একটুও কমেনি এমপি সরোয়ারের দাপট by মোশাররফ বাবলু ও রফিকুল ইসলাম
দল যখন রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় ছিল, তখন তাঁর দাপটে তটস্থ থাকতেন বিরোধী দলের নেতা-কর্মী, সরকারি কর্মকর্তাসহ সাধারণ মানুষ। দল এখন ক্ষমতায় নেই, কিন্তু তিনি আছেন পুরনো সেই মেজাজে। তবে তাঁর তাতানো মেজাজ-মর্জির এখন শিকার নিজ দলেরই লোকজন। আনুগত্যের সামান্য হেরফের হলে তাদের ওপর নিজ বাহিনীর হামলার নজিরও কম নেই।
বিভাগীয় শহর ও বরিশাল সিটি করপোরেশন ঘিরে থাকা বরিশাল সদর আসনের বিএনপিদলীয় এমপি মজিবর রহমান সরোয়ার এ রকম ক্ষমতা চর্চা করে যাচ্ছেন দলের কেন্দ্রীয় ও জেলা পর্যায়ের অনেক পদ করায়ত্ত করে। আর ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখার কৌশলে তাঁর ব্যবসা-বাণিজ্যও চলছে বহাল তবিয়তে। এত কিছুর পর তাঁর সংসদীয় আসনের বিপরীতে পাওয়া কাজের বিনিময়ে খাদ্য (কাবিখা) প্রকল্পের টাকা নয়ছয় হওয়ার অভিযোগও এন্তার। অনুগত নেতারা এ টাকা আত্মসাৎ করে যাচ্ছেন তাঁর সুনজরের সুবাদে। তাঁর সঙ্গে বিএনপির নতুন জেলা কমিটির নেতাদের সঙ্গে বিরোধ প্রকট হয়ে উঠেছে। তিনি অবশ্য কালের কণ্ঠের কাছে সব অভিযোগই অস্বীকার করেছেন।
বরিশাল বিভাগের ছয় জেলার ২৩টি সংসদীয় আসনের মধ্যে মাত্র দুটি বিএনপির হাতে। এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ বরিশাল সদর আসনের এমপি মজিবর রহমান সরোয়ার বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও বরিশাল মহানগর বিএনপির সভাপতি। কেবল এ দুটি পদই নয়, তাঁর দখলে আগের মতোই এখনো বহু পদ। তিনি জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি এবং একই সংগঠনের বরিশাল জেলা শাখার সভাপতি। নিজ দলের ভেতরে
ক্ষমতার দাপট বহাল রাখতে এখনো মরিয়া তিনি। তবে তাঁর ক্ষমতা খর্ব করতে দলীয় প্রতিপক্ষ গ্রুপটি আগের চেয়ে শক্তিশালী হয়ে ওঠায় তিনি অতীতের মতোই আক্রমণাত্মক হয়ে উঠেছেন বলে অভিযোগ সাধারণ নেতা-কর্মীদের। অভিযোগ আছে, অনেক ক্ষেত্রে স্থানীয়ভাবে আওয়ামী লীগের লোকজনের সঙ্গে সমঝোতা করে নিজের ঘনিষ্ঠ লোকজনকে বিভিন্ন কাজ পাইয়ে দিচ্ছেন। তাঁর লোকজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে সরকারি বরাদ্দের অর্থ আত্মসাতেরও।
এমপি সরোয়ারের অবস্থা ও অবস্থান বোঝাতে বরিশাল জেলা বিএনপির মধ্যপন্থী একজন জ্যেষ্ঠ নেতা নিজের ঘরের ফাইলপত্র ঘেঁটে বের করেন পাঁচ বছর আগের একটি জাতীয় দৈনিক। 'গডফাদারেরা আছেই' লোগোসহ 'সরোয়ারের হাতের মুঠোয় সব' শিরোনাম এবং কার্টুন ছবিটি দেখিয়ে এই নেতা বললেন, এটা হচ্ছে এমপি সরোয়ারের সরকারি ক্ষমতাকালের উৎকৃষ্ট আমলনামা। সরকার বদলে তাঁর 'সরকারি ক্ষমতার' অবস্থানগত পরিবর্তন হলেও নৈতিক বা মানসিক অবস্থার পরিবর্তন হয়নি। এখনো তিনি আগের মতোই সব কিছু নিজের করে পেতে চান যেকোনো উপায়ে। না পেলেই ফিরে যান আগের চেহারায়। তখন তাঁর আচরণ অনেকটা হিংস্র হয় দলের ত্যাগী নেতা-কর্মীদের ওপর। চলে হামলা-নির্যাতন।
