মাহমুদুর রহমানের মন্তব্য প্রতিবেদনঃ আদালতের মর্যাদা
আদালত অবমাননার দুটো মামলায় সর্বোচ্চ আদালত কর্তৃক দেশের আইনে নির্ধারিত সর্বোচ্চেরও অধিক সাজায় দণ্ডিত হওয়ার পর আদালত নিয়ে আবারও লেখার এই দুঃসাহসে আমার মস্তিষ্কের সুস্থতা সম্পর্কে কেউ যদি সন্দিহান হয়ে পড়েন, তবে তাকে দোষ দেয়া যাবে না। কিন্তু আমি নিরুপায়। ‘স্বাধীন বিচারের নামে তামাশা’ শীর্ষক প্রতিবেদনে সেই যে খানিকটা অহংবোধ তাড়িত হয়ে লিখেছিলাম, ‘শুধু এটুকু আগাম বলে রাখছি, সত্য কথা প্রকাশের অপরাধে কারাগারে যেতে আমি বরং গৌরবই বোধ করব। কারাগার থেকে জীবিত ফিরে আসতে পারলে আবার সত্য কথা বলব ও লিখব, প্রয়োজনে পুনর্বার কারাগারে যাব,’ সেটাই আমার কাল হয়েছে।
পেশায় রাজনীতিবিদ হলে বিপদ বুঝে কথা ঘুরিয়ে বলতে পারতাম—‘রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু নেই, পুনর্বার কারাগারে যাওয়ার খায়েশ আমার ২৯০ দিনেই মিটে গেছে।’ সাবেক প্রধান বিচারপতি এবং আমার একসময়ের বাড়িওয়ালা মো. ফজলুল করিমের দেয়া বিখ্যাত ‘চান্স সম্পাদক’ বিশেষণটাও আমার কাঁধে অতিরিক্ত বোঝা চাপিয়েছে। ব্রাহ্মণ সম্পাদকরা যত সহজে মাফ চেয়ে পার পেয়ে যান, বাংলাদেশের ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় চান্স সম্পাদকরা সেই কর্মটি কেন যেন তেমনভাবে করতে পারেন না।
পাকিস্তান আমলে হঠাত্ করে সাংবাদিকতায় এসে দূরদর্শী রাজনীতিবিদ তফাজ্জল হোসেন মানিক মিঞা তাঁর আপসহীনতার কারণে ইত্তেফাক পত্রিকাকে কেবল পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালির স্বাধিকার সংগ্রামের অন্যতম মুখপত্ররূপেই দাঁড় করাননি; অধিকন্তু, সাংবাদিকতার ইনস্টিটিউশন নির্মাণ করতে পেরেছিলেন। তিনি আইয়ুব, ইয়াহিয়া কোনো সামরিক স্বৈরশাসকের কাছেই মাথা নোয়াননি। বাংলাদেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি আল মাহমুদ তত্কালীন প্রতিবাদী গণকণ্ঠ পত্রিকা সম্পাদনার দায়িত্ব অকুতোভয়ে পালন করে শেখ মুজিবুর রহমানের একদলীয় বাকশাল সরকারের কারাগারে দীর্ঘদিন ধরে নির্যাতিত হয়েছেন। সরকারি চাকরি ছেড়ে পাকিস্তান অবজারভার পত্রিকার সম্পাদকের দায়িত্ব নিয়ে কালজয়ী সম্পাদকে রূপান্তরিত হওয়া আবদুস সালাম একই ফ্যাসিবাদী সরকারের সমালোচনা করে সম্পাদকীয় লেখার অপরাধে চাকরিচ্যুত হয়েছেন।
সংবাদপত্র জগতের যে তিনজন প্রাতঃস্মরণীয় ব্যক্তির নাম উল্লেখ করলাম, তাঁরা কেউই রিপোর্টার, সাব-এডিটরের চাকরিতে ঢুকে পদোন্নতিপ্রাপ্ত হয়ে সম্পাদক হননি। অবশ্য কবি আল মাহমুদ এক সময় ইত্তেফাকে রিডিং সেকশনে চাকরী করেছেন। অথচ তাঁরা প্রত্যেকে প্রকাণ্ড শালবৃক্ষের মতো মাথা উঁচু করে বাংলাদেশের গণমাধ্যম জগতে দাঁড়িয়ে আলো ছড়াচ্ছেন। আমি লেখালেখি করার সুবাদে সংবাদপত্র জগতে ঢুকেছি, এখনও নবিশ মাত্র। যাঁদের নাম বললাম, তাঁদের সঙ্গে আমার তুলনার কল্পনাটাও ধৃষ্টতা। তবে এঁদের সংগ্রামী জীবন আমাকে স্বাধীন ও সাহসী সাংবাদিকতার আদর্শে অনুপ্রাণিত করেছে। অপরদিকে আমরা দেখতে পাচ্ছি, সাম্প্রতিক সময়ের সর্বাধিক প্রচারিত পত্রিকার নমস্য ‘সেক্যুলার’ পেশাদার সম্পাদক কত সহজে উল্টো মেরুর ‘মৌলবাদী’ খতিবের কাছে জোড়হস্তে ক্ষমা ভিক্ষা করে পারও পেয়ে যান আবার সমাজে বুক ফুলিয়ে বিচরণও করেন। হাজার হলেও সংবাদপত্রের ‘ব্রাহ্মণ’ বলে কথা। সেনাশাসনকে স্বাগত জানিয়ে ‘মাইনাস টু’-এর পক্ষে ওকালতি করে পরবর্তী সময়ে গণেশ ওল্টালে ভোল পাল্টে গণতন্ত্রের জন্য মায়াকান্না কাঁদতেও এই ‘মহান’ ব্যক্তিদের কোনো সমস্যাই হয় না। আমার যেহেতু ‘স্বভাব যায় না ম’লে’ তাই জনগুরুত্বের বিবেচনায় আদালত নিয়ে আবারও না লিখে উপায় নেই। গৌরচন্দ্রিকা অনেক হলো, এবার মূল বিষয়ে আসি।
