বাংলাদেশের টেস্ট সম্পর্কে ধারণাতেই গোলমাল by নোমান মোহাম্মদ
সময় দুপুর ১টা ২ মিনিট। তীব্র আলোকচ্ছটা নিয়ে সূর্য তখন মধ্যগগনে। আলোয় ভেসে যাচ্ছে জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের দশ দিক। এ অবস্থাতেই রচিত হলো বাংলাদেশ ক্রিকেটের আরেকটি অন্ধকার অধ্যায়ের। ৭২ টেস্টে ৬২তম হার, যা আবার ৩৫তমবারের মতো ইনিংস ব্যবধানে_সেটির আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হলো তখন। টেস্টের প্রথম দুই ঘণ্টার পরই যে ফল ছিল অবধারিত।
অবধারিতই তো! নির্ভেজাল, নিখাঁদ ব্যাটিংস্বর্গে প্রথম সেশনে ৫ উইকেট হারালে আর ফিরে আসার উপায় কী! সেই ধারাবাহিকতায় ১৩৫ রানে গুটিয়ে গেছে বাংলাদেশের ইনিংস। চতুর্থ দিন লাঞ্চ-পরবর্তী সেশনে খেলা শেষ হওয়ার পর মুশফিকের কণ্ঠে ছিল ম্যাচ শুরুর সেই হতাশা। পাকিস্তানের অধিনায়ক মিসবাহ উল হকও ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে যা বলেছেন, তার অর্থ অভিন্ন_ম্যাচের শুরুতেই আসলে শেষ হয়ে গিয়েছিল ম্যাচ!
'টেস্টের প্রথম সেশনে পাঁচ উইকেট পড়ে যাওয়ার পর সেখান থেকে ফেরা খুব কঠিন। আসলে যেকোনো উইকেটে টেস্টের প্রথম দুই ঘণ্টায় কিছু না কিছু থাকে। সেই দুই ঘণ্টা বাদ দিলে এই পুরো টেস্টে আমরা কিন্তু খুব খারাপ খেলিনি। ওই প্রথম দুই ঘণ্টা যদি এক-দুই উইকেটের বেশি না হারাতাম, তাহলে পরের দিকে সেট ব্যাটসম্যান নিয়ে আমরা পুরো দিন ব্যাটিং করতে পারতাম। সে ক্ষেত্রে পুরো ব্যাপারটি অন্য রকম হতো'_হাহাকারের রেণু উড়ে উড়ে রেড়াচ্ছিল মুশফিকুরের কণ্ঠ থেকে। ম্যাচের চিত্রনাট্য যে প্রথম দিনই লেখা হয়ে গিয়েছিল, সে ব্যাপারে একমত মিসবাহও, 'আমার মনে হয়, ওয়ানডে সিরিজের পর থেকেই চাপে ছিল বাংলাদেশ। তাদের ব্যাটসম্যানরা রানে ছিল না, যা টেস্টে আমাদের পক্ষে গেছে। প্রথম ইনিংসে খুব সহজেই তাদের উইকেটগুলো পেয়ে গেছি আমরা। এমন ফ্ল্যাট উইকেটে ১৩৫ রানে গুটিয়ে যাওয়ার পর সেখান থেকে ফিরে আসা সত্যি কঠিন। প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের উইকেট বিলিয়ে আসা আমাদের খুব সাহায্য করেছে।'
তবে পাকিস্তান অধিনায়কের এই 'উইকেট বিলিয়ে আসা'র সঙ্গে আবার একমত নন মুশফিক। তৃতীয় দিন বিকেলে সাকিব আল হাসান কিংবা চতুর্থ দিন ফিফটি হয়ে যাওয়ার পর নাজিমউদ্দিনের ব্যাটিংয়ে যে টেস্ট ঘরানার ছাপ ছিল না, এ বিষয়ে দ্বিমত করার লোক খুব একটা পাওয়া যাবে না। তবে বাংলাদেশের থিঙ্ক ট্যাঙ্ক আছে সেই ব্যতিক্রমীদের দলেই। প্রতিপক্ষ অনেক রানের লিড নেওয়ায় অমন ব্যাটিংয়ের পথ তৈরি হয়েছে বলে মুশফিকুরের ব্যাখ্যা, 'আমার মনে হয় না আমাদের ব্যাটসম্যানরা