সাধারণ মানুষ আমার পক্ষে
সোমবার রাত ১০টা। নারায়ণগঞ্জ শহরের পশ্চিম দেওভোগ এলাকার ১৭৯/২ নং বাড়িটি এত রাতেও নেতাকর্মীদের পদচারণায় মুখরিত। নারায়ণগঞ্জের প্রয়াত পৌর পিতা আলী আহাম্মদ চুনকার বাড়ি এটি। বাড়ির দক্ষিণ অংশে একটি টিনশেড একতলা
ভবন। বাকি অংশ খালি। খালি জায়গাজুড়ে এলোমেলোভাবে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে বেশ কিছু প্লাস্টিকের চেয়ার। তাতে অনেকেই বসে একে অপরের সঙ্গে আলাপে মত্ত।
ভবন। বাকি অংশ খালি। খালি জায়গাজুড়ে এলোমেলোভাবে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে বেশ কিছু প্লাস্টিকের চেয়ার। তাতে অনেকেই বসে একে অপরের সঙ্গে আলাপে মত্ত।
এ বাড়িতেই এখন বসবাস করছেন প্রয়াত আলী আহাম্মদ চুনকার মেয়ে নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার সাবেক মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী। আসন্ন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সেলিনা হায়াৎ আইভী অংশ নেবেন। তাই দিন-রাত এ বাড়িতে নেতাকর্মীরা ভিড় করছেন। নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে ভিড় ততই বাড়ছে।
নেতাকর্মী আর সমর্থকদের পাশাপাশি বাড়িতে আগত মুরবি্বদের প্রত্যেকের সঙ্গে ডা. আইভী কথা বলছেন। খোঁজখবর নিচ্ছেন। আইভীকে একটুও ক্লান্ত মনে হয়নি ওই সময়। রাত ১১টার দিকে নেতাকর্মী আর এলাকার মুরবি্বদের বিদায় করে দিয়ে ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী সমকালের মুখোমুখি হলেন। জানালেন সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র হতে পারলে আগামী দিনে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনকে কীভাবে সাজাতে চান সেই পরিকল্পনা। জানালেন, নির্বাচিত হলে তিনি সিটি করপোরেশনবাসীকে হতাশ করবেন না। এর আগে মেয়র থাকাকালে যে আশা-আকাঙ্ক্ষা সৃষ্টি করেছেন, ঠিক একইভাবে তিনি এলাকারও উন্নয়নে কাজ করতে চান। বিলুপ্ত নারায়ণগঞ্জ পৌর এলাকার মতো সিটি করপোরেশন হিসেবেও এলাকার উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে চান ডা. আইভী।
সমকালের পাঠকদের জন্য ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীর সাক্ষাৎকারটি তুলে ধরা হলো :
সমকাল :বিলুপ্ত নারায়ণগঞ্জ পৌরবাসী আপনাকে একজন সফল উন্নয়নকর্মী হিসেবে জানে। সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হতে পারলে সে ক্ষেত্রে আপনার পরিকল্পনা কী?
আইভী :আসলে আমি সাধারণ মানুষকে কোনো প্রতিশ্রুতি দিতে চাই না। বিলুপ্ত নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার উন্নয়ন বিগত ৮ বছর যেভাবে করেছি, ঠিক একইভাবে সিটি করপোরেশন এলাকারও উন্নয়ন করতে চাই।
সমকাল : সিটি করপোরেশনে নতুন দু'টি এলাকা সিদ্ধিরগঞ্জ ও বন্দরের কদমরসূল পৌরসভা। বিলুপ্ত নারায়ণগঞ্জ পৌর এলাকায় আপনি আগেই কাজ করেছেন। সে ক্ষেত্রে সিদ্ধিরগঞ্জ ও বন্দর এলাকার সমস্যা কী ধরনের?
আইভী :এ দুটি এলাকার রাস্তাঘাটের সমস্যা প্রকট। রয়েছে ভয়াবহ ধরনের জলাবদ্ধতার সমস্যা। বর্ষা মৌসুমে এ দুটি এলাকার বেশিরভাগ অংশ পানির নিচে থাকে। তাই সুযোগ পেলে এ দুটি এলাকার রাস্তাঘাটের উন্নয়ন এবং জলাবদ্ধতা নিরসনে কাজ করব। এ ছাড়া সিদ্ধিরগঞ্জ ও বন্দরে অ্যামিউজমেন্ট পার্ক ও বড়দের জন্য আলাদাভাবে পার্ক নির্মাণের ইচ্ছা আছে। নারায়ণগঞ্জ পৌর এলাকার জন্য বেসরকারিভাবে একটি পার্ক যৌথ উদ্যোগে নির্মাণের কাজ এগিয়ে চলেছে।
সমকাল : নারায়ণগঞ্জকে আকর্ষণীয় শহর হিসেবে গড়ে তোলার কী পরিকল্পনা রয়েছে আপনার?
