‘হৃদরোগসহ নানা রোগের ঝুঁকি বেড়েছে খালেদার’
সুচিকিৎসার
জন্য অবিলম্বে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি চেয়েছেন দেশের
বিশিষ্ট চিকিৎসক সমাজ। তারা আশঙ্কা ব্যক্ত করেছেন, স্যাঁতসেঁতে ও বসবাস
অযোগ্য ভবনে বন্দি রাখার কারণে বয়সজনিত নানা রোগে আক্রান্ত বিএনপি
চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার হৃদরোগ, পক্ষাঘাত, ঔষধ-প্রতিরোধী জীবাণুর মাধ্যমে
ফুসফুসের সংক্রমণ বা নিউমোনিয়া ও মানসিক রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে
গেছে। কারাগার বিশেষ করে পুরোনো, পরিত্যক্ত দূষণযুক্ত ভবনে স্বাস্থ্য ও
জীবন উভয়ই অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়তে পারে। এই বয়স ও স্বাস্থ্যগত অবস্থায়
ব্যক্তিগত পরিচর্যার বিষয়টি সুচিকিৎসার স্বার্থেই গুরুত্ববহ হয়ে ওঠে।
এটা কেবল পারিবারিক ও ব্যক্তিগত উদ্যোগেই পূর্ণভাবে নিশ্চিত করা সম্ভব। গতকাল ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে দেশের বিশিষ্ট চিকিৎসকরা এ আশঙ্কার কথা জানান। সেই সঙ্গে তারা প্রত্যাশা করেছেন, সরকার একটি স্থিতিশীল ও উন্নয়নমুখী বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করার জন্য দেশে সকল মানুষের বাক ও রাজনৈতিক স্বাধীনতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে খালেদা জিয়াকে নিঃশর্ত মুক্তি দিয়ে তাঁর সুচিকিৎসার অধিকারের বিষয়টি সুনিশ্চিত করবেন। ড্যাবের মহাসচিব প্রফেসর ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেনের পরিচালনায় সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়েন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্জারি বিভাগের সাবেক ডিন প্রফেসর ডা. সাইফুল ইসলাম। লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, কারাগারে খালেদা জিয়ার সঙ্গে নিদারুণ অমানবিক ও মানবেতর আচরণ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠছে নানা মহলে।
জানা যায়, পরিত্যক্ত ঘোষিত একটি সূর্যালোকহীন, নির্জন, স্যাঁতসেঁতে পুরোনো ও বসবাস অযোগ্য ভবনে তাকে মধ্যযুগীয় কায়দায় বন্দি করে রাখা হয়েছে। ডিভিশন দেয়া হলেও বলা হচ্ছে, তাঁর বিছানা, বালিশ ও আসবাবও অত্যন্ত নিম্নমানের ও ব্যবহার অযোগ্য। একজন অসুস্থ মানুষ হিসাবে তাঁর খাদ্য-খাবারের মান নিয়েও নানা প্রশ্ন উঠছে। কেউ কেউ তাঁর এই বন্দি অবস্থাকে বীভৎস নির্যাতনের প্রতীক কনসানট্রেশন ক্যাম্পের সঙ্গে তুলনীয় বলে মনে করছেন। তাঁর পরিবারের অন্যদের মতো খালেদা জিয়াকেও শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করে এক শোচনীয় পরিণতির দিকে ঠেলে দেয়াই প্রকৃত উদ্দেশ্য সে বিষয়ে জনমনের সন্দেহ প্রকট হচ্ছে। বক্তব্যে তিনি বলেন, এই পরিবেশে একজন সুস্থ মানুষেরও নানা মারাত্মক ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে পড়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। সেক্ষেত্রে খালেদা জিয়ার মতো আগে থেকেই বয়সজনিত নানা রোগব্যাধিতে আক্রান্ত একজন বর্ষিয়ান নারীর এই নির্জন মানবেতর কারাবাস স্বাস্থ্য ও স্বাভাবিক জীবনযাপনের জন্য কতটা ক্ষতিকারক হতে পারে তা’ সাধারণ মানুষকেও গভীরভাবে ভাবিয়ে তুলেছে। কারণ, খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে জটিল নানা রোগে ভুগছেন।
