১৪- এজলাস ভাঙচুর করে পুরস্কৃত হলেন এক আইনজীবী : এভাবে অন্যরাও সন্ত্রাসে উৎসাহিত হবে
সর্বব্যাপী অবক্ষয়, বিচারাঙ্গনে দুর্নীতি
... দেশের উচ্চতম আদালতের সর্বোচ্চ পদে অধিষ্ঠিত ব্যক্তির কাছ থেকে জনগণ যে নিরপেক্ষতা প্রত্যাশা করেন, বাংলাদেশে কিছুদিন ধরে তার ব্যত্যয় ঘটে চলেছে। জাতি হিসেবে সর্বব্যাপী অবক্ষয় আমাদের গ্রাস করছে। এই প্রধান বিচারপতি সম্প্রতি জেলা জজদের সম্মেলনে বিচারাঙ্গনে দুর্নীতির কঠোর সমালোচনা করে তাদের সংশোধনের পরামর্শ দিয়েছেন।...
... দেশের উচ্চতম আদালতের সর্বোচ্চ পদে অধিষ্ঠিত ব্যক্তির কাছ থেকে জনগণ যে নিরপেক্ষতা প্রত্যাশা করেন, বাংলাদেশে কিছুদিন ধরে তার ব্যত্যয় ঘটে চলেছে। জাতি হিসেবে সর্বব্যাপী অবক্ষয় আমাদের গ্রাস করছে। এই প্রধান বিচারপতি সম্প্রতি জেলা জজদের সম্মেলনে বিচারাঙ্গনে দুর্নীতির কঠোর সমালোচনা করে তাদের সংশোধনের পরামর্শ দিয়েছেন।...
জেলখানার কয়েদি-হাজতিদের ব্যাপকভাবে নেশাদ্রব্য ব্যবহারের বদঅভ্যাস রয়েছে। ঢাকা জেলে থাকতে শুনেছিলাম, নেশাদ্রব্যের বাজার সেখানে নাকি এক সময় ‘স্পট’ হিসেবে বিক্রি হতো। প্রায় প্রকাশ্য নিলামের মাধ্যমে সেসব স্পট থেকে আদায় করা বিপুল অঙ্কের টাকা ওপর থেকে নিচ পর্যন্ত ভাগ-বাটোয়ারার গণতান্ত্রিক সিস্টেমও ছিল। নেশার শিকার বন্দিরা ওইসব স্পটে গিয়ে তাদের পছন্দমাফিক নেশাদ্রব্য কিনে আনত। গাঁজা, আফিম, ফেনসিডিল, হেরোইন, ইয়াবা, কোনোটারই নাকি অভাব ছিল না। এখন অবশ্য আগের সেই স্পট সিস্টেম নেই।
পুরনো বন্দিদের কাছ থেকে শুনেছি এক এগারোর সরকারের আইজি প্রিজন ব্রি. জে. (অব.) জাকির হাসান এবং ডিআইজি শামসুল হায়দার সিদ্দিকী যৌথভাবে অপারেশন চালিয়ে সেই নেটওয়ার্ক ভাঙতে পেরেছিলেন। এক এগারোর সরকার ভারতের কাছে বাংলাদেশকে ইজারা দেয়ার তাবত্ আয়োজন সম্পন্ন করার মতো রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকলেও সেই সময় জেলে যেসব ইতিবাচক সংস্কার সাধিত হয়েছে, তার মধ্যে মাদকের বিরুদ্ধে লড়াই অন্যতম। তবে বাজার ভাঙা হলেও বন্দিদের মধ্যে নেশাদ্রব্য ব্যবহার এখনও চলছে। জায়গামত টাকা-পয়সা খরচ করলে ওই বস্তু মেলা খুব একটা কঠিন নয়। আজ সাত-সকালে বেশ হৈচৈ শুনে তিনতলার বারান্দা থেকে নিচে তাকিয়ে জটলা দেখতে পেলাম। ডেপুটি জেলার, বড় সুবেদার তিনতলা ভবনের সামনে দাঁড়িয়ে উচ্চকণ্ঠে নির্দেশ দিচ্ছে আর ডজনখানেক কারারক্ষী এবং সিআইডি বন্দিরা ছোটাছুটি করে নিচতলার সেলের কয়েদিদের জিনিসপত্র সামনের মাঠে স্তূপীকৃত করছে। সুবেদার সাত্তার উপরের দিকে চোখ তুলে আমাকে দেখে সালাম দিয়ে নিজের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। আমিও খানিক বাদে সেলে ঢুকে পড়ায় মন দিলাম।