আইভী :দেখুন, নারায়ণগঞ্জকে মানুষ প্রাচ্যের ডান্ডি হিসেবে চেনে। তবে নারায়ণগঞ্জ প্রতিটি সরকারের আমলেই অবহেলিত থেকেছে। তাই সুযোগ পেলে নারায়ণগঞ্জের কাঙ্ক্ষিত উন্নয়নের পাশাপাশি এটিকে পর্যটন নগরী হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করব। নারায়ণগঞ্জ শহরের হাজীগঞ্জ কেল্লা, বিবি মরিয়মের মাজার, বন্দরের সোনাকান্দার কেল্লাকে সংস্কার করা হবে পর্যটকদের জন্য। এ ছাড়া সিদ্ধিরগঞ্জের লেকটিকে পর্যটনের সুবিধায় গড়ে তোলা হবে, যাতে শহরবাসীর পাশাপাশি বাইরের জেলা থেকে আগতরা এখানে এসে তাদের অবসর কাটাতে পারেন।
সমকাল : বন্দর এলাকাটি নদীবিচ্ছিন্ন হওয়ায় নারায়ণগঞ্জের সঙ্গে সড়কপথে এর সরাসরি কোনো যোগাযোগ নেই। তবে ঘুর পথে একটি রাস্তা রয়েছে। সেখান দিয়ে আসতে সময় লাগে অনেক। এ ব্যাপারে আপনার কোনো চিন্তাভাবনা আছে?
আইভী :দেখুন, শীতলক্ষ্যা সেতু বাস্তবায়িত হলে এ সমস্যা থেকে বন্দরবাসী পরিত্রাণ পাবে। তবে এটি সিটি করপোরেশনের কাজ নয়। তবে শীতলক্ষ্যা সেতু যাতে তাড়াতাড়ি নির্মিত হয় সে জন্য সরকারের উপর মহলের সঙ্গে কথা বলব। কারণ শীতলক্ষ্যা সেতু বাস্তবায়িত হলে নদীর পূর্ব ও পশ্চিম পাড়ের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটবে।
সমকাল :এক সময়ের স্বচ্ছ পানির নদী শীতলক্ষ্যা আজ দূষণের শিকার। শীতলক্ষ্যা রক্ষায় কোনো উদ্যোগ নেবেন কি-না?
আইভী :অবশ্যই শীতলক্ষ্যা রক্ষার উদ্যোগ নিতে হবে। সে ক্ষেত্রে সচেতনতা সৃষ্টির বিকল্প নেই। দূষণ রোধ এবং নদীকে বাঁচাতে নদীর পাড় বাঁধাই করে রাস্তা নির্মাণ করা হবে। তবে ব্যাপারে একটি মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করতে হবে।
সমকাল :আসন্ন নির্বাচনে আপনার পক্ষে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে_ এ কথাটি বেশ জোরেশোরে শোনা যায়। আওয়ামী লীগের নেতা হয়ে দলমত নির্বিশেষে আপনার পক্ষে এ জোয়ার সৃষ্টির কারণ কী?
আইভী :(হেসে) এমন জোয়ারের কথা আমিও শুনেছি। তবে এর কারণ আমি খুঁজতে যাইনি। আর আমার পক্ষে এত জোয়ার, তা আমি পুরোপুরি বিশ্বাসও করিনি। যারা আমাকে ভালোবাসেন তারা এমনটা বলতে পারেন। তবে পৌরসভার মেয়র থাকাকালীন আমি আমার প্রয়াত বাবা আলী আহাম্মদ চুনকার মতোই সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিশেছি এবং পৌরবাসীর জন্য কাজ করেছি। দলমতের ঊধর্ে্ব থেকে নীতি ও আদর্শ ঠিক রেখে কাজ করার ফলে মানুষ আমার পক্ষে কথা বলতে পারেন। তাছাড়া নিজেকে দুর্নীতিমুক্ত রেখেছি, কোনো ধরনের সন্ত্রাসীকে প্রশ্রয় দিইনি। বরং বারবার সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে যে কোনো অন্যায়-অত্যাচারের প্রতিবাদ করেছি।
সমকাল : গত ৮ বছরে মেয়র হিসেবে আপনি পৌর এলাকায় কী উন্নয়ন কাজ করেছেন?
