এমএলএম ব্যবসা নিয়ন্ত্রণে আইন অবশেষে চূড়ান্ত
মাল্টি লেভেল মার্কেটিং বা এমএলএম ব্যবসা নিয়ন্ত্রণে কঠোর আইন করতে যাচ্ছে সরকার। 'ডাইরেক্ট সেল আইন-২০১১' নামের এই আইনের খসড়া ইতিমধ্যে চূড়ান্ত হয়েছে। জাতীয় সংসদের আগামী অধিবেশনেই এটি পাস হতে পারে। এটি পাস হলে এ আইনের আওতায়ই পরিচালিত হবে দেশের এমএলএম ব্যবসা।
আইনের বিভিন্ন ধারা লঙ্ঘনের জন্য সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রেখে গতকাল বুধবার আইনটির খসড়া প্রায় চূড়ান্ত করেছে কমিটি।
আইনের বিভিন্ন ধারা লঙ্ঘনের জন্য সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রেখে গতকাল বুধবার আইনটির খসড়া প্রায় চূড়ান্ত করেছে কমিটি।
খসড়ায় আইনের বিভিন্ন ধারায় সর্বমোট ৪০ বছর কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। এ ছাড়া রয়েছে আইন অমান্যকারী কম্পানির লাইসেন্স বাজেয়াপ্ত করাসহ ওই কম্পানি বা প্রতিষ্ঠানের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে সরকারের মালিকানায় নেওয়ার মতো কঠোর সিদ্ধান্ত।
দেশের এমএলএম কম্পানিগুলো পরিচালনার জন্য কোনো আইন বা নীতিমালা নেই। অভিযোগ রয়েছে, এই সুযোগে কম্পানিগুলো অদৃশ্য বিভিন্ন পণ্য ও সেবা বিক্রির নামে গ্রাহকদের কাছ থেকে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নিয়ে প্রায়ই আত্মসাৎ করছে। কোনো কোনো এমএলএম কম্পানির বিরুদ্ধে বিদেশে অর্থ পাচার করার অভিযোগও রয়েছে। এ অবস্থায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এ ব্যবসাকে শৃঙ্খলার মধ্যে আনতে প্রথমে নীতিমালা ও পরে আইন করার সিদ্ধান্ত নেয়। এরই ধারাবাহিকতায় এর খসড়া চূড়ান্ত করতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এম মর্তুজা রেজার সভাপতিত্বে ১৫ সদস্যবিশিষ্ট উচ্চপর্যায়ের একটি কমিটি ছাড়াও খসড়া প্রণয়ন কমিটি নামে আরেকটি কমিটি কাজ করেছে। অতিরিক্ত সচিব এম মর্তুজা রেজার সভাপতিত্বে গতকাল সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত উচ্চপর্যায়ের কমিটির বৈঠকে খসড়াটি চূড়ান্ত করা হয়েছে।
কমিটির অন্যতম এক সদস্য কালের কণ্ঠকে বলেন, কমিটির বিবেচনায় খসড়াটি চূড়ান্ত। তবে এ নিয়ে শেষ মুহূর্তে এমএলএম কম্পানির প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকের সুযোগ রাখা হয়েছে।
বাণিজ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ ফারুক খান এ ব্যাপারে বলেন, এর সংশোধনী চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। আশা করা হচ্ছে, চলতি মাসেই তা মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে। এরপর তা সংসদে উত্থাপন করা হবে। একই সঙ্গে আইন বাস্তবায়ন ও তদারকির জন্য একটি পরিদপ্তর গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। শাস্তি হিসেবে আইন লঙ্ঘনকারীর ৫০ লাখ টাকা জরিমানা ও পাঁচ বছর কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।