বিকেলে সুবেদার সাত্তার প্রাত্যহিক কুশলবিনিময়ের জন্য এসে সকালের হট্টগোলের কারণ জানাল। আজ ভোরে সাত নম্বর ওয়ার্ডের পাশের এক ঝোপে বেশ বড়সড় গাঁজার পোঁটলা পাওয়া গেছে। আজকের নির্ধারিত সাপ্তাহিক চেকিংয়ে ধরা পড়ার ভয়ে কেউ হয়তো সেই মহার্ঘ্য বস্তু সেখানে লুকিয়ে রেখেছিল। রাউন্ডের কারারক্ষীর চোখে পড়ে যাওয়ায় পুরো সেলে শুরু হয় ধুন্ধুমার কাণ্ড। অবশ্য এতে করে বিশেষ কোনো ফায়দা হয়নি। নতুন করে কোনো লুকানো নেশাদ্রব্য খুঁজে পাওয়া যায়নি এবং ঝোপের গাঁজার বান্ডিলের মালিকও অন্তরালেই রয়ে গেছে। এতগুলো সতর্ক দৃষ্টি পার হয়ে এগুলো জেলের ভেতর পৌঁছায় কী করে? সাত্তারকে এই প্রশ্ন করে যে জবাব পেলাম, তাতে আসামিদের বুদ্ধিমত্তায় রীতিমত চমত্কৃত হলাম।
সহজতম উপায় অবশ্যই কারা প্রশাসনের সঙ্গে যোগসাজশের মাধ্যমে জায়গামত জিনিস পৌঁছে দেয়া। তবে, অন্তত নেশাদ্রব্যের ব্যাপারে অধিকাংশ কারা কর্মকর্তা এবং কারারক্ষী জেলের নিয়ম-কানুন মেনে চলার চেষ্টা করে। ফলে সহজতম উপায় অবলম্বন করা ক্রমেই কঠিন হয়ে পড়ছে। অতএব, উদ্ভাবনী দক্ষতা আবশ্যক। প্রথম উপায় টিফিন ক্যারিয়ারের তলায় নেশাদ্রব্য সাজিয়ে তার ওপর পাতলা পলিথিন রেখে খাদ্যদ্রব্য দিয়ে বাটি ভরে ফেলা। দ্বিতীয় উপায় মাল্টা, কমলালেবু কিংবা আপেলের ভেতরটা কুরিয়ে খালি করে সেই ফোকরে বিশেষ জিনিসপত্র ভরে একটা স্টিকার দিয়ে আটকে দেয়া। এ পর্যন্ত বড় সুবেদার যা পদ্ধতি বর্ণনা করল সেগুলো ভদ্রজনোচিত এবং মেনে নেয়া যায়। কিন্তু, তৃতীয় ও চতুর্থ উপায় ভয়াবহ—যা শোনামাত্র বমি করার জন্য আমাকে টয়লেটে দৌড়াতে হয়েছিল। উপায় দুটো যথাক্রমে বাইরে থেকে নেশাদ্রব্য পায়ুপথে বহন করে নিয়ে আসা অথবা পলিথিন দিয়ে পেঁচিয়ে ছোট ছোট পুঁটলি তৈরি করে গিলে ফেলা। পরদিন সকালে বিষ্ঠা ঘেঁটে সেই ছোট বলগুলো উদ্ধার করে নাকি তার ভেতরকার নেশাদ্রব্য ব্যবহার করা হয়। এই অরুচিকর গল্প বলার জন্য পাঠকের কাছে ক্ষমা চেয়ে রাখছি। এরই নাম জেলজীবন।
ঈদের পরদিনের এক ঘটনার কথা বলি। বিকেলে আপন খেয়ালে স্মৃতির ভিড়ে হারিয়ে গেছি। এমন সময় উচ্চস্বরে হাসির মিলিত শব্দে সংবিত্ ফিরে পেলাম। কৌতূহলী হয়ে বারান্দার পর্দা খানিকটা সরিয়ে দেখলাম, সাত-আটজন তরুণ রীতিমত লাফাতে লাফাতে সিঁড়ি ভাঙছে। বাঁধভাঙা আনন্দ যেন আর ধরছে না। ওদের দেখে তিন যুগ আগের বুয়েট হল জীবনের স্মৃতি মনে পড়ে গেল। পাশে দাঁড়ানো কালামকে জিজ্ঞেস করলাম, বন্দি জীবনে এত আনন্দ আসছে কোথা থেকে? খানিক ইতস্তত করে জবাবে যা বলল তার সরল অর্থ, ঈদের রাতে ইয়াবার মাত্রাটা একটু বেশি হয়ে যাওয়াতেই এত আনন্দ আকাশে, বাতাসে। প্রথমে বিষম রাগ হলো। পরক্ষণেই মনে হলো, এই ছেলেগুলো অতি কম বয়সে দীর্ঘদিনের সাজা মাথায় নিয়ে জেলে এসেছে। এই নেশাই হয়তো ওদের যাবতীয় দুঃখ-বেদনা ভুলিয়ে রেখেছে। ওদের প্রতি মমতা আমার রাগকে পরাজিত করল।
