২১- চলনবিলে মাইল মাইল সর্ষেফুলের সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ হতেই হয়
ঠাঁই হলো ফাঁসির আসামিদের সেলে
...সুবেদার মোক্তার অনেকটা অপরাধীর মুখ করে জানাল, ডিভিশন ওয়ার্ডে ব্যবস্থা করতে না পেরে বাধ্য হয়েই আমাকে ফাঁসির আসামিদের সেলে আনা হয়েছে। আমি যেন কিছু মনে না করি। মোক্তারকে আশ্বস্ত করে বললাম, এর চেয়েও খারাপ পরিবেশে দিনের পর দিন কাটিয়েছি।...
...সুবেদার মোক্তার অনেকটা অপরাধীর মুখ করে জানাল, ডিভিশন ওয়ার্ডে ব্যবস্থা করতে না পেরে বাধ্য হয়েই আমাকে ফাঁসির আসামিদের সেলে আনা হয়েছে। আমি যেন কিছু মনে না করি। মোক্তারকে আশ্বস্ত করে বললাম, এর চেয়েও খারাপ পরিবেশে দিনের পর দিন কাটিয়েছি।...
আমার চিরকালের অস্থির স্বভাব অনুযায়ী রাজশাহী যাওয়ার জন্য সকাল আটটা থেকে প্রস্তুত হয়ে বসে থাকলেও পুলিশ এসকর্ট দয়া করে এলো বারোটায়। পরিচিতজনরা বলেন, বাংলাদেশের মাপকাঠিতে আমার সময়ানুবর্তিতা বাড়াবাড়ি পর্যায়ের। প্লেনে ওঠার জন্য নির্ধারিত সময়ের অন্তত দু’ঘণ্টা আগে বিমানবন্দরে গিয়ে বসে থাকার দীর্ঘদিনের অভ্যাস আজ পর্যন্ত বদলাতে পারিনি। সরকারের বড় সাহেবরা ক্ষমতা জাহিরের জন্য পারলে প্লেন দাঁড় করিয়ে রেখে শেষ সময়ে কৃপা করে তশরিফ রাখেন। ২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত পাঁচ বছর লাল পাসপোর্টধারী হয়েও সর্বাগ্রে গিয়ে বসে থাকার পুরনো স্বভাবে পরিবর্তন ঘটাইনি। এ নিয়ে কতবার স্ত্রীর তির্যক মন্তব্য হজম করতে হয়েছে, তার হিসাব নেই।
সত্তর দশকের শেষে যখন চাকরি জীবন শুরু করেছিলাম, সেই সময় অফিসের সময়সূচি ছিল সাড়ে সাতটা থেকে আড়াইটা। আমার অফিসে পৌঁছাতে কোনোদিন সোয়া সাতটা পার হয়েছে, এমন ঘটনা স্মরণে নেই। এত সকালে নাস্তা বানাতে বিরক্ত হয়ে মা প্রায়ই জিজ্ঞেস করতেন, আমাকে অফিসে গিয়ে আগে ঝাড়ু-টাড়ু দিতে হয় কিনা। অথচ ছাত্র জীবনে আমি ছিলাম মহাকুঁড়ে এবং ফাঁকিবাজ। বুয়েটে প্রথম ঘণ্টায় নিয়মিত ক্লাস ফাঁকি দিয়েছি। এক চেষ্টাতেই যে সেখান থেকে পাস করতে পেরেছি, সেই এক পরম বিস্ময়। চাকরি জীবনে হোমড়া-চোমড়া হওয়ার সুবাদে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি, প্রধান অতিথির ডাক পেতে শুরু করার পর থেকে আয়োজকদের জ্বালা বাড়িয়েছি। আমি আয়োজকদের আগেই অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছে চেয়ার-টেবিল পাহারা দেই। সে এক মহাবিড়ম্বনা!
