যুব উন্নয়ন অধিদফতরে দুর্নীতির চাষ by শরীফুল ইসলাম
দুর্নীতি গ্রাস করেছে যুব উন্নয়ন অধিদফতরকে। প্রকল্পের কাজ শুরু না করে টাকা আত্মসাৎ, কেনাকাটায় অনিয়ম, কর্মকর্তাদের অতিরিক্ত দায়িত্ব দিয়ে সুবিধা আদায়, বিভিন্ন কর্মসূচিতে লোক নিয়োগে আর্থিক লেনদেন যেন এ অধিদফতরের নিত্যদিনের ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর এসব কর্মকাণ্ডের সঙ্গে স্বয়ং অধিদফতরের ডিজির জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। ডিজি অধিদফতরের গুটিকয় কর্মকর্তার যোগসাজশে এসব কর্মকাণ্ড চালাচ্ছেন। তার এসব কর্মকাণ্ড নিয়ে নানা মহলে সমালোচনা চলছে।
সম্প্রতি যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে তার কর্মকাণ্ড নিয়ে আলোচনা হয়েছে। প্রশাসনিক মন্ত্রণালয়কে না জানিয়ে ডিজি এমন কিছু কাজ করেছেন যাতে স্থায়ী কমিটি অসন্তোষ প্রকাশ করেছে। তার কিছু কর্মকাণ্ডের নথিও তলব করেছে সংসদীয় কমিটি। সরকারি একটি সূত্রে এ তথ্য পাওয়া গেছে। সূত্র জানায়, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে নেত্রকোনার ডিসি ছিলেন ডিজি আজিজুর রহমান। ডিসি থাকাকালে এ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অতিউৎসাহী হয়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের একজনের
আশীর্বাদে তাকে যুব উন্নয়ন অধিদফতরের ডিজি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। নিয়োগ পাওয়ার পরই কয়েক কর্মকর্তার যোগসাজশে তিনি স্বেচ্ছাচারিতা, অনিয়ম ও দুর্নীতি শুরু করেন। সরকারের আস্থাভাজন কর্মকর্তাদের এ অধিদফতরে নিয়োগ দেওয়া হলেই তিনি বিরোধিতা করছেন। নিজেই ডিও দিয়ে এসব কর্মকর্তার নিয়োগ ঠেকাচ্ছেন। তার পছন্দের কর্মকর্তা অর্থাৎ বিএনপি-জামায়াতের আস্থাভাজন হিসেবে পরিচিত কর্মকর্তাদের পদায়ন করতে নিজেই জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে ডিও দিচ্ছেন। এ নিয়ে নানা বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। তিনি ডিজি হয়েও প্রকল্পের পরিচালক পদ আঁকড়ে আছেন। তার আস্থাভাজন কর্মকর্তাদের মূল দায়িত্বের পাশাপাশি অতিরিক্ত দায়িত্ব দিয়েছেন। আর এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে তিনি নিজের স্বার্থ হাসিল করছেন। এতে যুব উন্নয়ন অধিদফতরে একধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছে। কাজকর্ম ব্যাহত হচ্ছে।
অবৈধভাবে দায়িত্ব প্রদান করে অর্থ আত্মসাৎ : যে কোনো প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তার বদলি ও দায়িত্ব প্রদান করা প্রশাসনিক মন্ত্রণালয়ের এখতিয়ার। কিন্তু ডিজি মন্ত্রণালয়কে না জানিয়ে জোট সরকারের সময়ের বহুল আলোচিত কতিপয় কর্মকর্তাকে প্রধান কার্যালয়ে পদায়ন করেছেন। মন্ত্রণালয়কে না জানিয়ে তিনি অবৈধভাবে শামসুল আলম নামে একজন উপ-পরিচালককে ইমপ্যাক্ট প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালকের দায়িত্ব ও আয়ন-ব্যয়ন ক্ষমতা দিয়েছেন। একজন উপ-পরিচালককে পরিচালকের (বাস্তবায়ন) অতিরিক্ত দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে। তিনি সাভার যুব প্রশিক্ষণের কো-অর্ডিনেটরকে 'প্রশিক্ষিত যুবদের আত্মকর্মসংস্থানের জন্য উপকরণ সরবরাহ' শীর্ষক সমাপ্ত প্রকল্পের পোলট্রি হ্যাচারি ফার্মের 'ফার্ম পরিচালকের' দায়িত্ব দিয়েছেন। একজন উপ-পরিচালককে তিনটি প্রকল্পের আয়ন-ব্যয়নের