আগের আলোচিত ঘটনাগুলো বাদ দিয়ে সরোয়ার নতুন কী হিংস্রতা দেখাচ্ছেন জানতে চাইলে ওই নেতা বলেন, 'আমরা তো আমাদের নেতার কোনো ঘটনাই বলতে চাই না। কিন্তু কিছুদিন পরপরই তিনি এমন একেকটি কাণ্ডের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন, যা চাইলেই ভুলে থাকা যায় না। কয়েক দিন আগে তাঁর লোকজন নির্মমভাবে কুপিয়েছে বিএনপির কেন্দ্রীয় অন্যতম সহসাংগঠনিক সম্পাদক ও জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম খান রাজনকে। এই রাজন একসময় এমপির খুব ঘনিষ্ঠজন ছিলেন। এখন তাঁর অপরাধ হচ্ছে, তিনি এমপিকে ছেড়ে দলীয় প্রতিপক্ষ গ্রুপের সঙ্গে জোট বেঁধেছেন। ওই ঘটনায় সরোয়ারকে প্রধান আসামি করে মামলা করেছে রাজনের পরিবার। রাজন এখন বরিশালছাড়া সরোয়ারের ভয়ে। বিএনপির আরেক নেতা নাম না প্রকাশের অনুরোধ জানিয়ে বলেন, রাজনের ঘটনার পর তাঁর প্রতিপক্ষের লোকজন এখন অনেকটাই আতঙ্কে আছে। তাঁর পক্ষ ত্যাগ করায় রাজনের চেয়েও ভয়াবহ পরিণতি হয়েছিল একসময় তাঁর হাতে গড়া ছাত্রনেতা ও তৎকালীন শীর্ষ সন্ত্রাসী কাইউম হোসেন মিল্টনের। এ ছাড়া তাঁর পুরনো কালের নিত্যসঙ্গী এবং বরিশালের দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী বলে চিহ্নিত ট্যারা শাজাহান হত্যাকাণ্ডেও তাঁর হাত ছিল বলে অভিযোগ আছে। এসব ঘটনার মামলাগুলোতেও তিনি আসামি। এ ছাড়া সত্তর ও আশির দশকে কালাম-ছালাম-আজিজ হত্যা, হাবিল-দোলনের হাত বিচ্ছিন্ন করার ঘটনাগুলোও বারবার আলোচনায় উঠে আসে। তাই এমপি সরোয়ারের সঙ্গ ত্যাগ করলে কার কখন কী পরিণতি হয়, তা নিয়ে ভয়ে অনেকেই প্রকাশ্যে তাঁর বিরোধিতা করার সাহস পায় না।
বিএনপির কেন্দ্রীয় মৎস্যবিষয়ক সম্পাদক ও বরিশাল জেলা (দক্ষিণ) শাখার সভাপতি এবং বরিশাল সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আহসান হাবীব কামাল বলেন, 'দলের চেয়ারপারসন যেখানে দলের সবাইকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন, সেখানে এমপি মজিবর রহমান সরোয়ার নিজের একক ক্ষমতা ও দাপট বহাল রাখতে বিভিন্ন তৎপরতা চালাচ্ছেন। এমপির লোকজনের হামলা ও নির্যাতনে দলের সাধারণ নেতা-কর্মীরা ঠিকমতো দলীয় কর্মকাণ্ড চালাতে পারছে না।'
কামাল বলেন, 'বরিশালে এখন বিএনপি ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের সাধারণ নেতা-কর্মীরা যতটা না ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নির্যাতনের শিকার হচ্ছে, এর চেয়ে বেশি হামলা-নির্যাতনের শিকার হচ্ছে এমপি সরোয়ারের অনুসারীদের কাছে। সম্প্রতি সরকারবিরোধী যেসব কেন্দ্রীয় কর্মসূচি আমরা পালন করেছি, এর সব কর্মসূচিতেই এমপি সরোয়ারের লোকজন হামলা করেছে। জেলা কমিটি, উপজেলা কমিটি এবং ইউনিয়ন পর্যায়ের অনেক নেতা-কর্মীর ওপর বিচ্ছিন্নভাবে হামলা করা হচ্ছে।' কামাল এটাও বলেন, বর্তমানে জেলা ও মহানগর বিএনপির বড় একটি অংশ সরোয়ারের এমন নিপীড়ন-নির্যাতনের বিরুদ্ধে এখন সোচ্চার হয়ে উঠছে।
জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের কেন্দ্রীয় জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সম্পাদক, বরিশাল জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক এমপি বিলকিস জাহান শিরিন কালের কণ্ঠকে বলেন, 'এমপি সরোয়ার সব কিছু একা আগলে রাখতে চাইলেও এখন আর তিনি তা পারবেন না। কারণ এখন দলের নেতা-কর্মীরা আগের চেয়ে অনেক বেশি সজাগ।' তিনি বলেন, সরোয়ারের বিভিন্ন তৎপরতার কারণে স্থানীয়ভাবে দলের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার বিষয়টি দলের কেন্দ্রীয় পর্যায়ে অবহিত করা হয়েছে।
গত ৯ মে রাতে বরিশাল মহানগর-সংলগ্ন কীর্তনখোলা ফেরিঘাটের কাছে সন্ত্রাসী হামলার শিকার নজরুল ইসলাম খান রাজন কালের কণ্ঠকে বলেন, 'দীর্ঘদিন ধরেই বরিশালের রাজনীতিতে যে একনায়কতন্ত্র ও সন্ত্রাসের রাজনীতির একটি ধারা চলছিল, আমি সেই ধারা থেকে বেরিয়ে দল, দেশ ও মানুষের স্বার্থে রাজনীতি করার চেষ্টা করছিলাম। ওই একনায়কতন্ত্রের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার কারণেই ক্ষোভস্বরূপ আমার ওপর হামলা হয় বলে মনে করি।' তিনি বলেন, 'আমি এখনো সুস্থ হয়ে উঠিনি, যেভাবে হামলা হয়েছিল, তার পরও যে বেঁচে আছি_এটাই ভাগ্য। এখন আর বরিশালে যাওয়া হয় না।'
আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট বেঁধে ঠিকাদারি : বিএনপির নেতা-কর্মীদের অভিযোগ, আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে বিএনপির কিছু নেতা সমঝোতার মাধ্যমে ঠিকাদারি করেন। সেই তালিকায় রয়েছেন_বরিশাল সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র ও জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক কে এম শহিদুল্লাহ (হাজি শহিদ), বিএনপিপন্থী কাউন্সিলর জাকির হোসেন জেলাল এবং শহরের ১২ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক লুৎফর রহমান। তাঁরা সবাই সরোয়ারের দীর্ঘদিনের সহযোগী।
জানা গেছে, কাউন্সিলর শহিদুল্লাহ সমপ্রতি পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে গৌরনদীতে ঠিকাদারি কাজ করছেন। এ ছাড়া তিনি বেনামে সিটি করপোরেশনের ১ নম্বর ওয়ার্ড পশ্চিম কাউনিয়ার একটি রাস্তাসহ ড্রেনের কাজের ঠিকাদারি করছেন। কাজটি শেষ পর্যায়ে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সিটি করপোরেশেনের একাধিক প্রকৌশলী জানান, সদর রোডের ড্রেনেজ ও ফুটপাতের ঠিকাদারি জাকির হোসেন জেলাল বেনামে করেছেন।
বরিশাল সিটি করপোরেশনের তথ্যানুযায়ী, হাতেগোনা কয়েকটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে বেশ কিছু কাজ হয়েছে। এর মধ্যে এম এল এন্টারপ্রাইজ একটি। প্রতিষ্ঠানটির মালিক শহরের ১২ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক লুৎফর রহমান। এ ব্যাপারে শহিদুল্লাহ কিংবা লুৎফর রহমানের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা বলার চেষ্টা করেও সম্ভব হয়নি। তবে সমপ্রতি বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র অ্যাডভোকেট শওকত হোসেন হিরণ কালের কণ্ঠকে বলেন, কোনো কাউন্সিলর তাঁদের নিজেদের নামে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে করপোরেশনের ঠিকাদারি কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত নন। তবে মাঠ পর্যায়ে ঠিকাদারি কাজের তদারকি তাঁরাই করেন। সে জন্য বাইরে থেকে দেখলে মনে হতে পারে কাউন্সিলররা ঠিকাদারি করছেন।
বরাদ্দ করা কাবিখার টাকা লুটপাট : সংসদ সদস্যের কোটায় সদর উপজেলার চারটি ইউনিয়নের জন্য বরাদ্দ কাজের বিনিময়ে খাদ্য (কাবিখা) প্রকল্পের আট লাখ ১২ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। সরোয়ারের অনুগত নেতা-কর্মীরা এসব কুকীর্তি করেছেন বলে জানা গেছে। সদর উপজেলার ইউনিয়নগুলোর মধ্যে চরকাউয়ার জন্য দুই লাখ ৯০ হাজার, চাঁদপুরার জন্য দুই লাখ ৩২ হাজার, টুঙ্গিবাড়িয়ার জন্য এক লাখ ৭৪ হাজার এবং চন্দ্রমোহনের জন্য এক লাখ ১৬ হাজার টাকা বরাদ্দ ছিল। চলতি বছরের জুন মাসে ২৮টি প্রকল্পের বিপরীতে অর্থ ছাড় করা হয়। প্রকল্প বাস্তবায়ন না করেই এমনকি ভুয়া প্রকল্প দেখিয়ে বরাদ্দ অর্থ মেরে দেওয়া হয়েছে।
অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল 'বিশারদ শেরে বাংলা জামে মসজিদ'-এর নামে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, টুঙ্গিবাড়িয়া ইউনিয়নের বিশারদ গ্রামে এই নামে কোনো মসজিদ নেই। একই গ্রামে 'মুক্তিযোদ্ধা 'আজাহার উদ্দিন জামে মসজিদ' নামে বাস্তবে থাকা মসজিদটির বিপরীতেও কাবিখার বরাদ্দ ছিল। কিন্তু এক কানাকড়িও পায়নি এই মসজিদ। জানা গেছে, টুঙ্গিবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক সদস্য হেলাল সিকদার এই মসজিদের নামে বরাদ্দের ২৯ হাজার টাকা উত্তোলন করেন। তিনি এমপির লোক বলে পরিচিত। ওই মসজিদ কমিটির সভাপতি আজাহার উদ্দিন বলেন, 'কাবিখার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে বলে শুনেছি। কিন্তু এ ব্যাপারে মসজিদ কমিটির সঙ্গে কেউ আলোচনা কিংবা অর্থ জমা দেননি। বিষয়টি তিনি প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাকে জানিয়েছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।'
টুঙ্গিবাড়িয়া ইউনিয়নের যুবদল সভাপতি তৌহিদুর ইসলাম উজ্জ্বলের বিরুদ্ধে তিনটি প্রতিষ্ঠানের বিপরীতে ৮৭ হাজার টাকা উত্তোলন করে আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। প্রকল্পগুলো হলো_পল্লী উন্নয়ন সমবায় সমিতি, পতাং বাসস্ট্যান্ড সঞ্চয় ঋণ দান সমবায় সমিতি এবং বাসস্ট্যান্ড পাঠাগার।
আরেকটি ইউনিয়ন চাঁদপুরার লোকজন অভিযোগ করেন, তাঁদের রুগ্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান 'খন্তাখালী এতিমখানা'র নামে কাবিখার টাকা বরাদ্দ হয়েছে। কিন্তু এতিমখানার লোকজন নয়, সেই বরাদ্দের অর্থ উত্তোলন করেছেন বাদল সরদার নামের এক বিএনপির নেতা। খন্তাখালী এবতেদায়ি মাদ্রাসার নামে টাকা উত্তোলন করেন সদর উপজেলা শাখা বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি আনোয়ার হোসেন লাভু। মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, লাভু কাজ না করেই অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। লাভুকে সরোয়ারের লোক বলে জানে সবাই। এ ব্যাপারে সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মাইনুল ইসলাম বলেন, 'টাকা আত্মসাতের কোনো সুযোগ নেই। কিছু প্রকল্পে একটু অনিয়ম রয়েছে।'
সব অভিযোগ অস্বীকার সরোয়ারের : সংসদ সদস্য সরোয়ার কালের কণ্ঠের জিজ্ঞাসার জবাবে কোনো অভিযোগেরই ভিত্তি নেই বলে জানান। তাঁর বক্তব্যে জেলা বিএনপির কোন্দলের বিষয়টি উঠে আসে। তিনি বলেন, 'ঢাকায় গিয়ে বিএনপির কিছু নেতার সঙ্গে লবিং করে বরিশাল জেলা বিএনপি কমিটির সভাপতি হয়েছেন কামাল আর সাধারণ সম্পাদক শিরিন। এই কমিটির ওপর বরিশালের দলীয় তৃণমূল নেতা-কর্মীদের কোনো সমর্থন নেই। কামাল তো কখনো জেলা বিএনপির রাজনীতি করেননি। আর শিরিনের কথা ভিন্ন। তবে তাঁরা জেলা কমিটির নেতা হওয়ায় আমার কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু কেন্দ্রের সিনিয়র অনেক নেতাই এখন বলাবলি করছেন, এ ধরনের কমিটি গঠন ঠিক হয়নি।
সরোয়ার বলেন, '১/১১-এর সময় যাঁরা সংস্কারপন্থী ছিলেন, তাঁরাই এখন ভালো আছেন। আমি কখনো সংস্কারপন্থী ছিলাম না বলেই আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ তোলা হচ্ছে। আমার পক্ষে কারো ওপর হামলা কিংবা নির্যাতন করার প্রশ্নই আসে না।'
ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে আঁতাত করে সব কিছু করছেন বলে ওঠা অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'বর্তমান সরকারের আমলে টিআর (টেস্ট রিলিফ) ছাড়া কোনো বরাদ্দ পাইনি। জেলার সব এমপির সঙ্গে আলোচনা করে বিভিন্ন খাতে বরাদ্দ দেওয়ার কথা থাকলেও তা করা সম্ভব হয়নি। পুলিশের লাঠিপেটার কারণে রাস্তায় নামতে পারছি না। সভা-সমাবেশ, মিছিল করতে পারছি না। সেখানে সরকারি দলের সঙ্গে আঁতাত কিভাবে সম্ভব। এসব অভিযোগ মিথ্যা। আমি বিএনপির আদর্শে রাজনীতি করি। বরিশালের অনেকে আদর্শচ্যুত হয়েছেন। আমি রাজনীতির সঙ্গে কখনো আদর্শচ্যুত হইনি।'