জীবনের শেষ প্রান্তে এসে অভ্যাস খানিকটা বদলেছি। এখন রওয়ানা হওয়ার আগে আয়োজকদের অন্তত টেলিফোনটা সেরে নেই। সেই আমার আটটা থেকে বারোটা পর্যন্ত অপেক্ষার যন্ত্রণা পাঠক কিছুটা হয়তো বুঝতে পারছেন। দীর্ঘ অপেক্ষার মাঝখানে কালামের দার্শনিকসুলভ মন্তব্যে চমকিত হয়ে শান্ত হলাম। কালাম আকাশের দিকে শূন্য দৃষ্টি মেলে অনুচ্চ কণ্ঠে বলল, এটাই জেল স্যার। আমাদের চলা-ফেরার স্বাধীনতা সব ওদের হাতে। আপনাকে যে বসিয়ে রেখেছে, এতেই ওদের আনন্দ। কালামের দার্শনিক তত্ত্ব শুনে শান্ত হয়ে ওর কাছে এক কাপ চা চাইলাম। সকাল থেকে এক ফোঁটা পানিও স্পর্শ করিনি। এ আমার আরেক দোষ। প্রিজন ভ্যানে চলার সময় টয়লেটের প্রয়োজন হলে কোথায় যাব সেই দুশ্চিন্তায় হাজিরার দিন সকাল থেকে কিছু খাই না। ঢাকা সিএমএম আদালত থেকে দুপুরের মধ্যে ফিরতে পারলে তেমন একটা অসুবিধা হয় না। আদালতের ঝামেলায় কোনোদিন সন্ধ্যা হয়ে গেলে সেদিন কিছুটা ক্ষুধা-তৃষ্ণা বোধ হয়। আজকের যাত্রা যে আরও দূরে।
চাতকের মতো তাকিয়ে থাকতে থাকতে বারোটার খানিক আগে সিআইডি জমাদার মিজানকে ওয়ার্ডের দিকে দ্রুত পায়ে আসতে দেখে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালাম। জেলগেট থেকে অবশেষে ডাক এসেছে। জেলখানায় ডিভিশন কয়েদিদের ওয়ার্ডের বাইরে একা চলাফেরা করার অনুমতি নেই। সঙ্গে হয় সুবেদার, নইলে জমাদার অবশ্যই থাকতে হবে। কারণ হিসেবে বলা হয়ে থাকে আমার মতো ‘মূল্যবান’ কয়েদিদের নিরাপত্তা বিধান। প্রকৃত উদ্দেশ্য সাধারণ আসামিদের কাছ থেকে যথাসম্ভব দূরে রাখা। আমি অবশ্য মাঝে-মধ্যে সুযোগ পেলে প্রশাসনের লোকজনের জন্য অপেক্ষা না করেই জোরে হাঁটা লাগাই। তখন জেলের সবার সঙ্গে অন্তত সালাম বিনিময়ের ফাঁকে দুই-চারটা খুচরো কথা বলা যায়। তবে এই সুযোগ কেবল হাজিরা দিয়ে অথবা সাপ্তাহিক দেখা শেষে ওয়ার্ডে ফেরার পথেই মেলে। কোথাও যাওয়ার সময় প্রশাসনের ডাকের জন্য অপেক্ষা না করে উপায় নেই।
ঢাকা থেকে রাজশাহী যাওয়ার পথে উত্তেজনাকর কিছু ঘটল না। পথের বর্ণনা করার মতো ভাষাজ্ঞান আমার নেই। তবে একটা দৃশ্যের কথা না বলে পারছি না। আপনারা যারা সর্ষেক্ষেতের সৌন্দর্য দেখেননি, তাদের সিরাজগঞ্জের বনপাড়া থেকে চলনবিলের বুক চিরে যে রাস্তাটা উত্তর দিকে গেছে, ঋতুচক্রের এই সময়ে অন্তত একবার সেখানে যেতে বলব। রাস্তার দু’পাশে মাইলের পর মাইল জুড়ে হলুদ সর্ষেক্ষেত দেখে মুগ্ধ হবেন না, এমন কাঠখোট্টা মানুষ কোটিতে দুই-একটি মিলতে পারে। ইংরেজ কবি ওয়ার্ডস্ওয়ার্থ হলুদ ড্যাফোডিল ফুল নিয়ে কালজয়ী কবিতা রচনা করে গেছেন। আর আমাদের এত সুন্দর সর্ষেফুল বাংলা ভাষায় কেবল বিপদ সঙ্কেতই হয়ে রইল। চোখে সর্ষেফুল দেখা জাতীয় প্রবাদ বাংলা ভাষায় কে আমদানি করেছিলেন জানি না, তবে কাজটা তিনি সঠিক করেননি। আমার ভাই, বন্ধু, সুহৃদ কবি ফরহাদ মজহারের নয়াকৃষির একটা বড় প্রতিষ্ঠান রয়েছে এই ঈশ্বরদীতেই। তাকে চলনবিলের সরিষার ক্ষেত নিয়ে কবিতা লিখতে ধরতে হবে। আমার সঙ্গের চার পুলিশ সদস্যও নাকি আগে কখনও এমন দিগন্ত বিস্তৃত সর্ষেক্ষেত দেখেনি। গাড়িতে বাংলাদেশের প্রকৃতি নিয়ে গল্প করতে করতেই ওদের সঙ্গে বন্ধুত্ব হয়ে গেল।