দেশটা ক্রমেই চরম অরাজকতার দিকে ধাবিত হচ্ছে। মাগরিবের আজানের ঠিক আগে সুবেদার জানাল গত রাতে প্রধান বিচারপতির সরকারি বাড়িতে কে বা কারা বোমা ছুড়েছে। পেছনের নির্জন বাগানে সেই বোমা পড়ায় কেউ আহত হয়নি। খবরটা শুনে স্তম্ভিত হয়ে গেলাম। বাংলাদেশের ইতিহাসে এমন ন্যক্কারজনক ঘটনা এই প্রথম। বিএনপি সরকারের সময় আওয়ামী আইনজীবীরা প্রধান বিচারপতির এজলাস ভাংচুর করেছে। সেই হামলাকারী আইনজীবীকে মাত্র ক’দিন আগে প্রধান বিচারপতি খায়রুল হক হাইকোর্টের বিচারপতির শপথবাক্য পাঠ করিয়ে পুরস্কৃতও করেছেন। সন্ত্রাসীরা এভাবে পুরস্কৃত হতে থাকলে অন্যরাও স্বাভাবিকভাবে সন্ত্রাসে উত্সাহিত হবে। তবে, বোমা হামলা নিঃসন্দেহে নৈরাজ্যের অধিকতর ভয়ঙ্কর পর্যায়। বর্তমান প্রধান বিচারপতি বিভিন্ন কারণে ঘোরতরভাবে বিতর্কিত হয়েছেন। দেশের উচ্চতম আদালতের সর্বোচ্চ পদে অধিষ্ঠিত ব্যক্তির কাছ থেকে জনগণ যে নিরপেক্ষতা প্রত্যাশা করে, বাংলাদেশে কিছুদিন ধরে তার ব্যত্যয় ঘটে চলেছে। জাতি হিসেবে সর্বব্যাপী অবক্ষয় আমাদের গ্রাস করছে। এই প্রধান বিচারপতি সম্প্রতি জেলা জজদের সম্মেলনে বিচারাঙ্গনে দুর্নীতির কঠোর সমালোচনা করে তাদের সংশোধনের পরামর্শ দিয়েছেন। দেশের প্রধান বিচারপতি নিজেই যখন প্রকাশ্যে জজদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তোলেন, তখন তথাকথিত স্বাধীন বিচার ব্যবস্থার দুরবস্থার চিত্র বুঝতে আর বাকি থাকে না। আমাদের ছেলেবেলায় সমাজে বিচারকদের প্রতি যে অপরিসীম শ্রদ্ধাবোধ দেখেছি, তা প্রায় বিলুপ্ত হয়েছে। গেণ্ডারিয়া হাইস্কুল, যেখান থেকে আমি এসএসসি পাস করেছি তার লাগোয়া এক জজ সাহেবের বাড়ি ছিল। আমাদের পুরনো ঢাকার সেই স্কুলের অধিকাংশ ছাত্র ডানপিঠে হওয়া সত্ত্বেও জজ সাহেবের বাড়ির প্রতি সর্বজনীন সমীহের ব্যাপারটি এই বয়সেও পরিষ্কার স্মরণে রয়েছে। আর এখন আপিল বিভাগের বিচারপতিদের জোর করে সম্ভ্রম আদায় করে নিতে হয়। প্রধান বিচারপতির সরকারি বাসভবনে এই বোমা হামলা কেবল যে বিচার ব্যবস্থার প্রতি আস্থার অভাবই প্রমাণ করল তাই নয়, সেই সঙ্গে দেশের আইন-শৃঙ্খলার ভয়াবহ অবনতির চিত্রটিও চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল।
দিনবদলের ‘দক্ষ’ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এরপরও নিশ্চয়ই অম্লান বদনে দাবি করবেন বাংলাদেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি আগের যে কোনো সময়ের তুলনায় ভালো! এসব মন্ত্রীকে দেশের সাধারণ জনগণ আজকাল কী নজরে দেখে, সে সম্পর্কে বোধহয় তাদের কোনো ধারণা নেই। প্রধানমন্ত্রী একধাপ এগিয়ে হয়তো বলবেন, সবই বিরোধী দলের চক্রান্ত। চাই কি বোমা হামলার জন্য বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়াকে অভিযুক্ত করে তার বিরুদ্ধে মামলাও দিয়ে দিতে পারেন। কিন্তু অন্ধ হলেই তো প্রলয় বন্ধ থাকে না। মার্কিন-ভারতের তাঁবেদার সরকার নানারকম যোগসাজশের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসে মাত্র দু’বছরে জাতিকে যেভাবে বিভাজিত করেছে, তাতে করে অনিবার্য সংঘাত থেকে মুক্তির কোনো পথ দেখা যাচ্ছে না। আমাদের জীবন তো শেষের পথেই। অনেক চড়াই-উত্রাই পেরিয়ে সুখে-দুঃখে পড়ন্ত বেলায় পৌঁছে গেছি। কিন্তু, দেশের ষোল কোটি নাগরিকের মধ্যে অন্তত দশ কোটি এখনও তিরিশের কোঠাই পার করেনি।
