সাক্ষাৎকার- রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকলে চট্টগ্রামকে বিশ্বমানের নগর করা সম্ভবঃ আদনান মোর্শেদ
আধুনিক নগর বিনির্মাণের স্থাপত্যশৈলী আর পরিকল্পনা নিয়ে ১৫ বছর ধরে গবেষণা করছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দ্য ক্যাথলিক ইউনিভার্সিটি অব আমেরিকার সহযোগী অধ্যাপক আদনান মোর্শেদ। বিশ্বমানের নগর হিসেবে চট্টগ্রামের প্রতীক কী হতে পারে, তা নিয়ে একটি গবেষণাকর্মে নেতৃত্ব দেন চট্টগ্রামের এই স্থপতি। তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন ওমর কায়সার।
প্রথম আলো: মার্কিন মুলুকে বসে আপনি চট্টগ্রামের উন্নয়ন নিয়ে ভাবছেন। চট্টগ্রামকে নিয়ে আপনি যে স্বপ্ন দেখছেন, তা আপনার মাথায় এল কী করে?
আদনান মোর্শেদ: চট্টগ্রামে আমার শৈশব কেটেছে। প্রকৃতির প্রাচুর্যে আর ঐতিহ্যের অহংকারে পূর্ণ এই শহরে এমন কতগুলো বৈশিষ্ট্য আছে, যা তাকে পৃথিবীর মধ্যে বিশিষ্ট করে তুলতে পারত। কিন্তু আমরা সেই সব সম্ভাবনা কাজে লাগাতে পারিনি। আমি যতবার এই শহরে আসি, ততবারই দেখি কিছু না কিছু হারিয়ে ফেলেছি। দেখছি এই শহরের পরিবেশ দিন দিন বিপন্ন হচ্ছে। প্রতিবার এসে দেখি, বিমানবন্দর থেকে আমার বাসায় আসার সময়টা ক্রমশ বাড়ছে। এগুলো সব হচ্ছে অপরিকল্পিতভাবে বেড়ে ওঠার ফল। একজন নগর পরিকল্পনাবিদ হিসেবে তাই এ শহর নিয়ে কিছু পরিকল্পনা আমার মাথায় এসেছে।
প্রথম আলো: আপনার পরিকল্পনার মধ্যে একটি জনচত্বর গড়ার পরিকল্পনা রয়েছে। জনচত্বর গড়ার পরিকল্পনা কেন করলেন?
আদনান মোর্শেদ: পৃথিবীর দ্রুত বর্ধমান শহরগুলোর মধ্যে চট্টগ্রাম দশম স্থানে। দিন দিন অপরিকল্পিতভাবে বেড়ে উঠছে এই শহরটি। এ কারণে দিন দিন এর ঐতিহ্য হারিয়ে যাচ্ছে, পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে এবং ক্রমশ মানুষের জীবনযাপন কঠিন হয়ে উঠছে। অথচ একটু পরিকল্পনা করে এই শহরটাকে পৃথিবীর উন্নতমানের শহরগুলোর মতো তৈরি করা যায়। এই বোধ থেকে প্রথমেই আমাদের মাথায় এসেছে একটি নগরচত্বর করার, যেটি নগরের প্রাণকেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠবে। পৃথিবীর যেকোনো বিশ্বমানের নগরে তার প্রাণকেন্দ্র হচ্ছে জনচত্বর। এই জনচত্বরে থাকবে কিছু প্রতীকী স্থাপনা। যেসব প্রতীকী স্থাপনা জনজীবনকে দানা বেঁধে উঠতে ভূমিকা পালন করে। পৃথিবীর বড় নগরগুলোতে এ রকম কিছু স্থাপনাকে কেন্দ্র করে জনচত্বর গড়ে উঠেছে। যেমন প্যারিসের আইফেল টাওয়ার, রোমের কলোসিয়াম, দিল্লির ইন্ডিয়া গেট, মেক্সিকো সিটির সোকালো, কলকাতার ভিক্টোরিয়া পার্ক। কিন্তু আমাদের চট্টগ্রামে এ রকম কোনো স্থাপনা নেই, যা এখানকার আপামর জনসাধারণের একটি মিলনকেন্দ্র হিসেবে থাকবে।
