যে গ্রামে পাখিরা ঘুম ভাঙায় by মোহাম্মদ রফিক
লম্বা গলা, লালচে হলুদ ঠোঁট। ধ্যানীর মতো ওরা দল বেঁধে বসে আছে বাঁশঝাড়ের মাথায়। বকের এমন আড্ডা দেখে যে কেউ মোহিত হবেই। শুধু কি বক? এদের পাশে ঘুরঘুর করছে পানকৌড়ি-কাদাখোঁচা আর হট্টিটিও। ওদিকে শিমুল-পলাশগাছে গুনগুন করে সুর তুলেছে দোয়েল-কোয়েলের দল। পাশের বটগাছের পাতার আড়ালে চলছে ঘুঘু-শালিকদের খুনসুটি আর বেশুমার চড়ুই পাখির কলরব। পাখির এই অভয়ারণ্য দেখতে হলে যেতে হবে শহরতলীর নিভৃত পল্লি হাটহাজারীর লালিয়ার হাট গ্রামে। অনেকেই এখন এ গ্রামকে পাখিগ্রাম বলতেও দ্বিধাবোধ করেন না।
এলাকাবাসী জানান, প্রতিদিন সূর্য ডোবার আগেই বক, শালিক, চড়ুই, দোয়েল, ঘুঘু, পানকৌড়িসহ নানা প্রজাতির পাখি পঙ্গপালের মতো ছুটে আসে এ গ্রামে। পাখিগুলো আশ্রয় নেয় গ্রামটির কাজীপাড়া, মীরাপাড়াসহ আশপাশের এলাকার বিভিন্ন গাছে-বাঁশঝাড়ে। সন্ধ্যা হলেই পাখির কলরবে মুখরিত হয়ে ওঠে পুরো গ্রাম। রাত ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে নিস্তব্ধ হয়ে যায় পাখির কলকাকলি। রাত পোহানোর পর ভোরের আলো ফোটার আগেই ওরা বেরিয়ে পড়ে খাদ্যের খোঁজে। দিনের বেলায় পাখিশূন্য হয়ে পড়ে গ্রামটি। এ সময় প্রকৃতিতেও বিরাজ করে নীরবতা। সন্ধ্যা হতে না-হতেই পাল্টে যায় দৃশ্য। দলে দলে পাখিরা আসা শুরু করলে প্রকৃতিতে ফিরে আসে প্রাণচাঞ্চল্য।
২ অক্টোবর বিকেলে এই পাখিগ্রামে ঘুরে কাজীপাড়া, মীরাপাড়াসহ আশপাশের এলাকায় অসংখ্য বাঁশবাগানের অস্তিত্ব দেখা যায়। আম, জাম, নারিকেলসহ নানা প্রজাতির গাছে কেবল পাখি আর পাখি। কোথাও যেন তিল ধারণের ঠাঁই নেই।
ঠিক কবে থেকে পাখিরা এই গ্রামে আসা শুরু করে?—প্রশ্ন করলে মীরাপাড়ার বাসিন্দা সৈয়দ আকতার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার বয়স এখন ৪০। শৈশব থেকেই এই পাখিদের দেখছি। বাবা-মা বলেছেন, দেশ স্বাধীনের আগেও তাঁরা এমন দৃশ্য দেখেছেন’। স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. মোরশেদ বলেন, ‘আমাদের গ্রামটিকে শুধু পাখিগ্রাম বললেও কম বলা হয়, এটি আসলে একটি অভয়ারণ্য। চিকনদণ্ডী ইউপির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সেলিম বলেন, ‘সন্ধ্যায় হরেক প্রজাতির পাখি আমাদের গ্রামে আসে। পরের দিন ভোরে চলে যায়। পাখিগুলো এই গ্রামের রূপ-লাবণ্য বৃদ্ধি করেছে। আমরা একটি পাখিও কাউকে শিকার করতে দিই না।’