আইভী :জলাবদ্ধতা নিরসন ও পয়ঃনিষ্কাশনের জন্য ড্রেনেজ ব্যবস্থা। এখন অতিবৃষ্টিতেও নারায়ণগঞ্জ শহরে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে না, যেখানে ঢাকায় এখনও ভয়াবহ জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এর পাশাপাশি ভাষা আন্দোলনের ৫৪ বছর পর নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার উদ্যোগে শহীদ মিনার তৈরি, স্বাধীনতার সপক্ষে শহরে বেশ কয়েকটি ম্যুরাল স্থাপন এবং মাসদাইর কবরস্থান মসজিদের উন্নয়ন কাজ করা।
সমকাল :আপনার অপূর্ণ কাজ কী?
আইভী :পঞ্চবটিতে বেসরকারিভাবে যৌথ উদ্যোগে পার্কের কাজটি শেষ করতে না পারা। জিমখানায় একটি পার্ক করার ইচ্ছা ছিল। শহরের ফুটপাতকে সবুজায়ন করতে না পারা। আধুনিক চুনকা পাঠাগারের কাজ শেষ করতে না পারা।
সমকাল :আপনার দলের অপর প্রার্থী নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনকে স্কাই সিটি হিসেবে গড়ে তোলার পাশাপাশি ব্যাপক উন্নয়নের আশ্বাস দিচ্ছেন। ভারতসহ বিভিন্ন দেশ থেকে বিনিয়োগ এনে নারায়ণগঞ্জের চেহারা পাল্টে দেওয়ার কথা বলছেন। এ প্রচারণাকে কেমনভাবে দেখছেন?
আইভী :দেখুন, সরকারের অনুমতি ব্যতিরেকে বাইরের কোনো দেশের কোনো কোম্পানিই দেশে বিনিয়োগ করতে পারবে না। আর আমার দলের প্রতিপক্ষ প্রার্থী যে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন সে অনুযায়ী নারায়ণগঞ্জকে মালয়েশিয়া-সুইডেন করে গড়ে তুলতে তার ৩০ বছর সময় লাগবে। তিনি নির্বাচিত হলে কতদিন ক্ষমতায় থাকবেন! তাছাড়া সরকারি বরাদ্দ পাওয়া যায় চাহিদার ৩ ভাগের ১ ভাগ মাত্র। সবচেয়ে বড় কথা, সিটি করপোরেশন বা পৌর এলাকার উন্নয়ন করতে হবে জনগণের ট্যাক্সের টাকায়। সে ক্ষেত্রে ট্যাক্স আদায় কতটা বাড়ানো যায় সেটাই মুখ্য বিষয়। তাই আমি বাস্তবতার নিরিখে ভোটারদের কোনো মিথ্যা আশ্বাস দিতে চাই না।
সমকাল :আপনি পৌর মেয়র থাকাকালে বিপুল পরিমাণ বিদেশি সাহায্য বিশেষ করে এডিবি এবং ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের সহায়তা পেয়েছেন। সিটি মেয়র নির্বাচিত হতে পারলে তাদের কাছ থেকে কেমন সহায়তা আশা করছেন?
আইভী :ওই দুটি সংস্থা ইতিমধ্যেই আমার সঙ্গে যোগাযোগ করে আমি নির্বাচিত হতে পারলে তাদের সহায়তা অব্যাহত রাখার ব্যাপারে আশ্বস্ত করেছে। পাশাপাশি বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে বাইরের যেসব সংস্থা বা দেশ চুক্তিবদ্ধ তাদের আরও বেশি করে বিনিয়োগ করার জন্য উৎসাহিত করা যাবে।
সমকাল :নির্বাচিত হতে পারলে সবার আগে কী কাজ করবেন?
আইভী :বন্দর ও সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসনে কাজ করব।
সমকাল :সিটি করপোরেশন এলাকার ভোটারদের উদ্দেশ্যে কিছু বলবেন কি?
