বাংলাদেশের অর্থনীতিতে তিন চ্যালেঞ্জ: বিশ্বব্যাংকের মূল্যায়ন
বিশ্বব্যাংক
মনে করে, বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনীতিতে তিন চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এর মধ্যে
রয়েছে, মূল্যস্ফীতি ও বাণিজ্য ঘাটতি বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা এবং রাজস্ব ঘাটতি।
তবে এসব চ্যালেঞ্জ বাড়া-কমা রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার ওপর নির্ভর করবে।
এছাড়া ঝুঁঁকির ক্ষেত্রে এই মুহূর্তে ব্যাংকিং খাতই সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে।
এদিকে জিডিপির প্রবৃদ্ধির হার নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। গতকাল শেরেবাংলা নগর
বিশ্বব্যাংকের আবাসিক কার্যালয়ে ‘বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেট ২০১৮’
প্রতিবেদন প্রকাশকালে সংস্থাটির মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন এসব
চ্যালেঞ্জের কথা বলেন। এ সময় বিশ্বব্যাংকের আবাসিক প্রতিনিধি চিমিয়াও ফান,
জনসংযোগ কর্মকর্তা মেহরীন এ মাহবুব উপস্থিত ছিলেন।
জাহিদ হোসেন বলেন, সামষ্টিক অর্থনীতিতে আরো কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। দারিদ্র্য বিমোচনের হার কম। রপ্তানি প্রথম নয় মাসে ভালো হলেও তা ২০১৬ সালের একই সময়ের চেয়ে ২.৭ শতাংশ কম। রপ্তানির বহুমুখীকরণের কোনো অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না। ব্যাংকে তারল্য সংকটের কারণে সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে নেই। বাণিজ্য ঘাটতি বেড়েই চলেছে। এটা কমার লক্ষণ কম। ভোক্তা ব্যয় বেড়েছে যেটা চ্যালেঞ্জ। সামগ্রিক পরিস্থিতিতে দেশের অর্থনীতির জন্য বেশ কয়েকটি পরামর্শও দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। জাহিদ হোসেন বলেন, অবকাঠামো উন্নয়ন, দক্ষতা বৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধিতে মনোযোগ দিতে হবে।
এদিকে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) সাময়িক হিসাব করে বলেছে, চলতি অর্থবছরের ৭.৬৫ শতাংশ মোট দেশজ উৎপাদনের প্রবৃদ্ধি হবে। এই হিসাব নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে বিশ্বব্যাংক। প্রবৃদ্ধির হিসাব নিয়ে কিছু প্রশ্ন করেছে বিশ্বব্যাংক।
প্রশ্নগুলো হলো এত প্রবৃদ্ধি কি অর্থনীতির সক্ষমতার অতিব্যবহার নাকি কৃত্রিমভাবে তৈরি করা? এত প্রবৃদ্ধির জন্য কাঠামোগত পরিবর্তনের কোনো প্রমাণ নেই। সংস্থাটি বলছে, দেশে ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগ কমেছে, সেবা খাতের প্রবৃদ্ধিও নেতিবাচক। তারপরও প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধির কথা বলা হয়েছে, যা নিয়ে সংশয় রয়েছে। তবে বিশ্বব্যাংক মনে করে, এ দেশে ৬.৫ থেকে ৬.৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনের সম্ভাবনা আছে। সরকারি হিসাবে তা অতিক্রম করে ফেলেছে।