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, বরিশাল জেলা কমিটি নিয়ে দলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মজিবর রহমান সরোয়ারের সঙ্গে যেসব কোন্দল ও দ্বন্দ্বের কথা শোনা যাচ্ছে, সেটা তেমন কিছু না। বড় বড় রাজনৈতিক দলে পদ ও পদবির জন্য কম-বেশি সমস্যা থাকে। রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই এসব মীমাংসা হয়ে যাবে।
বরিশাল বিভাগের ছয় জেলার ২৩টি সংসদীয় আসনের মধ্যে মাত্র দুটি বিএনপির হাতে। এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ বরিশাল সদর আসনের এমপি মজিবর রহমান সরোয়ার বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও বরিশাল মহানগর বিএনপির সভাপতি। কেবল এ দুটি পদই নয়, তাঁর দখলে আগের মতোই এখনো বহু পদ। তিনি জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি এবং একই সংগঠনের বরিশাল জেলা শাখার সভাপতি। নিজ দলের ভেতরে
ক্ষমতার দাপট বহাল রাখতে এখনো মরিয়া তিনি। তবে তাঁর ক্ষমতা খর্ব করতে দলীয় প্রতিপক্ষ গ্রুপটি আগের চেয়ে শক্তিশালী হয়ে ওঠায় তিনি অতীতের মতোই আক্রমণাত্মক হয়ে উঠেছেন বলে অভিযোগ সাধারণ নেতা-কর্মীদের। অভিযোগ আছে, অনেক ক্ষেত্রে স্থানীয়ভাবে আওয়ামী লীগের লোকজনের সঙ্গে সমঝোতা করে নিজের ঘনিষ্ঠ লোকজনকে বিভিন্ন কাজ পাইয়ে দিচ্ছেন। তাঁর লোকজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে সরকারি বরাদ্দের অর্থ আত্মসাতেরও।
এমপি সরোয়ারের অবস্থা ও অবস্থান বোঝাতে বরিশাল জেলা বিএনপির মধ্যপন্থী একজন জ্যেষ্ঠ নেতা নিজের ঘরের ফাইলপত্র ঘেঁটে বের করেন পাঁচ বছর আগের একটি জাতীয় দৈনিক। 'গডফাদারেরা আছেই' লোগোসহ 'সরোয়ারের হাতের মুঠোয় সব' শিরোনাম এবং কার্টুন ছবিটি দেখিয়ে এই নেতা বললেন, এটা হচ্ছে এমপি সরোয়ারের সরকারি ক্ষমতাকালের উৎকৃষ্ট আমলনামা। সরকার বদলে তাঁর 'সরকারি ক্ষমতার' অবস্থানগত পরিবর্তন হলেও নৈতিক বা মানসিক অবস্থার পরিবর্তন হয়নি। এখনো তিনি আগের মতোই সব কিছু নিজের করে পেতে চান যেকোনো উপায়ে। না পেলেই ফিরে যান আগের চেহারায়। তখন তাঁর আচরণ অনেকটা হিংস্র হয় দলের ত্যাগী নেতা-কর্মীদের ওপর। চলে হামলা-নির্যাতন।
আগের আলোচিত ঘটনাগুলো বাদ দিয়ে সরোয়ার নতুন কী হিংস্রতা দেখাচ্ছেন জানতে চাইলে ওই নেতা বলেন, 'আমরা তো আমাদের নেতার কোনো ঘটনাই বলতে চাই না। কিন্তু কিছুদিন পরপরই তিনি এমন একেকটি কাণ্ডের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন, যা চাইলেই ভুলে থাকা যায় না। কয়েক দিন আগে তাঁর লোকজন নির্মমভাবে কুপিয়েছে বিএনপির কেন্দ্রীয় অন্যতম সহসাংগঠনিক সম্পাদক ও জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম খান রাজনকে। এই রাজন একসময় এমপির খুব ঘনিষ্ঠজন ছিলেন। এখন তাঁর অপরাধ হচ্ছে, তিনি এমপিকে ছেড়ে দলীয় প্রতিপক্ষ গ্রুপের সঙ্গে জোট বেঁধেছেন। ওই ঘটনায় সরোয়ারকে প্রধান আসামি করে মামলা করেছে রাজনের পরিবার। রাজন এখন বরিশালছাড়া সরোয়ারের ভয়ে। বিএনপির আরেক নেতা নাম না প্রকাশের অনুরোধ জানিয়ে বলেন, রাজনের ঘটনার পর তাঁর প্রতিপক্ষের লোকজন এখন অনেকটাই আতঙ্কে আছে। তাঁর পক্ষ ত্যাগ করায় রাজনের চেয়েও ভয়াবহ পরিণতি হয়েছিল একসময় তাঁর হাতে গড়া ছাত্রনেতা ও তৎকালীন শীর্ষ সন্ত্রাসী কাইউম হোসেন মিল্টনের। এ ছাড়া তাঁর পুরনো কালের নিত্যসঙ্গী এবং বরিশালের দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী বলে চিহ্নিত ট্যারা শাজাহান হত্যাকাণ্ডেও তাঁর হাত ছিল বলে অভিযোগ আছে। এসব ঘটনার মামলাগুলোতেও তিনি আসামি। এ ছাড়া সত্তর ও আশির দশকে কালাম-ছালাম-আজিজ হত্যা, হাবিল-দোলনের হাত বিচ্ছিন্ন করার ঘটনাগুলোও বারবার আলোচনায় উঠে আসে। তাই এমপি সরোয়ারের সঙ্গ ত্যাগ করলে কার কখন কী পরিণতি হয়, তা নিয়ে ভয়ে অনেকেই প্রকাশ্যে তাঁর বিরোধিতা করার সাহস পায় না।
বিএনপির কেন্দ্রীয় মৎস্যবিষয়ক সম্পাদক ও বরিশাল জেলা (দক্ষিণ) শাখার সভাপতি এবং বরিশাল সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আহসান হাবীব কামাল বলেন, 'দলের চেয়ারপারসন যেখানে দলের সবাইকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন, সেখানে এমপি মজিবর রহমান সরোয়ার নিজের একক ক্ষমতা ও দাপট বহাল রাখতে বিভিন্ন তৎপরতা চালাচ্ছেন। এমপির লোকজনের হামলা ও নির্যাতনে দলের সাধারণ নেতা-কর্মীরা ঠিকমতো দলীয় কর্মকাণ্ড চালাতে পারছে না।'
কামাল বলেন, 'বরিশালে এখন বিএনপি ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের সাধারণ নেতা-কর্মীরা যতটা না ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নির্যাতনের শিকার হচ্ছে, এর চেয়ে বেশি হামলা-নির্যাতনের শিকার হচ্ছে এমপি সরোয়ারের অনুসারীদের কাছে। সম্প্রতি সরকারবিরোধী যেসব কেন্দ্রীয় কর্মসূচি আমরা পালন করেছি, এর সব কর্মসূচিতেই এমপি সরোয়ারের লোকজন হামলা করেছে। জেলা কমিটি, উপজেলা কমিটি এবং ইউনিয়ন পর্যায়ের অনেক নেতা-কর্মীর ওপর বিচ্ছিন্নভাবে হামলা করা হচ্ছে।' কামাল এটাও বলেন, বর্তমানে জেলা ও মহানগর বিএনপির বড় একটি অংশ সরোয়ারের এমন নিপীড়ন-নির্যাতনের বিরুদ্ধে এখন সোচ্চার হয়ে উঠছে।
জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের কেন্দ্রীয় জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সম্পাদক, বরিশাল জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক এমপি বিলকিস জাহান শিরিন কালের কণ্ঠকে বলেন, 'এমপি সরোয়ার সব কিছু একা আগলে রাখতে চাইলেও এখন আর তিনি তা পারবেন না। কারণ এখন দলের নেতা-কর্মীরা আগের চেয়ে অনেক বেশি সজাগ।' তিনি বলেন, সরোয়ারের বিভিন্ন তৎপরতার কারণে স্থানীয়ভাবে দলের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার বিষয়টি দলের কেন্দ্রীয় পর্যায়ে অবহিত করা হয়েছে।
গত ৯ মে রাতে বরিশাল মহানগর-সংলগ্ন কীর্তনখোলা ফেরিঘাটের কাছে সন্ত্রাসী হামলার শিকার নজরুল ইসলাম খান রাজন কালের কণ্ঠকে বলেন, 'দীর্ঘদিন ধরেই বরিশালের রাজনীতিতে যে একনায়কতন্ত্র ও সন্ত্রাসের রাজনীতির একটি ধারা চলছিল, আমি সেই ধারা থেকে বেরিয়ে দল, দেশ ও মানুষের স্বার্থে রাজনীতি করার চেষ্টা করছিলাম। ওই একনায়কতন্ত্রের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার কারণেই ক্ষোভস্বরূপ আমার ওপর হামলা হয় বলে মনে করি।' তিনি বলেন, 'আমি এখনো সুস্থ হয়ে উঠিনি, যেভাবে হামলা হয়েছিল, তার পরও যে বেঁচে আছি_এটাই ভাগ্য। এখন আর বরিশালে যাওয়া হয় না।'
আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট বেঁধে ঠিকাদারি : বিএনপির নেতা-কর্মীদের অভিযোগ, আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে বিএনপির কিছু নেতা সমঝোতার মাধ্যমে ঠিকাদারি করেন। সেই তালিকায় রয়েছেন_বরিশাল সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র ও জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক কে এম শহিদুল্লাহ (হাজি শহিদ), বিএনপিপন্থী কাউন্সিলর জাকির হোসেন জেলাল এবং শহরের ১২ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক লুৎফর রহমান। তাঁরা সবাই সরোয়ারের দীর্ঘদিনের সহযোগী।