প্রথম আলো: হাজার বছরের এই চট্টগ্রামে ইতিহাসের সাক্ষী হিসেবে অনেক পুরোনো স্থাপনা রয়েছে। সেগুলো আমরা সংরক্ষণ করতে পারছি না। যেমন জেএম সেন হল, আন্দরকিল্লাহ জামে মসজিদ, চন্দনপুরা, চেরাগী পাহাড়, পিকে সেন ভবন, কদম মোবারক মসজিদ—এ রকম আরও অনেক স্থাপনা। এগুলোকে ফোকাস করেই তো গড়ে উঠতে পারে এ রকম স্থাপনা। এগুলোই তো হতে পারে চট্টগ্রামের আইকন।
আদনান মোর্শেদ: আপনি ঠিক বলেছেন। এগুলো এক একটা চট্টগ্রামের গৌরবের প্রতীক।
কিন্তু প্রতীকের প্রতীকায়নে যে বিনিয়োগের প্রয়োজন, তা আমরা করতে পারিনি। বরং আমরা দিন দিন এসব প্রতীক ধ্বংস করেছি। চেরাগী পাহাড়ের পুরোনো কাঠামো ভেঙে ফেলা হয়েছে। শাহী জামে মসজিদ রূপান্তর করা হয়েছে। মুসলিম ইনস্টিটিউট হলের পেছনে বর্তমানে যেখান পুলিশ প্লাজা হচ্ছে, সেখানে ব্রিটিশ আমলের স্থাপনা ছিল একটি। সবার অগোচরে সেটি ভেঙে ফেলা হয়েছে। ঐতিহ্যকে এভাবে ধ্বংস করা গুরুতর অপরাধ। এভাবে পুরোনো নিদর্শন ধ্বংস করা মানে একটি শহরকে নির্যাতন করা। এটি ঠিক হচ্ছে না। এ ব্যাপারে সুশীল সমাজ ভূমিকা রাখতে পারে।
প্রথম আলো: এই যে ঐতিহ্য ধ্বংস হচ্ছে, পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে, দিন দিন মানুষ বাড়ছে—এর মধ্যে চট্টগ্রামকে একটি বৈশ্বিক শহরে পরিণত করার জন্য কী কী উদ্যোগ নেওয়া যায় বলে আপনার ধারণা।
আদনান মোর্শেদ: নগর পরিকল্পনা শুধু কোনো কারিগরি বিষয় নয়। নগর পরিকল্পনাকে রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত করলে টেকসই উন্নয়ন সম্ভব। সুষ্ঠু নগর পরিকল্পনা গণতন্ত্র বিকাশে সহায়ক। সমগ্র দেশের প্রশাসনিক এবং অর্থনৈতিক বিকেন্দ্রীকরণ নীতির অংশ হিসেবে চট্টগ্রামকে গুরুত্বপূর্ণ করে তুলতে হবে। এটাকে ভেবেই এর অবকাঠামোগত উন্নয়ন করা দরকার। পাশাপাশি পরিবেশের কথাও ভাবতে হবে। সবচেয়ে বড় কথা, এর জন্য প্রয়োজন রাজনৈতিক সদিচ্ছা।
প্রথম আলো : চট্টগ্রামের পুরোনো ঐতিহ্যকে সংরক্ষণ করতে কী কী উদ্যোগ নেওয়া দরকার?
আদনান মোর্শেদ: আমি প্রথমেই বলেছি, যেকোনো উন্নয়নের জন্য রাজনৈতিক সিদ্ধান্তটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। রাজনীতিকে বাদ দিয়ে নগর পরিকল্পনা করা যাবে না। কিন্তু রাজনীতিবিদেরা যদি এ ব্যাপারে সচেতন না হন, তাহলে সুশীল সমাজকে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে হবে। তা ছাড়া প্রত্যেক মানুষের মধ্যে সাংস্কৃতিক চেতনা থাকাটাও জরুরি। প্রশাসনিকভাবে নগর নীতিমালা তৈরি করে পুরোনো স্থাপনাগুলো রক্ষায় অগ্রাধিকার দিতে হবে। ঐতিহাসিক স্থাপনাগুলোকে রক্ষার জন্য এগুলোকে অর্থনৈতিক পরিকল্পনার কাঠামোর মধ্যে নিয়ে আসতে হবে। যেমন ধরেন, বহু স্মৃতিবিজড়িত জেএম সেন হল। এটির পুরোনো কাঠামো ঠিক রেখে পরিকল্পনা করে দর্শনীয় স্থান হিসেবে বিনির্মাণের দায়িত্ব দেওয়া যায় কোনো বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে।
প্রথম আলো: চট্টগ্রামকে বিশ্বমানের নগর হিসেবে তৈরি করতে আর কী কী উদ্যোগ নেওয়া দরকার?