আইভী :দীর্ঘ ৮ বছর পৌরসভার মেয়র থাকাকালে ১৪৩ কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ করেছি। আরও ১২ কোটি টাকা ব্যাংকে রেখে গেছি, যে খাতে ২০০৩ সালে পৌর মেয়র নির্বাচিত হয়ে পৌরসভার ফান্ডে পেয়েছিলাম মাত্র ৯ লাখ টাকার কিছু বেশি। তাই উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে এবং অন্যায়-সন্ত্রাস এবং চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে কথা বলতে আমাকে ভোট দিয়ে পুনরায় নির্বাচিত করতে ভোটারদের প্রতি আহ্বান জানাই। একই সঙ্গে তাদের পবিত্র আমানত (ভোট) প্রদানের পর সেই ফল বুঝে না পাওয়া পর্যন্ত ভোটকেন্দ্র পাহারা দেওয়ারও অনুরোধ করি।
নেতাকর্মী আর সমর্থকদের পাশাপাশি বাড়িতে আগত মুরবি্বদের প্রত্যেকের সঙ্গে ডা. আইভী কথা বলছেন। খোঁজখবর নিচ্ছেন। আইভীকে একটুও ক্লান্ত মনে হয়নি ওই সময়। রাত ১১টার দিকে নেতাকর্মী আর এলাকার মুরবি্বদের বিদায় করে দিয়ে ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী সমকালের মুখোমুখি হলেন। জানালেন সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র হতে পারলে আগামী দিনে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনকে কীভাবে সাজাতে চান সেই পরিকল্পনা। জানালেন, নির্বাচিত হলে তিনি সিটি করপোরেশনবাসীকে হতাশ করবেন না। এর আগে মেয়র থাকাকালে যে আশা-আকাঙ্ক্ষা সৃষ্টি করেছেন, ঠিক একইভাবে তিনি এলাকারও উন্নয়নে কাজ করতে চান। বিলুপ্ত নারায়ণগঞ্জ পৌর এলাকার মতো সিটি করপোরেশন হিসেবেও এলাকার উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে চান ডা. আইভী।
সমকালের পাঠকদের জন্য ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীর সাক্ষাৎকারটি তুলে ধরা হলো :
সমকাল :বিলুপ্ত নারায়ণগঞ্জ পৌরবাসী আপনাকে একজন সফল উন্নয়নকর্মী হিসেবে জানে। সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হতে পারলে সে ক্ষেত্রে আপনার পরিকল্পনা কী?
আইভী :আসলে আমি সাধারণ মানুষকে কোনো প্রতিশ্রুতি দিতে চাই না। বিলুপ্ত নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার উন্নয়ন বিগত ৮ বছর যেভাবে করেছি, ঠিক একইভাবে সিটি করপোরেশন এলাকারও উন্নয়ন করতে চাই।
সমকাল : সিটি করপোরেশনে নতুন দু'টি এলাকা সিদ্ধিরগঞ্জ ও বন্দরের কদমরসূল পৌরসভা। বিলুপ্ত নারায়ণগঞ্জ পৌর এলাকায় আপনি আগেই কাজ করেছেন। সে ক্ষেত্রে সিদ্ধিরগঞ্জ ও বন্দর এলাকার সমস্যা কী ধরনের?
আইভী :এ দুটি এলাকার রাস্তাঘাটের সমস্যা প্রকট। রয়েছে ভয়াবহ ধরনের জলাবদ্ধতার সমস্যা। বর্ষা মৌসুমে এ দুটি এলাকার বেশিরভাগ অংশ পানির নিচে থাকে। তাই সুযোগ পেলে এ দুটি এলাকার রাস্তাঘাটের উন্নয়ন এবং জলাবদ্ধতা নিরসনে কাজ করব। এ ছাড়া সিদ্ধিরগঞ্জ ও বন্দরে অ্যামিউজমেন্ট পার্ক ও বড়দের জন্য আলাদাভাবে পার্ক নির্মাণের ইচ্ছা আছে। নারায়ণগঞ্জ পৌর এলাকার জন্য বেসরকারিভাবে একটি পার্ক যৌথ উদ্যোগে নির্মাণের কাজ এগিয়ে চলেছে।
সমকাল : নারায়ণগঞ্জকে আকর্ষণীয় শহর হিসেবে গড়ে তোলার কী পরিকল্পনা রয়েছে আপনার?