ক্ষমতা দিয়ে অবৈধভাবে অর্থ আত্মসাৎ করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রত্যেক কর্মকর্তাকে অতিরিক্ত দায়িত্ব দিয়ে মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে যুব উন্নয়ন অধিদফতর সূত্র জানায়। এ নিয়োগে যুব উন্নয়ন অধিদফতরের চেইন অব কমান্ড ভেঙে পড়েছে। জুনিয়র কর্মকর্তাদের পরিচালক পদের দায়িত্ব দেওয়ায় সিনিয়র কর্মকর্তাদের কাজকর্মে অনীহা দেখা দিয়েছে। এতে মাঠপর্যায়ের কার্যক্রম ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ বিষয়ে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির ৩ আগস্টের বৈঠকে আলোচনা এবং দায়িত্ব প্রদান সংক্রান্ত নথি তলব করা হয়।
এ ব্যাপারে ডিজি আজিজুর রহমান সমকালকে বলেন, একজন পরিচালক ছুটিতে যাওয়ার কারণে আরেকজনকে অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আর যেসব প্রকল্পের পরিচালক নিয়োগে দেরি হচ্ছে সেগুলো আপাত পরিচালনায় কয়েকজন কর্মকর্তাকে পৃথক দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এ দায়িত্ব প্রদান যুব উন্নয়ন অধিদফতরের ডিজি হিসেবে তিনি করতে পারেন।
যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তাদের বদলি ও দায়িত্ব প্রদান করা শুধু প্রশাসনিক মন্ত্রণালয়ের এখতিয়ার। এক্ষেত্রে কাউকে অতিরিক্ত দায়িত্ব দিতে হলে ডিজিকে প্রশাসনিক মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিতে হবে; কিন্তু ডিজি কিছু কর্মকর্তাকে অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রশাসনিক মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নেননি। এটি সম্পূর্ণ নিয়ম বহির্ভূতভাবে করেছেন তিনি।
নেটওয়ার্কিং প্রকল্পের কোটি টাকা আত্মসাৎ, কার্যক্রম স্থবির : যুব উন্নয়ন অধিদফতরের 'যুব উন্নয়ন অধিদফতর ও যুব সংগঠনের মধ্যে কর্মসূচিভিত্তিক নেটওয়ার্কিং জোরদারকরণ' শীর্ষক প্রকল্পটির বিভিন্ন সরঞ্জাম কেনায় ৪০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ প্রকল্পটির মেয়াদ ছিল ১ জুলাই ২০০৮ পর্যন্ত। যুব সংগঠনের সঙ্গে যুব উন্নয়ন অধিদফতরের যোগাযোগ বাড়াতে এ প্রকল্পের মেয়াদ আরও চার বছর বাড়ানো হয়। আর এ জন্য কিছু সরঞ্জামও কেনা হয়। এগুলো ক্রয়ে দুর্নীতির আশ্রয় নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে অধিদফতরের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। কেনাকাটার সব কাজ দেওয়া হয় ডিজির নিজস্ব প্রতিষ্ঠানকে। কেনাকাটায় কমিটিও করা হয়েছিল ডিজির পছন্দের লোক দিয়ে। তারা নামমাত্র দরপত্র আহ্বান করে ডিজির নিজস্ব প্রতিষ্ঠান বেরাক নেটকে ৬ কোটি ৫০ লাখ টাকার কার্যাদেশ দিয়ে অত্যন্ত নিম্নমানের কম্পিউটার কেনেন। এসব কম্পিউটার কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে সব জেলা-উপজেলায় সরবরাহ করা হয়। বছরখানেক পরই কম্পিউটারগুলো প্রায় অচল হয়ে পড়ে। এছাড়া দুটি সফটওয়্যার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের পিডিএস হুবহু কপি করে তার এক আত্মীয়ের ফার্মের মাধ্যমে অবৈধভাবে ক্রয় দেখিয়ে তথাকথিত টেকনিক্যাল কমিটি বানিয়ে ৮৩ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেন। মন্ত্রণালয়কে না জানিয়ে ডিজি নিজেই অবৈধভাবে তার পছন্দের লোককে ওই প্রকল্পের পরিচালকের দায়িত্ব দেওয়ায় অর্থ আত্মসাৎ করা সহজ হচ্ছে। বিশাল অঙ্কের টাকায় এ ধরনের সফটওয়্যার নির্মাণ অর্থ আত্মসাতের নতুন কৌশল। এ অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে ডিজি বলেন, দরপত্রে যারা যোগ্য হিসেবে বিবেচিত হয়েছেন তাদের মাধ্যমেই কেনাকাটা করা হয়েছে। যেসব কোম্পানি কাজ পেয়েছে তাদের সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক নেই বলে তিনি দাবি করেন।
ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সেজে চাকরির মেয়াদ দু'বছর বৃদ্ধি : অধিদফতরের মহাপরিচালক বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট আমলে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সেজে সার্টিফিকেট নিয়েছেন। সে সময় নেত্রকোনার ডিসি থাকাকালে ক্ষমতার দাপটে মুক্তিযোদ্ধাদের গেজেটে তার নাম অন্তর্ভুক্ত করান; কিন্তু তার মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক ও সেক্টর কমান্ডার কর্তৃক প্রদত্ত সনদপত্র মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ে জমা দেননি। এমনকি মুক্তিবার্তায়ও তার নাম নেই। সম্পূর্ণ ক্ষমতার অপব্যবহার করে তিনি ওই সময় মুক্তিযোদ্ধার সার্টিফিকেট নেন। এখন এ সার্টিফিকেট দেখিয়ে চাকরির মেয়াদ দু'বছর বাড়িয়ে নিয়েছেন। মজার তথ্য হলো, বর্তমান সরকার কিছু মুক্তিযোদ্ধার সার্টিফিকেট যাচাই-বাছাইয়ের কাজ শুরু করেছে। এ জন্য একটি তালিকাও তৈরি করেছে। এ তালিকায় ডিজি আজিজুর রহমানের নাম রয়েছে বলে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ডিজি বলেন, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিয়েই তিনি মুক্তিযোদ্ধার সার্টিফিকেট নিয়েছেন।
গাড়ি ব্যবহারে অনিয়ম : আজিজুর রহমান যুব উন্নয়ন অধিদফতরে ডিজি হিসেবে যোগদান করার পর থেকেই পাঁচটি সরকারি গাড়ি ব্যবহার করছেন। এ গাড়িগুলো ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও তার হাউজিং কোম্পানির ব্যবসায়িক কাজে ব্যবহার করা হয়। গত বছর ইয়ুথ এমপাওয়ারমেন্ট প্রকল্পের কাজের জন্য একটি গাড়ি দেয় ইউএনডিপি। এ গাড়িটি ওই প্রকল্পের পরিচালককে প্রকল্প কাজের জন্য ব্যবহার করতে না দিয়ে ডিজি নিজেই ব্যবহার করছেন। এতে ইউএনডিপি একবার অসন্তোষ প্রকাশ করে চিঠিও দিয়েছে। ডিজির জন্য নির্ধারিত প্রাইভেট কার তিনি নিজে ব্যবহার করেন না। এটি ব্যবহার করছেন তার ছেলের স্ত্রী। এছাড়া ১১টি যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন প্রকল্পের জন্য প্রায় ৪০ লাখ টাকা দিয়ে একটি পাজেরো কেনা হয়েছে; কিন্তু এ গাড়িটির চেহারা পর্যন্ত অধিদফতরের কোনো কর্মকর্তা দেখেননি। গাড়িটি ব্যবহার হচ্ছে তার হাউজিং ব্যবসার কাজে। প্রশিক্ষিত যুবদের আত্মকর্মসংস্থানের জন্য উপকরণ সরবরাহ শীর্ষক প্রকল্পের পিকআপ ভ্যানটিও তার হাউজিং ব্যবসার কাজে ব্যবহার হচ্ছে। এছাড়া নেটওয়ার্কিং প্রকল্পের আরও একটি গাড়িও তার হাউজিং ব্যবসার কাজে ব্যবহার করছেন তিনি। অবৈধভাবে পাঁচটি গাড়ি ব্যবহারে তার পেছনে গাড়ি বাবদ সরকারের মাসে খরচ হচ্ছে প্রায় ১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ডিজি পাঁচটি গাড়ি ব্যবহারের কথা স্বীকার না করলেও তিনটি গাড়ি ব্যবহারের কথা স্বীকার করেন। তিনি বলেন, একটি গাড়ি তিনি নিজে ব্যবহার করেন। আরেকটি গাড়ি তার পরিবারের সদস্যরা ব্যবহার করেন। আরেকটি গাড়ি তিনি যখন রাজধানীর বাইরে যান তখন ব্যবহার করেন।
যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের নামে বিভিন্ন জেলায় জমি ক্রয়ে দুর্নীতি :'১১টি নতুন যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নির্মাণ' শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় নেত্রকোনায় একটি যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এটি নির্মাণে সেখানে জমিও কেনা হয়; কিন্তু জমি কিনতে গিয়ে ডিজির দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ডিজি নিজে কয়েকবার পরিদর্শন করে ৬০ শতাংশ জমি কেনেন ৯৮ লাখ টাকা দিয়ে। জমি বিক্রেতাদের সঙ্গে জমির মূল্য ৯৮ লাখ টাকা ঠিক করলেও দলিলে আড়াই কোটি টাকা দেখানো হবে বলে সমঝোতা করেন ডিজি। এ জন্য বিক্রেতাকে বাড়তি কমিশনেরও আশ্বাস দেওয়া হয়। প্রশাসনিক মন্ত্রণালয়কেও জমির মূল্য আড়াই কোটি টাকা জানানো হয়; কিন্তু সত্য ঘটনা ফাঁস করে দেন স্থানীয় এমপি আশরাফ আলী খান। তিনি জমির মূল্য বেশি দেখানো হচ্ছে বলে একটি ডিও দেন প্রশাসনিক মন্ত্রণালয়ে।
এ প্রসঙ্গে ডিজির কাছে জানতে চাইলে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।তিনি বলেন, নেত্রকোনায় যুব প্রশিক্ষণ ভবন নির্মাণে জমি কেনার দায়িত্ব ওই জেলা প্রশাসকের। তিনি এ ব্যাপারে ভালো বলতে পারবেন।
'প্রশিক্ষিত যুবদের আত্মকর্মসংস্থানের জন্য উপকরণ সরবরাহ' শীর্ষক সমাপ্ত প্রকল্পের দুর্নীতি : যুব উন্নয়ন অধিদফতর পরিচালিত এ প্রকল্পে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। আর এ দুর্নীতির সঙ্গে ডিজির সরাসরি জড়িত থাকারও প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। বিভিন্ন সময় বার্ড ফ্লুর অজুহাত দেখিয়ে এ প্রকল্পের হ্যাচারি ফার্মের মুরগি ও ডিম গোপনে বাজারে বিক্রি করা হচ্ছে। এখান থেকে হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে কোটি টাকা। চলতি বছরের প্রথম দিকে বার্ড ফ্লুর অজুহাত দিয়ে ডিজির নির্দেশে এ প্রকল্পের হ্যাচারি থেকে ৩০ হাজার মুরগি ও ১ লাখ ডিম গোপনে বাজারে বিক্রি করে দেওয়া হয়। পরে বিষয়টি জানাজানি হয়ে যায়। প্রশাসনিক মন্ত্রণালয় বিষয়টি জানার পর তাকে শোকজ করে; কিন্তু এর উত্তর না দিয়ে ডিজি গোপনে বিষয়টি নিষ্পত্তি করেন।
প্রকল্প শুরুর আগেই অর্ধেক টাকা উধাও : প্রকল্প শুরুর আগেই অর্ধেক টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে স্বয়ং ডিজির বিরুদ্ধে। ১১টি জেলায় নতুন যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পে এ ঘটনা ঘটান তিনি।
ডিজির হাউজিং ব্যবসা :সরকারি চাকরি করেও হাউজিং ব্যবসা পরিচালনা করছেন ডিজি। রাজধানীর ৭০/এ গ্রীন রোড, পশ্চিম পান্থপথে প্রান্তিক প্রপার্টিজ লিমিটেড নামে একটি ডেভেলপার কোম্পানি রয়েছে তার। এছাড়া সেখানেই তার রয়েছে বেরাক নেটওয়ার্কিং নামে একটি প্রতিষ্ঠান। এ প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তার ছেলে হলেও চেয়ারম্যান ডিজি। তার স্বাক্ষরে ব্যাংক হিসাব পরিচালনা ও মালপত্র কেনা হয়। যুব উন্নয়ন অধিদফতরের সব কেনাকাটা তার এ দুটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সম্পন্ন করা হয়। কখনও নামমাত্র টেন্ডারে, আবার কখনও টেন্ডার ছাড়াই কাজ দেওয়া হয় এসব প্রতিষ্ঠানকে। 