খসড়ার ষষ্ঠ অধ্যায়ে 'অপরাধ দণ্ড'তে বলা হয়েছে, কতগুলো ক্ষেত্রে এমএলএম ব্যবসা পরিচালনা করা নিষিদ্ধ। এর মধ্যে রয়েছে অবস্তুগত বা অলীক পণ্য, স্থাবর সম্পত্তি ও বৃক্ষ। কমিশন বা বোনাস হিসেবে কোনোরূপ শেয়ার বা ঋণপত্র ক্রয়-বিক্রয়, সঞ্চয়পত্র, বোনাস স্কিম, কিস্তির মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ বা সঞ্চয় বা বিলিবণ্টন এমনকি লটারির টিকিটও বিক্রি করা যাবে না। এ ছাড়া প্লাটিনাম, স্বর্ণ, ব্রোঞ্জ, পারদ, হাইড্রো কার্বন, তেজস্ক্রিয় পদার্থ, স্পর্শকাতর রাসায়নিক পদার্থ, অস্ত্র ও বিস্ফোরক, ধাতব মুদ্রা, অশ্লীল ছবির ফিল্ম, সিডি, ভিসিডি; উগ্র মৌলবাদী বই, ফিল্ম, সিডি, ভিসিডি এবং রাষ্ট্র ও ধর্মবিরোধী বা ধর্ম বিকৃতকারী বই, প্রচারপত্র, ফিল্ম, সিডি ও ভিসিডি বিপণন নিষিদ্ধ। এসব পণ্য ও সেবা বিপণন করলে সংশ্লিষ্ট কম্পানির দায়ী ব্যক্তি বা ব্যক্তিদের তিন থেকে পাঁচ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হবে।
খসড়া অনুযায়ী, এমএলএম কম্পানিগুলোর বিপণনের পণ্য মোড়কজাত করা বাধ্যতামূলক। কোনো কম্পানি পণ্যে মোড়ক ব্যবহার না করলে দুই বছর থেকে তিন বছরের কারাদণ্ডসহ ২০ হাজার টাকা জরিমানা হবে। মোড়কের গায়ে পণ্যের ওজন, উপাদান, ব্যবহারবিধি, সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য, উৎপাদনের তারিখ, প্যাকেটজাতকরণের তারিখ ও মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ উল্লেখ থাকা বাধ্যতামূলক। কোনো পণ্যের মোড়কে এসব তথ্যের একটি বা তার বেশি তথ্য না থাকলে ওই পণ্য বিক্রয়কারী ব্যক্তিকে কমপক্ষে দুই থেকে সর্বোচ্চ তিন বছরের জেলসহ ১০ হাজার টাকা জরিমানা গুনতে হবে। প্রতিশ্রুত পণ্য বা সেবা যথাযথভাবে বিক্রয় বা সরবরাহ না করলে দুই বছর থেকে সর্বোচ্চ তিন বছরের কারাদণ্ডসহ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা দিতে হবে।
খসড়ায় আরো বলা হয়েছে, 'কোনো পণ্য বা সেবা বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে এই আইনের কোনো বিধান ভঙ্গ হইতে পারে, এরূপ জালিয়াতি ডাইরেক্ট সেল কম্পানির বহু স্তর বিপণন কার্যক্রমের কোনো স্তরের কোনো কর্মী বা সদস্য যদি ঐ পণ্য বা সেবা বিক্রয়ের লক্ষ্যে ইলেকট্রনিক, মুদ্রণ বা অন্য কোনো প্রচারমাধ্যমে দ্বারে দ্বারে বিক্রয়, মেইল অর্ডারে বিক্রয় বা অনুরূপ অন্য কোনোভাবে ঐ পণ্য বা সেবা বিক্রয়ের প্রচারণা চালায় তাহা হইলে ঐ বিক্রেতা এবং সংশ্লিষ্ট কম্পানির চেয়ারম্যান ও পরিচালকসহ শীর্ষ ব্যক্তিগণ যাহারা কম্পানির স্বার্থে এইরূপ প্রচারণার মাধ্যমে পণ্য বা সেবা বিক্রয়ের পৃষ্ঠপোষকতাকারী ব্যক্তিসহ যে স্তরে অবস্থানকারী সদস্য এইরূপ প্রচারণা চালাইবে তাহার সহিত যোগসূত্র আছে এইরূপ ঊর্ধ্বতন স্তরের সকল সদস্য এই আইন ভঙ্গ করিবার অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হইবেন।'