বিকেল পাঁচটায় রাজশাহী জেলের প্রধান প্রবেশ দ্বারের সামনে ছোটখাট ভিড়ে গাড়ি থামাতে হলো। মাইক্রোবাসের ভেতর দিয়ে দেখলাম, রাজশাহী বারের সভাপতি মো. আবুল কাসেম, আমার দেশ’র ব্যুরো প্রধান সরদার আনিস, রাজশাহীর জনপ্রিয় সাংবাদিক নেতা রাজু, স্থানীয় বিএনপি নেতৃবৃন্দ এবং অন্যান্য সাংবাদিক, ফটো সাংবাদিকরা আমার আগমনের অপেক্ষায় রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছেন। গাড়ি থেকে নামা সম্ভব না হওয়ায় গাড়িতে বসেই হাত নাড়লাম, ছবিও তোলা হলো। সঙ্গের পুলিশ এসকর্ট অস্বস্তি বোধ করলেও না থেমে ভিড় ঠেলে গাড়ি এগুনো সম্ভব ছিল না। পরদিন আদালতে হাজিরার সময় দেখা হবে এই কথা উপস্থিত সবাইকে বলে ভেতরে ঢুকলাম। আসামি হস্তান্তরের জন্য আমাকে ডেপুটি জেলার আবদুল্লাহ’র টেবিলে নিয়ে যাওয়া হলো। সেখানে নেয়ার পর আমার ব্যাগের জিনিসপত্র তন্ন তন্ন করে খুঁজে দেখা হলো। ভাবখানা এমন যে, আমার মতো বন্দিরা অহরহ ব্যাগে করে বেআইনি জিনিসপত্র লুকিয়ে নিয়ে আসছে।
এক জেল থেকে অন্য জেলে পুলিশ এসকর্টের পাহারায় এসেছি। তারা পথিমধ্যে আমাকে বেআইনি জিনিসপত্র সরবরাহ করেছে এমন ভাবনা পুলিশ সদস্যদের জন্য অবমাননাকর হওয়া উচিত। আমি সরকারের জন্য বিপজ্জনক ব্যক্তি হলেও কোনো দাগি আসামি নই। সবাই মিলে এত খোঁজাখুঁজির হেতু বুঝলাম না। প্রধানমন্ত্রীর পিতৃভূমি গোপালগঞ্জ জেলেও এমন অভদ্র ব্যবহার পাইনি। আজকের চেকিংয়ের ঘটা দেখে ঢাকা জেলের প্রথম রাতের কথা মনে পড়ে গেল। বেঁচে গেলাম যে, গায়ে হাত দেয়নি। আধ ঘণ্টার মধ্যে বিরক্তিকর আনুষ্ঠানিকতা সমাপ্ত করে জেলের মূল আঙিনায় পা দিলাম। শত বছরেরও অধিক পুরনো জেল রাজশাহীতে। বয়সের ছাপ সর্বত্র। ডিভিশন ওয়ার্ডে ঠাঁই মিলল না। কারণ, সেখানে উলফা নেতা অনুপ চেটিয়া আছেন। ঢাকা জেলে ফয়সালের কাছে এই ষাটোর্ধ্ব বিদ্রোহী লোকটির অনেক গল্প, অনেক প্রশংসা শুনেছি। দেখা হলে ফয়সালের শুভেচ্ছা পৌঁছে দিতে পারতাম। বুঝলাম বর্তমান পরিস্থিতিতে তার আর কোনো সম্ভাবনা নেই।
আমাকে নিয়ে যাওয়া হলো দশ নম্বর সেলের এক নম্বর কুঠুরিতে। পরিবেশ অবিকল ঢাকা জেলের সাত নম্বর সেল। ছোট গারদের মধ্যে চৌকি, টেবিল এবং চেয়ার। প্রকৃতির প্রয়োজন মেটাতে সেই আব্রুবিহীন উন্মুক্ত প্যান। দুটো বালতিতে পানি তোলা রয়েছে। কাশিমপুরে তিন মাস থেকে খানিকটা বাবুগিরি ভর করেছিল, রাজশাহীতে পুনর্মূষিক ভব। কেবল একটা দৃশ্যে মন কিছুটা প্রসন্ন হলো। বিছানাটা আনকোরা। বালিশ, লেপ, মশারি, গামছা ইত্যাদি সদ্য বাজার থেকে এসেছে, সারা ঘরে নতুন কাপড়ের গন্ধ। সুবেদার মোক্তার অনেকটা অপরাধীর মুখ করে জানাল, ডিভিশন ওয়ার্ডে ব্যবস্থা করতে না পেরে বাধ্য হয়েই আমাকে ফাঁসির আসামিদের সেলে আনা হয়েছে। আমি যেন কিছু মনে না করি। মোক্তারকে আশ্বস্ত করে বললাম, এর চেয়েও খারাপ পরিবেশে দিনের পর দিন কাটিয়েছি, মাটিতে বিছানা করে দিলেও আমার কোনো সমস্যা নেই।