আদনান মোর্শেদ: চট্টগ্রামকে বিশ্বমানের নগরে পরিণত করতে প্রথমেই দরকার আমাদের স্বপ্নের মান পরিবর্তন করা। আমাদের উঁচু মানের স্বপ্ন দেখতে হবে এই নগরকে নিয়ে। সমস্যার ভারে জর্জরিত হয়ে আমরা স্বপ্ন দেখতে ভুলে গেছি। তার পরই তা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিতে হবে। এই স্বপ্ন দেখার পাশাপাশি বর্তমান বাস্তবতার খুঁটিনাটি বাধাগুলো দূর করতে হবে। আজকালকার যেকোনো বিশ্বমানের নগরে আমরা দেখতে পাই সবুজ নগরায়ণ নীতিমালা তৈরি করা হচ্ছে। এই নীতিমালাগুলোর মূল ভিত্তি হচ্ছে গণপরিবহন-নির্ভরতা, প্রাকৃতিক সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা, জ্বালানি সাশ্রয়ী দালান এবং সবুজ বেষ্টনী দিয়ে শহরের সীমারেখা নির্ধারণ এবং এর সঙ্গে উপযুক্ত ভূমি ব্যবহার। এর পাশাপাশি বিকেন্দ্রীকরণের মাধ্যমে ছোট ও মাঝারি শহরগুলোতে মানুষের কর্মসংস্থান করে তাদের সেখানেই ধরে রাখার ব্যবস্থা করতে হবে।
পৃথিবীর অনেক বড় শহরে পরিবেশবান্ধব যানবাহন হিসেবে রিকশা আবার ফিরে আসছে। অথচ আমরা রিকশাকে নিরুৎসাহিত করছি। এই অযান্ত্রিক পরিবেশবান্ধব যানটিকে আমরা যুগোপযোগী করে এটিকে একটি সুষ্ঠু নীতিমালার মধ্যে আনতে পারি।
তবে সব কথার শেষ কথা, জনসংখ্যার নিয়ন্ত্রণ ছাড়া কোনো সুষ্ঠু নগর নীতিমালা তৈরি করা সম্ভব নয়।
আদনান মোর্শেদ: চট্টগ্রামে আমার শৈশব কেটেছে। প্রকৃতির প্রাচুর্যে আর ঐতিহ্যের অহংকারে পূর্ণ এই শহরে এমন কতগুলো বৈশিষ্ট্য আছে, যা তাকে পৃথিবীর মধ্যে বিশিষ্ট করে তুলতে পারত। কিন্তু আমরা সেই সব সম্ভাবনা কাজে লাগাতে পারিনি। আমি যতবার এই শহরে আসি, ততবারই দেখি কিছু না কিছু হারিয়ে ফেলেছি। দেখছি এই শহরের পরিবেশ দিন দিন বিপন্ন হচ্ছে। প্রতিবার এসে দেখি, বিমানবন্দর থেকে আমার বাসায় আসার সময়টা ক্রমশ বাড়ছে। এগুলো সব হচ্ছে অপরিকল্পিতভাবে বেড়ে ওঠার ফল। একজন নগর পরিকল্পনাবিদ হিসেবে তাই এ শহর নিয়ে কিছু পরিকল্পনা আমার মাথায় এসেছে।
প্রথম আলো: আপনার পরিকল্পনার মধ্যে একটি জনচত্বর গড়ার পরিকল্পনা রয়েছে। জনচত্বর গড়ার পরিকল্পনা কেন করলেন?
