সব শিক্ষা কর্মকর্তার বদলি স্থগিত-উদ্দেশ্য সুষ্ঠুভাবে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ by অভিজিৎ ভট্টাচার্য্য

মাঠ পর্যায়ের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষা কর্মকর্তাদের বদলি বন্ধ করা হয়েছে। মাধ্যমিকে আগামী ১৫ জানুয়ারি এবং প্রাথমিকে আগামী ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত এ আদেশ কার্যকর থাকবে। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পৃথক নির্দেশনায় এ আদেশ দেওয়া হয়েছে। আগামী শিক্ষাবর্ষের পাঠ্যপুস্তক বিতরণ সুষ্ঠুভাবে শেষ করতে এ আদেশ দেওয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।


একই সঙ্গে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বেশি বই গেলে তা ফেরত দেওয়ারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এদিকে বই বিতরণ কার্যক্রম নির্বিঘ্ন করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলছেন, বই বিতরণকে যাতে বাধাগ্রস্ত করতে না পারে সেজন্য গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। এ ছাড়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের বিশেষ টাস্কফোর্সের তৎপরতাও জোরদার করা হয়েছে।
আগামী ১ জানুয়ারি দেশে তৃতীয়বারের মতো পাঠ্যপুস্তক উৎসব পালিত হবে। ইতিমধ্যে উপজেলাগুলোতে প্রায় ৯০ শতাংশ বই পৌঁছে গেছে। চলতি মাসের ২২ ডিসেম্বরের মধ্যে বাকি বই সব উপজেলায় পেঁৗছে যাবে বলে জানিয়েছেন জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোস্তফা কামাল উদ্দিন।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, পাঠ্যপুস্তক উৎসবকে সামনে রেখে মাঠ পর্যায়ের কোনো শিক্ষা কর্মকর্তাকে বদলি করা হবে না। কারণ মাঠ পর্যায়ের শিক্ষা কর্মকর্তারা এখন উপজেলা পর্যায়ে পৌঁছে যাওয়া আগামী শিক্ষাবর্ষের পাঠ্যপুস্তক তদারক করছেন। এ অবস্থায় কোনো কর্মকর্তাকে বদলি করা হলে পাঠ্যপুস্তক তদারকিতে ঝামেলার সৃষ্টি হবে। এ জন্য শিক্ষা কর্মকর্তাদের বদলি না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। তবে প্রাথমিকের ক্ষেত্রে শুধু বই বিতরণের জন্যই বদলি বন্ধ নয়, সামনে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষার ফল প্রকাশ এবং প্রাথমিক শিক্ষা সপ্তাহ পালনের জন্য প্রাথমিকের শিক্ষা কর্মকর্তারা মাঠ পর্যায়ে ব্যস্ত রয়েছেন। এ জন্য প্রাথমিকের বদলি বন্ধ রয়েছে বলে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর সূত্র জানিয়েছে।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (মাধ্যমিক) অধ্যাপক মো. শফিকুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, আগামী ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাদের বদলি বন্ধ করা হয়েছে। আগামী শিক্ষাবর্ষের বই বিতরণে যাতে কোনো সমস্যা না হয়, সেজন্যই এ নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চাহিদার চেয়ে বেশি বই গেলে পাশের শিক্ষা অফিসে অতিরিক্ত বই ফেরত দিতে হবে।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) আবদুল রউফ চৌধুরী বলেন, শুধু বই বিতরণের জন্য নয়, সামনে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হবে এবং প্রাথমিক শিক্ষা সপ্তাহ চলে আসছে। এ কারণে প্রাথমিকের শিক্ষা কর্মকর্তাদের বদলি বন্ধ রাখা হয়েছে।
এদিকে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, আগামী শিক্ষাবর্ষের জন্য ২২ কোটি ১০ লাখ ৬৮ হাজার ৩৩০ কপি বই ছাপা হচ্ছে। এর মধ্যে প্রাথমিক স্তরে ১০ কোটি ৩৫ লাখ, মাধ্যমিকে আট কোটি ৩১ লাখ, ইবতেদায়ি স্তরের বই এক কোটি ৫৮ লাখ, দাখিল ও দাখির ভোকেশনালে এক কোটি ৬৬ লাখ এবং এসএসসি ভোকেশনালের জন্য ১৮ লাখ ২১ হাজার কপি বই রয়েছে।
এবার প্রথমবারের মতো ঢাকা থেকে বই যাচ্ছে সরাসরি উপজেলা পর্যায়ে। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর বই বিতরণ প্রক্রিয়া সহজ করছে। গতকাল পর্যন্ত উপজেলা শিক্ষা অফিসে চলে গেছে প্রায় ৯০ শতাংশ বই। এর মধ্যে মাধ্যমিকে ৯২, দাখিল ৯৬, ইবতেদায়ী ৯৫.৮১, প্রাথমিক ৯০ শতাংশ। অন্যদিকে প্রাথমিকের আন্তর্জাতিক টেন্ডারের ভারতীয় প্রতিষ্ঠানের বই তুলনামূলকভাবে একটু কম আসলেও এনসিটিবির কর্মকর্তারা বলেছেন, ভারতীয় বই আসা শুরু হয়েছে। এবার ভারতে প্রাথমিকের প্রায় এক কোটি বই ছাপা হয়েছে। এর মধ্যে গতকাল সোমবার পর্যন্ত ভারত থেকে দেশে এসেছে ৬৫ লাখ বই। বাকি বই পথে রয়েছে।
জানা যায়, উপজেলায় পৌঁছেনি প্রাথমিকের এমন বইয়ের সংখ্যা এক কোটির বেশি। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বইয়ের কাজ নিয়েছে সরকার গ্রুপ। এই প্রতিষ্ঠান একাই নিয়েছে দুই কোটি ২২ লাখ ৫৯ হাজার ৯৯৮ কপি বই। কিন্তু এ পর্যন্ত সরবরাহ করেছে এক কোটি ৮০ লাখ ৬৬ হাজার ৪০৩টি বা ৮১.১৬ শতাংশ বই।
সরকার গ্রুপের মালিকদের একজন আবু নাসের দুলাল বলেন, এবার বইয়ের সংখ্যা অনেক বেশি। এর পরও বইয়ের পজেটিভ পেতে একটু দেরি হওয়ায় নির্ধারিত সময়ে বই পেঁৗছানো সম্ভব হয়নি। তবে এ নিয়ে চিন্তার কারণ নেই। ১ জানুয়ারির অনেক আগেই বই চলে যাবে বলে তিনি জানান।
আগামী বছরের পাঠ্যপুস্তক ছাপা ও বিতরণ কার্যক্রমের সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোস্তফা কামাল উদ্দিন বলেন, 'সার্বিক অবস্থা সন্তোষজনক। আমরা আশাবাদী বই নিয়ে এবারো কোনো ধরনের সংকট হবে না। তিনি জানান, যেকোনো বছরের তুলনায় এবার বই ছাপা ও বিতরণ কাজ শুরু করা হয়েছে অন্তত দেড় থেকে দুই মাস আগে। ফলে বই নিয়ে দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই। তিনি বলেন, আগামী ১ জানুয়ারি পাঠ্যপুস্তক উৎসব পালিত হবে। এ দিন বাড়ি থেকে শূন্য হাতে শিক্ষার্থীরা স্কুলে আসবে আর নতুন বই নিয়ে বাড়ি ফিরবে।

No comments

Powered by Blogger.