এই সরকার তাদের জন্য কী রাষ্ট্র রেখে যাচ্ছে, সে বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কি একবারও চিন্তা করেছেন? পারিবারিকভাবে জননেত্রীর দাবিদার প্রধানমন্ত্রীর অবশ্য কোনো সমস্যা নেই। তার একমাত্র পুত্র মার্কিন নাগরিককে বিয়ে করে সেখানেই বসবাস করছেন। কন্যা সপরিবারে কানাডা প্রবাসী। একমাত্র কনিষ্ঠা ভগিনী যুক্তরাজ্যের বাসিন্দা। তার পুত্র মাত্র কিছুদিন আগে আরেক বিদেশিনীর পাণি গ্রহণ করেছে। শেখ রেহানার এক কন্যাও বোধহয় যুক্তরাজ্যের রাজনীতির সঙ্গে সরাসরি জড়িত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই কেবল নাড়ির টানে জনগণের ‘সেবা’ করার জন্য আত্মীয়-পরিজন ছেড়ে এই পোড়া দেশে পড়ে আছেন। সুতরাং বাংলাদেশের ভবিষ্যতের সঙ্গে তার ব্যক্তিগত অথবা পারিবারিক জীবনের বিশেষ কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। আমার এই বক্তব্যে আওয়ামী সমর্থকরা যত্পরোনাস্তি ক্রোধান্বিত যে হবেন, সে বিষয়ে আমি নিশ্চিত। কিন্তু, পাঠক হয়তো মানবেন যে, এটাই নির্মম বাস্তবতা।
একই দিনে দুই মামলার হাজিরা দিয়ে ঈদ-পরবর্তী ব্যস্ত সপ্তাহ শুরু করেছি। উভয় মামলায়ই ইতিপূর্বে হাইকোর্ট থেকে স্থগিতাদেশ দিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে রুল জারি করা হয়েছে। একটি মামলায় সরকার চেম্বার জজ আদালতে স্টে’র আবদার নিয়ে দৌড়ালেও বিস্ময়করভাবে সেখানে কোনো কাজ হয়নি। শেষ পর্যন্ত হাইকোর্টের আদেশই বহাল থেকেছে। অবস্থা প্রতিকূল বিবেচনা করে অপর মামলায় অ্যাটর্নি জেনারেল সেই চেষ্টা আর করেননি। স্থগিত হওয়া মামলাতেও কেন হাজিরা দিতে হয়, আইনের এসব মারপ্যাঁচ আমার জ্ঞানের বাইরে। আদালতে যাওয়া-আসার পথে প্রিজন ভ্যানের ঘুলঘুলি দিয়ে দেখলাম, ঈদের আমেজে ঢাকা শহর এখনও ঝিমুচ্ছে। বিপুলসংখ্যক নাগরিকের গরুর গোস্ত খাওয়া অদ্যাবধি সমাপ্ত না হওয়ায় তারা দেশের বাড়িতেই রয়ে গেছে। রাস্তাঘাট বেশ ফাঁকা। ফলে মাত্র চার ঘণ্টার মধ্যেই কাশিমপুরে ফিরতে পেরেছি। জেলের লোকজন আমাকে এত তাড়াতাড়ি ফিরতে দেখে বেজায় অবাক। আজ আমাকে কোর্ট গারদে নেয়ার পর প্রিজন ভ্যান থেকেও নামায়নি। আমাকে তালাবদ্ধ অবস্থায় রেখে সঙ্গের হাবিলদার আদালতে ছুটে গিয়ে পনেরো মিনিটের মধ্যে পরবর্তী তারিখ নিয়ে এসেছে।