কোনো এমএলএম কম্পানি বা তার সদস্য মিথ্যা বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রতারণা করলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে ছয় মাস থেকে সর্বোচ্চ এক বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হবে। এ ছাড়া কোনো এমএলএম কম্পানি ধার্য করা দামের চেয়ে বেশি দামে পণ্য বিক্রি করলে দায়ী ব্যক্তি বা ব্যক্তিদের কমপক্ষে ছয় মাস থেকে সর্বোচ্চ এক বছরের কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে। আর কোনো পণ্যের মূল্য অযৌক্তিকভাবে বাড়ানোর দায়ে দায়ী ব্যক্তিদের কমপক্ষে দুই বছর থেকে সর্বোচ্চ তিন বছরের জেল ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করার কথা খসড়ায় বলা আছে। এ ছাড়া নির্ধারিত মানের চেয়ে নিম্নমানের পণ্য ও সেবা বিক্রির অভিযোগ প্রমাণিত হলে অপরাধের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তি বা ব্যক্তিরা কমপক্ষে দুই বছর থেকে সর্বোচ্চ তিন বছরের কারাদণ্ড ও ২০ হাজার টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
বলা হয়েছে, নির্দিষ্ট পরিমাণ পণ্য বা নির্দিষ্ট পরিমাণ ক্রেতা সরবরাহ না করার কারণে কোনো স্তরের সদস্য বা ক্রেতা-পরিবেশককে তার ওপরের স্তরের কোনো সদস্য বা ক্রেতা-পরিবেশক বা কম্পানি আর্থিক জরিমানা বা জামানত হিসেবে দেওয়া অর্থ আংশিক বা সম্পূর্ণভাবে বাজেয়াপ্ত করতে পারবে না। এসব ঘটনার অভিযোগ পেলে নিয়ন্ত্রক সংস্থা মামলা করতে পারবে এবং মামলার রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা যাবে না। এ অভিযোগে দোষী ব্যক্তি বা ব্যক্তিদের কমপক্ষে দুই বছর থেকে সর্বোচ্চ তিন বছরের কারাদণ্ড ও কমপক্ষে ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড করা হবে।
খসড়ার ৩১ ধারায় বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তির ইচ্ছার বিরুদ্ধে কোনো এমএলএম কম্পানির সদস্য ওই ব্যক্তির নিয়ন্ত্রণাধীন বা মালিকানাধীন স্থানে যাওয়া ও অবস্থান করতে পারবে না। কম্পানির বিক্রেতাকে নির্দেশ দেওয়া সত্ত্বেও ওই স্থান ত্যাগ না করলে তিনি অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে দোষী সাব্যস্ত হবেন। এ অপরাধে তাঁকে কমপক্ষে ছয় মাস থেকে সর্বোচ্চ এক বছরের জেল ভোগ করতে হবে।