রাতে জেলার ফারুক সাক্ষাত্ করে গেল। তরুণ জেল কর্মকর্তাটির ব্যবহার ভদ্রলোকের মতোই। তার আগেই অবশ্য রাতের খাবারের পাট চুকিয়েছি। থাকার ব্যবস্থা নিয়ে আমার সন্তোষের বিষয়ে জেলারের উদ্বেগের জবাবেও তাকে একইভাবে আশ্বস্ত করে শুধু একটাই অনুরোধ করলাম। জানালাম, ডিসেম্বরের সকালে গরম পানি না পেলে রাজশাহীতে গোসল করা হয়ে উঠবে না। তাই ওটা চাই। ফারুক ভরসা দিয়ে গেল, প্রত্যুষে গোসলের আগেই গরম পানি পাওয়া যাবে। নতুন পরিবেশে রাতে তেমন ঘুম হলো না। রাত কাটল জন গ্রিশাম আর জেফরি আর্চারের লেখা পুরনো বই নতুন করে পড়ে।
সকাল ন’টার মধ্যেই গোসল, নাস্তা শেষ করে আটচল্লিশ ঘণ্টার প্রতিবেশীদের সঙ্গে গল্প করে সময় কাটাতে মনস্থ করলাম। আগেই বলেছি, এই সেলে অধিকাংশই ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি, সংখ্যায় সর্বমোট আঠারো জন। পৃথিবীর অন্য কোনো দেশে বাংলাদেশের মতো এত বিপুল সংখ্যায় ফাঁসির জন্য অপেক্ষমাণ আসামি আছে কিনা, জানি না। এরা সবাই কি আসলেই দোষী? যে দেশে স্বয়ং প্রধান বিচারপতি তার নিম্ন আদালতের সহকর্মীদের ঘুষ না খাওয়ার জন্য প্রকাশ্য নসিহত করেন এবং উচ্চ আদালতের বিচারক নিয়োগ সততা, মেধা ও অভিজ্ঞতার পরিবর্তে সঙ্কীর্ণ দলীয় ভিত্তিতে হয়ে থাকে, সেই দেশে সঠিক বিচার করে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হচ্ছে, এমন দাবি মেনে নেয়া সম্ভব নয়। নিম্নআদালতে চরম দণ্ডপ্রাপ্ত এক তরুণের সঙ্গে পরিচয় হলো। ক্যাপ্টেন শান্ত রংপুরের ছেলে। বিডিআর বিদ্রোহে নিহত ডিজি মেজর জেনারেল শাকিল যখন রংপুর ক্যান্টনমেন্টের জিওসি ছিল, শান্ত তখন ওখানেই ক্যাপ্টেন। সেই সময় কোনো এক মামলায় শান্ত এবং তার বড় ভাই জড়িয়ে যায়। মামলার বৃত্তান্ত শান্তও বলল না, আমিও জানার কোনো উত্সাহ দেখালাম না। জরুরি আইনের সময় বিশেষ আদালত দুই ভাইকেই মৃত্যুদণ্ডের সাজা শুনিয়েছে। পরিবারে আর একটি মাত্র ছোট ভাই রয়েছে, যে পুলিশে চাকরি করে। শান্তর মুক্তিযোদ্ধা বাবা পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর অফিসার ছিলেন। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে শেখ মুজিব সরকার তাকে চাকরিচ্যুত করলে তিনি জাসদের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হন। শান্ত’র কাছেই শুনলাম, তার পিতা মঞ্জুর ইলাহী, মেজর (অব.) জলিল, আসম রব এবং অন্যান্য সিনিয়র জাসদ নেতার অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ছিলেন। তবে, রাজনীতিতে তিনি একেবারেই সুবিধা করতে পারেননি। শেষ পর্যন্ত একরাশ তিক্ত অভিজ্ঞতা নিয়ে অনেকটা ভগ্ন হৃদয়েই ভদ্রলোক মারা যান।