জাহিদ হোসেন বলেন, বিশ্বের যে কয়টি দেশ প্রবৃদ্ধির হার ৭ শতাংশের বেশি হয়েছে, তাদের জিডিপির তুলনায় বিনিয়োগ অথবা রপ্তানি বেড়েছে। অনেক ক্ষেত্রে দুটিই বেড়েছে। বাংলাদেশ এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। কেননা বাংলাদেশে সরকারি বিনিয়োগ বাড়লেও ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগ স্থবির। কমেছে রপ্তানি আয়। এক্ষেত্রে শুধু ভোগের উপর ভিত্তি করে প্রবৃদ্ধি বাড়ছে। যা বিশ্বে একেবারেই ব্যতিক্রম। তিনি বলেন, তথ্য-উপাত্ত দেয়ার ক্ষেত্রে আমরা বিবিএসকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে থাকি। আসলে এর সমপর্যায়ে কেউ নেই। তবে জিডিপি প্রবৃদ্ধি নিয়ে যে তথ্য দিয়েছে তা নিয়ে যথেষ্ট প্রশ্ন ও সংশয় আছে। বিবিএস সর্বোচ্চ পর্যায়ে থাকলেও এটা নিয়ে প্রশ্ন তোলা যাবে না বিষয়টা এমনটা নয়। তিনি বলেন, এটা ব্যতিক্রমী প্রবৃদ্ধি, আগামীতে এই নিয়ে ঝুঁঁকি দেখা দেবে।
জাহিদ হোসেন বলেন, প্রতিবছর জিডিপির হার বাড়লেও সেই তুলনায় দারিদ্র্যসীমার হার কমছে না। এ থেকে বোঝা যায় বৈষম্য বেড়েছে। প্রবৃদ্ধি দারিদ্র্যবিমোচনে ভূমিকা রাখতে পারছে না। রংপুরে কিছু এলাকায় দারিদ্র্যের হার বেড়েছে, রাজশাহী ও খুলনায় তেমন অগ্রগতি হয়নি বলে জানান তিনি। প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধির সঙ্গে দারিদ্র্যবিমোচন যেভাবে হওয়ার কথা তা হয়নি। দারিদ্র্য কমছে ঠিকই, কিন্তু সেই দারিদ্র্য কমার গতি কমে গেছে। জাহিদ হোসেন বলেন, দেশের আয়ের প্রবৃদ্ধি ২.৭ এবং কর্মসংস্থানের প্রবৃদ্ধি ২.২ শতাংশ। আয় ও কর্মসস্থানের প্রবৃদ্ধির চিত্র যদি এমন হয় তবে বছর শেষে সাড়ের ৬ শতাংশের বেশি হবে না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা প্রসঙ্গে জাহিদ হোসেন বলেন, ব্যাংকিং খাতে খেলাপি বৃদ্ধি ও আমানত কমে যাওয়ায় তারল্য সংকট দেখা দিয়েছে। এসব উত্তরণে যেসব পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে তাতে ব্যাংকখাতে অস্থিরতা দেখা দিচ্ছে।
বাংলাদেশে বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর চিমিয়াও ফ্যান বলেন, বাংলাদেশ গত কয়েক বছর ধারাবাহিকভাবে ৭ শতাংশ জিডিপিতে গ্রোথ করছে। তবে মানবসম্পদ উন্নয়ন ও ব্যাংকিং সেক্টরে খেলাপি ঋণ কমানোর ব্যাপারে জোর দিতে হবে। তিনি বলেন, বছরের শুরুতেই দুটি বন্যার পরও উচ্চপ্রবৃদ্ধি ধরে রেখেছে বাংলাদেশ। রপ্তানি বাণিজ্য ও রেমিটেন্স প্রবাহের ধারা ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতায় ফিরেছে, যা অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক। তবে রাজস্ব ঘাটতির কারণে কর জিডিপির অনুপাত ৮.