'পুরাতন যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের অসমাপ্তকরণ কাজ' শীর্ষক প্রকল্পের যুব ভবনের লিফট কেনার কাজ দেওয়া হয়েছে তার হাউজিং প্রতিষ্ঠানকে। এছাড়া চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে যুব উন্নয়ন অধিদফতরে টাইলসের কাজ করানো হয় তার প্রতিষ্ঠান দিয়ে। কম্পিউটার কেনাসহ নানা সরঞ্জাম কেনার কাজ দেওয়া হয় ডিজির মালিকানাধীন বেরাক নেটওয়ার্ককে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ডিজি বলেন, তার ছেলে ইঞ্জিনিয়ার। তার হাউজিং ব্যবসা রয়েছে। এর সঙ্গে তার কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এ হাউজিং কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক তার ছেলে। আর এর চেয়ারম্যান ডিজি নিজেই। তার স্বাক্ষরেই এ কোম্পানির সকল কাজকর্ম সম্পন্ন হয়।
আশীর্বাদে তাকে যুব উন্নয়ন অধিদফতরের ডিজি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। নিয়োগ পাওয়ার পরই কয়েক কর্মকর্তার যোগসাজশে তিনি স্বেচ্ছাচারিতা, অনিয়ম ও দুর্নীতি শুরু করেন। সরকারের আস্থাভাজন কর্মকর্তাদের এ অধিদফতরে নিয়োগ দেওয়া হলেই তিনি বিরোধিতা করছেন। নিজেই ডিও দিয়ে এসব কর্মকর্তার নিয়োগ ঠেকাচ্ছেন। তার পছন্দের কর্মকর্তা অর্থাৎ বিএনপি-জামায়াতের আস্থাভাজন হিসেবে পরিচিত কর্মকর্তাদের পদায়ন করতে নিজেই জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে ডিও দিচ্ছেন। এ নিয়ে নানা বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। তিনি ডিজি হয়েও প্রকল্পের পরিচালক পদ আঁকড়ে আছেন। তার আস্থাভাজন কর্মকর্তাদের মূল দায়িত্বের পাশাপাশি অতিরিক্ত দায়িত্ব দিয়েছেন। আর এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে তিনি নিজের স্বার্থ হাসিল করছেন। এতে যুব উন্নয়ন অধিদফতরে একধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছে। কাজকর্ম ব্যাহত হচ্ছে।
অবৈধভাবে দায়িত্ব প্রদান করে অর্থ আত্মসাৎ : যে কোনো প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তার বদলি ও দায়িত্ব প্রদান করা প্রশাসনিক মন্ত্রণালয়ের এখতিয়ার। কিন্তু ডিজি মন্ত্রণালয়কে না জানিয়ে জোট সরকারের সময়ের বহুল আলোচিত কতিপয় কর্মকর্তাকে প্রধান কার্যালয়ে পদায়ন করেছেন। মন্ত্রণালয়কে না জানিয়ে তিনি অবৈধভাবে শামসুল আলম নামে একজন উপ-পরিচালককে ইমপ্যাক্ট প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালকের দায়িত্ব ও আয়ন-ব্যয়ন ক্ষমতা দিয়েছেন। একজন উপ-পরিচালককে পরিচালকের (বাস্তবায়ন) অতিরিক্ত দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে। তিনি সাভার যুব প্রশিক্ষণের কো-অর্ডিনেটরকে 'প্রশিক্ষিত যুবদের আত্মকর্মসংস্থানের জন্য উপকরণ সরবরাহ' শীর্ষক সমাপ্ত প্রকল্পের পোলট্রি হ্যাচারি ফার্মের 'ফার্ম পরিচালকের' দায়িত্ব দিয়েছেন। একজন উপ-পরিচালককে তিনটি প্রকল্পের আয়ন-ব্যয়নের ক্ষমতা দিয়ে অবৈধভাবে অর্থ আত্মসাৎ করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রত্যেক কর্মকর্তাকে অতিরিক্ত দায়িত্ব দিয়ে মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে যুব উন্নয়ন অধিদফতর সূত্র জানায়। এ নিয়োগে যুব উন্নয়ন অধিদফতরের চেইন অব কমান্ড ভেঙে পড়েছে। জুনিয়র কর্মকর্তাদের পরিচালক পদের দায়িত্ব দেওয়ায় সিনিয়র কর্মকর্তাদের কাজকর্মে অনীহা দেখা দিয়েছে। এতে মাঠপর্যায়ের কার্যক্রম ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ বিষয়ে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির ৩ আগস্টের বৈঠকে আলোচনা এবং দায়িত্ব প্রদান সংক্রান্ত নথি তলব করা হয়।