আদনান মোর্শেদ: পৃথিবীর দ্রুত বর্ধমান শহরগুলোর মধ্যে চট্টগ্রাম দশম স্থানে। দিন দিন অপরিকল্পিতভাবে বেড়ে উঠছে এই শহরটি। এ কারণে দিন দিন এর ঐতিহ্য হারিয়ে যাচ্ছে, পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে এবং ক্রমশ মানুষের জীবনযাপন কঠিন হয়ে উঠছে। অথচ একটু পরিকল্পনা করে এই শহরটাকে পৃথিবীর উন্নতমানের শহরগুলোর মতো তৈরি করা যায়। এই বোধ থেকে প্রথমেই আমাদের মাথায় এসেছে একটি নগরচত্বর করার, যেটি নগরের প্রাণকেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠবে। পৃথিবীর যেকোনো বিশ্বমানের নগরে তার প্রাণকেন্দ্র হচ্ছে জনচত্বর। এই জনচত্বরে থাকবে কিছু প্রতীকী স্থাপনা। যেসব প্রতীকী স্থাপনা জনজীবনকে দানা বেঁধে উঠতে ভূমিকা পালন করে। পৃথিবীর বড় নগরগুলোতে এ রকম কিছু স্থাপনাকে কেন্দ্র করে জনচত্বর গড়ে উঠেছে। যেমন প্যারিসের আইফেল টাওয়ার, রোমের কলোসিয়াম, দিল্লির ইন্ডিয়া গেট, মেক্সিকো সিটির সোকালো, কলকাতার ভিক্টোরিয়া পার্ক। কিন্তু আমাদের চট্টগ্রামে এ রকম কোনো স্থাপনা নেই, যা এখানকার আপামর জনসাধারণের একটি মিলনকেন্দ্র হিসেবে থাকবে।
প্রথম আলো: হাজার বছরের এই চট্টগ্রামে ইতিহাসের সাক্ষী হিসেবে অনেক পুরোনো স্থাপনা রয়েছে। সেগুলো আমরা সংরক্ষণ করতে পারছি না। যেমন জেএম সেন হল, আন্দরকিল্লাহ জামে মসজিদ, চন্দনপুরা, চেরাগী পাহাড়, পিকে সেন ভবন, কদম মোবারক মসজিদ—এ রকম আরও অনেক স্থাপনা। এগুলোকে ফোকাস করেই তো গড়ে উঠতে পারে এ রকম স্থাপনা। এগুলোই তো হতে পারে চট্টগ্রামের আইকন।
আদনান মোর্শেদ: আপনি ঠিক বলেছেন। এগুলো এক একটা চট্টগ্রামের গৌরবের প্রতীক।
কিন্তু প্রতীকের প্রতীকায়নে যে বিনিয়োগের প্রয়োজন, তা আমরা করতে পারিনি। বরং আমরা দিন দিন এসব প্রতীক ধ্বংস করেছি। চেরাগী পাহাড়ের পুরোনো কাঠামো ভেঙে ফেলা হয়েছে। শাহী জামে মসজিদ রূপান্তর করা হয়েছে। মুসলিম ইনস্টিটিউট হলের পেছনে বর্তমানে যেখান পুলিশ প্লাজা হচ্ছে, সেখানে ব্রিটিশ আমলের স্থাপনা ছিল একটি। সবার অগোচরে সেটি ভেঙে ফেলা হয়েছে। ঐতিহ্যকে এভাবে ধ্বংস করা গুরুতর অপরাধ। এভাবে পুরোনো নিদর্শন ধ্বংস করা মানে একটি শহরকে নির্যাতন করা। এটি ঠিক হচ্ছে না। এ ব্যাপারে সুশীল সমাজ ভূমিকা রাখতে পারে।
প্রথম আলো: এই যে ঐতিহ্য ধ্বংস হচ্ছে, পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে, দিন দিন মানুষ বাড়ছে—এর মধ্যে চট্টগ্রামকে একটি বৈশ্বিক শহরে পরিণত করার জন্য কী কী উদ্যোগ নেওয়া যায় বলে আপনার ধারণা।
আদনান মোর্শেদ: নগর পরিকল্পনা শুধু কোনো কারিগরি বিষয় নয়। নগর পরিকল্পনাকে রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত করলে টেকসই উন্নয়ন সম্ভব। সুষ্ঠু নগর পরিকল্পনা গণতন্ত্র বিকাশে সহায়ক। সমগ্র দেশের প্রশাসনিক এবং অর্থনৈতিক বিকেন্দ্রীকরণ নীতির অংশ হিসেবে চট্টগ্রামকে গুরুত্বপূর্ণ করে তুলতে হবে। এটাকে ভেবেই এর অবকাঠামোগত উন্নয়ন করা দরকার। পাশাপাশি পরিবেশের কথাও ভাবতে হবে। সবচেয়ে বড় কথা, এর জন্য প্রয়োজন রাজনৈতিক সদিচ্ছা।
প্রথম আলো : চট্টগ্রামের পুরোনো ঐতিহ্যকে সংরক্ষণ করতে কী কী উদ্যোগ নেওয়া দরকার?