এই সপ্তাহেই ঢাকায় আরও দু’দিন হাজিরা রয়েছে। প্রিজন ভ্যান ভ্রমণে দ্রুতই অভ্যস্ত হয়ে উঠছি। গরম, দুর্গন্ধ, ভাঙা বেঞ্চ—কোনো কিছুতেই আর বিচলিত হই না। তবে, বৃহস্পতিবার কক্সবাজারের হাজিরা নিয়ে দেখলাম প্রশাসন বেশ উদ্বিগ্ন। আদালত থেকে ফেরার সময় জেলগেটে জেলার সুভাষের সঙ্গে দেখা হলো। ওর কাছ থেকেই শুনলাম, আমাকে কেমন করে প্রায় পাঁচশ কিলোমিটার পথ পাড়ি দেওয়াবে এ নিয়ে জেল প্রশাসন এখনও মনস্থির করে উঠতে পারেনি। ছেলেটিকে আমি অবশ্য আশ্বস্ত করে বলে এলাম এ নিয়ে আমার দিক থেকে কোনো সমস্যা নেই। কোমরের পুরনো ব্যথাটা ছাড়া এই মুহূর্তে আর কোনো শারীরিক অসুবিধা বোধ করছি না। সমুদ্র ভ্রমণের জন্য অনেক আগে থেকে ব্যাগও গুছিয়ে রেখেছি। সারারাত গাড়িতে ভ্রমণের ধকলটাও ইন্শাআল্লাহ্, সামলাতে পারব। প্রশাসনের জ্বালা মেটানোর ভার চিন্তিত সুভাষের ঘাড়ে রেখে আমি নিশ্চিন্ত মনে নিজের সেলের পথ ধরলাম।
পুরনো বন্দিদের কাছ থেকে শুনেছি এক এগারোর সরকারের আইজি প্রিজন ব্রি. জে. (অব.) জাকির হাসান এবং ডিআইজি শামসুল হায়দার সিদ্দিকী যৌথভাবে অপারেশন চালিয়ে সেই নেটওয়ার্ক ভাঙতে পেরেছিলেন। এক এগারোর সরকার ভারতের কাছে বাংলাদেশকে ইজারা দেয়ার তাবত্ আয়োজন সম্পন্ন করার মতো রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকলেও সেই সময় জেলে যেসব ইতিবাচক সংস্কার সাধিত হয়েছে, তার মধ্যে মাদকের বিরুদ্ধে লড়াই অন্যতম। তবে বাজার ভাঙা হলেও বন্দিদের মধ্যে নেশাদ্রব্য ব্যবহার এখনও চলছে। জায়গামত টাকা-পয়সা খরচ করলে ওই বস্তু মেলা খুব একটা কঠিন নয়। আজ সাত-সকালে বেশ হৈচৈ শুনে তিনতলার বারান্দা থেকে নিচে তাকিয়ে জটলা দেখতে পেলাম। ডেপুটি জেলার, বড় সুবেদার তিনতলা ভবনের সামনে দাঁড়িয়ে উচ্চকণ্ঠে নির্দেশ দিচ্ছে আর ডজনখানেক কারারক্ষী এবং সিআইডি বন্দিরা ছোটাছুটি করে নিচতলার সেলের কয়েদিদের জিনিসপত্র সামনের মাঠে স্তূপীকৃত করছে। সুবেদার সাত্তার উপরের দিকে চোখ তুলে আমাকে দেখে সালাম দিয়ে নিজের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। আমিও খানিক বাদে সেলে ঢুকে পড়ায় মন দিলাম।
বিকেলে সুবেদার সাত্তার প্রাত্যহিক কুশলবিনিময়ের জন্য এসে সকালের হট্টগোলের কারণ জানাল। আজ ভোরে সাত নম্বর ওয়ার্ডের পাশের এক ঝোপে বেশ বড়সড় গাঁজার পোঁটলা পাওয়া গেছে। আজকের নির্ধারিত সাপ্তাহিক চেকিংয়ে ধরা পড়ার ভয়ে কেউ হয়তো সেই মহার্ঘ্য বস্তু সেখানে লুকিয়ে রেখেছিল। রাউন্ডের কারারক্ষীর চোখে পড়ে যাওয়ায় পুরো সেলে শুরু হয় ধুন্ধুমার কাণ্ড। অবশ্য এতে করে বিশেষ কোনো ফায়দা হয়নি। নতুন করে কোনো লুকানো নেশাদ্রব্য খুঁজে পাওয়া যায়নি এবং ঝোপের গাঁজার বান্ডিলের মালিকও অন্তরালেই রয়ে গেছে। এতগুলো সতর্ক দৃষ্টি পার হয়ে এগুলো জেলের ভেতর পৌঁছায় কী করে? সাত্তারকে এই প্রশ্ন করে যে জবাব পেলাম, তাতে আসামিদের বুদ্ধিমত্তায় রীতিমত চমত্কৃত হলাম।