বেশি শটস খেলেছে কিংবা অতিরিক্ত উচ্চাভিলাষী শট খেলেছে। আসলে সাড়ে চার শ লিড থাকলে আপনি জানবেন যে শট খেলতে খেলতেই প্রতিপক্ষ ব্যাটসম্যান একসময় আউট হয়ে যাবে। আবার কাছাকাছি সাত-আটজন ফিল্ডার থাকায় সব সময় রক্ষণাত্মকভাবে খেলেও আপনি সারা দিন খেলতে পারবেন না।' প্রায় যুক্তিহীন যুক্তি দিয়ে তিনি ডিফেন্ড করেছেন সতীর্থদের ব্যাটিংয়ের ধরন। আর সেটি 'ন্যাচারাল ক্রিকেট'-এর-খোলসে, 'সাকিব কিংবা নাজিম ভাই যখন ৫০ কিংবা ১০০ করবে, তাহলে ১০০-তে ১০০ দুজনকেই দেব। আপনি ১০০ বলে ৫০ করেন কিংবা ২০০ বলে ৫০ করেন বা ৫০ বলে ৫০ করেন, সেটি বড় কথা না। এটি যার যার সহজাত খেলার ধরনের ওপর নির্ভর করে। আমরা দেখা যায়, ন্যাচারাল খেলা খেলে কখনো কখনো হয়তো সাফল্য কিছু কম পাচ্ছি। এর মানে এই না যে ন্যাচারাল খেলা বদলে দেব। তাহলে দেখা যাবে, ও হয়তো প্রতিদিন ১০ রান করে আউট হচ্ছে। এটি আসলে যার যার ন্যাচারাল খেলার ওপর নির্ভর করে।' প্রশ্নটা হচ্ছে, শচীন টেন্ডুলকার কিংবা রিকি পন্টিংরা কি সাকিব-তামিমদের চেয়ে ন্যাচারালি কম আক্রমণাত্মক ক্রিকেটার? তাহলে তাঁরা কেন প্রায়ই পরিস্থিতির দাবি মিলিয়ে খোলসবন্দি থাকেন? ওই ধুমধাড়াক্কা ব্যাটিংয়ে যে সাফল্যের সম্ভাবনা কমে যায়, এটি সবাই বুঝলেও বুঝছেন না বাংলাদেশের থিঙ্ক ট্যাঙ্ক। এ কারণেই মুশফিক সাফাই গাইতে পারেন সাকিবের ব্যাটিংয়ের ধরনে। বলতে পারেন, 'ডিফেন্সভ খেলে কিন্তু টেস্টে ৪০ গড় হয়নি তামিমের।' ঠিক আছে। কিন্তু পরিস্থিতির দাবি মিটিয়ে খেলতে যে রেকর্ডের পাতা আরো সমৃদ্ধ করার সুযোগ আছে, সেটি তাদের বোঝাবে কে!
ব্যাটসম্যানদের আউটের ধরনে তাই খুব বেশি হতাশ নন মুশফিক। তিনি বরং বেশ কিছু ইতিবাচকতা নিয়ে দ্বিতীয় টেস্টে যেতে পারায় আছেন স্বস্তিতে, 'প্রথম ইনিংসে নাসির-সাকিব, দ্বিতীয় ইনিংসে নাজিম-সাকিবরা ভালো ব্যাটিং করেছে। বোলিংটাও মোটামুটি ভালো হয়েছে। এসব থেকে আত্মবিশ্বাস নিয়ে দ্বিতীয় টেস্টে যাব।' পাকিস্তানের আত্মবিশ্বাস আরো বেশি। তারা যে পেয়েছে আরেকটি রুটিন জয়। মিসবাহর অধিনায়কত্বে সেটি হয়ে যাচ্ছে পরিচিত দৃশ্য। কৃতিত্বটা পুরো দলের মধ্যে ভাগ করলেন পাকিস্তান অধিনায়ক, 'যদি দল ভালো করে, তাহলে এর কৃতিত্ব পাবে সবাই। অধিনায়কও। তবে আমার কাছে মনে হয়, দলের জন্য ক্রিকেটাররা খুব গুরুত্বপূর্ণ। কারণ তারা পারফরম না করলে অধিনায়কের করার কিছু থাকে না। এ মুহূর্তে সবাই ভালো খেলছে। ওপেনার, টপ অর্ডার, বোলার_সবাই। এসব কারণে অধিনায়ক হিসেবে আমার কাজটি সহজ হয়ে যাচ্ছে।'
ঠিক একই কারণে কঠিন হচ্ছে মুশফিকুরের কাজ। এখন দ্বিতীয় টেস্টে পরিস্থিতিটা পাল্টালেই হয়!
