মাহফুজের অপকর্মের হাতেখড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় by জাবেদ রহিম বিজন

পুলিশের এএসআই মাহফুজুর রহমানের অপকর্মের হাতেখড়ি হয়েছিল ব্রাহ্মণবাড়িয়াতেই। এখান থেকেই যাত্রা শুরু হয় তার মাদক ব্যবসার। ধর-ছাড় বাণিজ্যেও ছিল সে পারদর্শী। অর্থ কামানোর ধান্ধা ছিল তার দিন-রাতের কাজ। সন্ত্রাসীদের ডেরাতেই বেশিরভাগ সময় কাটতো এই এএসআইর। অপকর্মের ওস্তাদ হিসেবে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় চাকরির অল্প সময়েই তার নাম ছড়িয়ে পড়ে। মাহফুজ বিয়েও করেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। সদর উপজেলার বরিশল গ্রামে তার শ্বশুরবাড়ি। ৬ লাখ ৮০ হাজার পিস ইয়াবাসহ গত ২০শে জুন ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ফেনীর লালপুলে ধরা পড়ার পরই তাকে নিয়ে আলোচনা শুরু হয় ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। এ মাহফুজ ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় চাকরি করে যাওয়া এএসআই মাহফুজ কিনা তা নিশ্চিত হতে চান তার হাতে হয়রানি-নির্যাতনের শিকার হওয়া এখানকার মানুষজন। এখানে নিরন্তর করা তার অপরাধ আলোচনা চলে আসে সামনে। জেলা পুলিশে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০০৯ সালের ১০ই জুলাই ফেনী থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বদলি হয়ে আসে মাহফুজ। ২০১১ সালের ৫ই নভেম্বর পর্যন্ত কর্মরত ছিল সে সদর মডেল থানায়। এরপর নিজ থেকেই আবেদন করে চট্টগ্রাম রেঞ্জে বদলি হয়ে যায়। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পাশেই কুমিল্লার মিরপুরের মকিমপুরে তার বাড়ি। বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় যোগদান করার পরই বিভিন্নস্থানে চেকপোস্ট বসিয়ে সামারি করা ছিল তার প্রধান কাজ। লোকজনকে হয়রানি করে নানাভাবে টাকা আদায় করতো সে। শহরের কাজীপাড়ার জনৈক আজিজের বাসায় প্রথমে ভাড়া থাকতো মাহফুজ। এ বাসায় ভাড়া থাকার সুবাধেই শহরের চিহ্নিত সন্ত্রাসী আজিজের ভাতিজা আতিকের সঙ্গে তার সখ্য গড়ে উঠে। এছাড়া শহরের পৈরতলার সন্ত্রাসী লিংকনের সঙ্গেও ছিল তার খাতির। এ শ্রেণীর সন্ত্রাসীরা তার মদতেই ছিল তখন বেপরোয়া। আতিক অবশ্য গত প্রায় ২ বছর ধরে নিখোঁজ। স্টেশন রোড এলাকা ছিল মাহফুজের বিচরণ ক্ষেত্রের অন্যতম। সেখানকার  চন্দ্রিমা হোটেল হয়ে উঠেছিল তার সকল অপরাধের কেন্দ্রবিন্দু। এখানে বসেই সে মাদক ব্যবসা পরিচালনা করতো। সঙ্গী-সাথীদের নিয়ে করতো মাদক সেবন। এ আড্ডায় জেলা ছাত্রলীগের সাবেক এক নেতাও থাকতো নিয়মিত হাজির। মাহফুজের শেল্টারে অসামাজিক কার্যকলাপ চলতো অবাধে এ হোটেলে। এসব ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী একাধিক ব্যক্তি জানিয়েছেন, এই হোটেলের মালিক নূরু ছিল তার বিশেষ খাতিরের লোক। একপর্যায়ে মাহফুজের আনা ইয়াবা বিক্রির সেলসম্যান হয়ে যায় নূরু। ৫০ পিস ইয়াবাসহ নূরু র‌্যাবের হাতে ধরাও পড়ে একবার। সূত্র জানায়, ব্রাহ্মণবাড়িয়া থাকার সময়ই চট্টগ্রাম থেকে ইয়াবা নিয়ে এসে বিভিন্নজনের কাছে বিক্রি করতো মাহফুজ। নূরু ছাড়াও কলেজপাড়ার আনিস, কসবার জিয়ার মাধ্যমে ইয়াবা বিক্রি করাতো সে এখানে। সেসময় কয়েকশ‘ পিস করে আনলেও ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে বদলি হয়ে যাওয়ার পর তা বেড়ে দাড়ায় হাজারে। হাজার হাজার পিস ইয়াবা ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সরবরাহ করতো সে। ভৈরব ও আশুগঞ্জে  ইয়াবা সরবরাহ করতো মাহফুজ। তখন ৪০-৫০ হাজার পিস ইয়াবা যেত এই দু-উপজেলায়  তার মাধ্যমে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে চট্টগ্রামের টেকনাফে বদলি হয় মাহফুজ। সেখান থেকে সঙ্গী সাথীসহ ইয়াবা নিয়ে প্রাইভেট কার বা মাইক্রোতে করে প্রতি মাসে  ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় চলে আসতো মাহফুজ। সঙ্গে করে আনা ইয়াবার মোটা চালান নিজেই পৌঁছে দিয়ে যেত ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিভিন্ন পয়েন্টে। এসময় পরিচিত বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করতো সে। তার এমনই এক বন্ধু জানান, যেসব লোক তার সঙ্গে আসতো তাদের দেখলেই ভয়ংকর বলে মনে হতো। চেহারা-হাবভাব এমন দেখেছি যে তাদের পক্ষে যে কোন কাজ করাই সম্ভব বলে মনে হয়েছে আমার কাছে। মুহূর্তেই খুন খারাপি করে ফেলার লোক বলেই মনে হয়েছে মাহফুজের সঙ্গে আসা সেসব লোকদের। স্টেশন রোডের হোটেল মালিক নূরুর মাধ্যমেই মাহফুজ বিয়ে করে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। নূরুর বাড়ি বরিশলেই তাকে বিয়ে করিয়ে দেয় সে। তার স্ত্রীর নাম কাকলী বলে জানা গেছে। নূরু হয় তার উকিল শ্বশুর। ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের ভাদুঘরে একটিসহ শহরে তার ২টি বাড়ি থাকার তথ্য পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ভাদুঘরে বিসমিল্লাহ হাউজিং থেকে  ৫ শতক আয়তনের একটি প্লট কিনেছে বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। প্রতি শতক সাড়ে ৬ লাখ টাকা করে মোট সাড়ে ৩২ লাখ টাকায় এই জায়গাটি কিনে সে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, তার বিরুদ্ধে চেকপোস্ট বসিয়ে সামারি করার অভিযোগই ছিলো বেশি। লোকজনকে নানাভাবে সে হয়রানি করতো।

No comments

Powered by Blogger.