এ ব্যাপারে ডিজি আজিজুর রহমান সমকালকে বলেন, একজন পরিচালক ছুটিতে যাওয়ার কারণে আরেকজনকে অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আর যেসব প্রকল্পের পরিচালক নিয়োগে দেরি হচ্ছে সেগুলো আপাত পরিচালনায় কয়েকজন কর্মকর্তাকে পৃথক দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এ দায়িত্ব প্রদান যুব উন্নয়ন অধিদফতরের ডিজি হিসেবে তিনি করতে পারেন।
যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তাদের বদলি ও দায়িত্ব প্রদান করা শুধু প্রশাসনিক মন্ত্রণালয়ের এখতিয়ার। এক্ষেত্রে কাউকে অতিরিক্ত দায়িত্ব দিতে হলে ডিজিকে প্রশাসনিক মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিতে হবে; কিন্তু ডিজি কিছু কর্মকর্তাকে অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রশাসনিক মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নেননি। এটি সম্পূর্ণ নিয়ম বহির্ভূতভাবে করেছেন তিনি।
নেটওয়ার্কিং প্রকল্পের কোটি টাকা আত্মসাৎ, কার্যক্রম স্থবির : যুব উন্নয়ন অধিদফতরের 'যুব উন্নয়ন অধিদফতর ও যুব সংগঠনের মধ্যে কর্মসূচিভিত্তিক নেটওয়ার্কিং জোরদারকরণ' শীর্ষক প্রকল্পটির বিভিন্ন সরঞ্জাম কেনায় ৪০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ প্রকল্পটির মেয়াদ ছিল ১ জুলাই ২০০৮ পর্যন্ত। যুব সংগঠনের সঙ্গে যুব উন্নয়ন অধিদফতরের যোগাযোগ বাড়াতে এ প্রকল্পের মেয়াদ আরও চার বছর বাড়ানো হয়। আর এ জন্য কিছু সরঞ্জামও কেনা হয়। এগুলো ক্রয়ে দুর্নীতির আশ্রয় নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে অধিদফতরের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। কেনাকাটার সব কাজ দেওয়া হয় ডিজির নিজস্ব প্রতিষ্ঠানকে। কেনাকাটায় কমিটিও করা হয়েছিল ডিজির পছন্দের লোক দিয়ে। তারা নামমাত্র দরপত্র আহ্বান করে ডিজির নিজস্ব প্রতিষ্ঠান বেরাক নেটকে ৬ কোটি ৫০ লাখ টাকার কার্যাদেশ দিয়ে অত্যন্ত নিম্নমানের কম্পিউটার কেনেন। এসব কম্পিউটার কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে সব জেলা-উপজেলায় সরবরাহ করা হয়। বছরখানেক পরই কম্পিউটারগুলো প্রায় অচল হয়ে পড়ে। এছাড়া দুটি সফটওয়্যার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের পিডিএস হুবহু কপি করে তার এক আত্মীয়ের ফার্মের মাধ্যমে অবৈধভাবে ক্রয় দেখিয়ে তথাকথিত টেকনিক্যাল কমিটি বানিয়ে ৮৩ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেন। মন্ত্রণালয়কে না জানিয়ে ডিজি নিজেই অবৈধভাবে তার পছন্দের লোককে ওই প্রকল্পের পরিচালকের দায়িত্ব দেওয়ায় অর্থ আত্মসাৎ করা সহজ হচ্ছে। বিশাল অঙ্কের টাকায় এ ধরনের সফটওয়্যার নির্মাণ অর্থ আত্মসাতের নতুন কৌশল। এ অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে ডিজি বলেন, দরপত্রে যারা যোগ্য হিসেবে বিবেচিত হয়েছেন তাদের মাধ্যমেই কেনাকাটা করা হয়েছে। যেসব কোম্পানি কাজ পেয়েছে তাদের সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক নেই বলে তিনি দাবি করেন।
ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সেজে চাকরির মেয়াদ দু'বছর বৃদ্ধি : অধিদফতরের মহাপরিচালক বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট আমলে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সেজে সার্টিফিকেট নিয়েছেন। সে সময় নেত্রকোনার ডিসি থাকাকালে ক্ষমতার দাপটে মুক্তিযোদ্ধাদের গেজেটে তার নাম অন্তর্ভুক্ত করান; কিন্তু তার মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক ও সেক্টর কমান্ডার কর্তৃক প্রদত্ত সনদপত্র মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ে জমা দেননি। এমনকি মুক্তিবার্তায়ও তার নাম নেই। সম্পূর্ণ ক্ষমতার অপব্যবহার করে তিনি ওই সময় মুক্তিযোদ্ধার সার্টিফিকেট নেন। এখন এ সার্টিফিকেট দেখিয়ে চাকরির মেয়াদ দু'বছর বাড়িয়ে নিয়েছেন। মজার তথ্য হলো, বর্তমান সরকার কিছু মুক্তিযোদ্ধার সার্টিফিকেট যাচাই-বাছাইয়ের কাজ শুরু করেছে। এ জন্য একটি তালিকাও তৈরি করেছে। এ তালিকায় ডিজি আজিজুর রহমানের নাম রয়েছে বলে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ডিজি বলেন, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিয়েই তিনি মুক্তিযোদ্ধার সার্টিফিকেট নিয়েছেন।
গাড়ি ব্যবহারে অনিয়ম : আজিজুর রহমান যুব উন্নয়ন অধিদফতরে ডিজি হিসেবে যোগদান করার পর থেকেই পাঁচটি সরকারি গাড়ি ব্যবহার করছেন। এ গাড়িগুলো ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও তার হাউজিং কোম্পানির ব্যবসায়িক কাজে ব্যবহার করা হয়। গত বছর ইয়ুথ এমপাওয়ারমেন্ট প্রকল্পের কাজের জন্য একটি গাড়ি দেয় ইউএনডিপি। এ গাড়িটি ওই প্রকল্পের পরিচালককে প্রকল্প কাজের জন্য ব্যবহার করতে না দিয়ে ডিজি নিজেই ব্যবহার করছেন। এতে ইউএনডিপি একবার অসন্তোষ প্রকাশ করে চিঠিও দিয়েছে। ডিজির জন্য নির্ধারিত প্রাইভেট কার তিনি নিজে ব্যবহার করেন না। এটি ব্যবহার করছেন তার ছেলের স্ত্রী। এছাড়া ১১টি যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন প্রকল্পের জন্য প্রায় ৪০ লাখ টাকা দিয়ে একটি পাজেরো কেনা হয়েছে; কিন্তু এ গাড়িটির চেহারা পর্যন্ত অধিদফতরের কোনো কর্মকর্তা দেখেননি। গাড়িটি ব্যবহার হচ্ছে তার হাউজিং ব্যবসার কাজে। প্রশিক্ষিত যুবদের আত্মকর্মসংস্থানের জন্য উপকরণ সরবরাহ শীর্ষক প্রকল্পের পিকআপ ভ্যানটিও তার হাউজিং ব্যবসার কাজে ব্যবহার হচ্ছে। এছাড়া নেটওয়ার্কিং প্রকল্পের আরও একটি গাড়িও তার হাউজিং ব্যবসার কাজে ব্যবহার করছেন তিনি। অবৈধভাবে পাঁচটি গাড়ি ব্যবহারে তার পেছনে গাড়ি বাবদ সরকারের মাসে খরচ হচ্ছে প্রায় ১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ডিজি পাঁচটি গাড়ি ব্যবহারের কথা স্বীকার না করলেও তিনটি গাড়ি ব্যবহারের কথা স্বীকার করেন। তিনি বলেন, একটি গাড়ি তিনি নিজে ব্যবহার করেন। আরেকটি গাড়ি তার পরিবারের সদস্যরা ব্যবহার করেন। আরেকটি গাড়ি তিনি যখন রাজধানীর বাইরে যান তখন ব্যবহার করেন।
যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের নামে বিভিন্ন জেলায় জমি ক্রয়ে দুর্নীতি :'১১টি নতুন যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নির্মাণ' শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় নেত্রকোনায় একটি যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এটি নির্মাণে সেখানে জমিও কেনা হয়; কিন্তু জমি কিনতে গিয়ে ডিজির দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ডিজি নিজে কয়েকবার পরিদর্শন করে ৬০ শতাংশ জমি কেনেন ৯৮ লাখ টাকা দিয়ে। জমি বিক্রেতাদের সঙ্গে জমির মূল্য ৯৮ লাখ টাকা ঠিক করলেও দলিলে আড়াই কোটি টাকা দেখানো হবে বলে সমঝোতা করেন ডিজি। এ জন্য বিক্রেতাকে বাড়তি কমিশনেরও আশ্বাস দেওয়া হয়। প্রশাসনিক মন্ত্রণালয়কেও জমির মূল্য আড়াই কোটি টাকা জানানো হয়; কিন্তু সত্য ঘটনা ফাঁস করে দেন স্থানীয় এমপি আশরাফ আলী খান। তিনি জমির মূল্য বেশি দেখানো হচ্ছে বলে একটি ডিও দেন প্রশাসনিক মন্ত্রণালয়ে।