ইতিপূর্বে তাঁর দুই হাঁটু প্রতিস্থাপন, চোখের অপারেশন হয়েছে। তিনি কোনো সাধারণ রোগী নন। চিকিৎসকদের পরিভাষায় তিনি একজন বিশেষ পরিচর্যা সাপেক্ষ রোগী। সে হিসাবে সুচিকিৎসার স্বার্থে তাঁর একান্ত ব্যক্তিগত পরিচর্যার সকল সুবিধা নিশ্চিত করা সকল সভ্য, গণতান্ত্রিক ও মানবিকতাবোধসম্পন্ন জাতির কর্তব্য। এর অভাবে, সমপ্রতি তিনি ঘাড়, মেরুদণ্ড ও স্নায়ুবিক সমস্যায় আক্রান্ত হয়ে পড়েছেন। চিকিৎসকরা বলেন, স্যাঁতসেঁতে পরিবেশে যেকোনো সময়ে পড়ে গিয়ে তাঁর হাঁটু, উরুসন্ধি, হাত ও মেরুদণ্ডের হাড়ভাঙ্গা সহ মস্তিষ্ক ও স্পাইনাল কর্ডে আঘাতজনিত পক্ষাঘাত রোগ ঘটতে পারে। নির্জন, নিঃসঙ্গ, নিরাপত্তাহীন পরিবেশের কারণে নিদ্রাহীনতা, উদ্বেগ, বিষণ্নতাসহ নানা মানসিক রোগাক্রান্ত হয়ে পড়ার সম্ভাবনা বহুগুণ বেড়ে গেছে। বিরূপ, নিপীড়নমূলক পরিবেশ ও অস্বাভাবিক মানসিক চাপের ফলে তাঁর আকস্মিক হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ারও ঝুঁঁকিও বেড়েছে।
পুরোনো, পরিত্যক্ত দূষণযুক্ত ভবনের বিষাক্ত পরিবেশে তাঁর মারাত্মক ঔষধ-প্রতিরোধী জীবাণুর মাধ্যমে ফুসফুসের সংক্রমণ বা নিউমোনিয়ার সম্ভাবনা বেশ প্রবল হয়ে উঠতে পারে। এ ছাড়া ভয়ঙ্কর মাত্রার ভিটামিন-ডি ও ক্যালসিয়ামের শূন্যতা দেখা দিতে পারে। এই বয়স ও স্বাস্থ্যগত অবস্থায় ব্যক্তিগত পরিচর্যার বিষয়টি সুচিকিৎসার স্বার্থেই গুরুত্ববহ হয়ে ওঠে। এটা কেবল পারিবারিক ও ব্যক্তিগত উদ্যোগেই পূর্ণভাবে নিশ্চিত করা সম্ভব। কারাগার বিশেষ করে পুরোনো, পরিত্যক্ত দূষণযুক্ত ভবনে স্বাস্থ্য ও জীবন উভয়ই অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়তে পারে। চিকিৎসকরা বলেন, খালেদা জিয়া কারাগারে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। এই কারাগারের বসবাস অযোগ্যতা ছাড়াও নিয়মিত চিকিৎসার কোনই সুযোগ সুবিধা নেই। হেফাজতে সামপ্রতিক বছরকালে সাড়ে ছয় শতাধিক মৃত্যুর খবর ইতিমধ্যে নানাবিধ শঙ্কা বাড়িয়েছে।
ফলে বিএনপির অগণিত নেতাকর্মীর পাশাপাশি দেশবাসীও খালেদা জিয়ার অসুস্থতার সংবাদে দুঃখভারাক্রান্ত ও দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। চিকিৎসকরা বলেন, অনেকেরই বিশ্বাস খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য পরীক্ষার প্রশাসনিক তৎপরতার বিষয়টি এক রকম লোক দেখানো, হঠকারিতামূলক ও জনবিভ্রান্তি সৃষ্টির সুপরিকল্পিত প্রচেষ্টা। কারণ গত ৭ই এপ্রিল কোনো রকম পূর্ব প্রস্তুতি ছাড়া হুট করে তাঁকে সরকারি চিকিৎসক দলের দেয়া মামুলী এক্স-রে ও রক্ত-পরীক্ষার জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে নেয়া হয়। অভিযোগ উঠেছে, এ সময়ে একজন বিশেষ শারীরিক চাহিদাসম্পন্ন রোগীর গাড়ি থেকে নামা ও সাধারণ চলাচলের উপযুক্ত ন্যূনতম সুবিধেও তাঁর জন্যে প্রস্তুত রাখা হয়নি।