বিচার বিভাগের প্রকৃত স্বাধীনতা নিয়ে নানা বিতর্ক বাংলাদেশে আগে থেকে থাকলেও জেনারেল মইনের সাংবিধানিকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ সরকার এই বিতর্ককে ভিন্ন মাত্রায় নিয়ে যায়। ওই গণবিরোধী সরকারের আগে গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের আদালতে উপস্থিত থেকে বিচার প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণের অপসংস্কৃতি অন্তত এদেশে ছিল না। অবশ্য স্বীকার করতে হবে হাইকোর্ট প্রাঙ্গণে বস্তি বসানো, বিচারকদের ভয় দেখানোর জন্য লাঠি মিছিল করা, প্রধান বিচারপতির এজলাসসহ সুপ্রিমকোর্ট প্রাঙ্গণে তাণ্ডব চালানোর অভিজ্ঞতা দুর্বিনীত রাজনীতিবিদ ও দলবাজ আইনজীবীদের কল্যাণে দেশবাসী আগেই অর্জন করেছে। অ্যাটর্নি জেনারেলসহ আজ সরকারপক্ষের যেসব আইনজীবী উচ্চ আদালতের মর্যাদা রক্ষার জন্য দিবারাত্র মায়াকান্না কাঁদছেন, তাদের মধ্যে অনেকেই সেইসব তাণ্ডবে তখন নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।
আমাদের মতো সমাজের সুবিধাভোগী এলিট শ্রেণীর অধিকাংশই সময়-সুযোগমত নীতিকথা কপচাতে অভ্যস্ত। বর্তমান সরকারের আমলে বিচার বিভাগের মর্যাদা কোন্ গহ্বরে নেমেছে, সেটা বোঝার জন্য ক’দিন আগে হাইকোর্টে একটি বিশেষ বেঞ্চের ঘটনাবলী স্মরণ করলেই চলবে। বিচারব্যবস্থার সার্বিক অবক্ষয়ে বেদনাহত হয়ে সাবেক শ্রদ্ধেয় প্রধান বিচারপতি মোস্তফা কামাল তাঁর চরিত্রগত নীরবতা ভেঙে প্রথম আলো’য় লিখেছেন, ‘সুপ্রিমকোর্ট একটি পরিশীলিত প্রতিষ্ঠান। বার এবং বেঞ্চ উভয়েরই উচিত এই স্থানকে রাজনীতির কলুষমুক্ত রাখা, সেখানে বার এবং বেঞ্চ কোনো পক্ষ থেকেই এমন প্রকাশ্য উচ্চারণ হওয়া উচিত নয় যে তারা বিশেষ একটা কিছু সহ্য করবেন না এবং এমন কথা বলবেন না যাতে আপনাদের অসহিষ্ণুতা বা বিচারকসুলভ সংযমের বিপরীতে ক্রুদ্ধতা বা আক্রোশের মনোভাব প্রকাশ পায়। ক্রমাগতভাবে এবং অতি দ্রুত সুপ্রিমকোর্টের এই অস্বাভাবিক অবস্থা আমার কাছে বড় বেদনাদায়ক।’
মাননীয় বিচারপতিদের অসহনীয় ক্রোধ ও ব্যক্তিগত আক্রোশের যে বহিঃপ্রকাশ আমি ব্যক্তিগতভাবে দেখেছি, তার খানিকটা বর্ণনা আমার ধারাবাহিক ‘জেল থেকে জেলে’ লেখায় দেয়ার চেষ্টা করেছি।
আমার দেশ পত্রিকার পাঠকরা অবহিত আছেন যে, আমি দু’টি আদালত অবমাননার মামলায় দণ্ডিত হয়েছি। ‘স্বাধীন বিচারের নামে তামাশা’ শীর্ষক মন্তব্য প্রতিবেদন লেখার অপরাধে একটি মামলা রুজু হয়েছিল। ২০১০ সালে আমার গ্রেফতারের মাত্র তিন সপ্তাহ আগে ১০ মে উল্লিখিত মন্তব্য প্রতিবেদনের এক জায়গায় লিখেছিলাম, ‘একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আমাদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে হলে মাননীয় বিচারকদের সঙ্কীর্ণ দলীয় চিন্তাধারা অতিক্রম করে কেবল সংবিধান ও দেশের আইন দ্বারা পরিচালিত হওয়া অত্যাবশ্যকীয়। আমাদের প্রধান দুই রাজনৈতিক দল বিচার বিভাগকে দলীয়করণের যে মন্দ প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়েছে, সেখান থেকে তারা নিবৃত্ত না হলে জাতি হিসেবে আমরা ক্রমেই অনিবার্য ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যাব।’ শ্রদ্ধেয় সাবেক প্রধান বিচারপতি মোস্তফা কামাল অনেক পরিশীলিতভাবে এবং উচ্চমানের ভাষা প্রয়োগে আজ জাতিকে যা বলছেন, তার সঙ্গে আমার দুর্বল লেখার ভাবার্থগত তেমন কোনো তফাত্ না থাকলেও আদালতের মর্যাদা ক্ষুণ্নের দায়ে আমাকে দণ্ড প্রদান করা হয়েছিল।
এই প্রসঙ্গে প্রথম মামলার শুনানিকালীন একটা ঘটনার কথা মনে পড়ে গেল। আপিল বিভাগে আত্মপক্ষ সমর্থনকালে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমান এবং সুপ্রিমকোর্টের প্রখ্যাত আইনজীবী ও একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের প্রধান ড. শাহদীন মালিকের বক্তব্য তথ্য-প্রমাণ সহকারে উদ্ধৃত করে প্রমাণ করার চেষ্টা করেছিলাম যে, তারাও বিচার বিভাগ নিয়ে আমার মতোই উদ্বিগ্ন। পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ অনুযায়ী তাদের সমালোচনার ভাষাও আমার চেয়ে অনেক তীব্র এবং সরাসরি ছিল। আমার ডিফেন্স ছিল, সংবিধানের ২৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সকল নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান এবং আইনের সমান আশ্রয় লাভের অধিকারী। সুতরাং, কেবল আমাকে সাজা দেয়া হলে সেটা সংবিধানের লঙ্ঘন হবে। আপিল বিভাগের মাননীয় বিচারপতি এমএ মতিন আমার যুক্তি আমলে না নিয়ে মন্তব্য করেছিলেন, দেশের দুই বিশিষ্ট নাগরিকের মন্তব্য নাকি ‘below contempt’। আমি আইনের ছাত্র নই বিধায় সেই ‘below contempt’-এর অর্থোদ্ধার আজ পর্যন্ত করতে পারিনি। শুধু এটুকু বুঝেছি, বাংলাদেশের আইনের শাসনের সংজ্ঞায় একই অপরাধে সময় ও সরকারভেদে ভিন্ন ফল অসহায় নাগরিকদের মেনে নিতে হয়।
ভিন্ন ফলের একটা সাম্প্রতিক উদাহরণ দেয়া যাক। হাইকোর্টের বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক এবং বিচারপতি গোবিন্দ চন্দ্র ঠাকুরের বেঞ্চে অপ্রীতিকর ঘটনার রেশ ধরে ১৪ জন আইনজীবীর বিরুদ্ধে পুলিশ অধুনা তাদের বহুল ব্যবহৃত ‘কর্তব্য কাজে বাধা দেয়ার’ মামলা দায়ের করে। সেই মামলায় নিম্ন আদালতে জামিন চাওয়া হলে সেই আবেদন প্রথম দফায় নামঞ্জুর হয়। ওইদিন বিকালে অভিযুক্ত আইনজীবীরা পুলিশি হেফাজতেই বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিকের বেঞ্চে হাজির হয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করলে তাদের বিরুদ্ধে আগে দায়েরকৃত আদালত অবমাননা মামলার রুলের নিষ্পত্তি হয় এবং আদালত তাদের ক্ষমা করে দেন। যেহেতু পুলিশের কর্তব্য কাজে বাধা প্রদান মামলায় তাদের সকালে নিম্ন আদালতে জামিন দেয়া হয়নি, কাজেই সবাইকে হাইকোর্ট থেকে কারাগারে যেতে হয়। দুই দিন কারাভোগের পর নাজিমউদ্দিন রোড থেকে নিম্ন আদালতে তাদের হাজির করে দ্বিতীয়বার জামিন প্রার্থনা করা হলে এবার ম্যাজিস্ট্রেট মহোদয়ের মন গলে! একজন অভিযুক্ত আইনজীবী এর আগেই পুলিশি নির্যাতনে মৃত্যুপথযাত্রী হয়ে হাসপাতালে থাকায় তিনি ছাড়া বাদবাকি ১৩ আইনজীবী অবশেষে জেল থেকে মুক্তিলাভ করেন। একই মামলার জামিনের আবেদন আটচল্লিশ ঘণ্টার মধ্যে একই ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দুই রকমভাবে নিষ্পত্তির মাধ্যমে বাংলাদেশে বিচার বিভাগের তথাকথিত স্বাধীনতার করুণচিত্র ফুটে উঠেছে।
