৩৯- সন্তু লারমার জন্য নোবেল দাবি সেনাবাহিনীর শহীদদের অবমাননা

. ইউনূসের হেনস্তায় সুশীল পত্রিকাদু’টির কান্না
...মার্কিন রাষ্ট্রদূত জেমস মরিয়ার্টি প্রফেসর ইউনূসের চেয়ার রক্ষার জন্য নীতিনির্ধারকদের দোরে দোরে ঘুরেছেন! প্রফেসর ইউনূসের হেনস্তা দর্শনে সুশীল (?) পত্রিকাদু’টির কান্নায় বাংলাদেশের আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে। ...

দুপুরে খবরের কাগজ হাতে নিয়ে প্রথমেই চোখ পড়ল ‘No Confidence in HC Bench’ শিরোনামের ওপর। পত্রিকাটির নাম ‘The Daily Star’। বর্তমান প্রধান বিচারপতির গুণমুগ্ধ খবরের কাগজের এই শিরোনামে আমার তো রীতিমত ভিরমি লাগার অবস্থা। গত দু’মাস ধরে একই সংবাদপত্রে উচ্চ আদালতের অব্যাহত প্রশস্তি পাঠ করার সৌভাগ্য হয়েছে। প্রধান বিচারপতিকে গ্যাস দিয়ে এমন ফোলানো হয়েছে যে, তাকে আকাশ থেকে মাটিতে নামানোই মুশকিল। আজ যে একেবারে ভূতের মুখে রামনাম!
ভুল পড়ছি কিনা সেটা নিশ্চিত হওয়ার জন্য চশমার কাচ ভালো করে মুছে আবার পড়লাম। নাহ, শিরোনামে কোনো ভুল নেই। এবার পুরো সংবাদটি মনোযোগ দিয়ে পড়ে ডেইলি স্টারের এই অভিমানের হেতু বুঝলাম। বিচারপতি মোমতাজউদ্দিন আহমেদ এবং বিচারপতি গোবিন্দ চন্দ্র ঠাকুর সমন্বয়ে গঠিত দ্বৈত বেঞ্চে গত তিনদিন ধরে নোবেল বিজয়ী প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের দায়ের করা রিটের শুনানি চলছে। গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদ থেকে তাকে পত্রপাঠ বিদায়ের যে আদেশনামা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ গুণগ্রাহী ড. আতিউরের বাংলাদেশ ব্যাংক পাঠিয়েছে, তারই বিরুদ্ধে আদালতে গেছেন প্রফেসর ইউনূস। গত তিনদিনের প্রতিদিনই মামলার শুনানি চলেছে এবং ক্রমাগত আদেশ প্রদান পিছিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এবারের শাসনামলের সর্বশেষ ব্যক্তিগত টার্গেট ড. ইউনূসের আইনজীবী ব্যারিস্টার রোকনউদ্দিন মাহমুদ গতকাল আদালতে আর ধৈর্য রাখতে না পেরে প্রকাশ্যে বেঞ্চের ওপর আস্থা নেই বলে ফেলেছেন। তার এই বিস্ফোরণ আদালত অবমাননার পর্যায়ভুক্ত কিনা, সেই প্রশ্ন এখনও উত্থাপিত হয়নি।
প্রফেসর ইউনূসের পক্ষে আরও দু’জন বিশিষ্ট আইনজীবী লড়ছেন। তারা হলেন যথাক্রমে ড. কামাল হোসেন এবং মাহমুদুল ইসলাম। ড. কামাল হোসেন ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে যতদূর মনে পড়ে জেনারেল এরশাদকে পাশে নিয়ে মহাজোটের মঞ্চে আরোহণ করেছিলেন। শেখ হাসিনার আগের সরকারে মাহমুদুল ইসলাম সম্ভবত অ্যাটর্নি জেনারেলের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। সরকারপক্ষ থেকে রিটের বিরোধিতা করছেন যথারীতি বর্তমান অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। বিচারপতিদ্বয়ের নাম আগেই উল্লেখ করায় পুনরুল্লেখ নিষ্প্রয়োজন। তবে তারা উভয়েই বর্তমান সরকারের প্রতি অতি সহানুভূতিশীল হিসেবে আদালতপাড়ায় সবিশেষ পরিচিত। সব মিলিয়ে এমন চমত্কার সেমসাইড উপভোগ করার সুযোগ দেশবাসী সচরাচর কমই পেয়ে থাকে।