চিকিৎসকরা বলেন, সরকার খালেদা জিয়ার অসুস্থতার বিষয়টি স্বীকার করে নিয়ে তার নিজস্ব পছন্দের ৪ সদস্যের একটি মেডিকেল বোর্ড দিয়ে স্বাস্থ্য পরীক্ষার ব্যবস্থা নেয়। ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের সাক্ষাতের সরকারি অনুমতি থাকলেও কার্র্যত সরকার ও তাঁর সঙ্গে থাকা প্রশাসনের লোকজন তাঁকে এই প্রত্যাশিত সুযোগ থেকে বঞ্চিত করেন। কার্যত ব্যক্তিগত চিকিৎসকরা যথাস্থানে উপস্থিত থাকলেও তাদেরকে মামুলী সৌজন্য বিনিময়ের বাইরে চিকিৎসা বিষয়ে কোনো শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার সুযোগ দেয়া হয়নি। চিকিৎসকরা বলেন, নতুন কোনো চিকিৎসক দলের পক্ষে খালেদা জিয়ার সম্পূর্ণ অবস্থা এক নজরে ও এক নিমিশে অনুধাবন ও নির্ণয় করা একেবারেই অবাস্তব কল্পনা। ফলে, সরকারকে খালেদা জিয়ার প্রতি সহানুভূতিশীল ও তাঁর চিকিৎসার ব্যাপারে যত্নবান প্রমাণ করতে হলে তাঁর ব্যক্তিগত চিকিৎসক দলের ভূমিকা উপেক্ষা করা সমীচীন নয়। তারা বলেন, উপযুক্ত স্বাস্থ্য সেবা সংবিধান বলে একটি মৌলিক অধিকার।
এ বিষয়ে বন্দি-অবন্দি নাগরিক অবস্থা নির্বিশেষে সরকারের বিশেষ দায়িত্ব রয়েছে। বিশেষ করে বন্দি অবস্থায় সকল দায় সরকারের ওপর বর্তায়। জেল-কোড অনুযায়ী যেকোনো বন্দি তার বিশেষ স্বাস্থ্যগত চাহিদার কারণে পছন্দের চিকিৎসকের সেবা পাওয়ার অধিকার রাখেন। তবে এ ক্ষেত্রে পুরো ব্যাপারটাই একটি প্রহসনে পরিণত হয়েছে। খালেদা জিয়ার অসুস্থতার বিষয়ে সরকার সদিচ্ছা ও আন্তরিকতা প্রকাশে চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে দেশবাসীর বিশ্বাস। চিকিৎসকরা বলেন, ধারাবাহিক বিষয়াবলী জনমনে খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য বিষয়, জীবন ও রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে নানা পক্ষের ব্যাপক ও বহুমুখী ষড়যন্ত্র ও অভিসন্ধি বিষয়ে গভীর উৎকণ্ঠা জন্মানোর সুযোগ করে দিয়েছে।
বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতি, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় খালেদা জিয়ার অবদানের কথা উল্লেখ করে চিকিৎসকরা বলেন, জনগণ আশা করে সকল চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র ভেদ করে সসম্মানে নির্দোষ প্রমাণিত হবেন তিনি। চিকিৎসকরা প্রত্যাশা করেন, সরকার গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রতি সম্মান দেখাবে। সেই সঙ্গে সকল নাগরিকগণের উন্মুক্ত সভা-সমাবেশের অধিকার নিশ্চিত করে, রাজনৈতিক নেতা-কর্মী ও সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা, ষড়যন্ত্র ও হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহারের মাধ্যমে ভয়ভীতি ও প্রশাসনিক নির্যাতনের অবসান ঘটাবে। দেশে গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিত করে একটি স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত করবে। সংবাদ সম্মেলনে প্রফেসর ডা. আবদুল মান্নান মিয়া, প্রফেসর ডা. শাহাবুদ্দিন, প্রফেসর ডা. গোলাম মঈনউদ্দিন, প্রফেসর ডা. সাইদুর রহমান, প্রফেসর ডা. একেএম আজিজুল হক, প্রফেসর ডা. ফরহাদ হালিম ডোনার, প্রফেসর ডা. মোস্তাক রহিম স্বপনসহ অর্ধশতাধিক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক উপস্থিত ছিলেন।