৮ শতাংশেই আছে। শুধু মধ্যম আয়ের দেশ হলে হবে না রাজস্ব আয়ও মধ্যমমানের হতে হবে। মহিলা ও তরুণদের কর্মসংস্থানে যুক্ত করতে হবে। ব্যবসার পরিবেশ উন্নত করতে হবে। উচ্চ সুদের হার কমাতে হবে। আর্থিকখাতে উল্লেখযোগ্য সংস্কার আনতে হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এলডিসি থেকে উত্তরণের সঙ্গে বিশ্বব্যাংকের সুদের হার বৃদ্ধির কোনো সম্পর্ক নেই। ওটা জাতিসংঘের হিসাব। তবে বিশ্বব্যাংক হিসাব করে মাথাপিছু আয়ের ওপর। এই হিসেবে বাংলাদেশের সুদহার নির্ধারণ হবে। আশঙ্কার কোনো কারণ নেই।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যে তিনটি খাতের উপর ভিত্তি করে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হিসাব করা হয়, বিশ্বব্যাংক ও বিবিএস-এর হিসেবের মধ্যে ফারাক আছে। বিশ্বব্যাংকের মতে, চলতি অর্থবছর কৃষি খাতে প্রবৃদ্ধি হবে ৩.৩ শতাংশ, যা বিবিএস-এর হিসাব ৩.০৬ এর চেয়ে বেশি। তবে শিল্প ও সেবা খাতের প্রবৃদ্ধি বিবিএস-এর তথ্যের তুলনায় বিশ্বব্যাংকের হিসাব কম হবে। বিশ্বব্যাংকের হিসেবে শিল্প খাতে প্রবৃদ্ধি হবে ৯.৪ শতাংশ, যা বিবিএস-এর হিসেবে হবে ১৩ শতাংশের বেশি। সেবা খাতে চলতি অর্থবছর প্রবৃদ্ধি হবে ৫.৭ শতাংশ। কিন্তু বিবিএস বলেছেন ৬.৩৩ শতাংশ হবে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি অর্থবছরে সার্বিক মূল্যস্ফীতি বেড়ে দাঁড়াবে ৫.৯ শতাংশে, যা গত অর্থবছরে ছিল ৫.৪ শতাংশ। এছাড়া আগামী ২০১৮-১৯ এবং ২০১৯-২০ অর্থবছরে আর বেড়ে গিয়ে দাঁড়াবে ৬.২ শতাংশ।
ড. জাহিদ হোসেন বলেন, বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতির ক্ষেত্রে বৈপরীত্য রয়েছে। অর্থাৎ যদি খাদ্য মূল্যস্ফীতি বাড়ে তাহলে খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি কমে। আবার যদি খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি বাড়ে তাহলে খাদ্যে কমে। এভাবে সার্বিক মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে থাকলেও তা নিয়ে ভাববার বিষয় আছে। এক্ষেত্রে অস্থিতিশীলতাই মূল্যস্ফীতিকে স্থিতিশীল রাখছে।
চলতি অর্থবছর ব্যক্তিখাতের ভোগ কমে দাঁড়াবে ৫.৫ শতাংশ, যা গত অর্থবছর ছিল ৭.৪ শতাংশ। এছাড়া আগামী ২০১৮-১৯ অর্থবছরে একই থাকবে এবং ২০১৯-২০ অর্থ সামান্য বেড়ে ৫.৬ শতাংশ হবে। অন্যদিকে সরকারি খরচ চলতি অর্থবছরে সামান্য বেড়ে দাঁড়াবে ৮ শতাংশে, যা গত অর্থবছর ছিল ৭.৮ শতাংশ। বলা হয়েছে, মোট স্থায়ী মূলধনী বিনিয়োগ বেড়ে হবে ১১.৯ শতাংশ, যা গত অর্থবছরে ছিল ১০.১ শতাংশ। অবশ্য বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস বলছে, আগামী দুই অর্থবছরে মূলধনী বিনিয়োগের পরিমাণ ধারাবাহিকভাবে কমবে।