আইভী :দেখুন, নারায়ণগঞ্জকে মানুষ প্রাচ্যের ডান্ডি হিসেবে চেনে। তবে নারায়ণগঞ্জ প্রতিটি সরকারের আমলেই অবহেলিত থেকেছে। তাই সুযোগ পেলে নারায়ণগঞ্জের কাঙ্ক্ষিত উন্নয়নের পাশাপাশি এটিকে পর্যটন নগরী হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করব। নারায়ণগঞ্জ শহরের হাজীগঞ্জ কেল্লা, বিবি মরিয়মের মাজার, বন্দরের সোনাকান্দার কেল্লাকে সংস্কার করা হবে পর্যটকদের জন্য। এ ছাড়া সিদ্ধিরগঞ্জের লেকটিকে পর্যটনের সুবিধায় গড়ে তোলা হবে, যাতে শহরবাসীর পাশাপাশি বাইরের জেলা থেকে আগতরা এখানে এসে তাদের অবসর কাটাতে পারেন।
সমকাল : বন্দর এলাকাটি নদীবিচ্ছিন্ন হওয়ায় নারায়ণগঞ্জের সঙ্গে সড়কপথে এর সরাসরি কোনো যোগাযোগ নেই। তবে ঘুর পথে একটি রাস্তা রয়েছে। সেখান দিয়ে আসতে সময় লাগে অনেক। এ ব্যাপারে আপনার কোনো চিন্তাভাবনা আছে?
আইভী :দেখুন, শীতলক্ষ্যা সেতু বাস্তবায়িত হলে এ সমস্যা থেকে বন্দরবাসী পরিত্রাণ পাবে। তবে এটি সিটি করপোরেশনের কাজ নয়। তবে শীতলক্ষ্যা সেতু যাতে তাড়াতাড়ি নির্মিত হয় সে জন্য সরকারের উপর মহলের সঙ্গে কথা বলব। কারণ শীতলক্ষ্যা সেতু বাস্তবায়িত হলে নদীর পূর্ব ও পশ্চিম পাড়ের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটবে।
সমকাল :এক সময়ের স্বচ্ছ পানির নদী শীতলক্ষ্যা আজ দূষণের শিকার। শীতলক্ষ্যা রক্ষায় কোনো উদ্যোগ নেবেন কি-না?
আইভী :অবশ্যই শীতলক্ষ্যা রক্ষার উদ্যোগ নিতে হবে। সে ক্ষেত্রে সচেতনতা সৃষ্টির বিকল্প নেই। দূষণ রোধ এবং নদীকে বাঁচাতে নদীর পাড় বাঁধাই করে রাস্তা নির্মাণ করা হবে। তবে ব্যাপারে একটি মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করতে হবে।
সমকাল :আসন্ন নির্বাচনে আপনার পক্ষে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে_ এ কথাটি বেশ জোরেশোরে শোনা যায়। আওয়ামী লীগের নেতা হয়ে দলমত নির্বিশেষে আপনার পক্ষে এ জোয়ার সৃষ্টির কারণ কী?
আইভী :(হেসে) এমন জোয়ারের কথা আমিও শুনেছি। তবে এর কারণ আমি খুঁজতে যাইনি। আর আমার পক্ষে এত জোয়ার, তা আমি পুরোপুরি বিশ্বাসও করিনি। যারা আমাকে ভালোবাসেন তারা এমনটা বলতে পারেন। তবে পৌরসভার মেয়র থাকাকালীন আমি আমার প্রয়াত বাবা আলী আহাম্মদ চুনকার মতোই সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিশেছি এবং পৌরবাসীর জন্য কাজ করেছি। দলমতের ঊধর্ে্ব থেকে নীতি ও আদর্শ ঠিক রেখে কাজ করার ফলে মানুষ আমার পক্ষে কথা বলতে পারেন। তাছাড়া নিজেকে দুর্নীতিমুক্ত রেখেছি, কোনো ধরনের সন্ত্রাসীকে প্রশ্রয় দিইনি। বরং বারবার সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে যে কোনো অন্যায়-অত্যাচারের প্রতিবাদ করেছি।
সমকাল : গত ৮ বছরে মেয়র হিসেবে আপনি পৌর এলাকায় কী উন্নয়ন কাজ করেছেন?
আইভী :জলাবদ্ধতা নিরসন ও পয়ঃনিষ্কাশনের জন্য ড্রেনেজ ব্যবস্থা। এখন অতিবৃষ্টিতেও নারায়ণগঞ্জ শহরে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে না, যেখানে ঢাকায় এখনও ভয়াবহ জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এর পাশাপাশি ভাষা আন্দোলনের ৫৪ বছর পর নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার উদ্যোগে শহীদ মিনার তৈরি, স্বাধীনতার সপক্ষে শহরে বেশ কয়েকটি ম্যুরাল স্থাপন এবং মাসদাইর কবরস্থান মসজিদের উন্নয়ন কাজ করা।
সমকাল :আপনার অপূর্ণ কাজ কী?