শান্ত’র মা এখনও বেঁচে আছেন। সেনাবাহিনীর এই ক্যাপ্টেনকে রংপুর থেকে সাত মাস আগে চালানে পানিশমেন্ট জেল হিসেবে পরিচিত রাজশাহীতে পাঠানো হয়েছে পানিশমেন্ট দেয়ার জন্যই। প্রশাসনের সঙ্গে তার সম্পর্ক অত্যন্ত বৈরী। মা এবং কেস পার্টনার বড় ভাইয়ের সঙ্গে দেখা করতে না পারার কষ্টটাই শান্তকে বেশি পীড়া দিচ্ছে। এছাড়া মামলার কাগজপত্র আনা-নেয়ার ব্যাপারেও নাকি প্রশাসন চরম অসহযোগিতা করে চলেছে। প্রথম সাক্ষাতেই ছেলেটিকে বড় ভদ্র মনে হলো। জেলের মধ্যে লেখাপড়ার চর্চাটা ধরে রেখেছে, দেশ-বিদেশের সাম্প্রতিক খবরও ভালোই রাখে। আমার গ্রেফতার, রিমান্ড, পুলিশ হেফাজতে নির্যাতন, আদালত অবমাননার সাজা—সবই তার জানা। রাজনৈতিক বিশ্বাসের ক্ষেত্রে আমার কাছে মনে হয়েছে, ছেলেটির আওয়ামী লীগের প্রতি দুর্বলতা রয়েছে। তবে আওয়ামী লীগারদের অবধারিত চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য, ব্যক্তি পূজা এবং দলীয় অন্ধত্ব শান্তকে এখনও পুরোপুরি গ্রাস করতে পারেনি। ধর্মের ব্যাপারেও মনে হলো বিশ্বাসী। এমন একজন তরুণের ফাঁসি হলে বড় কষ্ট পাব।
কথায় কথায় শান্ত উলফা নেতা অনুপ চেটিয়ার রাজশাহী জেলে থাকার খবর দিল। তারও দেখলাম ঢাকার ফয়সাল আনসারির মতোই এই বিপ্লবীর সম্পর্কে উচ্চ ধারণা। আমি অনুরোধ করলাম, সে যেন ফয়সালের শুভেচ্ছা পৌঁছে দেয়। তখনও জানি না রাজশাহী ত্যাগের আগে কাজটা আমিই করে যেতে পারব।
সত্তর দশকের শেষে যখন চাকরি জীবন শুরু করেছিলাম, সেই সময় অফিসের সময়সূচি ছিল সাড়ে সাতটা থেকে আড়াইটা। আমার অফিসে পৌঁছাতে কোনোদিন সোয়া সাতটা পার হয়েছে, এমন ঘটনা স্মরণে নেই। এত সকালে নাস্তা বানাতে বিরক্ত হয়ে মা প্রায়ই জিজ্ঞেস করতেন, আমাকে অফিসে গিয়ে আগে ঝাড়ু-টাড়ু দিতে হয় কিনা। অথচ ছাত্র জীবনে আমি ছিলাম মহাকুঁড়ে এবং ফাঁকিবাজ। বুয়েটে প্রথম ঘণ্টায় নিয়মিত ক্লাস ফাঁকি দিয়েছি। এক চেষ্টাতেই যে সেখান থেকে পাস করতে পেরেছি, সেই এক পরম বিস্ময়। চাকরি জীবনে হোমড়া-চোমড়া হওয়ার সুবাদে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি, প্রধান অতিথির ডাক পেতে শুরু করার পর থেকে আয়োজকদের জ্বালা বাড়িয়েছি। আমি আয়োজকদের আগেই অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছে চেয়ার-টেবিল পাহারা দেই। সে এক মহাবিড়ম্বনা!
জীবনের শেষ প্রান্তে এসে অভ্যাস খানিকটা বদলেছি। এখন রওয়ানা হওয়ার আগে আয়োজকদের অন্তত টেলিফোনটা সেরে নেই। সেই আমার আটটা থেকে বারোটা পর্যন্ত অপেক্ষার যন্ত্রণা পাঠক কিছুটা হয়তো বুঝতে পারছেন। দীর্ঘ অপেক্ষার মাঝখানে কালামের দার্শনিকসুলভ মন্তব্যে চমকিত হয়ে শান্ত হলাম। কালাম আকাশের দিকে শূন্য দৃষ্টি মেলে অনুচ্চ কণ্ঠে বলল, এটাই জেল স্যার। আমাদের চলা-ফেরার স্বাধীনতা সব ওদের হাতে। আপনাকে যে বসিয়ে রেখেছে, এতেই ওদের আনন্দ। কালামের দার্শনিক তত্ত্ব শুনে শান্ত হয়ে ওর কাছে এক কাপ চা চাইলাম। সকাল থেকে এক ফোঁটা পানিও স্পর্শ করিনি। এ আমার আরেক দোষ। প্রিজন ভ্যানে চলার সময় টয়লেটের প্রয়োজন হলে কোথায় যাব সেই দুশ্চিন্তায় হাজিরার দিন সকাল থেকে কিছু খাই না। ঢাকা সিএমএম আদালত থেকে দুপুরের মধ্যে ফিরতে পারলে তেমন একটা অসুবিধা হয় না। আদালতের ঝামেলায় কোনোদিন সন্ধ্যা হয়ে গেলে সেদিন কিছুটা ক্ষুধা-তৃষ্ণা বোধ হয়। আজকের যাত্রা যে আরও দূরে।
চাতকের মতো তাকিয়ে থাকতে থাকতে বারোটার খানিক আগে সিআইডি জমাদার মিজানকে ওয়ার্ডের দিকে দ্রুত পায়ে আসতে দেখে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালাম। জেলগেট থেকে অবশেষে ডাক এসেছে। জেলখানায় ডিভিশন কয়েদিদের ওয়ার্ডের বাইরে একা চলাফেরা করার অনুমতি নেই। সঙ্গে হয় সুবেদার, নইলে জমাদার অবশ্যই থাকতে হবে। কারণ হিসেবে বলা হয়ে থাকে আমার মতো ‘মূল্যবান’ কয়েদিদের নিরাপত্তা বিধান। প্রকৃত উদ্দেশ্য সাধারণ আসামিদের কাছ থেকে যথাসম্ভব দূরে রাখা। আমি অবশ্য মাঝে-মধ্যে সুযোগ পেলে প্রশাসনের লোকজনের জন্য অপেক্ষা না করেই জোরে হাঁটা লাগাই। তখন জেলের সবার সঙ্গে অন্তত সালাম বিনিময়ের ফাঁকে দুই-চারটা খুচরো কথা বলা যায়। তবে এই সুযোগ কেবল হাজিরা দিয়ে অথবা সাপ্তাহিক দেখা শেষে ওয়ার্ডে ফেরার পথেই মেলে। কোথাও যাওয়ার সময় প্রশাসনের ডাকের জন্য অপেক্ষা না করে উপায় নেই।
ঢাকা থেকে রাজশাহী যাওয়ার পথে উত্তেজনাকর কিছু ঘটল না। পথের বর্ণনা করার মতো ভাষাজ্ঞান আমার নেই। তবে একটা দৃশ্যের কথা না বলে পারছি না। আপনারা যারা সর্ষেক্ষেতের সৌন্দর্য দেখেননি, তাদের সিরাজগঞ্জের বনপাড়া থেকে চলনবিলের বুক চিরে যে রাস্তাটা উত্তর দিকে গেছে, ঋতুচক্রের এই সময়ে অন্তত একবার সেখানে যেতে বলব। রাস্তার দু’পাশে মাইলের পর মাইল জুড়ে হলুদ সর্ষেক্ষেত দেখে মুগ্ধ হবেন না, এমন কাঠখোট্টা মানুষ কোটিতে দুই-একটি মিলতে পারে। ইংরেজ কবি ওয়ার্ডস্ওয়ার্থ হলুদ ড্যাফোডিল ফুল নিয়ে কালজয়ী কবিতা রচনা করে গেছেন। আর আমাদের এত সুন্দর সর্ষেফুল বাংলা ভাষায় কেবল বিপদ সঙ্কেতই হয়ে রইল। চোখে সর্ষেফুল দেখা জাতীয় প্রবাদ বাংলা ভাষায় কে আমদানি করেছিলেন জানি না, তবে কাজটা তিনি সঠিক করেননি। আমার ভাই, বন্ধু, সুহৃদ কবি ফরহাদ মজহারের নয়াকৃষির একটা বড় প্রতিষ্ঠান রয়েছে এই ঈশ্বরদীতেই। তাকে চলনবিলের সরিষার ক্ষেত নিয়ে কবিতা লিখতে ধরতে হবে। আমার সঙ্গের চার পুলিশ সদস্যও নাকি আগে কখনও এমন দিগন্ত বিস্তৃত সর্ষেক্ষেত দেখেনি। গাড়িতে বাংলাদেশের প্রকৃতি নিয়ে গল্প করতে করতেই ওদের সঙ্গে বন্ধুত্ব হয়ে গেল।
বিকেল পাঁচটায় রাজশাহী জেলের প্রধান প্রবেশ দ্বারের সামনে ছোটখাট ভিড়ে গাড়ি থামাতে হলো। মাইক্রোবাসের ভেতর দিয়ে দেখলাম, রাজশাহী বারের সভাপতি মো. আবুল কাসেম, আমার দেশ’র ব্যুরো প্রধান সরদার আনিস, রাজশাহীর জনপ্রিয় সাংবাদিক নেতা রাজু, স্থানীয় বিএনপি নেতৃবৃন্দ এবং অন্যান্য সাংবাদিক, ফটো সাংবাদিকরা আমার আগমনের অপেক্ষায় রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছেন। গাড়ি থেকে নামা সম্ভব না হওয়ায় গাড়িতে বসেই হাত নাড়লাম, ছবিও তোলা হলো। সঙ্গের পুলিশ এসকর্ট অস্বস্তি বোধ করলেও না থেমে ভিড় ঠেলে গাড়ি এগুনো সম্ভব ছিল না। পরদিন আদালতে হাজিরার সময় দেখা হবে এই কথা উপস্থিত সবাইকে বলে ভেতরে ঢুকলাম। আসামি হস্তান্তরের জন্য আমাকে ডেপুটি জেলার আবদুল্লাহ’র টেবিলে নিয়ে যাওয়া হলো। সেখানে নেয়ার পর আমার ব্যাগের জিনিসপত্র তন্ন তন্ন করে খুঁজে দেখা হলো। ভাবখানা এমন যে, আমার মতো বন্দিরা অহরহ ব্যাগে করে বেআইনি জিনিসপত্র লুকিয়ে নিয়ে আসছে।