জাহিদ হোসেন বলেন, ব্যাংকে তারল্য সংকটের কারণ হচ্ছে ব্যক্তিখাতে ঋণ প্রবাহ বেড়েছে, অন্যদিকে ডিপোজিট কমেছে। ডলারের বিপরীতে টাকা অবমূল্যায়ন এবং সঞ্চয়পত্রের বিক্রি বেড়েছে। এ মুহূর্তে করণীয় সম্পর্কে বিশ্বব্যাংক বলেছে, আর্থিক খাতের দীর্ঘমেয়াদী সংস্কার, অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগ ব্যবস্থাপনা, শ্রমশক্তির দক্ষতা বৃদ্ধি, ব্যাংকিং খাতের বিষয়টি বিশেষ নজর দেয়া, বিনিময় হার বাজারের ওপর ছেড়ে দেয়া, রপ্তানি শুধুমাত্র তৈরি পোশাকের উপর নির্ভর না করে বহুমুখীকরণ জরুরি।
জাহিদ হোসেন বলেন, সামষ্টিক অর্থনীতিতে আরো কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। দারিদ্র্য বিমোচনের হার কম। রপ্তানি প্রথম নয় মাসে ভালো হলেও তা ২০১৬ সালের একই সময়ের চেয়ে ২.৭ শতাংশ কম। রপ্তানির বহুমুখীকরণের কোনো অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না। ব্যাংকে তারল্য সংকটের কারণে সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে নেই। বাণিজ্য ঘাটতি বেড়েই চলেছে। এটা কমার লক্ষণ কম। ভোক্তা ব্যয় বেড়েছে যেটা চ্যালেঞ্জ। সামগ্রিক পরিস্থিতিতে দেশের অর্থনীতির জন্য বেশ কয়েকটি পরামর্শও দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। জাহিদ হোসেন বলেন, অবকাঠামো উন্নয়ন, দক্ষতা বৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধিতে মনোযোগ দিতে হবে।
এদিকে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) সাময়িক হিসাব করে বলেছে, চলতি অর্থবছরের ৭.৬৫ শতাংশ মোট দেশজ উৎপাদনের প্রবৃদ্ধি হবে। এই হিসাব নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে বিশ্বব্যাংক। প্রবৃদ্ধির হিসাব নিয়ে কিছু প্রশ্ন করেছে বিশ্বব্যাংক।
প্রশ্নগুলো হলো এত প্রবৃদ্ধি কি অর্থনীতির সক্ষমতার অতিব্যবহার নাকি কৃত্রিমভাবে তৈরি করা? এত প্রবৃদ্ধির জন্য কাঠামোগত পরিবর্তনের কোনো প্রমাণ নেই। সংস্থাটি বলছে, দেশে ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগ কমেছে, সেবা খাতের প্রবৃদ্ধিও নেতিবাচক। তারপরও প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধির কথা বলা হয়েছে, যা নিয়ে সংশয় রয়েছে। তবে বিশ্বব্যাংক মনে করে, এ দেশে ৬.৫ থেকে ৬.৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনের সম্ভাবনা আছে। সরকারি হিসাবে তা অতিক্রম করে ফেলেছে।
