কাঁঠাল যখন গো-খাদ্য

টাঙ্গাইলের ঘাটাইলে লক্ষ্ম্নীন্দর গ্রামের স্কুল শিক্ষক মো. আমিনুল ইসলাম এবং সাজ্জাদ হোসেন পেশাদার ফলচাষি। ঘাটাইলের পাহাড়ি লাল মাটির উঁচুনিচু টিলায় সাত একর জমিতে আনারস আর কাঁঠাল বাগান তাদের। তাদের মতো শতাধিক কাঁঠালচাষি বাগানের ১৫ লাখ টাকার কাঁঠাল নিয়ে এবার মহাবিপাকে পড়েছেন। ক্রেতার অভাবে গাছের কাঁঠাল গাছেই পেকে বিনষ্ট হচ্ছে। প্রথমদিকে পাইকাররা দু-এক ট্রাক কাঁঠাল নিলেও গত ৭ই জুন থেকে কাঁঠাল কেনা প্রায় বন্ধ করে দিয়েছে। এরই মধ্যে গাছে কাঁঠাল পাকতে শুরু করেছে। জুনের শেষ সপ্তাহে শুরু হয় টানা বর্ষণ। জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহ জুড়ে অঝর বর্ষণ অব্যাহত থাকার আশঙ্কা রয়েছে। আমিনুল ইসলাম জানান, গত সপ্তাহে কয়েক দফায় ১০ ভ্যান পাকা কাঁঠাল বিক্রি করতে গারোহাটে আনেন। সারাদিন বসে থেকে ৭ ভ্যান কাঁঠাল নামমাত্র দামে বিক্রি করেন। অবশিষ্ট কাঁঠাল বিক্রি না হওয়ায় বাজারের গলিতে ফেলে দেন। সাজ্জাদ হোসেন জানান, গারোবাজারসহ পাহাড়ি এলাকার হাটবাজারে কাঁঠালের মূল ক্রেতা দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা পাইকার ও দুগ্ধ খামারিরা। এদের কাছে ৬/৭ কেজি ওজনের একটি কাঁঠাল ১০/১২ টাকায় বিক্রি করতে হয়। খামারিরা গোখাদ্য হিসাবে কাঁঠাল কিনে থাকে। সাজ্জাদ হোসেনের মতো মহিষমারার গ্রামের আ. ছাত্তার ৩ একর, কুশারিয়ার জালাল উদ্দিন ২ একর, সাগরদিঘীর আবদুল হালিম ৫ একর, দেওপাড়ার হাতেম আলী ৩ একর এবং কাজলার রাজ্জাক আলী আড়াই একর বাগানের কাঁঠাল নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। ক্রেতার অভাবে তাদের বাগানের কাঁঠালও বিনষ্ট হচ্ছে। টাঙ্গাইল ও ময়মনসিংহ কৃষি বিভাগ জানায়, দেশে কাঁঠাল উৎপাদনের অন্যতম বৃহৎ বেল্ট বৃহত্তর ময়মনসিংহ গড় এলাকার ঘাটাইল, মধুপুর, মুক্তাগাছা, ফুলবাড়িয়া, ভালুকা, সখিপুর ও জামালপুর সদর উপজেলায় এবার ১৫ হাজার একরে কাঁঠালের আবাদ হয়েছে। অনুকূল আবহাওয়ায় বাম্পার ফলন হয়েছে। কিন্তু ক্রেতার অভাবে এসব কাঠাঁল গো-খাদ্য হিসাবে ব্যবহার হচ্ছে। ঘাটাইল, মধুপুর এবং ফুলবাড়িয়া উপজেলার গারোবাজার, সাগরদিঘী, জোড়াদিঘী, দেওপাড়া, ছনখোলা, দেওজানা, চাপড়ি, গাংগাইর, মধুপুর, জলছত্র, গাবতলী, মোটেরবাজার, আশ্রা, ধলাপাড়া, কান্দুরবাজার কেশরগঞ্জ, রাঙ্গামাটি, সিদ্দিখালি, সানবান্ধা, বাগারা, কচুয়া, কুতুবপুর, বড় চওনা, মহানন্দপুর, রামদেবপুর, শহর গোপিনপুর, ইন্দ্রাজানী এবং বালুঘাট বাজার ঘুরে দেখা যায়, এসব বাজারে প্রতি দিন বিপুল পরিমাণ কাঁঠাল আমদানি হচ্ছে। কিন্তু ক্রেতার অভাবে বিক্রি হচ্ছে না। জামালপুরের গরু খামারি লাবলু মিয়ার জানান তার সঙ্গে বাজারে কৃত্রিম গোখাদ্যের দাম খুব বেশি। সে তুলনায় কাঁঠাল সস্তা। পাকা কাঁঠাল গবাদি পশুর পুষ্টিকর খাবার। গাভীকে খাওয়ালে প্রচুর দুধ দেয়। ষাঁড় ও বলদকে খাওয়ালে শরীর মোটাতাজা হয়। ছাগলের খামারিরাও এখন পশুখাদ্য হিসাবে কাঁঠাল কিনছেন। ব্যবসায়ীরা দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এসে ঘাটাইলের পাহাড়ি এলাকার হাটবাজারে ভিড় জমিয়ে সুলভে কাঁঠাল কিনছেন। ঢাকার কাওরান বাজার থেকে আসা ফলের মহাজন আদম আলী জানান, দেশের অন্যান্য স্থানের মতো ঘাটাইলে কাঁঠালের বাম্পার ফলন হয়েছে। ভোক্তাপর্যায়ে কাঁঠালের চাহিদা হ্রাস পাওয়া আড়তদার এবং মহাজনরা ঝুঁকি নিয়ে ফল কিনছেন কম। এভাবে বাইরের ব্যবসায়ীরা হাত গুটিয়ে নেয়ায় বাজারে ধস নেমেছে। কাঁঠাল ব্যবসায়ী কদ্দুস মিয়া জাতীয় বসত ভিটা সংলগ্ন বনায়নে ফলদ চারা অগ্রাধিকার পাওয়ায় দেশের সর্বত্রই এখন কাঁঠাল গাছ দেখা যায়। এজন্য বাণিজ্যিক ভিত্তিতে উৎপাদিত বিপুল পরিমাণ কাঁঠাল বিপণনে গ্রামগঞ্জে ভোক্তার তীব্র অভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। কৃষি সমপ্রসারণ বিভাগ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান, শুধু ঘাটাইল উপজেলায় এবার অর্ধ কোটি টাকার কাঁঠাল পচে বিনষ্ট হচ্ছে। মধুপুর ফলচাষি সমিতির নেতৃবৃন্দ গড় এলাকার বাণিজ্যিক খামারিদের ফল বাজারজাত ও বিপণন সুবিধা সৃষ্টি এবং প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা স্থাপনের দাবি জানান।

No comments

Powered by Blogger.