এ ছাড়া এমএলএম ব্যবসায় নিয়োজিত কম্পানি বা প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাদের বার্ষিক লেনদেন ও অডিট প্রতিবেদনের পূর্ণাঙ্গ বিবরণী অর্থবছর শেষ হওয়ার তিন মাসের মধ্যে নিয়ন্ত্রক সংস্থায় দাখিল করতে হবে। নিয়ন্ত্রক সংস্থা এসব কম্পানি বা প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য প্রয়োজনে যেকোনো প্রজ্ঞাপন, নীতিমালা ও আদেশ জারি করতে পারবে। এসব প্রজ্ঞাপন, নীতিমালা ও আদেশের সম্পূর্ণ বা আংশিক ভঙ্গকারীকে কমপক্ষে ছয় মাস ও সর্বোচ্চ দুই বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হবে। এ ছাড়া ক্রেতাকে প্রলুব্ধ করতে কোনো কম্পানি অসত্য বিজ্ঞাপন প্রচার করলে দুই বছর থেকে সর্বোচ্চ তিন বছরের কারাদণ্ড ও ১০ হাজার টাকা জরিমানার কথা বলা হয়েছে।
কোনো কম্পানি তার কোনো সদস্য, পণ্যের ক্রেতা বা পরিবেশককে এমন কোনো চুক্তিতে আবদ্ধ করতে পারবে না যাতে তিনি ওই পণ্য না কিনলে তাঁকে আর্থিক দণ্ড দেওয়া যাবে। এ ধরনের চুক্তি করলে সংশ্লিষ্ট এমএলএম কম্পানিকে দোষী সাব্যস্ত করা হবে। এ অপরাধে জড়িতদের কমপক্ষে দুই বছর থেকে সর্বোচ্চ তিন বছরের কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হবে। এ ছাড়া পণ্য বা সেবার বাস্তব উপস্থিতি না থাকা সত্ত্বেও কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ওই ধরনের পণ্য ও সেবা পরিবেশনের নামে অর্থ আদায় করার দায়ে দোষীদের কমপক্ষে দুই বছর থেকে সর্বোচ্চ তিন বছরের জেল ও ১০ হাজার টাকা জরিমানার কথা খসড়ায় বলা হয়েছে।
খসড়ায় আরো বলা হয়েছে, লাইসেন্স বাজেয়াপ্ত করা কোনো কম্পানি কার্যক্রম পরিচালনা করলে ওই কম্পানির সব সম্পদ সরকারের মালিকানায় নেওয়া হবে। এ বিষয়ে কোনো মামলা হলে আদালতের অনুমতি সাপেক্ষে কম্পানিটি অবরুদ্ধ ও ক্রোক করা হবে। এ ছাড়া আইন অমান্যকারীদের কমপক্ষে দুই বছর থেকে সর্বোচ্চ তিন বছরের কারাদণ্ডের প্রস্তাব করা হয়েছে।
খসড়ার তথ্য অনুযায়ী, আইনটি কার্যকর করাসহ এমএলএম ব্যবসাকে কাঠামোর মধ্যে রাখতে ডাইরেক্ট সেল পরিদপ্তর নামে একটি নিয়ন্ত্রক সংস্থা থাকবে। পরিদপ্তর এই ব্যবসা পরিচালনাকারীদের লাইসেন্স প্রদান, লাইসেন্সের কার্যকারিতা স্থগিত, বাতিল ও পুনর্বহাল করবে।
দেশের এমএলএম কম্পানিগুলো পরিচালনার জন্য কোনো আইন বা নীতিমালা নেই। অভিযোগ রয়েছে, এই সুযোগে কম্পানিগুলো অদৃশ্য বিভিন্ন পণ্য ও সেবা বিক্রির নামে গ্রাহকদের কাছ থেকে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নিয়ে প্রায়ই আত্মসাৎ করছে। কোনো কোনো এমএলএম কম্পানির বিরুদ্ধে বিদেশে অর্থ পাচার করার অভিযোগও রয়েছে। এ অবস্থায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এ ব্যবসাকে শৃঙ্খলার মধ্যে আনতে প্রথমে নীতিমালা ও পরে আইন করার সিদ্ধান্ত নেয়। এরই ধারাবাহিকতায় এর খসড়া চূড়ান্ত করতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এম মর্তুজা রেজার সভাপতিত্বে ১৫ সদস্যবিশিষ্ট উচ্চপর্যায়ের একটি কমিটি ছাড়াও খসড়া প্রণয়ন কমিটি নামে আরেকটি কমিটি কাজ করেছে। অতিরিক্ত সচিব এম মর্তুজা রেজার সভাপতিত্বে গতকাল সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত উচ্চপর্যায়ের কমিটির বৈঠকে খসড়াটি চূড়ান্ত করা হয়েছে।
