কোটা সংস্কারের আন্দোলন: কিছু জরুরি ভাবনা by রাশেদা রওনক খান
কাল কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে দুটো জঘন্য ঘটনা ঘটে গেলো:
এক. ছাত্রদের আন্দোলনে পুলিশি আক্রমণ।
দুই. উপাচার্যের বাসভবনে সন্ত্রাসী আক্রমণ ও হামলা। দুটোই খুব নিন্দনীয়।
প্রথমটির ক্ষেত্রে প্রশ্ন আসে মনে, এই ঔপনিবেশিক ও পাকিস্তানি পদ্ধতি হতে স্বাধীন রাষ্ট্রের চরিত্রের কোনও বদল ঘটে না কেন? উত্তর সোজা!
ঔপনিবেশিক নিপীড়ন-দমনের যে চরিত্র তার লিগেসি বহন করছি আমরা। চাটুকারেরা সবসময় নিজেদের স্বার্থ ছাড়া অন্যকিছু ভাবতে পারে না। সামনের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল করতেই কি কেউ পরিস্থিতি উত্তপ্ত করতে এই কুপরামর্শ দিচ্ছে? কাল বিকালে যখন পরিস্থিতি উত্তপ্ত হচ্ছে, তখন পুলিশি আক্রমণ না চালিয়ে প্রশাসন হতে ছাত্রদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করার একটা চেষ্টা কি আমরা দেখতে চাইতে পারি না?
আবার অন্যদিকে এই আক্রমণের ফলশ্রুতিতে রাতেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসায় সন্ত্রাসী তাণ্ডব! এর উত্তর কিন্তু সহজ নয়, বরং জটিল! কেননা, এটা আমাদের নৈতিক অবক্ষয়কে সামনে এনে দাঁড় করায়। আমাদের মাথা নিচু করে দিয়েছে এই ঘটনা। এভাবে এতটা ন্যক্কারজনক ঘটনা এই ঐতিহাসিক বাড়িটি ঘিরে আর ঘটেনি কখনও। কীভাবে সম্ভব হলো এই ধরনের জঘন্য কাজ করার? কারা করলো?
জনপ্রশাসনের প্রজ্ঞাপনটি নিয়ে সরাসরি ছাত্রদের সঙ্গে কথা বলার একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা যেত। আট বছর ধরে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে থাকা সরকারের পক্ষে কি খুব অসম্ভব একটি পদক্ষেপ নেওয়া? রাষ্ট্র কি তবে ছাত্রদের সঙ্গে আলাপ- আলোচনার চেয়ে দমন নীতিতে বেশি আগ্রহী? কিন্তু স্বাধীন এই রাষ্ট্রে কেন পুলিশ প্রশাসন ছাত্রদের সঙ্গে আলাপে আসতে বরাবরই ব্যর্থ হয়? কেন দমন-নিপীড়নই পুলিশ বাহিনীর একমাত্র কৌশল? তাদের ছত্রভঙ্গ করতে কেন রাষ্ট্রের সবসময় পুলিশি সহায়তা প্রয়োজন হয়, তা আমার জানা নেই। কখনোই কোনও কালে ছাত্র আন্দোলন কোনও অযৌক্তিক বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে সংগঠিত হয়নি। ‘৪৭, ‘৫২, ’৬৯, ‘৭১ এমনকি ’৯০-এর আন্দোলনেও ছাত্র আন্দোলনের ইতিহাস আমরা ভুলে যেতে পারি না। আর এটা তো ২০১৮। ডিজিটাল বাংলাদেশের ফোর-জি প্রজন্ম! তাদের হাতে এখন নিজেদের জন্যই সময় নেই, নিজের ক্লাস, পরীক্ষা, আইসাইনমেন্ট জমা দেওয়াই তাদের জন্য অনেকক্ষেত্রে কঠিন হয়ে পড়ে। সেখানে দীর্ঘ সময় ধরে একটি আন্দোলনকে চালিয়ে যাওয়া মানেই হচ্ছে এটা তাদের প্রাণের দাবি। রাষ্ট্রকে বুঝতে হবে তার নাগরিকের কোনটি প্রাণের দাবি কোনটি অস্তিত্বের প্রশ্ন। এই সময়ে খুব বেশি যৌক্তিক পাটাতন না হলে এতো ছাত্র একসঙ্গে জড়ো হওয়া সম্ভব নয়। তাই তাদের দাবি দাওয়ার বিষয়টি সরকারের গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনায় আনা জরুরি।