জাহিদ হোসেন বলেন, বিশ্বের যে কয়টি দেশ প্রবৃদ্ধির হার ৭ শতাংশের বেশি হয়েছে, তাদের জিডিপির তুলনায় বিনিয়োগ অথবা রপ্তানি বেড়েছে। অনেক ক্ষেত্রে দুটিই বেড়েছে। বাংলাদেশ এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। কেননা বাংলাদেশে সরকারি বিনিয়োগ বাড়লেও ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগ স্থবির। কমেছে রপ্তানি আয়। এক্ষেত্রে শুধু ভোগের উপর ভিত্তি করে প্রবৃদ্ধি বাড়ছে। যা বিশ্বে একেবারেই ব্যতিক্রম। তিনি বলেন, তথ্য-উপাত্ত দেয়ার ক্ষেত্রে আমরা বিবিএসকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে থাকি। আসলে এর সমপর্যায়ে কেউ নেই। তবে জিডিপি প্রবৃদ্ধি নিয়ে যে তথ্য দিয়েছে তা নিয়ে যথেষ্ট প্রশ্ন ও সংশয় আছে। বিবিএস সর্বোচ্চ পর্যায়ে থাকলেও এটা নিয়ে প্রশ্ন তোলা যাবে না বিষয়টা এমনটা নয়। তিনি বলেন, এটা ব্যতিক্রমী প্রবৃদ্ধি, আগামীতে এই নিয়ে ঝুঁঁকি দেখা দেবে।
জাহিদ হোসেন বলেন, প্রতিবছর জিডিপির হার বাড়লেও সেই তুলনায় দারিদ্র্যসীমার হার কমছে না। এ থেকে বোঝা যায় বৈষম্য বেড়েছে। প্রবৃদ্ধি দারিদ্র্যবিমোচনে ভূমিকা রাখতে পারছে না। রংপুরে কিছু এলাকায় দারিদ্র্যের হার বেড়েছে, রাজশাহী ও খুলনায় তেমন অগ্রগতি হয়নি বলে জানান তিনি। প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধির সঙ্গে দারিদ্র্যবিমোচন যেভাবে হওয়ার কথা তা হয়নি। দারিদ্র্য কমছে ঠিকই, কিন্তু সেই দারিদ্র্য কমার গতি কমে গেছে। জাহিদ হোসেন বলেন, দেশের আয়ের প্রবৃদ্ধি ২.৭ এবং কর্মসংস্থানের প্রবৃদ্ধি ২.২ শতাংশ। আয় ও কর্মসস্থানের প্রবৃদ্ধির চিত্র যদি এমন হয় তবে বছর শেষে সাড়ের ৬ শতাংশের বেশি হবে না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা প্রসঙ্গে জাহিদ হোসেন বলেন, ব্যাংকিং খাতে খেলাপি বৃদ্ধি ও আমানত কমে যাওয়ায় তারল্য সংকট দেখা দিয়েছে। এসব উত্তরণে যেসব পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে তাতে ব্যাংকখাতে অস্থিরতা দেখা দিচ্ছে।
বাংলাদেশে বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর চিমিয়াও ফ্যান বলেন, বাংলাদেশ গত কয়েক বছর ধারাবাহিকভাবে ৭ শতাংশ জিডিপিতে গ্রোথ করছে। তবে মানবসম্পদ উন্নয়ন ও ব্যাংকিং সেক্টরে খেলাপি ঋণ কমানোর ব্যাপারে জোর দিতে হবে। তিনি বলেন, বছরের শুরুতেই দুটি বন্যার পরও উচ্চপ্রবৃদ্ধি ধরে রেখেছে বাংলাদেশ। রপ্তানি বাণিজ্য ও রেমিটেন্স প্রবাহের ধারা ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতায় ফিরেছে, যা অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক। তবে রাজস্ব ঘাটতির কারণে কর জিডিপির অনুপাত ৮.৮ শতাংশেই আছে। শুধু মধ্যম আয়ের দেশ হলে হবে না রাজস্ব আয়ও মধ্যমমানের হতে হবে। মহিলা ও তরুণদের কর্মসংস্থানে যুক্ত করতে হবে। ব্যবসার পরিবেশ উন্নত করতে হবে। উচ্চ সুদের হার কমাতে হবে। আর্থিকখাতে উল্লেখযোগ্য সংস্কার আনতে হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এলডিসি থেকে উত্তরণের সঙ্গে বিশ্বব্যাংকের সুদের হার বৃদ্ধির কোনো সম্পর্ক নেই। ওটা জাতিসংঘের হিসাব। তবে বিশ্বব্যাংক হিসাব করে মাথাপিছু আয়ের ওপর। এই হিসেবে বাংলাদেশের সুদহার নির্ধারণ হবে। আশঙ্কার কোনো কারণ নেই।