আদনান মোর্শেদ: আমি প্রথমেই বলেছি, যেকোনো উন্নয়নের জন্য রাজনৈতিক সিদ্ধান্তটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। রাজনীতিকে বাদ দিয়ে নগর পরিকল্পনা করা যাবে না। কিন্তু রাজনীতিবিদেরা যদি এ ব্যাপারে সচেতন না হন, তাহলে সুশীল সমাজকে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে হবে। তা ছাড়া প্রত্যেক মানুষের মধ্যে সাংস্কৃতিক চেতনা থাকাটাও জরুরি। প্রশাসনিকভাবে নগর নীতিমালা তৈরি করে পুরোনো স্থাপনাগুলো রক্ষায় অগ্রাধিকার দিতে হবে। ঐতিহাসিক স্থাপনাগুলোকে রক্ষার জন্য এগুলোকে অর্থনৈতিক পরিকল্পনার কাঠামোর মধ্যে নিয়ে আসতে হবে। যেমন ধরেন, বহু স্মৃতিবিজড়িত জেএম সেন হল। এটির পুরোনো কাঠামো ঠিক রেখে পরিকল্পনা করে দর্শনীয় স্থান হিসেবে বিনির্মাণের দায়িত্ব দেওয়া যায় কোনো বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে।
প্রথম আলো: চট্টগ্রামকে বিশ্বমানের নগর হিসেবে তৈরি করতে আর কী কী উদ্যোগ নেওয়া দরকার?
আদনান মোর্শেদ: চট্টগ্রামকে বিশ্বমানের নগরে পরিণত করতে প্রথমেই দরকার আমাদের স্বপ্নের মান পরিবর্তন করা। আমাদের উঁচু মানের স্বপ্ন দেখতে হবে এই নগরকে নিয়ে। সমস্যার ভারে জর্জরিত হয়ে আমরা স্বপ্ন দেখতে ভুলে গেছি। তার পরই তা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিতে হবে। এই স্বপ্ন দেখার পাশাপাশি বর্তমান বাস্তবতার খুঁটিনাটি বাধাগুলো দূর করতে হবে। আজকালকার যেকোনো বিশ্বমানের নগরে আমরা দেখতে পাই সবুজ নগরায়ণ নীতিমালা তৈরি করা হচ্ছে। এই নীতিমালাগুলোর মূল ভিত্তি হচ্ছে গণপরিবহন-নির্ভরতা, প্রাকৃতিক সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা, জ্বালানি সাশ্রয়ী দালান এবং সবুজ বেষ্টনী দিয়ে শহরের সীমারেখা নির্ধারণ এবং এর সঙ্গে উপযুক্ত ভূমি ব্যবহার। এর পাশাপাশি বিকেন্দ্রীকরণের মাধ্যমে ছোট ও মাঝারি শহরগুলোতে মানুষের কর্মসংস্থান করে তাদের সেখানেই ধরে রাখার ব্যবস্থা করতে হবে।
পৃথিবীর অনেক বড় শহরে পরিবেশবান্ধব যানবাহন হিসেবে রিকশা আবার ফিরে আসছে। অথচ আমরা রিকশাকে নিরুৎসাহিত করছি। এই অযান্ত্রিক পরিবেশবান্ধব যানটিকে আমরা যুগোপযোগী করে এটিকে একটি সুষ্ঠু নীতিমালার মধ্যে আনতে পারি।
তবে সব কথার শেষ কথা, জনসংখ্যার নিয়ন্ত্রণ ছাড়া কোনো সুষ্ঠু নগর নীতিমালা তৈরি করা সম্ভব নয়।
No comments