অন্যদিকে ছাত্রদের জন্য বিবেচ্য বিষয় হলো, রাজনৈতিক ও আমলাতান্ত্রিক ক্ষমতা কাঠামোতে যেমন কুপরামর্শদাতা রয়েছে, তেমনি এই আন্দোলনের মাঝেও কিন্তু অনেক অছাত্র এসে ভিড় করতে পারে, হাজির হতে পারে অনেক কুপরামর্শ নিয়ে, অনেক দলের পক্ষ হয়ে ছদ্মবেশে। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সেটাও মাথায় রাখা খুব জরুরি। নিশ্চয়ই খুব গুরুত্বসহকারে বিষয়টি বিবেচনায় রাখবে ছাত্ররা। জনপ্রশাসন হতে যে প্রজ্ঞাপনটি দেওয়া হয়েছে, সেখানে পরিষ্কারভাবে নম্বর ‘খ’-তে লেখা আছে, আমি সরাসরি কোট করছি, ‘সকল সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে কোটার কোনও পদ যোগ্য প্রার্থীর অভাবে পূরণ করা সম্ভব না হইলে সে সকল পদ মেধা তালিকার শীর্ষে অবস্থানকারী প্রার্থীদের মধ্য হতে পূরণ করতে হইবে।’ জারি হওয়া প্রজ্ঞাপনের এইটুকুতে সন্তুষ্ট না হয়ে কোটা সংস্কারের আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার অধিকার শিক্ষার্থীদের আছে। কিন্তু লক্ষ রাখতে হবে, আন্দোলনটি কি অন্যদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে কিনা? এই আন্দোলনকে পুঁজি করে দেশে অরাজকতা তৈরি করতে চায় এমন কোনও গোষ্ঠী লাভবান হচ্ছে কিনা। এটা নির্বাচনি বছর। এই সময়ে নানা স্বার্থানেষী মহল তৎপর আছে, যেকোনও কিছুর বিনিময়ে দেশে অরাজকতা সৃষ্টি করা, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে নিয়ে যাওয়ার জন্য। তারা নিজেদের সুবিধার্থে ক্যাম্পাসকে উত্তপ্ত করতে চায়। হঠাৎ করে একজন ছাত্রের মৃত্যুর গুজব কে বা কারা রটালো, সাধারণের মাঝে বিদ্বেষ তৈরি করলো, এসবই কিন্তু চিন্তার উদ্রেক করে।
কোটা সংস্কারের এই আন্দোলনকে ঘিরে নানা সংশয় তৈরি হয়েছে,কিন্তু কেন? সেই দিকগুলো নিশ্চয়ই বিবেচনা করবে আন্দোলনকারী দল এবং সরকার উভয় পক্ষই।
এক. ছাত্রদের আন্দোলনে পুলিশি আক্রমণ।
দুই. উপাচার্যের বাসভবনে সন্ত্রাসী আক্রমণ ও হামলা। দুটোই খুব নিন্দনীয়।
প্রথমটির ক্ষেত্রে প্রশ্ন আসে মনে, এই ঔপনিবেশিক ও পাকিস্তানি পদ্ধতি হতে স্বাধীন রাষ্ট্রের চরিত্রের কোনও বদল ঘটে না কেন? উত্তর সোজা!
ঔপনিবেশিক নিপীড়ন-দমনের যে চরিত্র তার লিগেসি বহন করছি আমরা। চাটুকারেরা সবসময় নিজেদের স্বার্থ ছাড়া অন্যকিছু ভাবতে পারে না। সামনের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল করতেই কি কেউ পরিস্থিতি উত্তপ্ত করতে এই কুপরামর্শ দিচ্ছে? কাল বিকালে যখন পরিস্থিতি উত্তপ্ত হচ্ছে, তখন পুলিশি আক্রমণ না চালিয়ে প্রশাসন হতে ছাত্রদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করার একটা চেষ্টা কি আমরা দেখতে চাইতে পারি না?