'টেস্টের প্রথম সেশনে পাঁচ উইকেট পড়ে যাওয়ার পর সেখান থেকে ফেরা খুব কঠিন। আসলে যেকোনো উইকেটে টেস্টের প্রথম দুই ঘণ্টায় কিছু না কিছু থাকে। সেই দুই ঘণ্টা বাদ দিলে এই পুরো টেস্টে আমরা কিন্তু খুব খারাপ খেলিনি। ওই প্রথম দুই ঘণ্টা যদি এক-দুই উইকেটের বেশি না হারাতাম, তাহলে পরের দিকে সেট ব্যাটসম্যান নিয়ে আমরা পুরো দিন ব্যাটিং করতে পারতাম। সে ক্ষেত্রে পুরো ব্যাপারটি অন্য রকম হতো'_হাহাকারের রেণু উড়ে উড়ে রেড়াচ্ছিল মুশফিকুরের কণ্ঠ থেকে। ম্যাচের চিত্রনাট্য যে প্রথম দিনই লেখা হয়ে গিয়েছিল, সে ব্যাপারে একমত মিসবাহও, 'আমার মনে হয়, ওয়ানডে সিরিজের পর থেকেই চাপে ছিল বাংলাদেশ। তাদের ব্যাটসম্যানরা রানে ছিল না, যা টেস্টে আমাদের পক্ষে গেছে। প্রথম ইনিংসে খুব সহজেই তাদের উইকেটগুলো পেয়ে গেছি আমরা। এমন ফ্ল্যাট উইকেটে ১৩৫ রানে গুটিয়ে যাওয়ার পর সেখান থেকে ফিরে আসা সত্যি কঠিন। প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের উইকেট বিলিয়ে আসা আমাদের খুব সাহায্য করেছে।'
তবে পাকিস্তান অধিনায়কের এই 'উইকেট বিলিয়ে আসা'র সঙ্গে আবার একমত নন মুশফিক। তৃতীয় দিন বিকেলে সাকিব আল হাসান কিংবা চতুর্থ দিন ফিফটি হয়ে যাওয়ার পর নাজিমউদ্দিনের ব্যাটিংয়ে যে টেস্ট ঘরানার ছাপ ছিল না, এ বিষয়ে দ্বিমত করার লোক খুব একটা পাওয়া যাবে না। তবে বাংলাদেশের থিঙ্ক ট্যাঙ্ক আছে সেই ব্যতিক্রমীদের দলেই। প্রতিপক্ষ অনেক রানের লিড নেওয়ায় অমন ব্যাটিংয়ের পথ তৈরি হয়েছে বলে মুশফিকুরের ব্যাখ্যা, 'আমার মনে হয় না আমাদের ব্যাটসম্যানরা বেশি শটস খেলেছে কিংবা অতিরিক্ত উচ্চাভিলাষী শট খেলেছে। আসলে সাড়ে চার শ লিড থাকলে আপনি জানবেন যে শট খেলতে খেলতেই প্রতিপক্ষ ব্যাটসম্যান একসময় আউট হয়ে যাবে। আবার কাছাকাছি সাত-আটজন ফিল্ডার থাকায় সব সময় রক্ষণাত্মকভাবে খেলেও আপনি সারা দিন খেলতে পারবেন না।' প্রায় যুক্তিহীন যুক্তি দিয়ে তিনি ডিফেন্ড করেছেন সতীর্থদের ব্যাটিংয়ের ধরন। আর সেটি 'ন্যাচারাল ক্রিকেট'-এর-খোলসে, 'সাকিব কিংবা নাজিম ভাই যখন ৫০ কিংবা ১০০ করবে, তাহলে ১০০-তে ১০০ দুজনকেই দেব। আপনি ১০০ বলে ৫০ করেন কিংবা ২০০ বলে ৫০ করেন বা ৫০ বলে ৫০ করেন, সেটি বড় কথা না। এটি যার যার সহজাত খেলার ধরনের ওপর নির্ভর করে। আমরা দেখা যায়, ন্যাচারাল খেলা খেলে কখনো কখনো হয়তো সাফল্য কিছু কম পাচ্ছি। এর মানে এই না যে ন্যাচারাল খেলা বদলে দেব। তাহলে দেখা যাবে, ও হয়তো প্রতিদিন ১০ রান করে আউট হচ্ছে। এটি আসলে যার যার ন্যাচারাল খেলার ওপর নির্ভর করে।' প্রশ্নটা হচ্ছে, শচীন টেন্ডুলকার কিংবা রিকি পন্টিংরা কি সাকিব-তামিমদের চেয়ে ন্যাচারালি কম আক্রমণাত্মক ক্রিকেটার? তাহলে তাঁরা কেন প্রায়ই পরিস্থিতির দাবি মিলিয়ে খোলসবন্দি থাকেন? ওই ধুমধাড়াক্কা ব্যাটিংয়ে যে সাফল্যের সম্ভাবনা কমে যায়, এটি সবাই বুঝলেও বুঝছেন না বাংলাদেশের থিঙ্ক ট্যাঙ্ক। এ কারণেই মুশফিক সাফাই গাইতে পারেন সাকিবের ব্যাটিংয়ের ধরনে। বলতে পারেন, 'ডিফেন্সভ খেলে কিন্তু টেস্টে ৪০ গড় হয়নি তামিমের।' ঠিক আছে। কিন্তু পরিস্থিতির দাবি মিটিয়ে খেলতে যে রেকর্ডের পাতা আরো সমৃদ্ধ করার সুযোগ আছে, সেটি তাদের বোঝাবে কে!
ব্যাটসম্যানদের আউটের ধরনে তাই খুব বেশি হতাশ নন মুশফিক। তিনি বরং বেশ কিছু ইতিবাচকতা নিয়ে দ্বিতীয় টেস্টে যেতে পারায় আছেন স্বস্তিতে, 'প্রথম ইনিংসে নাসির-সাকিব, দ্বিতীয় ইনিংসে নাজিম-সাকিবরা ভালো ব্যাটিং করেছে। বোলিংটাও মোটামুটি ভালো হয়েছে। এসব থেকে আত্মবিশ্বাস নিয়ে দ্বিতীয় টেস্টে যাব।' পাকিস্তানের আত্মবিশ্বাস আরো বেশি। তারা যে পেয়েছে আরেকটি রুটিন জয়। মিসবাহর অধিনায়কত্বে সেটি হয়ে যাচ্ছে পরিচিত দৃশ্য। কৃতিত্বটা পুরো দলের মধ্যে ভাগ করলেন পাকিস্তান অধিনায়ক, 'যদি দল ভালো করে, তাহলে এর কৃতিত্ব পাবে সবাই। অধিনায়কও। তবে আমার কাছে মনে হয়, দলের জন্য ক্রিকেটাররা খুব গুরুত্বপূর্ণ। কারণ তারা পারফরম না করলে অধিনায়কের করার কিছু থাকে না। এ মুহূর্তে সবাই ভালো খেলছে। ওপেনার, টপ অর্ডার, বোলার_সবাই। এসব কারণে অধিনায়ক হিসেবে আমার কাজটি সহজ হয়ে যাচ্ছে।'
ঠিক একই কারণে কঠিন হচ্ছে মুশফিকুরের কাজ। এখন দ্বিতীয় টেস্টে পরিস্থিতিটা পাল্টালেই হয়!
No comments