এই ঘটনার প্রারম্ভে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সুপ্রিমকোর্ট বারের সভাপতি খন্দকার মাহবুব হোসেনের সমঝোতার অনুরোধ অবজ্ঞাভরে প্রত্যাখ্যান করে বলেছিলেন, আগে সবাইকে জেলে পাঠান, তারপর দেখা যাবে। শেষ পর্যন্ত অ্যাটর্নি জেনারেলের সব ইচ্ছাই পূর্ণ হয়েছে। বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের জেলের ভাত খাইয়ে তারপরই কেবল অ্যাটর্নি জেনারেল তাদের মুক্তি এবং সনদ রক্ষার ব্যবস্থা করেছেন। ২০০৬ সালের নভেম্বরে যখন প্রধান বিচারপতির এজলাসে আওয়ামী আইনজীবী গোষ্ঠী নিয়ন্ত্রণাধীন বারের নেতৃত্বে ভাংচুর চলছিল, সুপ্রিমকোর্ট প্রাঙ্গণে আওয়ামীপন্থী আইনজীবীরা সাবেক আইন প্রতিমন্ত্রী ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমরের গাড়ি নিয়ে বহ্ন্যুত্সব করছিলেন, সেই সময় আজকের ‘নীতিবান’, দোর্দণ্ডপ্রতাপ অ্যাটর্নি জেনারেল আদালতের উচ্চ মর্যাদা রক্ষার জন্য কোনো রকম পদক্ষেপ নিয়েছিলেন কিনা, সেটি জানতে চাইলে আশা করি নতুন করে আদালত অবমাননা মামলায় অভিযুক্ত হব না। এদেশের শাসকশ্রেণীর কপটতা এবং ভণ্ডামির বোধহয় কোনো সীমা-পরিসীমা নেই।
বাংলাদেশের উচ্চ আদালতের বর্তমান বিতর্কিত অবস্থার জন্য যদি একজন ব্যক্তিকে সর্বাধিক দায়ী করতে হয়, তাহলে তিনি অবশ্যই সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক। Judicial Activism-এর মোড়কে বিভিন্ন ইস্যুতে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত রায় প্রদান করে তিনি বাংলাদেশকে চিরস্থায়ী বিভাজনের দিকে ঠেলে দিয়েছেন। এই ব্যক্তি প্রধান বিচারপতির আসনে বসে মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমানকে উপহাস করেছেন, তাঁর স্বাধীনতার ঘোষণা দেয়ার গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসকে এক লহমায় ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে আদালতে স্বাধীনতা সংগ্রামের নব ইতিহাস রচনা করেছেন, সর্বক্ষণ মুখে কোরআন-হাদিসের কথা বলে নির্দ্বিধায় সংবিধানের মূলনীতি থেকে আল্লাহর প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস বাতিল করেছেন, বেগম খালেদা জিয়ার ঢাকা ক্যান্টনমেন্টস্থ চার দশকের গৃহ ছিনিয়ে নিয়েছেন এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে একদলীয় ফ্যাসিবাদী শাসনব্যবস্থা বাকশাল পুনরুজ্জীবনের সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছেন।
প্রচারপ্রিয় সাবেক এই প্রধান বিচারপতি কর্তৃক প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে টাকা প্রাপ্তির ঘটনা গণমাধ্যমে ফাঁস হয়ে যাওয়ার পর থেকে অবশ্য তিনি জনসমক্ষে আর আসছেন না। আমার দেশ পত্রিকার সাংবাদিক ত্রাণ তহবিলের বিষয়ে তার মন্তব্য জানতে চাইলে একসময়ের ‘অসীম সাহসী’ এবং অ্যাটর্নি জেনারেলের মতানুসারে শতাব্দীর সেরা বিচারপতি অনেকটা অনুনয়-বিনয় করেই বলেছেন— ‘Please, leave me alone’। উচ্চ আদালতকে চরমভাবে বিতর্কিত করে ও দেশকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে অস্থিতিশীলতার দিকে ঠেলে দিয়ে এখন তার এই নিভৃতচারী জীবনযাপনের আকাঙ্ক্ষা পূরণ হবে কিনা, তার জবাব মহাকালের হাতে।