ডেইলি স্টার এখন পড়েছে মহাফাঁপরে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের দূতাবাসগুলোর অতিঘনিষ্ঠ পত্রিকাটির নীতিনির্ধারকদের কাছে পশ্চিমাদের মতোই প্রফেসর ইউনূস এ দেশের এক নম্বর গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিত্ব। শেখ হাসিনার স্থান দ্বিতীয় নম্বরে। দুই অতীব পছন্দের মানুষের বিবাদ গিয়ে উঠেছে ডেইলি স্টারের তিন নম্বর পছন্দের মানুষ প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হকের রাজত্বে। এমন বিপদে শত্রুও যেন না পড়ে! ফল হয়েছে, যে পত্রিকা দেশের রাজনীতিতে বিএনপি নামক ‘আপদের’ অস্তিত্বই স্বীকার করতে চায় না, তারাই এখন প্রফেসর ইউনূসের পক্ষে দেয়া বিএনপির নেতাদের বিবৃতি ঘনঘন প্রথম পাতায় ছাপছে।
সেদিন দেখলাম, প্রফেসর ইউনূসের সঙ্গে বর্তমান সরকারের অশিষ্ট আচরণের প্রতিবাদস্বরূপ চট্টগ্রামে বিএনপি আয়োজিত শ’খানেক লোকের মানববন্ধনের ছবি দ্বিতীয় পাতায় ডবল কলাম ট্রিটমেন্ট দিয়ে ডেইলি স্টারে ছাপা হয়েছে। অথচ বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব তারেক রহমানের পক্ষে হাজার হাজার লোকের মানববন্ধনকে একই পত্রিকায় ছাপার মতো উপযুক্ত খবর কখনোই বিবেচনা করা হয় না। বেগম খালেদা জিয়ার বিশাল জনসভার খবর শেষের পাতায় কায়ক্লেশে ঠাঁই পায়! অথচ এরাই এদেশে নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার দাবিদার। দেখা যাক, ভারতপন্থী এবং মার্কিনপন্থী সুশীল(?)দের মধ্যে এই লড়াই এ কোন পক্ষ শেষ পর্যন্ত জেতে। বর্তমান পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের গোবেচারা জনগণ নিরীহ দর্শকমাত্র।
রাতের মধ্যেই জেনে গেলাম হাইকোর্টে রিটের নিষ্পত্তি হয়েছে এবং প্রফেসর ইউনূস পরাজিত হয়েছেন। হাইকোর্টের এমন রায় আমার প্রত্যাশিতই ছিল। বিস্ময়ে আকাশ থেকে পড়েছি সম্পূর্ণ ভিন্ন কারণে। রায় ঘোষণার পর উল্লসিত অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বিবিসি রেডিওকে বলেছেন, প্রফেসর ইউনূস শান্তির জন্য এমন কী করেছেন যার জন্য তিনি নোবেল পেলেন? বাংলাদেশে শান্তিতে নোবেল মাত্র দুই মহান ব্যক্তিত্ব পেতে পারেন—একজন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং অন্যজন পার্বত্য চট্টগ্রামের জনসংহতি সমিতির নেতা জ্যোতিরিন্দ্র লারমা ওরফে সন্তু লারমা। রেডিওতে শোনা কথা, তাই আমার লেখায় একটি-দু’টি শব্দ এদিক-ওদিক হয়ে যেতে পারে। তবে মাহবুবে আলম যা বলেছেন তার মমার্থ এটাই। শেখ হাসিনার পক্ষে মাহবুবে আলমের নোবেল পুরস্কার দাবি করা নিয়ে আমার কোনো কথা নেই। এ ধরনের তৈল প্রদানকারী ব্যক্তি আওয়ামী লীগে গুনে শেষ করা যাবে না। লজ্জা-টজ্জা এদের কাছে ভিন্ন অর্থ বহন করে।