আবার অন্যদিকে এই আক্রমণের ফলশ্রুতিতে রাতেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসায় সন্ত্রাসী তাণ্ডব! এর উত্তর কিন্তু সহজ নয়, বরং জটিল! কেননা, এটা আমাদের নৈতিক অবক্ষয়কে সামনে এনে দাঁড় করায়। আমাদের মাথা নিচু করে দিয়েছে এই ঘটনা। এভাবে এতটা ন্যক্কারজনক ঘটনা এই ঐতিহাসিক বাড়িটি ঘিরে আর ঘটেনি কখনও। কীভাবে সম্ভব হলো এই ধরনের জঘন্য কাজ করার? কারা করলো?
জনপ্রশাসনের প্রজ্ঞাপনটি নিয়ে সরাসরি ছাত্রদের সঙ্গে কথা বলার একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা যেত। আট বছর ধরে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে থাকা সরকারের পক্ষে কি খুব অসম্ভব একটি পদক্ষেপ নেওয়া? রাষ্ট্র কি তবে ছাত্রদের সঙ্গে আলাপ- আলোচনার চেয়ে দমন নীতিতে বেশি আগ্রহী? কিন্তু স্বাধীন এই রাষ্ট্রে কেন পুলিশ প্রশাসন ছাত্রদের সঙ্গে আলাপে আসতে বরাবরই ব্যর্থ হয়? কেন দমন-নিপীড়নই পুলিশ বাহিনীর একমাত্র কৌশল? তাদের ছত্রভঙ্গ করতে কেন রাষ্ট্রের সবসময় পুলিশি সহায়তা প্রয়োজন হয়, তা আমার জানা নেই। কখনোই কোনও কালে ছাত্র আন্দোলন কোনও অযৌক্তিক বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে সংগঠিত হয়নি। ‘৪৭, ‘৫২, ’৬৯, ‘৭১ এমনকি ’৯০-এর আন্দোলনেও ছাত্র আন্দোলনের ইতিহাস আমরা ভুলে যেতে পারি না। আর এটা তো ২০১৮। ডিজিটাল বাংলাদেশের ফোর-জি প্রজন্ম! তাদের হাতে এখন নিজেদের জন্যই সময় নেই, নিজের ক্লাস, পরীক্ষা, আইসাইনমেন্ট জমা দেওয়াই তাদের জন্য অনেকক্ষেত্রে কঠিন হয়ে পড়ে। সেখানে দীর্ঘ সময় ধরে একটি আন্দোলনকে চালিয়ে যাওয়া মানেই হচ্ছে এটা তাদের প্রাণের দাবি। রাষ্ট্রকে বুঝতে হবে তার নাগরিকের কোনটি প্রাণের দাবি কোনটি অস্তিত্বের প্রশ্ন। এই সময়ে খুব বেশি যৌক্তিক পাটাতন না হলে এতো ছাত্র একসঙ্গে জড়ো হওয়া সম্ভব নয়। তাই তাদের দাবি দাওয়ার বিষয়টি সরকারের গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনায় আনা জরুরি।
অন্যদিকে ছাত্রদের জন্য বিবেচ্য বিষয় হলো, রাজনৈতিক ও আমলাতান্ত্রিক ক্ষমতা কাঠামোতে যেমন কুপরামর্শদাতা রয়েছে, তেমনি এই আন্দোলনের মাঝেও কিন্তু অনেক অছাত্র এসে ভিড় করতে পারে, হাজির হতে পারে অনেক কুপরামর্শ নিয়ে, অনেক দলের পক্ষ হয়ে ছদ্মবেশে। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সেটাও মাথায় রাখা খুব জরুরি। নিশ্চয়ই খুব গুরুত্বসহকারে বিষয়টি বিবেচনায় রাখবে ছাত্ররা। জনপ্রশাসন হতে যে প্রজ্ঞাপনটি দেওয়া হয়েছে, সেখানে পরিষ্কারভাবে নম্বর ‘খ’-তে লেখা আছে, আমি সরাসরি কোট করছি, ‘সকল সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে কোটার কোনও পদ যোগ্য প্রার্থীর অভাবে পূরণ করা সম্ভব না হইলে সে সকল পদ মেধা তালিকার শীর্ষে অবস্থানকারী প্রার্থীদের মধ্য হতে পূরণ করতে হইবে।’ জারি হওয়া প্রজ্ঞাপনের এইটুকুতে সন্তুষ্ট না হয়ে কোটা সংস্কারের আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার অধিকার শিক্ষার্থীদের আছে। কিন্তু লক্ষ রাখতে হবে, আন্দোলনটি কি অন্যদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে কিনা? এই আন্দোলনকে পুঁজি করে দেশে অরাজকতা তৈরি করতে চায় এমন কোনও গোষ্ঠী লাভবান হচ্ছে কিনা। এটা নির্বাচনি বছর। এই সময়ে নানা স্বার্থানেষী মহল তৎপর আছে, যেকোনও কিছুর বিনিময়ে দেশে অরাজকতা সৃষ্টি করা, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে নিয়ে যাওয়ার জন্য। তারা নিজেদের সুবিধার্থে ক্যাম্পাসকে উত্তপ্ত করতে চায়। হঠাৎ করে একজন ছাত্রের মৃত্যুর গুজব কে বা কারা রটালো, সাধারণের মাঝে বিদ্বেষ তৈরি করলো, এসবই কিন্তু চিন্তার উদ্রেক করে।
কোটা সংস্কারের এই আন্দোলনকে ঘিরে নানা সংশয় তৈরি হয়েছে,কিন্তু কেন? সেই দিকগুলো নিশ্চয়ই বিবেচনা করবে আন্দোলনকারী দল এবং সরকার উভয় পক্ষই।
এক. এই আন্দোলন কেবল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নয়, সারাদেশের সকল ছাত্রদের। তাহলে হঠাৎ করে মাঝরাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের ভবনে আক্রমণ কেন? এটা আসলে আন্দোলনটির চরিত্রকে পাল্টে দিতে সাহায্য করলো কিনা, তা সাধারণ ছাত্রদের ভেবে দেখতে হবে। বাংলাদেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কারের আন্দোলনের সাথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য কীভাবে জড়িত? এই বাড়িটি কি এতটাই সহজলভ্য যে চাইলেই আক্রমণ করা যায়? এই বাড়ির ইতিহাস-ঐতিহ্য কেন এভাবে ভূলুণ্ঠিত করা হলো? এই বাড়িটি কি কেবল একজন উপাচার্যের, নাকি এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে আমাদের পূর্বপুরুষদের নানা গৌরবের ইতিহাস? এটাকে কি কোনোভাবে প্রতীকী আন্দোলন বলা যায়, যেখানে আমাদের ইতিহাস- আমাদের অস্তিত্ব-আমাদের গৌরব ভূলুণ্ঠিত হয়? এই ধরনের চিন্তাভাবনা আন্দোলনরত সাধারণ ছাত্রদের ভাবনা থেকে এসেছে, আমি সেটা একেবারেই মানতে নারাজ। আমি কখনোই মনে করি না, আমাদের ছাত্ররা শিক্ষকের বাসা কিংবা শিক্ষককে কিংবা শিক্ষকের পরিবারকে এভাবে আঘাত করতে পারে? এই শিক্ষা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় হতে বের হচ্ছে শিক্ষার্থীরা, আমি তা মানতে পারছি না। নিশ্চয়ই কোথাও কোনও ষড়যন্ত্র হয়েছে বা হচ্ছে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের এখন নিজেদের প্রশ্ন করে দেখতে হবে, কোথা থেকে কারা এই উস্কানিমূলক আচরণ করলো? আমি একেবারেই বিশ্বাস করতে চাই না, সাধারণ শিক্ষার্থীরা এই ধরনের জঘন্য কাজ করতে পারে। তার মানে হচ্ছে আন্দোলনের চাবিটি এখন আন্দোলনকারী সাধারণ শিক্ষার্থীদের হাতে নেই, অন্যদের হাতেও চলে গেছে।
দুই. এই প্রজ্ঞাপন জারির পরও কিছু বিষয় আছে, যা বৃহৎ স্বার্থে সরকারের এখন ভেবে দেখা দরকার। আমাদের মতো একটি ছোট্ট দেশে ১৭ কোটি মানুষের তিন বেলা খাবার জোগান হওয়াটাই যেখানে প্রাপ্তির, সেখানে বাড়তি প্রাপ্তি হলো, উন্নয়নের দিকে আমাদের দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলা। এজন্য সরকারের ভূমিকা প্রশংসনীয়। বিশ্বও তার স্বীকৃতি দিয়ে চলছে। কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে এটাও সত্য যে একটি দেশের শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা বেশি হলে তা সরকারের ভাবমূর্তি অনেকটাই ম্লান করে দেয়। তাছাড়া একটি দেশে বেকারের সংখ্যা যত বাড়বে, অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডসহ অনেক কিছুই বাড়তে থাকবে জ্যামেতিক হারে। শিক্ষিত বেকারের এই ঊর্ধ্বমুখী গ্রাফ দেখে এখন আমাদের নতুনভাবে কোটা সংস্কার জরুরি হয়ে পড়েছে। আমাদের দেশে এখন ৫৬ শতাংশ কোটা থাকার দরকার কিনা, সেই প্রশ্নটা কিন্তু কোনোভাবেই অযৌক্তিক নয়। এটাও আমাদের যুক্তি দিয়ে ভাবার সময় এসেছে। যেকোনো নিয়োগ পদ্ধতিই হওয়া উচিত প্রতিযোগিতামূলক। সেখানে সবচেয়ে যোগ্য জনবল থাকা দরকার, এটাই কিন্তু চরম সত্য। এত পরিমাণ কোটা থাকা আসলেই কতটা যৌক্তিক এই মুহূর্তে আমাদের সেটা ভাবা খুব জরুরি।
তিন. আমাদের কাছে এখনো ৭২-এর সংবিধান সবচেয়ে বেশি গ্রহণযোগ্য, এখনো চাই ফিরে আসুক ৭২-এর সংবিধান। বঙ্গবন্ধুই এই মুক্তিযোদ্ধা কোটা চালু করেছিলেন এবং ‘৭৫ পরবর্তীতে বন্ধ হয়ে গেলেও ’৯৬-এ বর্তমান প্রধানমন্ত্রী তা আবার চালু করেন। খুবই প্রশংসনীয় উদ্যোগ। কিন্তু তখন বাংলাদেশের জনসংখ্যা ছিল কত আর এখন কত? এখন ২০১৮-তে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা কত, এসবও বিবেচনায় আনতে হবে ২০ বছর পরের সরকারকে। এই মুহূর্তে প্রতি বছর শ্রমবাজারে যুক্ত হচ্ছে ১২-১৩ লক্ষ তরুণ, যাদের প্রায় ৪৮ শতাংশ উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করে বেকার জীবন দিনাতিপাত করছে। আর কোটা সংস্কারের আন্দোলন তো কেবল মুক্তিযোদ্ধা কোটা নিয়ে নয়, অন্যান্য কোটা নিয়েও ভাবনা চিন্তা থাকতে পারে। প্রায় চার লক্ষ বিসিএস পরীক্ষা দিতে পারলেও আসন আছে মাত্র দুই হাজার দুইশটি। তার মাঝে আবার ৫৫ শতাংশই কোটা ভিত্তিতে নিয়োগ পাচ্ছে, যা এই বিরাট সংখ্যক বেকার তরুণদের জন্য হতাশার। যেকোনও দেশেই কোটা সংস্কারের বিষয়টি রয়েছে। অতএব, প্রয়োজন অনুপাতে এর সংস্কার হতেই পারে। সরকার উদ্ভূত পরিস্থিতি, শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা ও নির্বাচনি বছর বিবেচনা করে কিছুটা হলেও সংস্কারের কথা ভাবতে পারে।
চার. ছাত্ররা তাদের দাবি নিয়ে আন্দোলন করতেই পারে, এটা তাদের অধিকার। কিন্তু এই অধিকার আদায়ের স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় পুলিশি হামলা ঘটনাটিকে অন্যদিকে খুব দ্রুত মোর ঘুরিয়ে দিলো। এখন ছাত্রদের হলগুলোতে কারা হামলা করছে? কেন করছে? কারা জামাত-শিবির, কারা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে এই আন্দোলনে জড়িত, তা নিয়েও ভাবনা চিন্তা করতে হবে। অন্যান্য ছাত্র সংগঠনের মতোই সরকারদলীয় ছাত্র সংগঠনগুলোও যে ভেতরে ভেতরে অন্তর্দ্বন্দ্বে নেই, তা ভেবে বসে থাকাটাও খুব বিচক্ষণতার পরিচয় দেওয়া হবে না। সামনে ছাত্রলীগের সম্মেলন, আর সে সম্মেলনকে ঘিরেও হতে পারে এই ধরনের কার্যকলাপ। অন্যান্য দল তাতে সমর্থন দিতে পারে যার যার নিজস্ব লাভ বিবেচনায়। তাই কেন, কারা, কীভাবে ছাত্রদের একটি কোটা সংস্কারের আন্দোলনকে অন্যদিকে রূপ দিচ্ছে সেটাও ভেবে দেখা জরুরি।