আদালতের মর্যাদা রক্ষার প্রয়োজনীয়তার ব্যাপারে দলমত নির্বিশেষে সমাজে কোনো দ্বিমত নেই। উচ্চ আদালতের অস্বাভাবিক পরিস্থিতি কোনো নাগরিকের কাম্য হতে পারে না। কিন্তু, অন্যান্য প্রাসঙ্গিক সমস্যা জিইয়ে রেখে আদালত অবমাননা আইনের ঘন ঘন প্রয়োগের মাধ্যমে এই মর্যাদা রক্ষিত তো হবেই না, বরং আদালতের অধিকতর বিতর্কিত হয়ে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হতে পারে। চরম ফ্যাসিবাদী শাসনামলে বাক ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা এমনিতেই হুমকির সম্মুখীন হয়েছে। এর সঙ্গে আদালত অবমাননার খাঁড়া যুক্ত হলে স্বাধীন গণমাধ্যমের পক্ষে দায়িত্ব পালন করা কোনোক্রমেই সম্ভব হবে না। সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীতে ৭(ক) এবং ৭(খ) অনুচ্ছেদ আনয়ন করে জনগণের অধিকার হরণের বন্দোবস্ত পাকাপোক্ত করা হয়েছে। যে সংবিধান জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিচ্ছবি হওয়া উচিত, সেই সংবিধানের কোনোরূপ সমালোচনাকারীকে রাষ্ট্রদ্রোহী বিশেষণে আখ্যায়িত করে ফাঁসিতে ঝোলানোর ব্যবস্থার মাধ্যমে বাংলাদেশকে বিশ্বের সর্বাপেক্ষা বিপজ্জনক পুলিশি রাষ্ট্রে পরিণত করা হয়েছে। মানবাধিকারের এত বড় লঙ্ঘনকে কোনো স্বাধীনচেতা নাগরিক মেনে নিতে পারে না। অথচ একই সংবিধানের তৃতীয় ভাগ অর্থাত্ মৌলিক অধিকার সম্পর্কিত বিধানাবলীর ২৬(১) এবং ২৬(২) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে,
২৬। (১) এই ভাগের বিধানাবলীর সহিত অসমঞ্জস সকল প্রচলিত আইন যতখানি অসামঞ্জস্যপূর্ণ, এই সংবিধান-প্রবর্তন হইতে সেই সকল আইনের ততখানি বাতিল হইয়া যাইবে।
(২) রাষ্ট্র এই ভাগের কোন বিধানের সহিত অসমঞ্জস কোন আইন প্রণয়ন করিবেন না এবং অনুরূপ কোন আইন প্রণীত হইলে তাহা এই ভাগের কোন বিধানের সহিত যতখানি অসামঞ্জস্যপূর্ণ, ততখানি বাতিল হইয়া যাইবে।
মৌলিক অধিকারের অন্যতম, ‘চিন্তা, বিবেক ও বাকস্বাধীনতার’ সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ ৭(ক) এবং ৭(খ) অনুচ্ছেদ সংবিধান থেকে কেন বাতিল হবে না এই প্রশ্নে দেশের নাগরিককে সমালোচনার অধিকার থেকেও বঞ্চিত করার প্রয়াস যারা নিচ্ছেন, তাদেরকে ফ্যাসিবাদের দোসররূপে চিহ্নিত না করার কোনো কারণ নেই। স্ববিরোধী সংবিধান প্রণয়নের জন্য কোনো নোবেল পুরস্কার দেয়া হলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মহাজোট সংসদ সদস্যরা যে পঞ্চদশ সংশোধনী প্রণয়নের কারণে সেই পুরস্কারের একমাত্র দাবিদার হতেন, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
মোদ্দা কথা হলো, রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে বর্তমান শাসকশ্রেণী বাংলাদেশের জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করে যেভাবে জুলুম করে চলেছে, তার অবসান হওয়া জরুরি। যে দেশে নাগরিকের ন্যূনতম মর্যাদা নেই, সেই দেশে আদালত কেন, কারও মর্যাদা রক্ষা করাই সম্ভব নয়। একমাত্র পারস্পরিক মর্যাদাবোধই আমাদের এই দেশটিকে আসন্ন সর্বনাশ থেকে উদ্ধার করতে পারে। জনগণ এবং রাষ্ট্রের মধ্যে একপ্রকার অলিখিত চুক্তির মাধ্যমেই একটি রাষ্ট্রব্যবস্থা টিকে থাকে। ক্ষমতা কুক্ষিগত করার উদগ্র নেশায় লুটেরা শাসকশ্রেণী যখন সেই চুক্তি একতরফাভাবে ভাঙতে শুরু করে, তখন রাষ্ট্রেরও বিনাশ আরম্ভ হয়। বাংলাদেশে আজ প্রতিটি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান দলীয়করণের নগ্ন থাবায় ক্ষতবিক্ষত হয়েছে। আদালতও দলীয়করণের সর্বগ্রাসী বিস্তার থেকে বাঁচতে পারেনি।
