রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য প্রস্তুত নয় মিয়ানমার: জাতিসংঘ
রোহিঙ্গা
শরণার্থীদের প্রত্যাবাসনের জন্য এখনো প্রস্তুত নয় মিয়ানমার। দেশটিতে বিরল
এক সফর শেষে এ কথা জানিয়েছেন জাতিসংঘের প্রতিনিধি দল। জাতিসংঘের মানবিক
সহায়তা সমন্বয় কর্মসূচির সহকারী মহাসচিব ৬ দিনব্যাপী মিয়ানমারের বিভিন্ন
স্থান ঘুরে দেখে ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে এ কথা জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন,
আমি যা দেখেছি ও লোকের কাছ থেকে যা শুনেছি- সেখানে স্বাস্থ্যসেবার কোনো
সুযোগ নেই, সুরক্ষার বিষয়ে উদ্বেগ রয়েছে, বাস্তুচ্যুত হওয়ার ঘটনা অব্যাহত
রয়েছে- পরিস্থিতি ফিরে যাওয়ার মতো নয়। এ বিষয়ে মিয়ানমার সরকারের একজন
মুখপাত্রের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হয়। তবে তাতে কোনো সাড়া মেলেনি। এ
খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স ও এএফপি। খবরে বলা হয়, ছয়দিনের সফরে
মিয়ানমারের রাখাইন, শান ও কাচিন প্রদেশে যান মুয়েলার। সেখানে বিভিন্ন স্থান
সরজমিন প্রত্যক্ষ করার পর রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বিষয়ে তার মন্তব্য জানান
তিনি। তবে মিয়ানমার সরকার অবশ্য বেশ কয়েকবার দাবি করেছে, তারা সেখানকার
পরিস্থিতি রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের উপযোগী করে তুলেছে। রাখাইনে পুনর্বাসনের
দায়িত্বে আছে এমন একটি সরকার-সমর্থিত সংগঠনের প্রধান সমন্বয়ক হচ্ছেন অং তুন
থেত। এই সপ্তাহে স্থানীয় মিডিয়াকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি প্রত্যাবাসন
নিয়ে বলেন, আমরা প্রস্তুত। ভবনগুলোও তৈরি। হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোও
প্রস্তুত। আমাদের পক্ষে যা করা সম্ভব আমরা করেছি। তারা যদি নিরাপদ বোধ না
করে তাহলে আমাদের আর কিছু করার নেই। উল্লেখ্য, বাংলাদেশ ও মিয়ানমার
জানুয়ারিতে দু’বছরের মধ্যে রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছাকৃত প্রত্যাবাসনে সম্মত
হয়েছে। এর জন্য মিয়ানমার দু’টি কেন্দ্র ও রাখাইনের পাশে একটি অস্থায়ী
শিবিরও স্থাপন করেছে। তবে এখন পর্যন্ত মিয়ানমার মাত্র কয়েক শ’ রোহিঙ্গাকে
ফিরিয়ে নেয়ার জন্য শনাক্ত করেছে। মিয়ানমারে মুয়েলারকে বিরল প্রবেশাধিকার
দেয়া হয়েছিল। তিনি রাখাইনের সংঘাত-কবলিত বেশিরভাগ এলাকাই পরিদর্শন করতে
পেরেছেন। সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রিত প্রতিরক্ষা ও সীমান্ত বিষয়ক মন্ত্রীদের
সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। পাশাপাশি মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সুচি ও বেসামরিক
নাগরিকদের সঙ্গেও দেখা করেছেন। গত বছরের ২৫শে আগস্ট শুরু হওয়া সামরিক
বাহিনীর নৃশংস অভিযান থেকে বাঁচতে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে লাখ লাখ রোহিঙ্গা
শরণার্থী। সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে হত্যা, অগ্নিসংযোগ, লুণ্ঠন, ধর্ষণসহ বহু
নির্মমতার অভিযোগ রয়েছে। মুয়েলার রয়টার্সকে বলেন, আমি (মিয়ানমারের
কর্মকর্তাদের) সহিংসতা বন্ধ করতে বলেছি। পাশাপাশি এটাও বলেছি যে, কক্সবাজার
থেকে শরণার্থীদের প্রত্যাবাসন স্বেচ্ছাকৃত, মর্যাদাপূর্ণ উপায়ে হতে হবে,
যখন সমাধান টেকসই হবে। মিয়ানমারের দাবি তাদের সেনাবাহিনী মুসলিম
সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে একটি বৈধ লড়াই করছিল। এদিকে, বাংলাদেশি কর্মকর্তারা
পূর্বে রোহিঙ্গাদের ফেরত নেয়ার বিষয়ে মিয়ানমারের ইচ্ছা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ
করেছে। মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের প্রথমে অস্থায়ী শিবিরে রাখার কথা বলেছে ও
পরবর্তীতে তাদেরকে নিজ গৃহে ফিরে যাওয়ার সুযোগ দেবে বলে নিশ্চয়তা দিয়েছে।
মুয়েলার সরকারের ওই নিশ্চয়তায় বিশ্বাস করেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন,
আমি এখানকার পরিস্থিতি নিয়ে খুবই উদ্বিগ্ন। নিউ ইয়র্ক-ভিত্তিক আন্তর্জাতিক
মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ অনুসারে, মিয়ানমার সেনাবাহিনী ৫৫টি
রোহিঙ্গা গ্রাম বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দিয়েছে। এটি একটি বড় সমস্যা।
মুয়েলার বলেন, আমি পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে ও বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেয়া হয়েছে এমন এলাকা পরিদর্শন করেছি। কিন্তু আমি কোথাও লোকজনকে তাদের জন্মভূমিতে ফিরিয়ে নেয়ার জন্য কোনো ধরনের প্রস্তুতির কথা শুনিনি। মিয়ানমার কর্মকর্তাদের দাবি রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনের জন্যই গ্রামগুলো বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে ফেলা হয়েছে।
মুয়েলার বলেন, আমি পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে ও বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেয়া হয়েছে এমন এলাকা পরিদর্শন করেছি। কিন্তু আমি কোথাও লোকজনকে তাদের জন্মভূমিতে ফিরিয়ে নেয়ার জন্য কোনো ধরনের প্রস্তুতির কথা শুনিনি। মিয়ানমার কর্মকর্তাদের দাবি রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনের জন্যই গ্রামগুলো বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে ফেলা হয়েছে।
No comments