কমিটির অন্যতম এক সদস্য কালের কণ্ঠকে বলেন, কমিটির বিবেচনায় খসড়াটি চূড়ান্ত। তবে এ নিয়ে শেষ মুহূর্তে এমএলএম কম্পানির প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকের সুযোগ রাখা হয়েছে।
বাণিজ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ ফারুক খান এ ব্যাপারে বলেন, এর সংশোধনী চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। আশা করা হচ্ছে, চলতি মাসেই তা মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে। এরপর তা সংসদে উত্থাপন করা হবে। একই সঙ্গে আইন বাস্তবায়ন ও তদারকির জন্য একটি পরিদপ্তর গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। শাস্তি হিসেবে আইন লঙ্ঘনকারীর ৫০ লাখ টাকা জরিমানা ও পাঁচ বছর কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।
খসড়ার ষষ্ঠ অধ্যায়ে 'অপরাধ দণ্ড'তে বলা হয়েছে, কতগুলো ক্ষেত্রে এমএলএম ব্যবসা পরিচালনা করা নিষিদ্ধ। এর মধ্যে রয়েছে অবস্তুগত বা অলীক পণ্য, স্থাবর সম্পত্তি ও বৃক্ষ। কমিশন বা বোনাস হিসেবে কোনোরূপ শেয়ার বা ঋণপত্র ক্রয়-বিক্রয়, সঞ্চয়পত্র, বোনাস স্কিম, কিস্তির মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ বা সঞ্চয় বা বিলিবণ্টন এমনকি লটারির টিকিটও বিক্রি করা যাবে না। এ ছাড়া প্লাটিনাম, স্বর্ণ, ব্রোঞ্জ, পারদ, হাইড্রো কার্বন, তেজস্ক্রিয় পদার্থ, স্পর্শকাতর রাসায়নিক পদার্থ, অস্ত্র ও বিস্ফোরক, ধাতব মুদ্রা, অশ্লীল ছবির ফিল্ম, সিডি, ভিসিডি; উগ্র মৌলবাদী বই, ফিল্ম, সিডি, ভিসিডি এবং রাষ্ট্র ও ধর্মবিরোধী বা ধর্ম বিকৃতকারী বই, প্রচারপত্র, ফিল্ম, সিডি ও ভিসিডি বিপণন নিষিদ্ধ। এসব পণ্য ও সেবা বিপণন করলে সংশ্লিষ্ট কম্পানির দায়ী ব্যক্তি বা ব্যক্তিদের তিন থেকে পাঁচ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হবে।
খসড়া অনুযায়ী, এমএলএম কম্পানিগুলোর বিপণনের পণ্য মোড়কজাত করা বাধ্যতামূলক। কোনো কম্পানি পণ্যে মোড়ক ব্যবহার না করলে দুই বছর থেকে তিন বছরের কারাদণ্ডসহ ২০ হাজার টাকা জরিমানা হবে। মোড়কের গায়ে পণ্যের ওজন, উপাদান, ব্যবহারবিধি, সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য, উৎপাদনের তারিখ, প্যাকেটজাতকরণের তারিখ ও মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ উল্লেখ থাকা বাধ্যতামূলক। কোনো পণ্যের মোড়কে এসব তথ্যের একটি বা তার বেশি তথ্য না থাকলে ওই পণ্য বিক্রয়কারী ব্যক্তিকে কমপক্ষে দুই থেকে সর্বোচ্চ তিন বছরের জেলসহ ১০ হাজার টাকা জরিমানা গুনতে হবে। প্রতিশ্রুত পণ্য বা সেবা যথাযথভাবে বিক্রয় বা সরবরাহ না করলে দুই বছর থেকে সর্বোচ্চ তিন বছরের কারাদণ্ডসহ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা দিতে হবে।