সহজতম উপায় অবশ্যই কারা প্রশাসনের সঙ্গে যোগসাজশের মাধ্যমে জায়গামত জিনিস পৌঁছে দেয়া। তবে, অন্তত নেশাদ্রব্যের ব্যাপারে অধিকাংশ কারা কর্মকর্তা এবং কারারক্ষী জেলের নিয়ম-কানুন মেনে চলার চেষ্টা করে। ফলে সহজতম উপায় অবলম্বন করা ক্রমেই কঠিন হয়ে পড়ছে। অতএব, উদ্ভাবনী দক্ষতা আবশ্যক। প্রথম উপায় টিফিন ক্যারিয়ারের তলায় নেশাদ্রব্য সাজিয়ে তার ওপর পাতলা পলিথিন রেখে খাদ্যদ্রব্য দিয়ে বাটি ভরে ফেলা। দ্বিতীয় উপায় মাল্টা, কমলালেবু কিংবা আপেলের ভেতরটা কুরিয়ে খালি করে সেই ফোকরে বিশেষ জিনিসপত্র ভরে একটা স্টিকার দিয়ে আটকে দেয়া। এ পর্যন্ত বড় সুবেদার যা পদ্ধতি বর্ণনা করল সেগুলো ভদ্রজনোচিত এবং মেনে নেয়া যায়। কিন্তু, তৃতীয় ও চতুর্থ উপায় ভয়াবহ—যা শোনামাত্র বমি করার জন্য আমাকে টয়লেটে দৌড়াতে হয়েছিল। উপায় দুটো যথাক্রমে বাইরে থেকে নেশাদ্রব্য পায়ুপথে বহন করে নিয়ে আসা অথবা পলিথিন দিয়ে পেঁচিয়ে ছোট ছোট পুঁটলি তৈরি করে গিলে ফেলা। পরদিন সকালে বিষ্ঠা ঘেঁটে সেই ছোট বলগুলো উদ্ধার করে নাকি তার ভেতরকার নেশাদ্রব্য ব্যবহার করা হয়। এই অরুচিকর গল্প বলার জন্য পাঠকের কাছে ক্ষমা চেয়ে রাখছি। এরই নাম জেলজীবন।
ঈদের পরদিনের এক ঘটনার কথা বলি। বিকেলে আপন খেয়ালে স্মৃতির ভিড়ে হারিয়ে গেছি। এমন সময় উচ্চস্বরে হাসির মিলিত শব্দে সংবিত্ ফিরে পেলাম। কৌতূহলী হয়ে বারান্দার পর্দা খানিকটা সরিয়ে দেখলাম, সাত-আটজন তরুণ রীতিমত লাফাতে লাফাতে সিঁড়ি ভাঙছে। বাঁধভাঙা আনন্দ যেন আর ধরছে না। ওদের দেখে তিন যুগ আগের বুয়েট হল জীবনের স্মৃতি মনে পড়ে গেল। পাশে দাঁড়ানো কালামকে জিজ্ঞেস করলাম, বন্দি জীবনে এত আনন্দ আসছে কোথা থেকে? খানিক ইতস্তত করে জবাবে যা বলল তার সরল অর্থ, ঈদের রাতে ইয়াবার মাত্রাটা একটু বেশি হয়ে যাওয়াতেই এত আনন্দ আকাশে, বাতাসে। প্রথমে বিষম রাগ হলো। পরক্ষণেই মনে হলো, এই ছেলেগুলো অতি কম বয়সে দীর্ঘদিনের সাজা মাথায় নিয়ে জেলে এসেছে। এই নেশাই হয়তো ওদের যাবতীয় দুঃখ-বেদনা ভুলিয়ে রেখেছে। ওদের প্রতি মমতা আমার রাগকে পরাজিত করল।
দেশটা ক্রমেই চরম অরাজকতার দিকে ধাবিত হচ্ছে। মাগরিবের আজানের ঠিক আগে সুবেদার জানাল গত রাতে প্রধান বিচারপতির সরকারি বাড়িতে কে বা কারা বোমা ছুড়েছে। পেছনের নির্জন বাগানে সেই বোমা পড়ায় কেউ আহত হয়নি। খবরটা শুনে স্তম্ভিত হয়ে গেলাম। বাংলাদেশের ইতিহাসে এমন ন্যক্কারজনক ঘটনা এই প্রথম। বিএনপি সরকারের সময় আওয়ামী আইনজীবীরা প্রধান বিচারপতির এজলাস ভাংচুর করেছে। সেই হামলাকারী আইনজীবীকে মাত্র ক’দিন আগে প্রধান বিচারপতি খায়রুল হক হাইকোর্টের বিচারপতির শপথবাক্য পাঠ করিয়ে পুরস্কৃতও করেছেন। সন্ত্রাসীরা এভাবে পুরস্কৃত হতে থাকলে অন্যরাও স্বাভাবিকভাবে সন্ত্রাসে উত্সাহিত হবে। তবে, বোমা হামলা নিঃসন্দেহে নৈরাজ্যের অধিকতর ভয়ঙ্কর পর্যায়। বর্তমান প্রধান বিচারপতি বিভিন্ন কারণে ঘোরতরভাবে বিতর্কিত হয়েছেন। দেশের উচ্চতম আদালতের