা নির্দিষ্ট সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংকে তাদের পাওনার আবেদন করতে পারেননি। এ ধরনের গ্রাহকের
সংখ্যা অনেক। যুবক ড. ফরাস উদ্দিন কমিশনের কাছে তাদের মালিকানায় যে জমির তালিকা পেশ করেছিল তা পর্যালোচনা করে ওই কমিশন মত দেয়, যুবকের স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির বর্তমান বাজারমূল্য গ্রাহকদের পাওনা টাকার চেয়েও বেশি।
১৯৯৪ সালে সদস্যদের মধ্যে ক্ষুদ্রঋণ বিতরণের মধ্য দিয়ে যাত্রা শুরুর চার বছরের মধ্যে যুবক হাউজিংসহ ২০ ধরনের ব্যবসা শুরু করে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়।
কমিশন নিশ্চিত, যুবক ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি দখলে নিয়ে প্রশাসক নিয়োগের মাধ্যমে তা বিক্রি করে গ্রাহকদের জমা করা অর্থ পরিশোধের বিকল্প নেই। তাই বিভিন্ন প্রকল্পের বিপরীতে সারাদেশে যুবকের গ্রাহকদের দাবির বিপরীতে যে জমি আছে তার স্বত্বদখল যাচাই করা প্রয়োজন। কমিশনের এ কাজ সম্পন্ন করার জন্য স্বরাষ্ট্র, ভূমি, আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতা প্রয়োজন।
সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয় যুবক কমিশন বিষয়ে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, এ কমিশন যুবকের গ্রাহকদের অর্থ ফেরত দিতে যুবক ও যুবক সংশ্লিষ্ট অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সব স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি দখলে নেবে। এ ছাড়া দেওয়ানি ও ফৌজদারি পদক্ষেপসহ দেশের প্রচলিত আইনে প্রয়োজনীয় সব ধরনের পদক্ষেপ নিতে পারবে। কার্যপ্রণালিতে কমিশনকে এ ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, দ্য কমিশন অব ইনকোয়ারি অ্যাক্ট, ১৯৫৬-এর (৩) ধারার বিধানমতে যুবক বিষয়ে এ কমিশন গঠন করা হয়েছে। দুই সদস্যবিশিষ্ট এ কমিশনের চেয়ারম্যান সাবেক যুগ্ম সচিব মোঃ রফিকুল ইসলাম ও সদস্য প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল-৩-এর সদস্য মোঃ মজনুল আহসান। এ কমিশনের মেয়াদকাল দু'বছর। মেয়াদ শেষে কমিশন সরকারের কাছে বিস্তারিত প্রতিবেদন পেশ করবে।
কমিশনের কার্যপ্রণালিতে বলা হয়েছে, কমিশন যুবকের প্রতারিত গ্রাহকদের অর্থ পরিশোধ করতে ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারবে। তবে যুবকের গ্রাহকদের জমা করা অর্থের পরিমাণও সুনির্দিষ্ট করতে হবে। এ জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে পারবে। গ্রাহকদের অর্থের পরিমাণ সুনির্দিষ্টভাবে নির্ধারণ করার পর তা পরিশোধের পদ্ধতি নির্ধারণ করেই গ্রাহকদের মাঝে অর্থ পরিশোধও করবে কমিশন।
এ ছাড়া যুবক দ্বারা প্রতারিত গ্রাহকদের পক্ষে সব ধরনের অন্তর্বর্তীমূলক ও প্রতিরোধক এবং আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে কমিশন। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকেও কমিশন এ কাজে নির্দেশ দিতে পারবে এবং দেশে প্রচলিত আইন ও বিধি অনুসারে সব ধরনের উদ্যোগও নিতে পারবে। এ ছাড়া যুবক ও যুবক সংশ্লিষ্ট সব স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি বিক্রি বা হস্তান্তরের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি এবং সম্পত্তি নিয়ন্ত্রণ করবে কমিশন। প্রয়োজনে কমিশনের অনুরোধে সরকার প্রশাসক নিয়োগ দেবে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, কমিশন যুবক ও যুবক সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর সব স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি অধিগ্রহণের পর তা বিক্রি করে পাওয়া অর্থ প্রতারিত গ্রাহকদের পরিশোধ করবে।

No comments

Powered by Blogger.