খসড়ায় আরো বলা হয়েছে, 'কোনো পণ্য বা সেবা বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে এই আইনের কোনো বিধান ভঙ্গ হইতে পারে, এরূপ জালিয়াতি ডাইরেক্ট সেল কম্পানির বহু স্তর বিপণন কার্যক্রমের কোনো স্তরের কোনো কর্মী বা সদস্য যদি ঐ পণ্য বা সেবা বিক্রয়ের লক্ষ্যে ইলেকট্রনিক, মুদ্রণ বা অন্য কোনো প্রচারমাধ্যমে দ্বারে দ্বারে বিক্রয়, মেইল অর্ডারে বিক্রয় বা অনুরূপ অন্য কোনোভাবে ঐ পণ্য বা সেবা বিক্রয়ের প্রচারণা চালায় তাহা হইলে ঐ বিক্রেতা এবং সংশ্লিষ্ট কম্পানির চেয়ারম্যান ও পরিচালকসহ শীর্ষ ব্যক্তিগণ যাহারা কম্পানির স্বার্থে এইরূপ প্রচারণার মাধ্যমে পণ্য বা সেবা বিক্রয়ের পৃষ্ঠপোষকতাকারী ব্যক্তিসহ যে স্তরে অবস্থানকারী সদস্য এইরূপ প্রচারণা চালাইবে তাহার সহিত যোগসূত্র আছে এইরূপ ঊর্ধ্বতন স্তরের সকল সদস্য এই আইন ভঙ্গ করিবার অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হইবেন।'
কোনো এমএলএম কম্পানি বা তার সদস্য মিথ্যা বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রতারণা করলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে ছয় মাস থেকে সর্বোচ্চ এক বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হবে। এ ছাড়া কোনো এমএলএম কম্পানি ধার্য করা দামের চেয়ে বেশি দামে পণ্য বিক্রি করলে দায়ী ব্যক্তি বা ব্যক্তিদের কমপক্ষে ছয় মাস থেকে সর্বোচ্চ এক বছরের কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে। আর কোনো পণ্যের মূল্য অযৌক্তিকভাবে বাড়ানোর দায়ে দায়ী ব্যক্তিদের কমপক্ষে দুই বছর থেকে সর্বোচ্চ তিন বছরের জেল ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করার কথা খসড়ায় বলা আছে। এ ছাড়া নির্ধারিত মানের চেয়ে নিম্নমানের পণ্য ও সেবা বিক্রির অভিযোগ প্রমাণিত হলে অপরাধের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তি বা ব্যক্তিরা কমপক্ষে দুই বছর থেকে সর্বোচ্চ তিন বছরের কারাদণ্ড ও ২০ হাজার টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
বলা হয়েছে, নির্দিষ্ট পরিমাণ পণ্য বা নির্দিষ্ট পরিমাণ ক্রেতা সরবরাহ না করার কারণে কোনো স্তরের সদস্য বা ক্রেতা-পরিবেশককে তার ওপরের স্তরের কোনো সদস্য বা ক্রেতা-পরিবেশক বা কম্পানি আর্থিক জরিমানা বা জামানত হিসেবে দেওয়া অর্থ আংশিক বা সম্পূর্ণভাবে বাজেয়াপ্ত করতে পারবে না। এসব ঘটনার অভিযোগ পেলে নিয়ন্ত্রক সংস্থা মামলা করতে পারবে এবং মামলার রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা যাবে না। এ অভিযোগে দোষী ব্যক্তি বা ব্যক্তিদের কমপক্ষে দুই বছর থেকে সর্বোচ্চ তিন বছরের কারাদণ্ড ও কমপক্ষে ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড করা হবে।
