পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নে ইউএনপিওর আহ্বান

পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নে সমর্থন জানিয়েছে আনরেপ্রেজেনটেড নেশন ও পিপলস অর্গাইজেশন (ইউএনপিও)-এর সাধারণ পরিষদের ১২তম অধিবেশন। এসময় সময়সূচি ভিত্তিক কর্মপরিকল্পনা ঘোষণার মধ্যদিয়ে পার্বত্য চুক্তির দ্রুত ও যথাযথ বাস্তবায়নের জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি। বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে গত ২-৪ জুলাই তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত ইউএনপিও-র সাধারণ পরিষদের ১২তম অধিবেশনে রাঙামাটি আসনের সংসদ সদস্য উষাতন তালুকদার, জেএসএস তথ্য ও প্রচার সম্পাদক মঙ্গল কুমার চাকমা ও মানবাধিকার কর্মী (সিএইচটি ফাউন্ডেশন) কৃষ্ণ আর চাকমা অংশগ্রহণ করেন। শনিবার মঙ্গল কুমার চাকমা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেন, ইউএনপিও-র ৪৬টি প্রতিনিধিত্বহীন জাতি (নেশন) ও জাতিগোষ্ঠীর (পিপলস) সদস্যদের মধ্যে ২৫টি জাতি ও জাতিগোষ্ঠীর প্রায় ৪০ জন প্রতিনিধি এই ১২তম অধিবেশনে অংশগ্রহণ করেছেন।
অধিবেশনে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ ও তিন পার্বত্য জেলা পরিষদে বিষয় হস্তান্তর ও কার্যকরকরণ, পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইন ২০০১-এর বিরোধাত্মক ধারা সংশোধনপূর্বক ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি, অপারেশন উত্তরণসহ সকল অস্থায়ী ক্যাম্প প্রত্যাহার, সেটেলার বাঙালীদের পার্বত্য চট্টগ্রামের বাইরে সম্মানজনক পুনর্বাসনের দাবি জানানো হয়। সম্মেলনে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগোষ্ঠীর উন্নয়নের জন্য সহায়তা প্রদানের জন্য জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আহ্বান জানানো হয়। ২০১১ সালে জাতিসংঘের আদিবাসী বিষয়ক স্থায়ী ফোরামের ১১তম অধিবেশনে গৃহীত সুপারিশ বাস্তবায়নেরও আহ্বান জানানো হয়। বাংলাদেশের উপর ২০১৩ সালে ইউপিআরের অধিবেশনে সরকার কর্তৃক প্রদত্ত প্রতিশ্রুতি অনুসারে সম্মেলনে নারী ও কণ্যাশিশুসহ পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম জনগোষ্ঠীর ন্যায়বিচার নিশ্চিত করারও আহ্বান জানানো হয়।
অধিবেশনে ইউএনপি-এর ১১-সদস্য-বিশিষ্ট নতুন প্রেসিডেন্সী কমিটি গঠিত হয়। প্রেসিডেন্ট হিসেবে নাসের বোলাদাই (ইরানের ‘বালুচিস্তান পিপলস পার্টির’ আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের প্রতিনিধি) এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে আবদিরাহমান মাহদি (সোমালিয়ার ‘ওগাদেন ন্যাশনাল লিবারেশন ফ্রন্টের’ আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক) নির্বাচিত হন। সম্মেলনে শেষ দিনে সম্মেলনের ১২টি সুপারিশ সম্বলিত জেনারেল রেজুরেশন সর্বসম্মতিক্রমে গ্রহণ করা হয়। উক্ত রেজুলেশনে অপ্রতিনিধিত্বশীল জাতি ও জাতিগোষ্ঠীর মানবিক নিরাপত্তা, পরিবেশ, অর্থনৈতিক উন্নয়ন, সামাজিক কল্যাণ ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রে যে বৈষম্য ও বঞ্চনার উপর বিশেষ গুরুত্বারোপের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আহ্বান জানানো হয়। এছাড়া অপ্রতিনিধিত্শীল জাতি ও জাতিগোষ্ঠীর ভূখন্ডে সরকার কর্তৃক সামরিকায়ন বন্ধ করা, সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা বসতিকারী জনসংখ্যা সরিয়ে নেয়া, ভূমি জবরদখল বন্ধ করা এবং বিভিন্ন অঞ্চলে আদিবাসী ও সরকারের মধ্য স্বাক্ষরিত চুক্তি বা সমঝোতা বাস্তবায়নের জন্য আহ্বান জানানো হয়।

No comments

Powered by Blogger.