এই রাষ্ট্রব্যবস্থা টিকে থাকতে হলে দলমত নির্বিশেষে সম্মিলিতভাবে সব শ্রেণী-পেশার জনগণকে প্রয়াস নিতে হবে, যাতে আদালত প্রাঙ্গণকে দলীয়করণের কলুষমুক্ত করে সেখানে ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করা যায়। তবে এক্ষেত্রে সবচেয়ে মূল্যবান অবদান রাখতে পারেন মাননীয় বিচারকগণ এবং আইন পেশায় নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গ। বিচারপতিগণ যাতে সব বিতর্কের ঊর্ধ্বে অবস্থান করেন, সেই লক্ষ্য পূরণেই ২০০০ সালের ৭ মে সংবিধানের ৯৬(৪)(ক) নম্বর অনুচ্ছেদের আলোকে তত্কালীন প্রধান বিচারপতি লতিফুর রহমান, বিচারপতি বিমলেন্দু বিকাশ রায় চৌধুরী এবং বিচারপতি এএম মাহমুদুর রহমান উচ্চ আদালতের মাননীয় বিচারপতিদের জন্য আচরণবিধিমালা (Code of Conduct) প্রণয়ন করেন। সেই আচরণবিধির ৩(৩) ধারায় বলা হয়েছে, ‘A judge should be patient, dignified, respectful, and courteous to litigants, lawyers and others with whom the judge deals in an official capacity.’
(একজন বিচারক মোকদ্দমাকারী, আইনজীবী এবং অন্যান্য ব্যক্তিবর্গ যাদের সঙ্গে তিনি দাফতরিক দায়িত্ব পালনজনিত সম্পর্ক বজায় রাখছেন তাদের প্রতি ধৈর্যশীল, মর্যাদাপূর্ণ, সশ্রদ্ধ এবং ভদ্র আচরণ করবেন)
সাবেক সচিব মো. আসাফউদ্দৌলাহ্, কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ অথবা আমার মামলার শুনানিকালে মাননীয় বিচারপতিগণ সাবেক প্রধান বিচারপতি লতিফুর রহমান প্রণীত এই আচরণবিধি পালন করেননি। একই আচরণবিধির ৬ এবং ১৩নং ধারায় লেখা আছে,
6. A judge must not enter into public debate or express his views in public on political matters or on matters that are pending or are likely to arise for judicial determination before him.
(একজন বিচারক কোনো অবস্থাতেই প্রকাশ্য বিতর্কে জড়াবেন না কিংবা রাজনৈতিক বিষয়ে প্রকাশ্যে কোনো মতামত ব্যক্ত করবেন না কিংবা তার বিচারাধীন কোনো মামলার বিষয়ে মন্তব্য করবেন না।)
13. A judge should not engage in any political activities, whatsoever in the country and abroad.
(একজন বিচারক দেশে কিংবা বিদেশে কোনো ধরনের রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করবেন না।)
উচ্চ আদালতের বিচারপতিদের এই আচরণবিধির প্রেক্ষিতে ইংরেজি দৈনিক দি ডেইলি স্টারের একটি সংবাদের প্রতি পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। ২০১০ সালের ২৬ নভেম্বর পত্রিকাটিতে প্রকাশিত সংবাদের অংশবিশেষ এখানে উদ্ধৃত করছি,
‘Justice AHM Shamsuddin Chowdhury Manik, a sitting judge of the High Court, said Bangabandhu Sheikh Mujibur Rahman formed BAKSAL in 1975 to unite the nation for the welfare of the people, and even Ziaur Rahman was a member of the party.