জানা গেছে, কাউন্সিলর শহিদুল্লাহ সমপ্রতি পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে গৌরনদীতে ঠিকাদারি কাজ করছেন। এ ছাড়া তিনি বেনামে সিটি করপোরেশনের ১ নম্বর ওয়ার্ড পশ্চিম কাউনিয়ার একটি রাস্তাসহ ড্রেনের কাজের ঠিকাদারি করছেন। কাজটি শেষ পর্যায়ে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সিটি করপোরেশেনের একাধিক প্রকৌশলী জানান, সদর রোডের ড্রেনেজ ও ফুটপাতের ঠিকাদারি জাকির হোসেন জেলাল বেনামে করেছেন।
বরিশাল সিটি করপোরেশনের তথ্যানুযায়ী, হাতেগোনা কয়েকটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে বেশ কিছু কাজ হয়েছে। এর মধ্যে এম এল এন্টারপ্রাইজ একটি। প্রতিষ্ঠানটির মালিক শহরের ১২ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক লুৎফর রহমান। এ ব্যাপারে শহিদুল্লাহ কিংবা লুৎফর রহমানের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা বলার চেষ্টা করেও সম্ভব হয়নি। তবে সমপ্রতি বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র অ্যাডভোকেট শওকত হোসেন হিরণ কালের কণ্ঠকে বলেন, কোনো কাউন্সিলর তাঁদের নিজেদের নামে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে করপোরেশনের ঠিকাদারি কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত নন। তবে মাঠ পর্যায়ে ঠিকাদারি কাজের তদারকি তাঁরাই করেন। সে জন্য বাইরে থেকে দেখলে মনে হতে পারে কাউন্সিলররা ঠিকাদারি করছেন।
বরাদ্দ করা কাবিখার টাকা লুটপাট : সংসদ সদস্যের কোটায় সদর উপজেলার চারটি ইউনিয়নের জন্য বরাদ্দ কাজের বিনিময়ে খাদ্য (কাবিখা) প্রকল্পের আট লাখ ১২ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। সরোয়ারের অনুগত নেতা-কর্মীরা এসব কুকীর্তি করেছেন বলে জানা গেছে। সদর উপজেলার ইউনিয়নগুলোর মধ্যে চরকাউয়ার জন্য দুই লাখ ৯০ হাজার, চাঁদপুরার জন্য দুই লাখ ৩২ হাজার, টুঙ্গিবাড়িয়ার জন্য এক লাখ ৭৪ হাজার এবং চন্দ্রমোহনের জন্য এক লাখ ১৬ হাজার টাকা বরাদ্দ ছিল। চলতি বছরের জুন মাসে ২৮টি প্রকল্পের বিপরীতে অর্থ ছাড় করা হয়। প্রকল্প বাস্তবায়ন না করেই এমনকি ভুয়া প্রকল্প দেখিয়ে বরাদ্দ অর্থ মেরে দেওয়া হয়েছে।
অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল 'বিশারদ শেরে বাংলা জামে মসজিদ'-এর নামে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, টুঙ্গিবাড়িয়া ইউনিয়নের বিশারদ গ্রামে এই নামে কোনো মসজিদ নেই। একই গ্রামে 'মুক্তিযোদ্ধা 'আজাহার উদ্দিন জামে মসজিদ' নামে বাস্তবে থাকা মসজিদটির বিপরীতেও কাবিখার বরাদ্দ ছিল। কিন্তু এক কানাকড়িও পায়নি এই মসজিদ। জানা গেছে, টুঙ্গিবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক সদস্য হেলাল সিকদার এই মসজিদের নামে বরাদ্দের ২৯ হাজার টাকা উত্তোলন করেন। তিনি এমপির লোক বলে পরিচিত। ওই মসজিদ কমিটির সভাপতি আজাহার উদ্দিন বলেন, 'কাবিখার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে বলে শুনেছি। কিন্তু এ ব্যাপারে মসজিদ কমিটির সঙ্গে কেউ আলোচনা কিংবা অর্থ জমা দেননি। বিষয়টি তিনি প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাকে জানিয়েছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।'