সর্বোচ্চ পদে অধিষ্ঠিত ব্যক্তির কাছ থেকে জনগণ যে নিরপেক্ষতা প্রত্যাশা করে, বাংলাদেশে কিছুদিন ধরে তার ব্যত্যয় ঘটে চলেছে। জাতি হিসেবে সর্বব্যাপী অবক্ষয় আমাদের গ্রাস করছে। এই প্রধান বিচারপতি সম্প্রতি জেলা জজদের সম্মেলনে বিচারাঙ্গনে দুর্নীতির কঠোর সমালোচনা করে তাদের সংশোধনের পরামর্শ দিয়েছেন। দেশের প্রধান বিচারপতি নিজেই যখন প্রকাশ্যে জজদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তোলেন, তখন তথাকথিত স্বাধীন বিচার ব্যবস্থার দুরবস্থার চিত্র বুঝতে আর বাকি থাকে না। আমাদের ছেলেবেলায় সমাজে বিচারকদের প্রতি যে অপরিসীম শ্রদ্ধাবোধ দেখেছি, তা প্রায় বিলুপ্ত হয়েছে। গেণ্ডারিয়া হাইস্কুল, যেখান থেকে আমি এসএসসি পাস করেছি তার লাগোয়া এক জজ সাহেবের বাড়ি ছিল। আমাদের পুরনো ঢাকার সেই স্কুলের অধিকাংশ ছাত্র ডানপিঠে হওয়া সত্ত্বেও জজ সাহেবের বাড়ির প্রতি সর্বজনীন সমীহের ব্যাপারটি এই বয়সেও পরিষ্কার স্মরণে রয়েছে। আর এখন আপিল বিভাগের বিচারপতিদের জোর করে সম্ভ্রম আদায় করে নিতে হয়। প্রধান বিচারপতির সরকারি বাসভবনে এই বোমা হামলা কেবল যে বিচার ব্যবস্থার প্রতি আস্থার অভাবই প্রমাণ করল তাই নয়, সেই সঙ্গে দেশের আইন-শৃঙ্খলার ভয়াবহ অবনতির চিত্রটিও চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল।
দিনবদলের ‘দক্ষ’ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এরপরও নিশ্চয়ই অম্লান বদনে দাবি করবেন বাংলাদেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি আগের যে কোনো সময়ের তুলনায় ভালো! এসব মন্ত্রীকে দেশের সাধারণ জনগণ আজকাল কী নজরে দেখে, সে সম্পর্কে বোধহয় তাদের কোনো ধারণা নেই। প্রধানমন্ত্রী একধাপ এগিয়ে হয়তো বলবেন, সবই বিরোধী দলের চক্রান্ত। চাই কি বোমা হামলার জন্য বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়াকে অভিযুক্ত করে তার বিরুদ্ধে মামলাও দিয়ে দিতে পারেন। কিন্তু অন্ধ হলেই তো প্রলয় বন্ধ থাকে না। মার্কিন-ভারতের তাঁবেদার সরকার নানারকম যোগসাজশের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসে মাত্র দু’বছরে জাতিকে যেভাবে বিভাজিত করেছে, তাতে করে অনিবার্য সংঘাত থেকে মুক্তির কোনো পথ দেখা যাচ্ছে না। আমাদের জীবন তো শেষের পথেই। অনেক চড়াই-উত্রাই পেরিয়ে সুখে-দুঃখে পড়ন্ত বেলায় পৌঁছে গেছি। কিন্তু, দেশের ষোল কোটি নাগরিকের মধ্যে অন্তত দশ কোটি এখনও তিরিশের কোঠাই পার করেনি।