এটা কেবল পারিবারিক ও ব্যক্তিগত উদ্যোগেই পূর্ণভাবে নিশ্চিত করা সম্ভব। গতকাল ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে দেশের বিশিষ্ট চিকিৎসকরা এ আশঙ্কার কথা জানান। সেই সঙ্গে তারা প্রত্যাশা করেছেন, সরকার একটি স্থিতিশীল ও উন্নয়নমুখী বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করার জন্য দেশে সকল মানুষের বাক ও রাজনৈতিক স্বাধীনতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে খালেদা জিয়াকে নিঃশর্ত মুক্তি দিয়ে তাঁর সুচিকিৎসার অধিকারের বিষয়টি সুনিশ্চিত করবেন। ড্যাবের মহাসচিব প্রফেসর ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেনের পরিচালনায় সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়েন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্জারি বিভাগের সাবেক ডিন প্রফেসর ডা. সাইফুল ইসলাম। লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, কারাগারে খালেদা জিয়ার সঙ্গে নিদারুণ অমানবিক ও মানবেতর আচরণ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠছে নানা মহলে।
জানা যায়, পরিত্যক্ত ঘোষিত একটি সূর্যালোকহীন, নির্জন, স্যাঁতসেঁতে পুরোনো ও বসবাস অযোগ্য ভবনে তাকে মধ্যযুগীয় কায়দায় বন্দি করে রাখা হয়েছে। ডিভিশন দেয়া হলেও বলা হচ্ছে, তাঁর বিছানা, বালিশ ও আসবাবও অত্যন্ত নিম্নমানের ও ব্যবহার অযোগ্য। একজন অসুস্থ মানুষ হিসাবে তাঁর খাদ্য-খাবারের মান নিয়েও নানা প্রশ্ন উঠছে। কেউ কেউ তাঁর এই বন্দি অবস্থাকে বীভৎস নির্যাতনের প্রতীক কনসানট্রেশন ক্যাম্পের সঙ্গে তুলনীয় বলে মনে করছেন। তাঁর পরিবারের অন্যদের মতো খালেদা জিয়াকেও শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করে এক শোচনীয় পরিণতির দিকে ঠেলে দেয়াই প্রকৃত উদ্দেশ্য সে বিষয়ে জনমনের সন্দেহ প্রকট হচ্ছে। বক্তব্যে তিনি বলেন, এই পরিবেশে একজন সুস্থ মানুষেরও নানা মারাত্মক ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে পড়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। সেক্ষেত্রে খালেদা জিয়ার মতো আগে থেকেই বয়সজনিত নানা রোগব্যাধিতে আক্রান্ত একজন বর্ষিয়ান নারীর এই নির্জন মানবেতর কারাবাস স্বাস্থ্য ও স্বাভাবিক জীবনযাপনের জন্য কতটা ক্ষতিকারক হতে পারে তা’ সাধারণ মানুষকেও গভীরভাবে ভাবিয়ে তুলেছে। কারণ, খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে জটিল নানা রোগে ভুগছেন।