আইভী :পঞ্চবটিতে বেসরকারিভাবে যৌথ উদ্যোগে পার্কের কাজটি শেষ করতে না পারা। জিমখানায় একটি পার্ক করার ইচ্ছা ছিল। শহরের ফুটপাতকে সবুজায়ন করতে না পারা। আধুনিক চুনকা পাঠাগারের কাজ শেষ করতে না পারা।
সমকাল :আপনার দলের অপর প্রার্থী নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনকে স্কাই সিটি হিসেবে গড়ে তোলার পাশাপাশি ব্যাপক উন্নয়নের আশ্বাস দিচ্ছেন। ভারতসহ বিভিন্ন দেশ থেকে বিনিয়োগ এনে নারায়ণগঞ্জের চেহারা পাল্টে দেওয়ার কথা বলছেন। এ প্রচারণাকে কেমনভাবে দেখছেন?
আইভী :দেখুন, সরকারের অনুমতি ব্যতিরেকে বাইরের কোনো দেশের কোনো কোম্পানিই দেশে বিনিয়োগ করতে পারবে না। আর আমার দলের প্রতিপক্ষ প্রার্থী যে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন সে অনুযায়ী নারায়ণগঞ্জকে মালয়েশিয়া-সুইডেন করে গড়ে তুলতে তার ৩০ বছর সময় লাগবে। তিনি নির্বাচিত হলে কতদিন ক্ষমতায় থাকবেন! তাছাড়া সরকারি বরাদ্দ পাওয়া যায় চাহিদার ৩ ভাগের ১ ভাগ মাত্র। সবচেয়ে বড় কথা, সিটি করপোরেশন বা পৌর এলাকার উন্নয়ন করতে হবে জনগণের ট্যাক্সের টাকায়। সে ক্ষেত্রে ট্যাক্স আদায় কতটা বাড়ানো যায় সেটাই মুখ্য বিষয়। তাই আমি বাস্তবতার নিরিখে ভোটারদের কোনো মিথ্যা আশ্বাস দিতে চাই না।
সমকাল :আপনি পৌর মেয়র থাকাকালে বিপুল পরিমাণ বিদেশি সাহায্য বিশেষ করে এডিবি এবং ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের সহায়তা পেয়েছেন। সিটি মেয়র নির্বাচিত হতে পারলে তাদের কাছ থেকে কেমন সহায়তা আশা করছেন?
আইভী :ওই দুটি সংস্থা ইতিমধ্যেই আমার সঙ্গে যোগাযোগ করে আমি নির্বাচিত হতে পারলে তাদের সহায়তা অব্যাহত রাখার ব্যাপারে আশ্বস্ত করেছে। পাশাপাশি বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে বাইরের যেসব সংস্থা বা দেশ চুক্তিবদ্ধ তাদের আরও বেশি করে বিনিয়োগ করার জন্য উৎসাহিত করা যাবে।
সমকাল :নির্বাচিত হতে পারলে সবার আগে কী কাজ করবেন?
আইভী :বন্দর ও সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসনে কাজ করব।
সমকাল :সিটি করপোরেশন এলাকার ভোটারদের উদ্দেশ্যে কিছু বলবেন কি?
আইভী :দীর্ঘ ৮ বছর পৌরসভার মেয়র থাকাকালে ১৪৩ কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ করেছি। আরও ১২ কোটি টাকা ব্যাংকে রেখে গেছি, যে খাতে ২০০৩ সালে পৌর মেয়র নির্বাচিত হয়ে পৌরসভার ফান্ডে পেয়েছিলাম মাত্র ৯ লাখ টাকার কিছু বেশি। তাই উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে এবং অন্যায়-সন্ত্রাস এবং চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে কথা বলতে আমাকে ভোট দিয়ে পুনরায় নির্বাচিত করতে ভোটারদের প্রতি আহ্বান জানাই। একই সঙ্গে তাদের পবিত্র আমানত (ভোট) প্রদানের পর সেই ফল বুঝে না পাওয়া পর্যন্ত ভোটকেন্দ্র পাহারা দেওয়ারও অনুরোধ করি।
No comments