এই সরকার তাদের জন্য কী রাষ্ট্র রেখে যাচ্ছে, সে বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কি একবারও চিন্তা করেছেন? পারিবারিকভাবে জননেত্রীর দাবিদার প্রধানমন্ত্রীর অবশ্য কোনো সমস্যা নেই। তার একমাত্র পুত্র মার্কিন নাগরিককে বিয়ে করে সেখানেই বসবাস করছেন। কন্যা সপরিবারে কানাডা প্রবাসী। একমাত্র কনিষ্ঠা ভগিনী যুক্তরাজ্যের বাসিন্দা। তার পুত্র মাত্র কিছুদিন আগে আরেক বিদেশিনীর পাণি গ্রহণ করেছে। শেখ রেহানার এক কন্যাও বোধহয় যুক্তরাজ্যের রাজনীতির সঙ্গে সরাসরি জড়িত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই কেবল নাড়ির টানে জনগণের ‘সেবা’ করার জন্য আত্মীয়-পরিজন ছেড়ে এই পোড়া দেশে পড়ে আছেন। সুতরাং বাংলাদেশের ভবিষ্যতের সঙ্গে তার ব্যক্তিগত অথবা পারিবারিক জীবনের বিশেষ কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। আমার এই বক্তব্যে আওয়ামী সমর্থকরা যত্পরোনাস্তি ক্রোধান্বিত যে হবেন, সে বিষয়ে আমি নিশ্চিত। কিন্তু, পাঠক হয়তো মানবেন যে, এটাই নির্মম বাস্তবতা।
একই দিনে দুই মামলার হাজিরা দিয়ে ঈদ-পরবর্তী ব্যস্ত সপ্তাহ শুরু করেছি। উভয় মামলায়ই ইতিপূর্বে হাইকোর্ট থেকে স্থগিতাদেশ দিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে রুল জারি করা হয়েছে। একটি মামলায় সরকার চেম্বার জজ আদালতে স্টে’র আবদার নিয়ে দৌড়ালেও বিস্ময়করভাবে সেখানে কোনো কাজ হয়নি। শেষ পর্যন্ত হাইকোর্টের আদেশই বহাল থেকেছে। অবস্থা প্রতিকূল বিবেচনা করে অপর মামলায় অ্যাটর্নি জেনারেল সেই চেষ্টা আর করেননি। স্থগিত হওয়া মামলাতেও কেন হাজিরা দিতে হয়, আইনের এসব মারপ্যাঁচ আমার জ্ঞানের বাইরে। আদালতে যাওয়া-আসার পথে প্রিজন ভ্যানের ঘুলঘুলি দিয়ে দেখলাম, ঈদের আমেজে ঢাকা শহর এখনও ঝিমুচ্ছে। বিপুলসংখ্যক নাগরিকের গরুর গোস্ত খাওয়া অদ্যাবধি সমাপ্ত না হওয়ায় তারা দেশের বাড়িতেই রয়ে গেছে। রাস্তাঘাট বেশ ফাঁকা। ফলে মাত্র চার ঘণ্টার মধ্যেই কাশিমপুরে ফিরতে পেরেছি। জেলের লোকজন আমাকে এত তাড়াতাড়ি ফিরতে দেখে বেজায় অবাক। আজ আমাকে কোর্ট গারদে নেয়ার পর প্রিজন ভ্যান থেকেও নামায়নি। আমাকে তালাবদ্ধ অবস্থায় রেখে সঙ্গের হাবিলদার আদালতে ছুটে গিয়ে পনেরো মিনিটের মধ্যে পরবর্তী তারিখ নিয়ে এসেছে।
এই সপ্তাহেই ঢাকায় আরও দু’দিন হাজিরা রয়েছে। প্রিজন ভ্যান ভ্রমণে দ্রুতই অভ্যস্ত হয়ে উঠছি। গরম, দুর্গন্ধ, ভাঙা বেঞ্চ—কোনো কিছুতেই আর বিচলিত হই না। তবে, বৃহস্পতিবার কক্সবাজারের হাজিরা নিয়ে দেখলাম প্রশাসন বেশ উদ্বিগ্ন। আদালত থেকে ফেরার সময় জেলগেটে জেলার সুভাষের সঙ্গে দেখা হলো। ওর কাছ থেকেই শুনলাম, আমাকে কেমন করে প্রায় পাঁচশ কিলোমিটার পথ পাড়ি দেওয়াবে এ নিয়ে জেল প্রশাসন এখনও মনস্থির করে উঠতে পারেনি। ছেলেটিকে আমি অবশ্য আশ্বস্ত করে বলে এলাম এ নিয়ে আমার দিক থেকে কোনো সমস্যা নেই। কোমরের পুরনো ব্যথাটা ছাড়া এই মুহূর্তে আর কোনো শারীরিক অসুবিধা বোধ করছি না। সমুদ্র ভ্রমণের জন্য অনেক আগে থেকে ব্যাগও গুছিয়ে রেখেছি। সারারাত গাড়িতে ভ্রমণের ধকলটাও ইন্শাআল্লাহ্, সামলাতে পারব। প্রশাসনের জ্বালা মেটানোর ভার চিন্তিত সুভাষের ঘাড়ে রেখে আমি নিশ্চিন্ত মনে নিজের সেলের পথ ধরলাম।
No comments