He told at a function at Dhaka Reporters Unity (DRU) yesterday on the occasion of launching of a website on the Bangabandhu murder case.’
(বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, হাইকোর্টের একজন দায়িত্ব পালনরত জজ বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জনগণের কল্যাণার্থে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করার জন্য ১৯৭৫ সালে বাকশাল গঠন করেন এবং এমনকি জিয়াউর রহমানও দলটির একজন সদস্য ছিলেন।
গতকাল বঙ্গবন্ধু হত্যামামলা সংক্রান্ত একটি ওয়েবসাইট উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এসব কথা বলেন।)
ডেইলি স্টারে বর্ণিত ওই অনুষ্ঠানে বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক মরহুম জিয়াউর রহমান সম্পর্কে অনেক নেতিবাচক মন্তব্য করেন। এর আগে ২০১০ সালের ৫ এপ্রিল দৈনিক আমার দেশ পত্রিকায় একই বিচারপতির লন্ডনে আওয়ামী লীগ ও ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। ওই সংবাদে লেখা হয়, ‘বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের একজন বিচারপতি লন্ডনে গিয়ে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি, আওয়ামী লীগ নেতা এবং আওয়ামী ঘরানার আইনজীবীদের সঙ্গে বৈঠক ও আলোচনা সভায় যোগদানের ঘটনায় লন্ডনে তোলপাড় চলছে। বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী (মানিক) লন্ডন সফরে গিয়ে গত ১ এপ্রিল রাতে পূর্ব লন্ডনের ডকল্যান্ড মেমসাব রেস্টুরেন্টে এই বৈঠক করেন। আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের সভাপতি অ্যাডভোকেট হাফিজুর রহমান মিনারের সভাপতিত্বে ব্যানার টাঙিয়ে আয়োজিত এ আলোচনা সভায় বাংলাদেশ পরিস্থিতি, রাজনৈতিক প্রসঙ্গ, আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারসহ নানা প্রসঙ্গ স্থান পায়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সাংবাদিক গাফফার চৌধুরী, মুখ্য আলোচক ছিলেন বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী ও বিশেষ অতিথি ছিলেন ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শাহরিয়ার কবির।’
অধিকন্তু ইসলামী ঐক্যজোটের এক অংশের আমির মুফতি ফজলুল হক আমিনীর বিরুদ্ধে দায়ের করা সাম্প্রতিক বহুল আলোচিত রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার বাদী ছিলেন ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শাহরিয়ার কবির। তার সঙ্গে লন্ডনের রেস্টুরেন্টে অনুষ্ঠিত বৈঠকের সূত্র ধরে রীতি অনুযায়ী বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী (মানিক) ওই মামলার শুনানিতে বিব্রত বোধ করতে পারতেন কি না, এই প্রশ্ন করার অধিকার বাংলাদেশের নাগরিকদের রয়েছে। মাননীয় বিচারপতিদের Code of conduct-এর ১১ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, ‘Every judge must at all times be conscious that he is under public gaze and there should be no act or omission by him which is unbecoming of his office.’