পাঁচ. এই মুহূর্তে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বাংলাদেশে একটি গুরুত্বপূর্ণ সফরে এসেছেন। ঠিক সেই মুহূর্তে এভাবে ছাত্র আন্দোলনটিতে পুলিশি হামলা চালিয়ে ঢাকা শহরকে উত্তপ্ত করার মধ্য দিয়ে শুরু হওয়া ঘটনা শেষ পর্যন্ত উপাচার্যের বাসভবন ভাঙচুর করা–এই পুরো প্রক্রিয়াটি খুব আশঙ্কাজনক। উপাচার্যের বাসভবনে নিশ্চয়ই অনেক ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা আছে। সেগুলো দেখে খুব শিগগিরই ব্যবস্থা নিতে যেমন হবে, তেমনি দেখতে হবে কারা কেন কীভাবে ঠিক এই সময়টিকেই বেছে নিয়েছে এই ন্যক্কারজনক হামলা চালানোর জন্য। জানা গেলো, হামলাকারীরা সিসি টিভির হার্ডডিস্ক নষ্ট করে ভেঙে দিয়ে গেছে, যা খুবই আশঙ্কাজনক। এভাবে যারা হামলা করে, তারা খুব পরিকল্পিতভাবে এগিয়েছে, তাদের যে ছবি আমরা কিছু দেখতে পাচ্ছি তাতে তাদের খুবই এসব কাজে পারঙ্গম মনে হচ্ছিল, সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষে এভাবে হামলা সম্ভব বলে আমার মনে হয় না। যারা আন্দোলন করছিল, তাদের চেহারা আর এই চেহারার তফাৎ দিন আর রাতের মতো পরিষ্কার|
ছয়. তাছাড়া ফেসবুকে কিংবা কিছু অনলাইন পোর্টাল পাশের দেশের আন্দোলনের কিছু ছবি পোস্ট করে তরুণদের বিভ্রান্ত করছে, সেটাও খুব গুরুত্বের সঙ্গে দেখা দরকার। কোনও ছবি দেখেই উত্তেজিত না হয়ে আমাদের ছবিটির উৎস এবং কে বা কারা কোন উদ্দেশ্য নিয়ে এই ধরনের বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে, তাও লক্ষ রাখা জরুরি। তাই সাধারণ শিক্ষার্থীদের ভাবতে হবে, এই পোড়া ঘরে কে বা কারা আলু পোড়া দিয়ে খেতে চাচ্ছে।
সবশেষে
বলতে চাই, বিশ্বের দ্বিতীয় সেরা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আমাদের
প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন, এই অহংকার ও আত্মপ্রত্যয় হতেই বলছি, তার
প্রতি আস্থা রাখুক শিক্ষার্থীরা। তিনি শিক্ষার্থীদের আবেদন নিশ্চয়ই বিবেচনা
করবেন, এটা আমার বিশ্বাস। কোটা বাতিল তো করার কথা বলা হচ্ছে না, কেবল
কিছুটা সংস্কার চায় সাধারণ শিক্ষার্থীরা। মুক্তিযোদ্ধা কোটা ছাড়াও আরও কিছু
কোটা আছে, জেলা কোটাসহ অন্যান্য কোটাগুলোতে সংস্কার করা যেতে পারে। যে
চারটি বৈশিষ্ট্যের ওপর ভিত্তি করে তিনি দ্বিতীয় সেরা প্রধানমন্ত্রী
নির্বাচিত হয়েছেন, তার একটি হচ্ছে, সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা। আশা করছি,
সকল দিক বিবেচনা করে কোটা সংস্কারের বিষয়টি তিনি বিবেচনা করবেন। আমরা সবাই
একটি ভালোবাসার বাংলাদেশ চাই, যেখানে থাকবে না ছাত্রদের ওপর পুলিশি আক্রমণ,
যার ফলশ্রুতিতে আবার ছাত্রদের নাম ভাঙ্গিয়ে একটি স্বার্থান্নেষী দল
উপাচার্যের বাসভবনে হামলার মতো নিষ্ঠুর ও জঘন্য কাজ করতে পারে। সকল রকম
ষড়যন্ত্র থেকে মুক্তি পাক আমার দেশ, ভালো থাকুক আমাদের ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস।
লেখক: শিক্ষক, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
লেখক: শিক্ষক, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
No comments