নোবেল পুরস্কার দাবি করে পাওয়া যায় কিনা, সেটা বিবেচনারও মালিক নরওয়ের নোবেল কমিটি। আমরা আদার ব্যাপারি, বড়লোকদের ব্যাপারে চুপ করে থাকাই শ্রেয়। তবে সন্তু লারমাকে নোবেল দেয়ার ওকালতি করা নিয়ে দেশের একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে কিছু মন্তব্য না করে উপায় নেই। সন্তু লারমা ভারতের মাটিতে অবস্থান করে দীর্ঘদিন বাংলাদেশ নামক একটি স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সশস্ত্র যুদ্ধ পরিচালনা করেছিলেন। দেশের বিপুল সম্পদহানির পাশাপাশি বহু নাগরিক সেই যুদ্ধে প্রাণ হারিয়েছেন। দেশের স্বাধীনতা ও অখণ্ডতা রক্ষাকল্পে সন্তু লারমা এবং তার শান্তিবাহিনীর বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে গিয়ে আমাদের সেনাবাহিনীরও অনেক সৈনিক, নন-কমিশনড ও কমিশনড অফিসার শহীদ হয়েছেন।। রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন কর্মকর্তা যখন সেই সন্তু লারমাকে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার প্রদানের দাবি জানাচ্ছেন, তখন সেনাবাহিনীর সেইসব শহীদের বিদেহী আত্মা এদেশের প্রতিটি নাগরিককেই নিশ্চিতভাবে অভিসম্পাত দিচ্ছে।
আজকের এই নতজানু অবস্থার জন্য দলমত নির্বিশেষে আমরা প্রত্যেকেই কমবেশি দায়ী। আমাদের সম্মিলিত ব্যর্থতার ফলেই এমন একটি সরকার আজ রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়েছে, যার আইন কর্মকর্তা সর্বোচ্চ বিচারালয়ে দাঁড়িয়ে প্রকাশ্যে রাষ্ট্রদ্রোহীর পক্ষাবলম্বন করার সাহস রাখেন। সন্তু লারমা কেবল নিরস্ত্র, দরিদ্র, নিরাশ্রয় বাংলাদেশী বাঙালি এবং সেনাসদস্যদের হত্যা করেননি, তিনি এদেশের পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর মধ্যেও যাদের তার একচ্ছত্র নেতৃত্বের পথে বাধা মনে করেছেন, তাদেরকেই হয় হত্যা করেছেন অথবা হত্যার চেষ্টা নিয়েছেন। তার এই নৃশংস কর্মকাণ্ডে সর্বতোভাবে সহযোগিতা করেছে তথাকথিত বন্ধুরাষ্ট্র ভারত। তাকে আজ নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনীত করা গেলে উলফা নেতা অনুপ চেটিয়া এবং পরেশ বড়ুয়া কী দোষ করলেন, বুঝতে পারছি না।
সন্তু লারমার পক্ষে ওকালতি করে মাহবুবে আলম নিজে রাষ্ট্রদ্রোহের অপরাধ করেছেন কিনা, সেই বিচার বাংলাদেশের জনগণই করবেন। আজ এদেশে এমন পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে যে রাষ্ট্র ও জনগণের স্বার্থে লেখালেখি করার অপরাধে আমি রাষ্ট্রদ্রোহ এবং ইসলামী জঙ্গিত্বের মামলায় অভিযুক্ত হই আর সন্তু লারমারা নোবেল পুরস্কারের দাবিদার হয়। জনগণের ট্যাক্সের টাকায় যে অ্যাটর্নি জেনারেলকে বেতন দেয়া হয়, তিনি আমার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা পরিচালনা করেন এবং সশস্ত্র বিদ্রোহী সন্তু লারমাকে নোবেল পুরস্কার দেয়ার প্রস্তাব করেন। এদেশে বাড়িতে কোরআন-হাদিস রাখলে