ইতিপূর্বে তাঁর দুই হাঁটু প্রতিস্থাপন, চোখের অপারেশন হয়েছে। তিনি কোনো সাধারণ রোগী নন। চিকিৎসকদের পরিভাষায় তিনি একজন বিশেষ পরিচর্যা সাপেক্ষ রোগী। সে হিসাবে সুচিকিৎসার স্বার্থে তাঁর একান্ত ব্যক্তিগত পরিচর্যার সকল সুবিধা নিশ্চিত করা সকল সভ্য, গণতান্ত্রিক ও মানবিকতাবোধসম্পন্ন জাতির কর্তব্য। এর অভাবে, সমপ্রতি তিনি ঘাড়, মেরুদণ্ড ও স্নায়ুবিক সমস্যায় আক্রান্ত হয়ে পড়েছেন। চিকিৎসকরা বলেন, স্যাঁতসেঁতে পরিবেশে যেকোনো সময়ে পড়ে গিয়ে তাঁর হাঁটু, উরুসন্ধি, হাত ও মেরুদণ্ডের হাড়ভাঙ্গা সহ মস্তিষ্ক ও স্পাইনাল কর্ডে আঘাতজনিত পক্ষাঘাত রোগ ঘটতে পারে। নির্জন, নিঃসঙ্গ, নিরাপত্তাহীন পরিবেশের কারণে নিদ্রাহীনতা, উদ্বেগ, বিষণ্নতাসহ নানা মানসিক রোগাক্রান্ত হয়ে পড়ার সম্ভাবনা বহুগুণ বেড়ে গেছে। বিরূপ, নিপীড়নমূলক পরিবেশ ও অস্বাভাবিক মানসিক চাপের ফলে তাঁর আকস্মিক হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ারও ঝুঁঁকিও বেড়েছে।
পুরোনো, পরিত্যক্ত দূষণযুক্ত ভবনের বিষাক্ত পরিবেশে তাঁর মারাত্মক ঔষধ-প্রতিরোধী জীবাণুর মাধ্যমে ফুসফুসের সংক্রমণ বা নিউমোনিয়ার সম্ভাবনা বেশ প্রবল হয়ে উঠতে পারে। এ ছাড়া ভয়ঙ্কর মাত্রার ভিটামিন-ডি ও ক্যালসিয়ামের শূন্যতা দেখা দিতে পারে। এই বয়স ও স্বাস্থ্যগত অবস্থায় ব্যক্তিগত পরিচর্যার বিষয়টি সুচিকিৎসার স্বার্থেই গুরুত্ববহ হয়ে ওঠে। এটা কেবল পারিবারিক ও ব্যক্তিগত উদ্যোগেই পূর্ণভাবে নিশ্চিত করা সম্ভব। কারাগার বিশেষ করে পুরোনো, পরিত্যক্ত দূষণযুক্ত ভবনে স্বাস্থ্য ও জীবন উভয়ই অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়তে পারে। চিকিৎসকরা বলেন, খালেদা জিয়া কারাগারে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। এই কারাগারের বসবাস অযোগ্যতা ছাড়াও নিয়মিত চিকিৎসার কোনই সুযোগ সুবিধা নেই। হেফাজতে সামপ্রতিক বছরকালে সাড়ে ছয় শতাধিক মৃত্যুর খবর ইতিমধ্যে নানাবিধ শঙ্কা বাড়িয়েছে।
ফলে বিএনপির অগণিত নেতাকর্মীর পাশাপাশি দেশবাসীও খালেদা জিয়ার অসুস্থতার সংবাদে দুঃখভারাক্রান্ত ও দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। চিকিৎসকরা বলেন, অনেকেরই বিশ্বাস খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য পরীক্ষার প্রশাসনিক তৎপরতার বিষয়টি এক রকম লোক দেখানো, হঠকারিতামূলক ও জনবিভ্রান্তি সৃষ্টির সুপরিকল্পিত প্রচেষ্টা। কারণ গত ৭ই এপ্রিল কোনো রকম পূর্ব প্রস্তুতি ছাড়া হুট করে তাঁকে সরকারি চিকিৎসক দলের দেয়া মামুলী এক্স-রে ও রক্ত-পরীক্ষার জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে নেয়া হয়। অভিযোগ উঠেছে, এ সময়ে একজন বিশেষ শারীরিক চাহিদাসম্পন্ন রোগীর গাড়ি থেকে নামা ও সাধারণ চলাচলের উপযুক্ত ন্যূনতম সুবিধেও তাঁর জন্যে প্রস্তুত রাখা হয়নি।