টুঙ্গিবাড়িয়া ইউনিয়নের যুবদল সভাপতি তৌহিদুর ইসলাম উজ্জ্বলের বিরুদ্ধে তিনটি প্রতিষ্ঠানের বিপরীতে ৮৭ হাজার টাকা উত্তোলন করে আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। প্রকল্পগুলো হলো_পল্লী উন্নয়ন সমবায় সমিতি, পতাং বাসস্ট্যান্ড সঞ্চয় ঋণ দান সমবায় সমিতি এবং বাসস্ট্যান্ড পাঠাগার।
আরেকটি ইউনিয়ন চাঁদপুরার লোকজন অভিযোগ করেন, তাঁদের রুগ্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান 'খন্তাখালী এতিমখানা'র নামে কাবিখার টাকা বরাদ্দ হয়েছে। কিন্তু এতিমখানার লোকজন নয়, সেই বরাদ্দের অর্থ উত্তোলন করেছেন বাদল সরদার নামের এক বিএনপির নেতা। খন্তাখালী এবতেদায়ি মাদ্রাসার নামে টাকা উত্তোলন করেন সদর উপজেলা শাখা বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি আনোয়ার হোসেন লাভু। মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, লাভু কাজ না করেই অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। লাভুকে সরোয়ারের লোক বলে জানে সবাই। এ ব্যাপারে সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মাইনুল ইসলাম বলেন, 'টাকা আত্মসাতের কোনো সুযোগ নেই। কিছু প্রকল্পে একটু অনিয়ম রয়েছে।'
সব অভিযোগ অস্বীকার সরোয়ারের : সংসদ সদস্য সরোয়ার কালের কণ্ঠের জিজ্ঞাসার জবাবে কোনো অভিযোগেরই ভিত্তি নেই বলে জানান। তাঁর বক্তব্যে জেলা বিএনপির কোন্দলের বিষয়টি উঠে আসে। তিনি বলেন, 'ঢাকায় গিয়ে বিএনপির কিছু নেতার সঙ্গে লবিং করে বরিশাল জেলা বিএনপি কমিটির সভাপতি হয়েছেন কামাল আর সাধারণ সম্পাদক শিরিন। এই কমিটির ওপর বরিশালের দলীয় তৃণমূল নেতা-কর্মীদের কোনো সমর্থন নেই। কামাল তো কখনো জেলা বিএনপির রাজনীতি করেননি। আর শিরিনের কথা ভিন্ন। তবে তাঁরা জেলা কমিটির নেতা হওয়ায় আমার কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু কেন্দ্রের সিনিয়র অনেক নেতাই এখন বলাবলি করছেন, এ ধরনের কমিটি গঠন ঠিক হয়নি।
সরোয়ার বলেন, '১/১১-এর সময় যাঁরা সংস্কারপন্থী ছিলেন, তাঁরাই এখন ভালো আছেন। আমি কখনো সংস্কারপন্থী ছিলাম না বলেই আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ তোলা হচ্ছে। আমার পক্ষে কারো ওপর হামলা কিংবা নির্যাতন করার প্রশ্নই আসে না।'
ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে আঁতাত করে সব কিছু করছেন বলে ওঠা অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'বর্তমান সরকারের আমলে টিআর (টেস্ট রিলিফ) ছাড়া কোনো বরাদ্দ পাইনি। জেলার সব এমপির সঙ্গে আলোচনা করে বিভিন্ন খাতে বরাদ্দ দেওয়ার কথা থাকলেও তা করা সম্ভব হয়নি। পুলিশের লাঠিপেটার কারণে রাস্তায় নামতে পারছি না। সভা-সমাবেশ, মিছিল করতে পারছি না। সেখানে সরকারি দলের সঙ্গে আঁতাত কিভাবে সম্ভব। এসব অভিযোগ মিথ্যা। আমি বিএনপির আদর্শে রাজনীতি করি। বরিশালের অনেকে আদর্শচ্যুত হয়েছেন। আমি রাজনীতির সঙ্গে কখনো আদর্শচ্যুত হইনি।'
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, বরিশাল জেলা কমিটি নিয়ে দলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মজিবর রহমান সরোয়ারের সঙ্গে যেসব কোন্দল ও দ্বন্দ্বের কথা শোনা যাচ্ছে, সেটা তেমন কিছু না। বড় বড় রাজনৈতিক দলে পদ ও পদবির জন্য কম-বেশি সমস্যা থাকে। রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই এসব মীমাংসা হয়ে যাবে।
No comments