উইয়ের পেটে নর্থব্রুক হল লাইব্রেরির মূল্যবান বই by শেখ সাবিহা আলম
নর্থব্রুক হল লাইব্রেরির সামনে চলছে স্থানীয় ডেকোরেটর মালিকদের ফরমায়েশি রান্নাবান্না। ঢাকার এই প্রাচীন পাঠাগারটির এখন বেহাল অবস্থা। ছবি-সাবিনা ইয়াসমিন |
‘নায়করাজ
রাজ্জাক ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি। বিদেশ নিতেছে না কেন? হাসানুল হক ইনু
আছে না, সে তো নায়করাজের মতো জামা পিনত!’...‘আর্জেন্টিনা কেমন খেলতেছে
দেখছেন! ’...‘আহ্ যানজট, ঢাকার যানজট আর গেল না!’ গতকাল বৃহস্পতিবার। টাটকা
দৈনিক পত্রিকা হাতে ঢাকার নর্থব্রুক হল লাইব্রেরিতে পাঠকেরা এমন নানা
প্রসঙ্গের আলোচনায় ব্যস্ত। আর তাঁদের ঠিক পেছনে মনের সুখে উই পোকায় কাটছে
দেড়-দুই শ বছরের পুরোনো মূল্যবান সব বই। অযত্ন-অবহেলায় গ্রন্থাগারের ১৫
হাজার বইয়ের সংগ্রহ এখন ঠেকেছে হাজার পাঁচেকে।
রাজধানীর সবচেয়ে পুরোনো গ্রন্থাগার ‘নর্থব্রুক হল লাইব্রেরি’। ১৮৫০ সালে ব্রিটেনে লাইব্রেরি আইন পাসের পর স্থানীয় সরকারগুলো বিভিন্ন জায়গায় গণগ্রন্থাগার তৈরি করতে শুরু করে। এরই ধারাবাহিকতায় ১৮৮২ সালে চালু হয় নর্থব্রুক হল লাইব্রেরি। ১৮৭৯ সালে গভর্নর জেনারেল লর্ড নর্থব্রুকের ঢাকায় আসা উপলক্ষে তাঁর নামেই গ্রন্থাগারটির নামকরণ করা হয়। লাল ইটে তৈরি বলে স্থানীয়ভাবে এটিকে ‘লালকুঠি লাইব্রেরি’ও বলা হতো। কুমার রাজেন্দ্র নারায়ণ রায়, নওয়াব আহসানউল্লাহ খানবাহাদুর, বাবু ব্রজেন্দ্র কুমার রায়, গোবিন্দ লাল বসাক, কুমার রাজেন্দ্র নারায়ণ রায় প্রমুখ বিদ্যোৎসাহীর অনুদানে চলছিল গ্রন্থাগারটি। ১৭টি কাঠের আলমারিতে ভরা বই। রানি ভিক্টোরিয়ার চিঠি থেকে শুরু করে বিলেতের ইতিহাস, সিপাহি বিপ্লব, প্রতাপশালী ব্রিটিশ শাসকদের জীবনী, ভারতবর্ষের সীমানা নির্ধারণ কমিটির প্রতিবেদন, ইংরেজি সাহিত্যের নানা বই থরে থরে সাজানো। শ দুয়েক বাংলা বইও আছে। সেগুলোও ৫০ থেকে ১০০ বছরের পুরোনো। তবে বইয়ে হাত দেওয়া নিষেধ। শুধু আলমারির কাচের বাইরে থেকে দেখার অনুমতি আছে।
তিতুমীর কলেজ থেকে ইংরেজিতে স্নাতকোত্তর লেখাপড়া শেষ করেছেন ফয়সাল আহমেদ। তিনি বলছিলেন, যতবারই গ্রন্থাগারে আসেন ততবারই বইগুলো পড়তে ইচ্ছে করে। কিন্তু অনুমতি না থাকায় পত্রিকা পড়ে ফিরে যান।
নর্থব্রুক হল লাইব্রেরির সহকারী গ্রন্থাগারিক মো. নজরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘দেড়-দুই শ বছরের পুরোনো বই সব। হাত দিয়ে ধরলে এখন ঝুরঝুর করে পড়ে যায়। সংরক্ষণের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। আমরা বলতে বলতে ক্লান্ত।’ গত ২৬ বছর তিনি এই গ্রন্থাগারের সঙ্গে যুক্ত। এই সময়ে কোনো বই কাউকে দেননি। নতুন করে কোনো বই কেনাও হয়নি। গ্রন্থাগারের উন্নয়নের জন্য কোনো বরাদ্দ নেই বলে তিনি শুনেছেন।
