টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণের প্রতিবাদ-সুরমা, কুশিয়ারা ও মেঘনা অববাহিকার ১২ জেলায় মানববন্ধন

টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণ বন্ধের দাবিতে গতকাল সোমবার দুপুরে সুরমা, কুশিয়ারা ও মেঘনা নদী অববাহিকার ১২ জেলায় একযোগে মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়েছে। টিপাইমুখ বাঁধ প্রতিরোধ আন্দোলন নামের একটি নাগরিক সংগঠন এ কর্মসূচি পালন করে। আগামী ১ জানুয়ারি সাম্রাজ্যবাদবিরোধী দিবসে সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমাবেশ ও গণমিছিল কর্মসূচি দিয়েছে সংগঠনটি।


টিপাইমুখ বাঁধের কারণে যে বিপর্যয় হবে বলে বিভিন্ন মহল থেকে আশঙ্কা করা হচ্ছে, সেটা স্মরণ করিয়ে দিয়ে একে জাতীয় সমস্যা হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। সংগঠনের নেতারা একে জাতির জন্য ক্রান্তিলগ্ন বলেও আখ্যায়িত করেন এবং প্রধান দুই দলকে দায়িত্বশীল ভূমিকা নেওয়ার আহ্বান জানান। এ বিষয়ে সংসদের বিশেষ অধিবেশন ডাকারও অনুরোধ জানান তাঁরা।
আমাদের সিলেট অফিস জানায়, সিলেটের সুরমা নদীর তীরে কিনব্রিজ সংলগ্ন চাঁদনীঘাট এলাকায় দীর্ঘ মানববন্ধন করেছে টিপাইমুখ বাঁধ প্রতিরোধ আন্দোলন। একই কর্মসূচি একযোগে ১২ জেলায় পালিত হয়েছে বলে জানিয়েছেন আন্দোলনের নেতারা।
অন্য যে ১১টি জেলায় মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয় সেগুলো হলো_সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা, ময়মনসিংহ, চাঁদপুর, কুমিল্লা, নোয়াখালী, নারায়ণগঞ্জ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া। এ ছাড়া একই দিন খুলনায় সমাবেশ করেছে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)।
সিলেটে মানববন্ধন চলাকালে সংক্ষিপ্ত সভায় সভাপতিত্ব করেন আন্দোলনের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট বেদানন্দ ভট্টাচার্য। এতে বক্তব্য দেন সিলেট পৌরসভার সাবেক চেয়ারম্যান আ ফ ম কামাল, সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি এমাদ উল্লাহ শহীদুল ইসলাম, গণতন্ত্রী পার্টির জেলা সভাপতি ব্যারিস্টার আরশ আলী, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সিলেট জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক লোকমান আহমদ, গণতন্ত্রী পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য আইয়ুব আলী, সাধারণ সম্পাদক আরিফ মিয়া, সচেতন নাগরিক কমিটির সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী, সম্মিলিত নাট্য পরিষদের সভাপতি সৈয়দ মনির হেলাল, ন্যাপ সিলেট জেলার আহ্বায়ক ইসহাক আলী, সিপিবির সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন সুমন প্রমুখ।
কর্মসূচিতে সংহতি জানিয়ে সিলেটের রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, পরিবেশবাদী ও বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার সহস্রাধিক লোক উপস্থিত ছিলেন। কর্মসূচিতে অসংখ্য সংগঠন মিছিল সহকারে যোগ দেয়। মানববন্ধনে আন্তর্জাতিক ফারাক্কা কমিটির আমেরিকার মহাসচিব সৈয়দ টিপু সুলতান, টাচিং সোলস ইন্টারন্যাশনাল আমেরিকার তাহমিনা সুলতান, আন্তর্জাতিক ফারাক্কা কমিটির বাংলাদেশের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম লস্কর সংহতি জানান।
নাগরিক সংগঠনটির নেতারা বলেন, টিপাইমুখে বাঁধ হলে সিলেটসহ দেশের ১৮টি জেলা মহাবিপর্যয়ের মুখে পড়বে। যেকোনো মূল্যে এটি প্রতিহত করতে হবে। বক্তারা সামপ্রতিক সময়ে প্রতিবেশী দেশগুলোর চাপের মুখে কম্বোডিয়ান সরকারের বাঁধ নির্মাণ বন্ধের উদাহরণ দিয়ে বলেন, আন্তর্জাতিকভাবে চাপ সৃষ্টি করতে পারলে ভারত এরকম মরণঘাতী প্রকল্প থেকে সরে আসতে বাধ্য হবে। ভারতের এরকম একতরফা সিদ্ধান্ত পক্ষান্তরে তাদের সাম্রাজ্যবাদী চরিত্রেরই প্রতিফলন বলে মন্তব্য করেন বক্তারা।
মহান মুক্তিযুদ্ধে ভারতের অবদান স্মরণ করে বক্তারা বলেন, ভারতের কাছ থেকে এ ধরনের আচরণ দুঃখজনক।
সংহতি প্রকাশ করে মিছিলসহকারে মানববন্ধনে যোগ দেয় ওয়ার্কার্স পার্টি, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), গণতন্ত্রী পার্টি, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), সিলেট গণদাবি পরিষদ, নাগরিক মৈত্রী, ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্র ফ্রন্ট, যুব ইউনিয়ন, উদীচী সিলেট ও খেলাঘর।
সুনামগঞ্জ শহরের পাশ দিয়ে প্রবাহিত সুরমা নদীর বালুরঘাটে গতকাল দুপুর দেড়টায় মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়। প্রতিরোধ আন্দোলন সুনামগঞ্জ কমিটির আহ্বানে এই কর্মসূচি পালিত হয়। কর্মসূচির সঙ্গে সংহতি জানিয়ে এতে যোগ দেন সিপিবি, কৃষক সমিতি, আইনজীবী সমিতিসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা। মৌলভীবাজারের মনু নদীর তীরে দুপুর সাড়ে ১২টায় একই কর্মসূচি পালিত হয়।
যুক্তরাজ্য বিএনপি : বিএনপি যুক্তরাজ্য শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক মোশাহিদ হোসাইন গতকাল সিলেটে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করে টিপাইমুখ বাঁধের প্রতিবাদে প্রবাসে জনমত সৃষ্টি করা হচ্ছে বলে জানান।
নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণ প্রতিরোধ কমিটি নামের একটি সংগঠন নারায়ণগঞ্জে মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছে। গতকাল দুপুরে নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সামনে এ কর্মসূচি পালিত হয়। কমিটির নারায়ণগঞ্জ জেলার আহ্বায়ক রফিউর রাব্বীর সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য দেন নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটির সভাপতি অ্যাডভোকেট এ বি সিদ্দিক, সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান প্রমুখ।
খুলনা অফিস জানায়, গতকাল সকালে শহীদ হাদিস পার্কে সমাবেশ আয়োজন করে বাপা। অ্যাডভোকেট ফিরোজ আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য দেন শিক্ষক ড. এ কে এম নূরুল ইসলাম, মুক্তিযোদ্ধা আবু জাফর, আবু হাসান বকুল প্রমুখ। সমাবেশে বক্তারা বলেন, ভারতের তথাকথিত আশ্বাসের কোনো মূল্য নেই।

No comments

Powered by Blogger.