গবেষকরা দুষলেন এসইসি ডিএসইকে-সংকট পুঁজির নয়, আস্থার
২০১০ সালের ডিসেম্বরে ভয়াবহ ধসের পর থেকে পুঁজিবাজারকে স্থিতিশীল করার উদ্যোগ-আয়োজনের কমতি নেই। সর্বশেষ প্রধানমন্ত্রীকেও এগিয়ে আসতে হয়েছে সমস্যা সমাধানে। কিন্তু কিছুতেই যেন কিছু হচ্ছে না। বাজারে বারবারই ঘটছে ছন্দপতন। এর কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে গতকাল গবেষকরা বলেছেন, অর্থের সংকট কোনো সমস্যা নয়, শেয়ারবাজারে বিরাজ করছে আস্থার সংকট, স্বল্পমেয়াদি পদক্ষেপে যা দূর হওয়ার নয়।
এ ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে এসইসি নিজেও যেমন ব্যর্থতার পরিচয় দিয়ে যাচ্ছে, স্টক এঙ্চেঞ্জগুলোর দায়ও তেমনি কম নয়। তাঁদের মতে, আস্থার ভিত তৈরি করে বাজারকে ছেড়ে দিলেই তা আপনাআপনি ঠিক হয়ে যাবে, এত উদ্যোগের দরকার হবে না।
গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের গতকালকের সেমিনারে উপস্থাপিত মূল প্রবন্ধে সংস্থাটির সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, এসইসি নিয়ন্ত্রণ সংস্থা হিসেবে তার যে থাবা আছে সেটা এখনো দেখাতে পারেনি। তার যে স্টকহোল্ডার আছে তার সঙ্গে তার সম্পর্ক কী তা এখনো বলতে পারেনি। একদিকে এসইসি বলছে, শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারী ঝুঁকিপূর্ণ, অপরদিকে ব্যাংক ও অন্যান্য প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগের কথা বলা হচ্ছে। তাহলে তাদের জন্য কি তা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যাচ্ছে না? এসইসির লোকবল বাড়ানোর কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এসইসিতে ভালো আইনজীবী নেই, চার্টার্ড অ্যাকাউনটেন্ট নেই। স্বল্প লোকবল দিয়ে তারা পুরো বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। বিও অ্যাকাউন্ট পরিবর্তন আরো সহজ করা প্রয়োজন। এ ছাড়া ইনসাইড ট্রেডিং বন্ধ করার উদ্যোগ নিতে হবে। সরকারকে নীতিগতভাবে স্বীকার করে নিতে হবে, তারল্য বাড়িয়ে বাজারকে ঠিক করা যাবে না।
সেমিনারে এসইসির বর্তমান চেয়ারম্যানের ভূমিকার কঠোর সমালোচনা করেছেন শেয়ারবাজার ধসের পর সরকার গঠিত তদন্তু কমিটির প্রধান খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ। তাঁর মতে, এখনকার সমস্যা আস্থার, পুঁজির নয়। এসইসি নিজেদের ব্যর্থতা আড়াল করার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে সম্পৃক্ত করেছে। এসইসি রেগুলেটরি সংস্থা। এখানে কিছু হলে তার দায় এসইসির।
ইব্রাহিম খালেদ বলেন, এসইসি অনেকটাই স্বাধীন। যেসব আইন আছে তার প্রয়োগ নেই। এসইসি চেয়ারম্যান ঘন ঘন অর্থ মন্ত্রণালয়ে গেলে সেই স্বাধীন সত্তা নষ্ট হয়। এসইসিতে 'ইয়েসম্যান' নিয়োগ বন্ধ করার পরামর্শ দেন তিনি।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও এসইসির সাবেক চেয়ারম্যান ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, এসইসি আইনগতভাবে স্বাধীন। বিদ্যমান আইনের প্রয়োগ করলেই হলো। রাস্তায় আন্দোলনকারী বিনিয়োগকারীদের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে মির্জ্জা আজিজ বলেন, যাঁরা রাস্তায় নামেন তাঁদের অনেকে জেড ক্যাটাগরির শেয়ার কিনে লাভবান হয়েছেন। তাঁদের অনেকেই এখন লোকসানে পড়েছেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গর্ভনর এবং সরকারের পুঁজিবাজারসংক্রান্ত বিশেষ কমিটির প্রধান ড. ফরাস উদ্দিন আহমেদ সমালোচনার তীর ছোড়েন ডিএসইর দিকে। তিনি বলেন, সদস্য সংখ্যা না বাড়িয়ে সংস্থাটি নিজেই কার্টেল করার সুযোগ রেখেছে। এর ২৫-৩০ জন সদস্য 'পাকা খেলোয়াড়ের' মতো যখন খুশি তখন বাজার উঠাচ্ছে আর নামাচ্ছে। তিনি বলেন, পুঁজিবাজার মূলধন সৃষ্টির জন্য নয়। এর টাকা শিল্পে বিনিয়োগ হবে। উল্টো শিল্পের টাকা কেন পুঁজিবাজারে এল সেই প্রশ্ন করে তিনি বলেন, শেয়ারবাজার কি শুধুই লাভ আর অন্য সব কিছু কি শুধুই লোকসান? অমনিবাস অ্যাকাউন্টে কারচুপি হয়েছে। ডিএসই কারচুপি করেছে। ডিএসইর সিইও ঘন ঘন পাল্টানো হয়েছে। কেউ পুরো মেয়াদে দায়িত্ব পালন করতে পারেননি। মার্চেন্ট ব্যাংক হচ্ছে পরের ধনে পোদ্দারি করা। কোন আইনে তাদের নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে কেউ তা জানে না।
বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্সের (বিএবি) সভাপতি কাজী মাহমুদ সাত্তার বলেন, 'অনেকেই পুঁজিবাজার বিপর্যয়ের জন্য রাস্তা-ঘাটে-অফিসে সর্বত্র বাংলাদেশ ব্যাংককে দোষারোপ করে। তারা কি আদৌ কিছু বুঝে বলে, না তাদের কেউ ভুল বোঝায়? আমাদের ব্যাংকে পাঁচ কোটি অ্যাকাউন্টহোল্ডার আছে। এই ৩২ লাখ বিনিয়োগকারীর জন্য নিশ্চয়ই আমরা এই পাঁচ কোটিকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলতে পারি না।'
আত্মপক্ষ সমর্থন করার চেষ্টা করেন স্টক এঙ্চেঞ্জের কর্ণধাররা। চট্টগ্রাম স্টক এঙ্চেঞ্জের (সিএসই) সভাপতি আল মারুফ খান বলেন, বাজার স্থিতিশীল করার জন্য প্যাকেজ ঘোষণা করা হলেও তার প্রভাব বাজারে দেখা যাচ্ছে না। বাজারকে স্থিতিশীল করার জন্য বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরানোর ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, দিন দিন লেনদেনের পরিমাণ কমে যাচ্ছে।
ঢাকা স্টক এঙ্চেঞ্জের (ডিএসই) জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি আহসানুল ইসলাম টিটু বলেন, ২০০৮ সালের সূচক ছিল ২৮০০ পয়েন্ট, সেখান থেকে ২০১০ সালে কী করে তা ৮৯০০ পয়েন্ট হলো তা আমাদের খুঁজে বের করতে হবে। তিনি বলেন, 'বাজার ঠিক করার জন্য যেসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে তাতে আশা করছি বাজার ঠিক হবে। তবে তার জন্য সময় প্রয়োজন। অমনিবাস অ্যাকাউন্ট নিয়ে গভীরভাবে ভাবতে হবে। বিস্তর চিন্তা করতে হবে। মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো কার অধীনে থাকবে সেটাও পরিষ্কার করা প্রয়োজন। আমি মনে করি, মার্জিন ঋণই বর্তমানে বাজারের প্রধান সমস্যা। ডিমিউচ্যুয়ালাইজেশনের কাজ শুরু করেছি। ডিসেম্বরের মধ্যে রোডম্যাপ করে ফেলব। এরপর সংসদে তা পাসের জন্য ৯ থেকে ১২ মাস সময় লাগবে হয়তো।'
গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের গতকালকের সেমিনারে উপস্থাপিত মূল প্রবন্ধে সংস্থাটির সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, এসইসি নিয়ন্ত্রণ সংস্থা হিসেবে তার যে থাবা আছে সেটা এখনো দেখাতে পারেনি। তার যে স্টকহোল্ডার আছে তার সঙ্গে তার সম্পর্ক কী তা এখনো বলতে পারেনি। একদিকে এসইসি বলছে, শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারী ঝুঁকিপূর্ণ, অপরদিকে ব্যাংক ও অন্যান্য প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগের কথা বলা হচ্ছে। তাহলে তাদের জন্য কি তা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যাচ্ছে না? এসইসির লোকবল বাড়ানোর কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এসইসিতে ভালো আইনজীবী নেই, চার্টার্ড অ্যাকাউনটেন্ট নেই। স্বল্প লোকবল দিয়ে তারা পুরো বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। বিও অ্যাকাউন্ট পরিবর্তন আরো সহজ করা প্রয়োজন। এ ছাড়া ইনসাইড ট্রেডিং বন্ধ করার উদ্যোগ নিতে হবে। সরকারকে নীতিগতভাবে স্বীকার করে নিতে হবে, তারল্য বাড়িয়ে বাজারকে ঠিক করা যাবে না।
সেমিনারে এসইসির বর্তমান চেয়ারম্যানের ভূমিকার কঠোর সমালোচনা করেছেন শেয়ারবাজার ধসের পর সরকার গঠিত তদন্তু কমিটির প্রধান খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ। তাঁর মতে, এখনকার সমস্যা আস্থার, পুঁজির নয়। এসইসি নিজেদের ব্যর্থতা আড়াল করার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে সম্পৃক্ত করেছে। এসইসি রেগুলেটরি সংস্থা। এখানে কিছু হলে তার দায় এসইসির।