রাজধানীর সবচেয়ে পুরোনো গ্রন্থাগার ‘নর্থব্রুক হল লাইব্রেরি’। ১৮৫০ সালে ব্রিটেনে লাইব্রেরি আইন পাসের পর স্থানীয় সরকারগুলো বিভিন্ন জায়গায় গণগ্রন্থাগার তৈরি করতে শুরু করে। এরই ধারাবাহিকতায় ১৮৮২ সালে চালু হয় নর্থব্রুক হল লাইব্রেরি। ১৮৭৯ সালে গভর্নর জেনারেল লর্ড নর্থব্রুকের ঢাকায় আসা উপলক্ষে তাঁর নামেই গ্রন্থাগারটির নামকরণ করা হয়। লাল ইটে তৈরি বলে স্থানীয়ভাবে এটিকে ‘লালকুঠি লাইব্রেরি’ও বলা হতো। কুমার রাজেন্দ্র নারায়ণ রায়, নওয়াব আহসানউল্লাহ খানবাহাদুর, বাবু ব্রজেন্দ্র কুমার রায়, গোবিন্দ লাল বসাক, কুমার রাজেন্দ্র নারায়ণ রায় প্রমুখ বিদ্যোৎসাহীর অনুদানে চলছিল গ্রন্থাগারটি। ১৭টি কাঠের আলমারিতে ভরা বই। রানি ভিক্টোরিয়ার চিঠি থেকে শুরু করে বিলেতের ইতিহাস, সিপাহি বিপ্লব, প্রতাপশালী ব্রিটিশ শাসকদের জীবনী, ভারতবর্ষের সীমানা নির্ধারণ কমিটির প্রতিবেদন, ইংরেজি সাহিত্যের নানা বই থরে থরে সাজানো। শ দুয়েক বাংলা বইও আছে। সেগুলোও ৫০ থেকে ১০০ বছরের পুরোনো। তবে বইয়ে হাত দেওয়া নিষেধ। শুধু আলমারির কাচের বাইরে থেকে দেখার অনুমতি আছে।
তিতুমীর কলেজ থেকে ইংরেজিতে স্নাতকোত্তর লেখাপড়া শেষ করেছেন ফয়সাল আহমেদ। তিনি বলছিলেন, যতবারই গ্রন্থাগারে আসেন ততবারই বইগুলো পড়তে ইচ্ছে করে। কিন্তু অনুমতি না থাকায় পত্রিকা পড়ে ফিরে যান।
নর্থব্রুক হল লাইব্রেরির সহকারী গ্রন্থাগারিক মো. নজরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘দেড়-দুই শ বছরের পুরোনো বই সব। হাত দিয়ে ধরলে এখন ঝুরঝুর করে পড়ে যায়। সংরক্ষণের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। আমরা বলতে বলতে ক্লান্ত।’ গত ২৬ বছর তিনি এই গ্রন্থাগারের সঙ্গে যুক্ত। এই সময়ে কোনো বই কাউকে দেননি। নতুন করে কোনো বই কেনাও হয়নি। গ্রন্থাগারের উন্নয়নের জন্য কোনো বরাদ্দ নেই বলে তিনি শুনেছেন।
নর্থব্রুক হল লাইব্রেরির আলমারি ভরা মূল্যবান বই। তবে এগুলো পাঠকের ধরাছোঁয়ার বাইরে l প্রথম আলো |
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যবিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা বিভাগের
অধ্যাপক এস এম মান্নান প্রথম আলোকে বলেন, ‘পুরোনো বই সংরক্ষণের বিভিন্ন
পদ্ধতি আছে। বইগুলো ভেঙে যেতে থাকলে সংরক্ষণপদ্ধতি হবে এক রকম, উইয়ে কাটলে
হবে আরেক রকম। কিন্তু পুরোনো বই সংরক্ষণ অসম্ভব কিছু নয়।’ তিনি বলেন,
তাঁর তিন দশকের শিক্ষকতা জীবনে কখন সিটি করপোরেশন তাঁর বিভাগের কাছে কোনো
সহায়তা চেয়েছে বলে মনে করতে পারেন না। গ্রন্থাগারের টেবিলে চকচকে পত্রিকা আর আলমারির ভেতর পুরোনো উই ধরা বই।
বাইরেও একই অবস্থা। গ্রন্থাগারে ঢোকার মুখে শ্বেতপাথরের স্মৃতিফলক। এতে
লেখা, ‘বিশ্ব নাগরিক কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও স্থানীয়
একাধিক সংগঠনের আমন্ত্রণে ঢাকা শহরে আসেন ১৯২৬ খ্রিষ্টাব্দের ৭