গৃহকর্তা ইসলামী জঙ্গি হয়ে যান। অথচ বিদেশি রাষ্ট্রের দেয়া অস্ত্র নিয়ে যিনি দেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ পরিচালনা করেন, তিনি হয়ে যান মহান শান্তিবাদী! এক-এগারোর পর থেকেই বাংলাদেশের এই অবধারিত পরিণতি সম্পর্কে জনগণকে সতর্ক করার চেষ্টা করে চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছি। এই বিফলতার জন্য দুঃখ করি না। এদেশে জন্মলাভ করেছি, কৃষক-শ্রমিকের টাকায় লেখাপড়া করেছি, লেখালেখির মাধ্যমে মাতৃভূমির সেই ঋণ পরিশোধের যত্সামান্য চেষ্টা করছি মাত্র। এবার প্রসঙ্গ পাল্টে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার খানিকটা প্রশস্তি করি। পাঠক, অবিশ্বাসের মুচকি হাসি হাসবেন না। আমি প্রকৃতই তার প্রশংসা করব।
শাবাশ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আপনি মার্কিনিদেরও যে ছেড়ে কথা বলেন না, হাতেনাতে তার প্রমাণ রাখলেন। বাংলাদেশের জাতীয় সব সংবাদপত্রে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী প্রফেসর ইউনূস এপিসোড শুরুর প্রাথমিক পর্যায়ে বিশ্বের একমাত্র পরাশক্তির অত্যন্ত প্রভাবশালী পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন নিজ থেকে ফোন করে মার্কিনিদের অত্যন্ত প্রিয় প্রফেসর ইউনূসের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শনের অনুরোধ (নাকি নির্দেশ প্রদান) করেছিলেন। সেই অনুরোধ ভালোই রক্ষা করেছেন আমাদের প্রধানমন্ত্রী! যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাকে ক্ষমতাসীন করায় অন্যতম অনুঘটকের কাজ করেছে, তাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর অনুরোধ উপেক্ষা করার যে ‘সাহস’ শেখ হাসিনা দেখালেন, সে ধরনের সাহস বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া যে দেখাতে পারতেন না, এই দাবি আমি বাজি ধরে করতে পারি। মার্কিন রাষ্ট্রদূত জেমস মরিয়ার্টি প্রফেসর ইউনূসের চেয়ার রক্ষার জন্য নীতিনির্ধারকদের দোরে দোরে ঘুরেছেন।
প্রফেসর ইউনূসের হেনস্তা দর্শনে সুশীল (?) পত্রিকাদু’টির কান্নায় বাংলাদেশের আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এতটুকু বিচলিত হননি। শেক্সপিয়রের শাইলক দেনাদারের কাছে পাউন্ড অব ফ্লেশ দাবি করেছিল। সেটি ছিল কালজয়ী গল্প। আর শেখ হাসিনা নিজে মুসলমান হয়ে মুসলমানের বিরুদ্ধে ক্রুসেড পরিচালনার ঘোষণা দেয়ার মূল্য প্রফেসর ইউনূসকে বলি দেয়ার মাধ্যমে মার্কিনিদের কাছ থেকে কড়ায়-গণ্ডায় আদায় করে নিলেন। কিছুদিন আগেই জেমস মরিয়ার্টি প্রফেসর ইউনূসকে সরকারের হয়রানি প্রসঙ্গে তার দেশের শক্তির সঙ্গে মানানসই গাম্ভীর্য নিয়ে সাংবাদিকদের বলেছিলেন, we are greatly disturbed। ঢাকায় অন্যান্য পশ্চিমা দেশের রাষ্ট্রদূতরা একটু রেখে-ঢেকে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করলেও তাদের উদ্বেগের বিষয়টিও লুকিয়ে রাখেননি। অথচ মাত্র ক’দিন আগে এক মাঝারি মার্কিন কর্মকর্তা বাংলাদেশ সফরে এসে শেখ হাসিনা সরকারকে সুশাসনের সার্টিফিকেট দিয়ে বলেছিলেন, বর্তমান সরকারের আমলে এখানে নাকি real democracy চর্চা চলছে।