পাখিগ্রাম ঘুরে দেখতে যখন মীরাপাড়ায় ঢুকলাম, তখন সূর্য ডুবুডুবু প্রায়। সৈয়দ খোরশেদ আলমের বাড়ির পাশের আমগাছে দেখা মিলল চার থেকে পাঁচটি কাকের মধ্যে এক টুকরো মাংস দখলের লড়াই। দুটি মাছরাঙা মাছ শিকারের জন্য বসে আছে পুকুরের ধারে গাছের ডালের ওপর। এরই মাঝে গাপুস করে পুঁটিমাছ ধরে একটি মাছরাঙা মুহূর্তেই হাওয়া হয়ে গেল। ততক্ষণে সন্ধ্যা পার হয়ে রাত নেমেছে। চাঁদের কিরণে মাখামাখি বাঁশঝাড়ের মাথা। চাঁদের আলোয় সাদা বকগুলো যেন আরও দ্যুতিময় হয়ে উঠল। মীরাপাড়ার অশীতিপর বৃদ্ধ নূর মিয়া সেদিকে তাকিয়ে ফোকলা দাঁতের হাসি দিয়ে বললেন, ‘পাখিরা এই গ্রামের লক্ষ্মী। তাদের ডাকে সকালে ঘুম ভাঙে, সকালটাকে তাই খুব পবিত্র মনে হয়।’
২ অক্টোবর বিকেলে এই পাখিগ্রামে ঘুরে কাজীপাড়া, মীরাপাড়াসহ আশপাশের এলাকায় অসংখ্য বাঁশবাগানের অস্তিত্ব দেখা যায়। আম, জাম, নারিকেলসহ নানা প্রজাতির গাছে কেবল পাখি আর পাখি। কোথাও যেন তিল ধারণের ঠাঁই নেই।
ঠিক কবে থেকে পাখিরা এই গ্রামে আসা শুরু করে?—প্রশ্ন করলে মীরাপাড়ার বাসিন্দা সৈয়দ আকতার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার বয়স এখন ৪০। শৈশব থেকেই এই পাখিদের দেখছি। বাবা-মা বলেছেন, দেশ স্বাধীনের আগেও তাঁরা এমন দৃশ্য দেখেছেন’। স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. মোরশেদ বলেন, ‘আমাদের গ্রামটিকে শুধু পাখিগ্রাম বললেও কম বলা হয়, এটি আসলে একটি অভয়ারণ্য। চিকনদণ্ডী ইউপির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সেলিম বলেন, ‘সন্ধ্যায় হরেক প্রজাতির পাখি আমাদের গ্রামে আসে। পরের দিন ভোরে চলে যায়। পাখিগুলো এই গ্রামের রূপ-লাবণ্য বৃদ্ধি করেছে। আমরা একটি পাখিও কাউকে শিকার করতে দিই না।’
পাখিগ্রাম ঘুরে দেখতে যখন মীরাপাড়ায় ঢুকলাম, তখন সূর্য ডুবুডুবু প্রায়। সৈয়দ খোরশেদ আলমের বাড়ির পাশের আমগাছে দেখা মিলল চার থেকে পাঁচটি কাকের মধ্যে এক টুকরো মাংস দখলের লড়াই। দুটি মাছরাঙা মাছ শিকারের জন্য বসে আছে পুকুরের ধারে গাছের ডালের ওপর। এরই মাঝে গাপুস করে পুঁটিমাছ ধরে একটি মাছরাঙা মুহূর্তেই হাওয়া হয়ে গেল। ততক্ষণে সন্ধ্যা পার হয়ে রাত নেমেছে। চাঁদের কিরণে মাখামাখি বাঁশঝাড়ের মাথা। চাঁদের আলোয় সাদা বকগুলো যেন আরও দ্যুতিময় হয়ে উঠল। মীরাপাড়ার অশীতিপর বৃদ্ধ নূর মিয়া সেদিকে তাকিয়ে ফোকলা দাঁতের হাসি দিয়ে বললেন, ‘পাখিরা এই গ্রামের লক্ষ্মী। তাদের ডাকে সকালে ঘুম ভাঙে, সকালটাকে তাই খুব পবিত্র মনে হয়।’
No comments