ইব্রাহিম খালেদ বলেন, এসইসি অনেকটাই স্বাধীন। যেসব আইন আছে তার প্রয়োগ নেই। এসইসি চেয়ারম্যান ঘন ঘন অর্থ মন্ত্রণালয়ে গেলে সেই স্বাধীন সত্তা নষ্ট হয়। এসইসিতে 'ইয়েসম্যান' নিয়োগ বন্ধ করার পরামর্শ দেন তিনি।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও এসইসির সাবেক চেয়ারম্যান ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, এসইসি আইনগতভাবে স্বাধীন। বিদ্যমান আইনের প্রয়োগ করলেই হলো। রাস্তায় আন্দোলনকারী বিনিয়োগকারীদের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে মির্জ্জা আজিজ বলেন, যাঁরা রাস্তায় নামেন তাঁদের অনেকে জেড ক্যাটাগরির শেয়ার কিনে লাভবান হয়েছেন। তাঁদের অনেকেই এখন লোকসানে পড়েছেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গর্ভনর এবং সরকারের পুঁজিবাজারসংক্রান্ত বিশেষ কমিটির প্রধান ড. ফরাস উদ্দিন আহমেদ সমালোচনার তীর ছোড়েন ডিএসইর দিকে। তিনি বলেন, সদস্য সংখ্যা না বাড়িয়ে সংস্থাটি নিজেই কার্টেল করার সুযোগ রেখেছে। এর ২৫-৩০ জন সদস্য 'পাকা খেলোয়াড়ের' মতো যখন খুশি তখন বাজার উঠাচ্ছে আর নামাচ্ছে। তিনি বলেন, পুঁজিবাজার মূলধন সৃষ্টির জন্য নয়। এর টাকা শিল্পে বিনিয়োগ হবে। উল্টো শিল্পের টাকা কেন পুঁজিবাজারে এল সেই প্রশ্ন করে তিনি বলেন, শেয়ারবাজার কি শুধুই লাভ আর অন্য সব কিছু কি শুধুই লোকসান? অমনিবাস অ্যাকাউন্টে কারচুপি হয়েছে। ডিএসই কারচুপি করেছে। ডিএসইর সিইও ঘন ঘন পাল্টানো হয়েছে। কেউ পুরো মেয়াদে দায়িত্ব পালন করতে পারেননি। মার্চেন্ট ব্যাংক হচ্ছে পরের ধনে পোদ্দারি করা। কোন আইনে তাদের নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে কেউ তা জানে না।
বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্সের (বিএবি) সভাপতি কাজী মাহমুদ সাত্তার বলেন, 'অনেকেই পুঁজিবাজার বিপর্যয়ের জন্য রাস্তা-ঘাটে-অফিসে সর্বত্র বাংলাদেশ ব্যাংককে দোষারোপ করে। তারা কি আদৌ কিছু বুঝে বলে, না তাদের কেউ ভুল বোঝায়? আমাদের ব্যাংকে পাঁচ কোটি অ্যাকাউন্টহোল্ডার আছে। এই ৩২ লাখ বিনিয়োগকারীর জন্য নিশ্চয়ই আমরা এই পাঁচ কোটিকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলতে পারি না।'
আত্মপক্ষ সমর্থন করার চেষ্টা করেন স্টক এঙ্চেঞ্জের কর্ণধাররা। চট্টগ্রাম স্টক এঙ্চেঞ্জের (সিএসই) সভাপতি আল মারুফ খান বলেন, বাজার স্থিতিশীল করার জন্য প্যাকেজ ঘোষণা করা হলেও তার প্রভাব বাজারে দেখা যাচ্ছে না। বাজারকে স্থিতিশীল করার জন্য বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরানোর ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, দিন দিন লেনদেনের পরিমাণ কমে যাচ্ছে।
ঢাকা স্টক এঙ্চেঞ্জের (ডিএসই) জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি আহসানুল ইসলাম টিটু বলেন, ২০০৮ সালের সূচক ছিল ২৮০০ পয়েন্ট, সেখান থেকে ২০১০ সালে কী করে তা ৮৯০০ পয়েন্ট হলো তা আমাদের খুঁজে বের করতে হবে। তিনি বলেন, 'বাজার ঠিক করার জন্য যেসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে তাতে আশা করছি বাজার ঠিক হবে। তবে তার জন্য সময় প্রয়োজন। অমনিবাস অ্যাকাউন্ট নিয়ে গভীরভাবে ভাবতে হবে। বিস্তর চিন্তা করতে হবে। মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো কার অধীনে থাকবে সেটাও পরিষ্কার করা প্রয়োজন। আমি মনে করি, মার্জিন ঋণই বর্তমানে বাজারের প্রধান সমস্যা। ডিমিউচ্যুয়ালাইজেশনের কাজ শুরু করেছি। ডিসেম্বরের মধ্যে রোডম্যাপ করে ফেলব। এরপর সংসদে তা পাসের জন্য ৯ থেকে ১২ মাস সময় লাগবে হয়তো।'
No comments