চিকিৎসকরা বলেন, সরকার খালেদা জিয়ার অসুস্থতার বিষয়টি স্বীকার করে নিয়ে তার নিজস্ব পছন্দের ৪ সদস্যের একটি মেডিকেল বোর্ড দিয়ে স্বাস্থ্য পরীক্ষার ব্যবস্থা নেয়। ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের সাক্ষাতের সরকারি অনুমতি থাকলেও কার্র্যত সরকার ও তাঁর সঙ্গে থাকা প্রশাসনের লোকজন তাঁকে এই প্রত্যাশিত সুযোগ থেকে বঞ্চিত করেন। কার্যত ব্যক্তিগত চিকিৎসকরা যথাস্থানে উপস্থিত থাকলেও তাদেরকে মামুলী সৌজন্য বিনিময়ের বাইরে চিকিৎসা বিষয়ে কোনো শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার সুযোগ দেয়া হয়নি। চিকিৎসকরা বলেন, নতুন কোনো চিকিৎসক দলের পক্ষে খালেদা জিয়ার সম্পূর্ণ অবস্থা এক নজরে ও এক নিমিশে অনুধাবন ও নির্ণয় করা একেবারেই অবাস্তব কল্পনা। ফলে, সরকারকে খালেদা জিয়ার প্রতি সহানুভূতিশীল ও তাঁর চিকিৎসার ব্যাপারে যত্নবান প্রমাণ করতে হলে তাঁর ব্যক্তিগত চিকিৎসক দলের ভূমিকা উপেক্ষা করা সমীচীন নয়। তারা বলেন, উপযুক্ত স্বাস্থ্য সেবা সংবিধান বলে একটি মৌলিক অধিকার।
এ বিষয়ে বন্দি-অবন্দি নাগরিক অবস্থা নির্বিশেষে সরকারের বিশেষ দায়িত্ব রয়েছে। বিশেষ করে বন্দি অবস্থায় সকল দায় সরকারের ওপর বর্তায়। জেল-কোড অনুযায়ী যেকোনো বন্দি তার বিশেষ স্বাস্থ্যগত চাহিদার কারণে পছন্দের চিকিৎসকের সেবা পাওয়ার অধিকার রাখেন। তবে এ ক্ষেত্রে পুরো ব্যাপারটাই একটি প্রহসনে পরিণত হয়েছে। খালেদা জিয়ার অসুস্থতার বিষয়ে সরকার সদিচ্ছা ও আন্তরিকতা প্রকাশে চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে দেশবাসীর বিশ্বাস। চিকিৎসকরা বলেন, ধারাবাহিক বিষয়াবলী জনমনে খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য বিষয়, জীবন ও রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে নানা পক্ষের ব্যাপক ও বহুমুখী ষড়যন্ত্র ও অভিসন্ধি বিষয়ে গভীর উৎকণ্ঠা জন্মানোর সুযোগ করে দিয়েছে।
বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতি, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় খালেদা জিয়ার অবদানের কথা উল্লেখ করে চিকিৎসকরা বলেন, জনগণ আশা করে সকল চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র ভেদ করে সসম্মানে নির্দোষ প্রমাণিত হবেন তিনি। চিকিৎসকরা প্রত্যাশা করেন, সরকার গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রতি সম্মান দেখাবে। সেই সঙ্গে সকল নাগরিকগণের উন্মুক্ত সভা-সমাবেশের অধিকার নিশ্চিত করে, রাজনৈতিক নেতা-কর্মী ও সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা, ষড়যন্ত্র ও হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহারের মাধ্যমে ভয়ভীতি ও প্রশাসনিক নির্যাতনের অবসান ঘটাবে। দেশে গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিত করে একটি স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত করবে। সংবাদ সম্মেলনে প্রফেসর ডা. আবদুল মান্নান মিয়া, প্রফেসর ডা. শাহাবুদ্দিন, প্রফেসর ডা. গোলাম মঈনউদ্দিন, প্রফেসর ডা. সাইদুর রহমান, প্রফেসর ডা. একেএম আজিজুল হক, প্রফেসর ডা. ফরহাদ হালিম ডোনার, প্রফেসর ডা. মোস্তাক রহিম স্বপনসহ অর্ধশতাধিক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক উপস্থিত ছিলেন।
No comments