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যে তিনটি খাতের উপর ভিত্তি করে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হিসাব করা হয়, বিশ্বব্যাংক ও বিবিএস-এর হিসেবের মধ্যে ফারাক আছে। বিশ্বব্যাংকের মতে, চলতি অর্থবছর কৃষি খাতে প্রবৃদ্ধি হবে ৩.৩ শতাংশ, যা বিবিএস-এর হিসাব ৩.০৬ এর চেয়ে বেশি। তবে শিল্প ও সেবা খাতের প্রবৃদ্ধি বিবিএস-এর তথ্যের তুলনায় বিশ্বব্যাংকের হিসাব কম হবে। বিশ্বব্যাংকের হিসেবে শিল্প খাতে প্রবৃদ্ধি হবে ৯.৪ শতাংশ, যা বিবিএস-এর হিসেবে হবে ১৩ শতাংশের বেশি। সেবা খাতে চলতি অর্থবছর প্রবৃদ্ধি হবে ৫.৭ শতাংশ। কিন্তু বিবিএস বলেছেন ৬.৩৩ শতাংশ হবে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি অর্থবছরে সার্বিক মূল্যস্ফীতি বেড়ে দাঁড়াবে ৫.৯ শতাংশে, যা গত অর্থবছরে ছিল ৫.৪ শতাংশ। এছাড়া আগামী ২০১৮-১৯ এবং ২০১৯-২০ অর্থবছরে আর বেড়ে গিয়ে দাঁড়াবে ৬.২ শতাংশ।
ড. জাহিদ হোসেন বলেন, বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতির ক্ষেত্রে বৈপরীত্য রয়েছে। অর্থাৎ যদি খাদ্য মূল্যস্ফীতি বাড়ে তাহলে খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি কমে। আবার যদি খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি বাড়ে তাহলে খাদ্যে কমে। এভাবে সার্বিক মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে থাকলেও তা নিয়ে ভাববার বিষয় আছে। এক্ষেত্রে অস্থিতিশীলতাই মূল্যস্ফীতিকে স্থিতিশীল রাখছে।
চলতি অর্থবছর ব্যক্তিখাতের ভোগ কমে দাঁড়াবে ৫.৫ শতাংশ, যা গত অর্থবছর ছিল ৭.৪ শতাংশ। এছাড়া আগামী ২০১৮-১৯ অর্থবছরে একই থাকবে এবং ২০১৯-২০ অর্থ সামান্য বেড়ে ৫.৬ শতাংশ হবে। অন্যদিকে সরকারি খরচ চলতি অর্থবছরে সামান্য বেড়ে দাঁড়াবে ৮ শতাংশে, যা গত অর্থবছর ছিল ৭.৮ শতাংশ। বলা হয়েছে, মোট স্থায়ী মূলধনী বিনিয়োগ বেড়ে হবে ১১.৯ শতাংশ, যা গত অর্থবছরে ছিল ১০.১ শতাংশ। অবশ্য বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস বলছে, আগামী দুই অর্থবছরে মূলধনী বিনিয়োগের পরিমাণ ধারাবাহিকভাবে কমবে।
জাহিদ হোসেন বলেন, ব্যাংকে তারল্য সংকটের কারণ হচ্ছে ব্যক্তিখাতে ঋণ প্রবাহ বেড়েছে, অন্যদিকে ডিপোজিট কমেছে। ডলারের বিপরীতে টাকা অবমূল্যায়ন এবং সঞ্চয়পত্রের বিক্রি বেড়েছে। এ মুহূর্তে করণীয় সম্পর্কে বিশ্বব্যাংক বলেছে, আর্থিক খাতের দীর্ঘমেয়াদী সংস্কার, অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগ ব্যবস্থাপনা, শ্রমশক্তির দক্ষতা বৃদ্ধি, ব্যাংকিং খাতের বিষয়টি বিশেষ নজর দেয়া, বিনিময় হার বাজারের ওপর ছেড়ে দেয়া, রপ্তানি শুধুমাত্র তৈরি পোশাকের উপর নির্ভর না করে বহুমুখীকরণ জরুরি।
No comments