এক ইউনূস ঝড়ে real democracy উবে গিয়ে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আজ greatly disturbed পর্যায়ে চলে গেল? ভেবে পাই না, সরকার প্রফেসর ইউনূসকে নিয়ে কী এমন করেছে? শেখ হাসিনা তার রুচি অনুযায়ী নিজস্ব স্টাইলে বাংলাদেশের একমাত্র নোবেল বিজয়ীকে কিছু গালিগালাজ করেছেন। জেলায় জেলায় তার বিরুদ্ধে মাত্র কয়েকটি মামলা দায়ের হয়েছে এবং সর্বশেষ গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ থেকে প্রফেসর ইউনূসকে অপসারণ করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের ফ্যাসিবাদী চরিত্র অনুযায়ী এটুকু করে সরকার ক্ষান্ত দিলে ড. ইউনূসের দুই রাকাত নফল নামাজ পড়া উচিত। আমাদের যখন বানোয়াট মামলায় জেলে নেয়া হয়েছে, রিমান্ডে নির্যাতন করা হয়েছে, প্রিজনভ্যানে মল-মূত্রের মধ্যে দাঁড় করিয়ে হাজত, আদালত এবং জেলে ঘোরানো হয়েছে তখন মানবাধিকারের ধ্বজাধারী পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলোর কূটনীতিকদের একটি শব্দও উচ্চারণ করতে শোনা যায়নি। নোবেল পদকে ভূষিত, গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ড. মুহাম্মদ ইউনূস নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের এক অতি সম্মানিত নাম। তার তুলনায় আমরা যত নগণ্যই হই, এদেশের একজন নাগরিকের যিকঞ্চিত্ সম্মান তো অন্তত প্রত্যাশা করতে পারি। দুই বছর ধরে মহাজোট সরকারের যাবতীয় ফ্যাসিবাদী আচরণকে নীরবতার মাধ্যমে উত্সাহিত করার অবধারিত পরিণতি আমরা প্রফেসর ইউনূসের ক্ষেত্রে দেখতে পাচ্ছি।
ফ্রাঙ্কেনস্টাইন সৃষ্টি করা হলে একসময় যে সেই দানব তার মালিককেই সংহার করতে উদ্যত হয়, এটা তো পশ্চিমাদেরই গল্প। প্রতিদ্বন্দ্বীদের নির্মূলে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ, প্রতিহিংসাপরায়ণ প্রধানমন্ত্রী যে কারও বিষয়ে কোনো ছাড় দেবেন না, সেটা বোধহয় দেরিতে হলেও পশ্চিমারা এখন বুঝতে পারছে। জেলখানায় গেল সপ্তাহের দেখায় ফরহাদ মজহার পারভীনের সঙ্গে এখানে এসেছিলেন। ফরহাদ ভাই বললেন, প্রফেসর ইউনূসের সমর্থনে তিনি কলাম লিখেছেন। সেই খবর দিয়ে আমাকে অবশ্য এটাও বলে গেলেন, তার ধারণা শেষপর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রফেসর ইউনূসের পরাজয় ও অসম্মান মেনে নিয়েই শেখ হাসিনার সঙ্গে বর্তমান কৌশলগত সম্পর্ক অব্যাহত রাখবে। দক্ষিণ এশিয়ার রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের বিষয়ে ভারতের ইচ্ছাকে উপেক্ষা করা মার্কিন নীতিনির্ধারকদের পক্ষে অদূর ভবিষ্যতেও সম্ভব নয়।

No comments

Powered by Blogger.