এক জেল থেকে অন্য জেলে পুলিশ এসকর্টের পাহারায় এসেছি। তারা পথিমধ্যে আমাকে বেআইনি জিনিসপত্র সরবরাহ করেছে এমন ভাবনা পুলিশ সদস্যদের জন্য অবমাননাকর হওয়া উচিত। আমি সরকারের জন্য বিপজ্জনক ব্যক্তি হলেও কোনো দাগি আসামি নই। সবাই মিলে এত খোঁজাখুঁজির হেতু বুঝলাম না। প্রধানমন্ত্রীর পিতৃভূমি গোপালগঞ্জ জেলেও এমন অভদ্র ব্যবহার পাইনি। আজকের চেকিংয়ের ঘটা দেখে ঢাকা জেলের প্রথম রাতের কথা মনে পড়ে গেল। বেঁচে গেলাম যে, গায়ে হাত দেয়নি। আধ ঘণ্টার মধ্যে বিরক্তিকর আনুষ্ঠানিকতা সমাপ্ত করে জেলের মূল আঙিনায় পা দিলাম। শত বছরেরও অধিক পুরনো জেল রাজশাহীতে। বয়সের ছাপ সর্বত্র। ডিভিশন ওয়ার্ডে ঠাঁই মিলল না। কারণ, সেখানে উলফা নেতা অনুপ চেটিয়া আছেন। ঢাকা জেলে ফয়সালের কাছে এই ষাটোর্ধ্ব বিদ্রোহী লোকটির অনেক গল্প, অনেক প্রশংসা শুনেছি। দেখা হলে ফয়সালের শুভেচ্ছা পৌঁছে দিতে পারতাম। বুঝলাম বর্তমান পরিস্থিতিতে তার আর কোনো সম্ভাবনা নেই।
আমাকে নিয়ে যাওয়া হলো দশ নম্বর সেলের এক নম্বর কুঠুরিতে। পরিবেশ অবিকল ঢাকা জেলের সাত নম্বর সেল। ছোট গারদের মধ্যে চৌকি, টেবিল এবং চেয়ার। প্রকৃতির প্রয়োজন মেটাতে সেই আব্রুবিহীন উন্মুক্ত প্যান। দুটো বালতিতে পানি তোলা রয়েছে। কাশিমপুরে তিন মাস থেকে খানিকটা বাবুগিরি ভর করেছিল, রাজশাহীতে পুনর্মূষিক ভব। কেবল একটা দৃশ্যে মন কিছুটা প্রসন্ন হলো। বিছানাটা আনকোরা। বালিশ, লেপ, মশারি, গামছা ইত্যাদি সদ্য বাজার থেকে এসেছে, সারা ঘরে নতুন কাপড়ের গন্ধ। সুবেদার মোক্তার অনেকটা অপরাধীর মুখ করে জানাল, ডিভিশন ওয়ার্ডে ব্যবস্থা করতে না পেরে বাধ্য হয়েই আমাকে ফাঁসির আসামিদের সেলে আনা হয়েছে। আমি যেন কিছু মনে না করি। মোক্তারকে আশ্বস্ত করে বললাম, এর চেয়েও খারাপ পরিবেশে দিনের পর দিন কাটিয়েছি, মাটিতে বিছানা করে দিলেও আমার কোনো সমস্যা নেই।
রাতে জেলার ফারুক সাক্ষাত্ করে গেল। তরুণ জেল কর্মকর্তাটির ব্যবহার ভদ্রলোকের মতোই। তার আগেই অবশ্য রাতের খাবারের পাট চুকিয়েছি। থাকার ব্যবস্থা নিয়ে আমার সন্তোষের বিষয়ে জেলারের উদ্বেগের জবাবেও তাকে একইভাবে আশ্বস্ত করে শুধু একটাই অনুরোধ করলাম। জানালাম, ডিসেম্বরের সকালে গরম পানি না পেলে রাজশাহীতে গোসল করা হয়ে উঠবে না। তাই ওটা চাই। ফারুক ভরসা দিয়ে গেল, প্রত্যুষে গোসলের আগেই গরম পানি পাওয়া যাবে। নতুন পরিবেশে রাতে তেমন ঘুম হলো না। রাত কাটল জন গ্রিশাম আর জেফরি আর্চারের লেখা পুরনো বই নতুন করে পড়ে।
