সাধারণের মতো বিদায় নিতে চেয়েছিলেন তিনি by ইশতিয়াক হুসাইন

জাতীয় অধ্যাপক কবীর চৌধুরী ছিলেন দেশের একজন কৃতী সন্তান। সামাজিকও রাষ্ট্রীয় জীবনে তার যে অসাধারণ মেধার স্বাক্ষর রেখে গিয়েছেন, ব্যক্তি জীবনে ছিলেন পুরোপুরি সাদামাটা একজন মানুষ। আর তাইতো জীবনের বিদায় বেলাতেও সাদামাটাভাবেই পৃথিবী থেকে বিদায় নিতে চেয়েছিলেন।
তার শেষ ইচ্ছানুযায়ী কোনো ধরনের আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াই তাকে শেষ শ্রদ্ধা জানানো হচ্ছে। নিজ বাসভবনের একটি ফ্লোরে শুয়ে আছেন তিনি। এখানে নেই কোনো আনুষ্ঠানিকতা। যে যার মতো নিজ উদ্যোগেই আসছেন তার বাসভবনে। জানাচ্ছেন ফুলেল শ্রদ্ধা।

কবীর চৌধুরীর ভাগনি ও ঢাকা বিশ্ববিদালয়ের সাবেক শিক্ষক ত্রপা মজুমদার বাংলানিউজকে জানান, ২০০৬ সালে তিনি তার মৃত্যুর পর করণীয় সম্পর্কে লিখে গিয়েছিলেন। তিনি সেখানে স্পষ্ট করে বলে গিয়েছিলেন, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে তার লাশ নিয়ে আনুষ্ঠানিকতা না করতে। শুধু তাই নয়, মৃত্যুর পর ৭/৮ ঘন্টার মধ্যেই যেন তাকে দাফন করা হয়। বাড়ির কাছের কোনো মসজিদেই যেন তার নামাজে জানাযা হয় এবং তার জানাযা যেন একবারের বেশি দেওয়া না হয়। 

কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গিয়ে তিনি অনেকের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। তারপরও নিজের বেলাতে কেন তার এই ‘না’ - এব্যাপারে ত্রপা মজুমদার বলেন, মামা অন্যের বেলাতে আনুষ্ঠানিকতা করতে কখনো নিষেধ করতে করেননি। বরং তিনি এ ধরনের পারিবারিক ও সামাজিক সব অনুষ্ঠানেই যেতেন। কিন্তু নিজের ক্ষেত্রে তার বক্তব্য ছিল, তিনি সাধারণ মানুষের মতো বিদায় নিতে চান।

ত্রপা মজুমদার আরো জানান, তার জন্য আলাদা কোনো কবরের ব্যবস্থা করতে না করেছিলেন। সাধারণ কবরেই তাকে সমাহিত করতে বলে গিয়েছিলেন তিনি।

বাবা-মায়ের ১৪ সন্তানের মধ্যে সবার বড় ছিলেন কবীর চৌধুরী। তাই বাবা-মায়ের অবর্তমানে তিনিই হয়ে উঠেছিলেন পরিবারের অভিভাবক।

ত্রপা মজুমদার বলেন, ‘পরিবারের মধ্যে কেউ যদি কোনো বিপদে পড়তেন, কি করবেন সিদ্ধান্ত নিতে পারতেন না, সবাই ছুটে আসতেন বড় মামার (কবীর চৌধুরী) কাছে। তাকে হারিয়ে পরিবারের আমরা একজন বড় অভিভাবককে হারালাম।’

সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির বলেন, কবীর চৌধুরীকে হারিয়ে একজন পারিবারিক অভিভাবকই শুধু নয়, দেশও একজন অভিভাবককে হারিয়েছে। আমরা যখন কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগতাম, তখনই ছুটে আসতাম তার কাছে। আজ আর কেউ পরামর্শ দিয়ে সাহায্য করবে না।

ত্রপা মজুমদার জানান, নীতি ও আদর্শে অবিচল দৃঢ়চেতা এই মানুষটি নীতি ও আদর্শের ব্যাপারে কখনো ছাড় দেননি। নীতি-আদর্শের ব্যাপারে নিজের সন্তানের ক্ষেত্রেও অবিচল থেকেছেন।

বেনু কবীর বাবাকে দেখতে পারলেন না

কবীর চৌধুরীর মেঝো মেয়ে বেনু কবীর শেষবারের মতো বাবাকে দেখে যেতে পারলেন না। তার বড় মেয়ে শাহীন কবীর বাবার বাসার বিপরীত দিকের ফ্ল্যাটে থাকেন। ছোট মেয়ে ঢাকাতেই থাকেন। কিন্তু মেঝো মেয়ে বেনু কবীর গত শনিবারই যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশ্যে ঢাকা ছেড়েছেন। দেশের উদ্দেশ্যে রওনা দিলেও তিনি তার বাবার মুখ দেখতে পারবেন না । কারণ, কবীর চৌধুরী নিজেই লিখে গিয়েছিলেন তাকে যেন ৭/৮ ঘন্টার মধ্যে দাফন করা হয়।

No comments

Powered by Blogger.