খসড়ার ৩১ ধারায় বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তির ইচ্ছার বিরুদ্ধে কোনো এমএলএম কম্পানির সদস্য ওই ব্যক্তির নিয়ন্ত্রণাধীন বা মালিকানাধীন স্থানে যাওয়া ও অবস্থান করতে পারবে না। কম্পানির বিক্রেতাকে নির্দেশ দেওয়া সত্ত্বেও ওই স্থান ত্যাগ না করলে তিনি অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে দোষী সাব্যস্ত হবেন। এ অপরাধে তাঁকে কমপক্ষে ছয় মাস থেকে সর্বোচ্চ এক বছরের জেল ভোগ করতে হবে।
এ ছাড়া এমএলএম ব্যবসায় নিয়োজিত কম্পানি বা প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাদের বার্ষিক লেনদেন ও অডিট প্রতিবেদনের পূর্ণাঙ্গ বিবরণী অর্থবছর শেষ হওয়ার তিন মাসের মধ্যে নিয়ন্ত্রক সংস্থায় দাখিল করতে হবে। নিয়ন্ত্রক সংস্থা এসব কম্পানি বা প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য প্রয়োজনে যেকোনো প্রজ্ঞাপন, নীতিমালা ও আদেশ জারি করতে পারবে। এসব প্রজ্ঞাপন, নীতিমালা ও আদেশের সম্পূর্ণ বা আংশিক ভঙ্গকারীকে কমপক্ষে ছয় মাস ও সর্বোচ্চ দুই বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হবে। এ ছাড়া ক্রেতাকে প্রলুব্ধ করতে কোনো কম্পানি অসত্য বিজ্ঞাপন প্রচার করলে দুই বছর থেকে সর্বোচ্চ তিন বছরের কারাদণ্ড ও ১০ হাজার টাকা জরিমানার কথা বলা হয়েছে।
কোনো কম্পানি তার কোনো সদস্য, পণ্যের ক্রেতা বা পরিবেশককে এমন কোনো চুক্তিতে আবদ্ধ করতে পারবে না যাতে তিনি ওই পণ্য না কিনলে তাঁকে আর্থিক দণ্ড দেওয়া যাবে। এ ধরনের চুক্তি করলে সংশ্লিষ্ট এমএলএম কম্পানিকে দোষী সাব্যস্ত করা হবে। এ অপরাধে জড়িতদের কমপক্ষে দুই বছর থেকে সর্বোচ্চ তিন বছরের কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হবে। এ ছাড়া পণ্য বা সেবার বাস্তব উপস্থিতি না থাকা সত্ত্বেও কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ওই ধরনের পণ্য ও সেবা পরিবেশনের নামে অর্থ আদায় করার দায়ে দোষীদের কমপক্ষে দুই বছর থেকে সর্বোচ্চ তিন বছরের জেল ও ১০ হাজার টাকা জরিমানার কথা খসড়ায় বলা হয়েছে।
খসড়ায় আরো বলা হয়েছে, লাইসেন্স বাজেয়াপ্ত করা কোনো কম্পানি কার্যক্রম পরিচালনা করলে ওই কম্পানির সব সম্পদ সরকারের মালিকানায় নেওয়া হবে। এ বিষয়ে কোনো মামলা হলে আদালতের অনুমতি সাপেক্ষে কম্পানিটি অবরুদ্ধ ও ক্রোক করা হবে। এ ছাড়া আইন অমান্যকারীদের কমপক্ষে দুই বছর থেকে সর্বোচ্চ তিন বছরের কারাদণ্ডের প্রস্তাব করা হয়েছে।
খসড়ার তথ্য অনুযায়ী, আইনটি কার্যকর করাসহ এমএলএম ব্যবসাকে কাঠামোর মধ্যে রাখতে ডাইরেক্ট সেল পরিদপ্তর নামে একটি নিয়ন্ত্রক সংস্থা থাকবে। পরিদপ্তর এই ব্যবসা পরিচালনাকারীদের লাইসেন্স প্রদান, লাইসেন্সের কার্যকারিতা স্থগিত, বাতিল ও পুনর্বহাল করবে।
No comments