এ প্রসঙ্গে ডিজির কাছে জানতে চাইলে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।তিনি বলেন, নেত্রকোনায় যুব প্রশিক্ষণ ভবন নির্মাণে জমি কেনার দায়িত্ব ওই জেলা প্রশাসকের। তিনি এ ব্যাপারে ভালো বলতে পারবেন।
'প্রশিক্ষিত যুবদের আত্মকর্মসংস্থানের জন্য উপকরণ সরবরাহ' শীর্ষক সমাপ্ত প্রকল্পের দুর্নীতি : যুব উন্নয়ন অধিদফতর পরিচালিত এ প্রকল্পে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। আর এ দুর্নীতির সঙ্গে ডিজির সরাসরি জড়িত থাকারও প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। বিভিন্ন সময় বার্ড ফ্লুর অজুহাত দেখিয়ে এ প্রকল্পের হ্যাচারি ফার্মের মুরগি ও ডিম গোপনে বাজারে বিক্রি করা হচ্ছে। এখান থেকে হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে কোটি টাকা। চলতি বছরের প্রথম দিকে বার্ড ফ্লুর অজুহাত দিয়ে ডিজির নির্দেশে এ প্রকল্পের হ্যাচারি থেকে ৩০ হাজার মুরগি ও ১ লাখ ডিম গোপনে বাজারে বিক্রি করে দেওয়া হয়। পরে বিষয়টি জানাজানি হয়ে যায়। প্রশাসনিক মন্ত্রণালয় বিষয়টি জানার পর তাকে শোকজ করে; কিন্তু এর উত্তর না দিয়ে ডিজি গোপনে বিষয়টি নিষ্পত্তি করেন।
প্রকল্প শুরুর আগেই অর্ধেক টাকা উধাও : প্রকল্প শুরুর আগেই অর্ধেক টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে স্বয়ং ডিজির বিরুদ্ধে। ১১টি জেলায় নতুন যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পে এ ঘটনা ঘটান তিনি।
ডিজির হাউজিং ব্যবসা :সরকারি চাকরি করেও হাউজিং ব্যবসা পরিচালনা করছেন ডিজি। রাজধানীর ৭০/এ গ্রীন রোড, পশ্চিম পান্থপথে প্রান্তিক প্রপার্টিজ লিমিটেড নামে একটি ডেভেলপার কোম্পানি রয়েছে তার। এছাড়া সেখানেই তার রয়েছে বেরাক নেটওয়ার্কিং নামে একটি প্রতিষ্ঠান। এ প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তার ছেলে হলেও চেয়ারম্যান ডিজি। তার স্বাক্ষরে ব্যাংক হিসাব পরিচালনা ও মালপত্র কেনা হয়। যুব উন্নয়ন অধিদফতরের সব কেনাকাটা তার এ দুটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সম্পন্ন করা হয়। কখনও নামমাত্র টেন্ডারে, আবার কখনও টেন্ডার ছাড়াই কাজ দেওয়া হয় এসব প্রতিষ্ঠানকে। 'পুরাতন যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের অসমাপ্তকরণ কাজ' শীর্ষক প্রকল্পের যুব ভবনের লিফট কেনার কাজ দেওয়া হয়েছে তার হাউজিং প্রতিষ্ঠানকে। এছাড়া চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে যুব উন্নয়ন অধিদফতরে টাইলসের কাজ করানো হয় তার প্রতিষ্ঠান দিয়ে। কম্পিউটার কেনাসহ নানা সরঞ্জাম কেনার কাজ দেওয়া হয় ডিজির মালিকানাধীন বেরাক নেটওয়ার্ককে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ডিজি বলেন, তার ছেলে ইঞ্জিনিয়ার। তার হাউজিং ব্যবসা রয়েছে। এর সঙ্গে তার কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এ হাউজিং কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক তার ছেলে। আর এর চেয়ারম্যান ডিজি নিজেই। তার স্বাক্ষরেই এ কোম্পানির সকল কাজকর্ম সম্পন্ন হয়।
No comments