ফেব্রুয়ারি, ওই দিন বিকেলে লালকুঠিতে ঢাকা মিউনিসিপ্যালটির ও পিপলস
অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষে তাঁকে সংবর্ধনা জানিয়ে মানপত্র পাঠ করা হয়। জবাবে
কবি দেশসেবা, সম্প্রদায়-সম্প্রীতি বিশ্বশান্তির পক্ষে মতামত ব্যক্ত করেন।
বাংলা সাহিত্যে রবীন্দ্রনাথ প্রথম নোবেলজয়ী। উদ্যোগে: ঢাকা সিটি করপোরেশন।
সহযোগিতায়: রবীন্দ্রচর্চা কেন্দ্র ট্রাস্ট। শুভ উদ্বোধন করেন সাদেক হোসেন
খোকা।’
বাইরে চকচকে ফলক। ভেতরে লালকুঠির ভগ্নদশা। উঁচু দালানটির জায়গায় জায়গায় ফাটল ধরেছে। কোথাও কোথাও ফাটল বেশ গভীর। বর্ষায় ছাদ থেকে পানি চুইয়ে পড়ে। মেঝেতে পানি জমে যায়। নর্থব্রুক হল লাইব্রেরির পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখেন মো. আলমগীর। তিনি বলেন, ‘আপনার আগে এইখানে এক চ্যালেং (টিভি চ্যানেল) এর আপা আসছিল। হঠাৎ কইরা ওপর থাইকা কি জানি পড়ছে। আল্লাহ দিলে কিছু হয় নাইক্কা। নইলে মাথা মুখ ফাইট্টা যাইত।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, গ্রন্থাগারের উন্নয়নে কর্তৃপক্ষের মন নেই। এ থেকে লাভের সুযোগ নেই বলে কেউই এর উন্নয়নের আগ্রহ দেখায় না। প্রশাসক এসেছেন, কাউন্সিলর ঘুরে দেখে গেছেন, মেয়রও এসেছিলেন। কিন্তু অবস্থার কোনো উন্নতি নেই বলে তাঁরা জানান।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সমাজকল্যাণ কর্মকর্তা খন্দকার মিল্লাতুল ইসলাম প্রথম আলোকে জানান, নর্থব্রুক হল লাইব্রেরি সংস্কারের একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের জন্য কাজ বন্ধ ছিল। শিগগিরই কাজ আবার শুরু হবে।
বাইরে চকচকে ফলক। ভেতরে লালকুঠির ভগ্নদশা। উঁচু দালানটির জায়গায় জায়গায় ফাটল ধরেছে। কোথাও কোথাও ফাটল বেশ গভীর। বর্ষায় ছাদ থেকে পানি চুইয়ে পড়ে। মেঝেতে পানি জমে যায়। নর্থব্রুক হল লাইব্রেরির পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখেন মো. আলমগীর। তিনি বলেন, ‘আপনার আগে এইখানে এক চ্যালেং (টিভি চ্যানেল) এর আপা আসছিল। হঠাৎ কইরা ওপর থাইকা কি জানি পড়ছে। আল্লাহ দিলে কিছু হয় নাইক্কা। নইলে মাথা মুখ ফাইট্টা যাইত।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, গ্রন্থাগারের উন্নয়নে কর্তৃপক্ষের মন নেই। এ থেকে লাভের সুযোগ নেই বলে কেউই এর উন্নয়নের আগ্রহ দেখায় না। প্রশাসক এসেছেন, কাউন্সিলর ঘুরে দেখে গেছেন, মেয়রও এসেছিলেন। কিন্তু অবস্থার কোনো উন্নতি নেই বলে তাঁরা জানান।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সমাজকল্যাণ কর্মকর্তা খন্দকার মিল্লাতুল ইসলাম প্রথম আলোকে জানান, নর্থব্রুক হল লাইব্রেরি সংস্কারের একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের জন্য কাজ বন্ধ ছিল। শিগগিরই কাজ আবার শুরু হবে।
No comments