সকাল ন’টার মধ্যেই গোসল, নাস্তা শেষ করে আটচল্লিশ ঘণ্টার প্রতিবেশীদের সঙ্গে গল্প করে সময় কাটাতে মনস্থ করলাম। আগেই বলেছি, এই সেলে অধিকাংশই ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি, সংখ্যায় সর্বমোট আঠারো জন। পৃথিবীর অন্য কোনো দেশে বাংলাদেশের মতো এত বিপুল সংখ্যায় ফাঁসির জন্য অপেক্ষমাণ আসামি আছে কিনা, জানি না। এরা সবাই কি আসলেই দোষী? যে দেশে স্বয়ং প্রধান বিচারপতি তার নিম্ন আদালতের সহকর্মীদের ঘুষ না খাওয়ার জন্য প্রকাশ্য নসিহত করেন এবং উচ্চ আদালতের বিচারক নিয়োগ সততা, মেধা ও অভিজ্ঞতার পরিবর্তে সঙ্কীর্ণ দলীয় ভিত্তিতে হয়ে থাকে, সেই দেশে সঠিক বিচার করে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হচ্ছে, এমন দাবি মেনে নেয়া সম্ভব নয়। নিম্নআদালতে চরম দণ্ডপ্রাপ্ত এক তরুণের সঙ্গে পরিচয় হলো। ক্যাপ্টেন শান্ত রংপুরের ছেলে। বিডিআর বিদ্রোহে নিহত ডিজি মেজর জেনারেল শাকিল যখন রংপুর ক্যান্টনমেন্টের জিওসি ছিল, শান্ত তখন ওখানেই ক্যাপ্টেন। সেই সময় কোনো এক মামলায় শান্ত এবং তার বড় ভাই জড়িয়ে যায়। মামলার বৃত্তান্ত শান্তও বলল না, আমিও জানার কোনো উত্সাহ দেখালাম না। জরুরি আইনের সময় বিশেষ আদালত দুই ভাইকেই মৃত্যুদণ্ডের সাজা শুনিয়েছে। পরিবারে আর একটি মাত্র ছোট ভাই রয়েছে, যে পুলিশে চাকরি করে। শান্তর মুক্তিযোদ্ধা বাবা পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর অফিসার ছিলেন। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে শেখ মুজিব সরকার তাকে চাকরিচ্যুত করলে তিনি জাসদের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হন। শান্ত’র কাছেই শুনলাম, তার পিতা মঞ্জুর ইলাহী, মেজর (অব.) জলিল, আসম রব এবং অন্যান্য সিনিয়র জাসদ নেতার অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ছিলেন। তবে, রাজনীতিতে তিনি একেবারেই সুবিধা করতে পারেননি। শেষ পর্যন্ত একরাশ তিক্ত অভিজ্ঞতা নিয়ে অনেকটা ভগ্ন হৃদয়েই ভদ্রলোক মারা যান।
শান্ত’র মা এখনও বেঁচে আছেন। সেনাবাহিনীর এই ক্যাপ্টেনকে রংপুর থেকে সাত মাস আগে চালানে পানিশমেন্ট জেল হিসেবে পরিচিত রাজশাহীতে পাঠানো হয়েছে পানিশমেন্ট দেয়ার জন্যই। প্রশাসনের সঙ্গে তার সম্পর্ক অত্যন্ত বৈরী। মা এবং কেস পার্টনার বড় ভাইয়ের সঙ্গে দেখা করতে না পারার কষ্টটাই শান্তকে বেশি পীড়া দিচ্ছে। এছাড়া মামলার কাগজপত্র আনা-নেয়ার ব্যাপারেও নাকি প্রশাসন চরম অসহযোগিতা করে চলেছে। প্রথম সাক্ষাতেই ছেলেটিকে বড় ভদ্র মনে হলো। জেলের মধ্যে লেখাপড়ার চর্চাটা ধরে রেখেছে, দেশ-বিদেশের সাম্প্রতিক খবরও ভালোই রাখে। আমার গ্রেফতার, রিমান্ড, পুলিশ হেফাজতে নির্যাতন, আদালত অবমাননার সাজা—সবই তার জানা। রাজনৈতিক বিশ্বাসের ক্ষেত্রে আমার কাছে মনে হয়েছে, ছেলেটির আওয়ামী লীগের প্রতি দুর্বলতা রয়েছে। তবে আওয়ামী লীগারদের অবধারিত চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য, ব্যক্তি পূজা এবং দলীয় অন্ধত্ব শান্তকে এখনও পুরোপুরি গ্রাস করতে পারেনি। ধর্মের ব্যাপারেও মনে হলো বিশ্বাসী। এমন একজন তরুণের ফাঁসি হলে বড় কষ্ট পাব।
কথায় কথায় শান্ত উলফা নেতা অনুপ চেটিয়ার রাজশাহী জেলে থাকার খবর দিল। তারও দেখলাম ঢাকার ফয়সাল আনসারির মতোই এই বিপ্লবীর সম্পর্কে উচ্চ ধারণা। আমি অনুরোধ করলাম, সে যেন ফয়সালের শুভেচ্ছা পৌঁছে দেয়। তখনও জানি না রাজশাহী ত্যাগের আগে কাজটা আমিই করে যেতে পারব।
No comments