(প্রত্যেক বিচারপতিকে সর্বক্ষণ স্মরণে রাখতে হবে যে তারা জনগণের প্রখর দৃষ্টির মধ্যে রয়েছেন এবং এমন কোনো কাজ কিংবা ত্রুটি করা যাবে না যা বিচারপতি পদের সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ।)
সভ্য রাষ্ট্রগুলোর বিচারব্যবস্থার অনেক ক্ষেত্রেই এই প্রকার Convention আইনের মতোই অবশ্যপালনীয়।
উভয় ঘটনাতেই মাননীয় বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক সুস্পষ্টভাবে ২০০০ সালে প্রণীত উচ্চ আদালতের বিচারকদের আচরণবিধির ৬ এবং ১৩ নম্বর ধারা লঙ্ঘন করেছেন। এখন প্রশ্ন উঠতে পারে, এই আচরণবিধি মেনে চলা উচ্চ আদালতের বিচারপতিদের জন্য আদৌ বাধ্যতামূলক কিনা, কিংবা ওই আচরণবিধি এখনও বলবত্ আছে কিনা। বিচারাঙ্গনের মর্যাদা ও পবিত্রতা রক্ষায় এসব প্রশ্নের জবাব মাননীয় প্রধান বিচারপতি জাতিকে জানাবেন বলেই আমরা প্রত্যাশা করি। বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিকের আদালতে সংঘটিত একটি অপ্রীতিকর ঘটনার জের ধরে হাইকোর্টের আইনজীবী এবং সাবেক ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এমইউ আহমেদ পুলিশ হেফাজতে নির্যাতিত হয়ে আজ দুই সপ্তাহের অধিককাল ধরে সংজ্ঞাহীন অবস্থায় মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন। আগের রীতি অনুসরণ করে তাকে উচ্চ আদালত থেকে আগাম জামিন দেয়া হলে ফ্যাসিবাদী সরকারের পেটোয়া পুলিশ তার ওপর বর্বর নির্যাতন করার সুযোগ পেত না। মৃত্যুপথযাত্রী অ্যাডভোকেট এমইউ আহমেদের শেষ পর্যন্ত স্থায়ী কোনো ক্ষতিসাধন হয়ে গেলে তার দায়ভার কে বহন করবেন, সে সম্পর্কেও চিন্তাভাবনা করা প্রয়োজন।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘সবুজ মাঠ পেরিয়ে’ শিরোনামের একটি লেখা গত বছর ডিসেম্বরের সাত তারিখে প্রথম আলো পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল। সেই লেখা থেকে বাংলাদেশের বিচার বিভাগ সম্পর্কিত একটি অংশ উদ্ধৃত করেই আজকের মন্তব্য-প্রতিবেদনের ইতি টানব। শেখ হাসিনা লিখেছেন,
‘সবসময় একটা চাপ যেন আদালতে রয়েছে। আমার শুধু মনে হয়, এই বিচার হচ্ছে? এত প্রহসন, বিচারের নামে প্রহসন চলছে। বিচারকেরা কি তাঁদের বিবেক, চিন্তা, জ্ঞান ও বুদ্ধি বিবেচনা দিয়ে বিচার করতে পারেন? বিচারকেরা তো সংবিধান মোতাবেক শপথ নিয়ে থাকেন, সেই শপথ কি রক্ষা করতে পারেন?
হাইকোর্টের একজন বিচারপতি তো প্রকাশ্যে বলেই দিলেন, শপথ মোতাবেক কাজ করতে পারছেন না। উচ্চ আদালতের যদি এ অবস্থা হয়, তাহলে নিম্ন আদালতের কী অবস্থা হতে পারে, তা অনুধাবন করা যায়। খুব ঢাকঢোল পিটিয়ে বিচার বিভাগ স্বাধীন করা হলো, কিন্তু তা মুখের কথায় ও কাগজে-কলমেই। বিচারকদের ওপর গোয়েন্দাদের চাপ অব্যাহতভাবে রয়েছে, তা দেখাই যায়। হাইকোর্ট রায় দিলেই তা যদি পক্ষে যায়, সুপ্রীম কোর্ট স্থগিত করে দেন। শেষ পর্যন্ত কোর্টও বদলে যায়। প্রধান বিচারপতির সঙ্গে দেখা করে সরকারের বিশেষ দূত নিজেই নাকি আমাকে জামিন দিতে নিষেধ করেছিলেন। সুপ্রীম কোর্টকেই যদি নির্দেশ শুনতে হয়, সর্বোচ্চ আদালত যদি স্বাধীন না হন, তাহলে নিম্ন আদালতের অবস্থা কী, তা তো অনুধাবন করা যায়।
মামলার রায় কী হবে, তার ‘ওহি নাজেল’ হয়, যা নির্দেশ দেওয়া হবে, তা-ই রায় দেবে। ১ নভেম্বর ২০০৭ বিচার বিভাগ নির্বাহী বিভাগ থেকে পৃথক করা হয়েছে। আমার প্রশ্ন, ১ নভেম্বরের আগে বিচার বিভাগের অবস্থা ও পরে অর্থাত্ বর্তমানের অবস্থা তুলনা করলেই বের হয়ে যাবে বিচার বিভাগ কতটুকু স্বাধীনতা পেয়েছে। মানুষের সঙ্গে এ প্রহসন কেন?’
এই লেখায় আদালতের মর্যাদার কোনো হানিসাধন হয়েছে কিনা, সে বিচারের ভার পাঠকের হাতে অর্পণ করলাম।
No comments