দুর্নীতি ও কালোটাকা অপরাধ বাড়াচ্ছে: প্রধান বিচারপতি

দুর্নীতি ও কালোটাকার কারণেই সমাজে অপরাধমূলক কাজ বাড়ছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা। তিনি বলেন, মানবপাচারসহ যেকোনো অপরাধেই মূল হোতারা ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকার কারণে অন্য অপরাধীরা পার পেয়ে যায়। আজ রোববার রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে এক কর্মশালায় তিনি এ কথা বলেন।
‘সাম্প্রতিক মানবপাচার পরিস্থিতি এবং সমস্যা উত্তরণে করণীয়’ শীর্ষক এই কর্মশালার আয়োজন করে মানবাধিকার এবং মানবপাচার, জনসংখ্যা ও অভিবাসন সম্পর্কিত সর্বদলীয় সংসদীয় গ্রুপ। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধান বিচারপতি। সভাপতিত্ব করেন জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়া। কর্মশালাটি সঞ্চালনা করেন সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি।
অনুষ্ঠানে প্রধান বিচারপতি বলেন, বাংলাদেশে অনেক আইন আছে। কিন্তু আইনের বাস্তবায়ন দুর্বল। এ ছাড়া পুলিশ যেসব তদন্ত করে সেগুলো এত দুর্বল থাকে যে, সেগুলো দিয়ে বিচার করতে গিয়ে বিচারকেরা অনেক সময়েই অপরাধীকে যথাযথ শাস্তি দিতে পারে না। আবার সরকারি যে পিপি ও এপিপিরা মামলা পরিচালনা করেন তাঁরাও যথাযথভাবে সাক্ষ্য নিতে পারেন না।
উপস্থিত সাংসদের উদ্দেশ করে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আগে যোগ্য মানুষেরা পিপি-এপিপি হতো। কিন্তু এখন আপনারা যাদের মনোনীত করেন পিপি-এপিপি হিসেবে তাঁদের অনেকেই ফৌজদারি কার্যবিধি ঠিকমতো জানেন না। অথচ তদন্ত ও প্রসিকিউশন দুর্বল হলে অনেক স্পর্শকাতর ও গুরুত্বপূর্ণ মামলার আসামিরাও পার পেয়ে যায়।’
মূল অপরাধীরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যায় উল্লেখ করে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘পুলিশ ছোট ছোট অপরাধীদের ধরে। মূল অপরাধীরা তাদের ছাড়িয়ে নিয়ে যায়’। বিভিন্ন আইন করার আগে সেগুলোর উদ্দেশ্য ঠিক করা এবং প্রয়োজনে আইন কমিশন ও প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সমন্বয় করে আইন করার কথা বলেন প্রধান বিচারপতি।
অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেন, কোনো দেশের একার পক্ষে মানবপাচার বন্ধ করা সম্ভব নয়। এ জন্য সবাই মিলে কাজ করতে হবে। বাংলাদেশ থেকে মানবপাচারের পেছনে রোহিঙ্গা সমস্যা একটি বড় কারণ বলেও মন্তব্য করেন তিনি। মন্ত্রী বলেন, বৈধভাবে কর্মী যেতে না পারলে অবৈধভাবে কর্মী যাওয়া বাড়বে। শ্রমবাজারে চাহিদা ও জোগানের মধ্যে পার্থক্য থাকলে সেই সুযোগ নেবে দালালেরা। তবে এ নিয়ে মালয়েশিয়ার সঙ্গে কথা হয়েছে। তারা বেসরকারিভাবে কর্মী নিতে রাজি হয়েছে। আগামী তিন বছরে ১৫ লাখ কর্মী মালয়েশিয়া যাবে বলে উল্লেখ করেন মন্ত্রী।
মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ পাচার হওয়া নারী ও শিশুদের বিষয়টি মানবিকভাবে দেখার দাবি জানান।
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বলেন, বাংলাদেশে অনেক ভালো ভালো আইন হলেও বাস্তবায়নে এসে মুখ থুবড়ে পড়ে। মানবপাচার আইন হলেও বিধিমালা না করার সমালোচনা করেন তিনি। পাচার বন্ধে স্বল্প, দীর্ঘ ও মধ্যমেয়াদি নানা প্রস্তাবও দেন তিনি।
মন্ত্রী পরিষদ সচিব মোশাররাফ হোসাইন ভূঁইয়া বলেন, রোহিঙ্গাদের সমস্যার সমাধান না হলে পরিস্থিতির উন্নতি হবে না। তিনিসহ স্বরাষ্ট্রসচিব মোজাম্মেল হক খান, পুলিশের মহাপরিদর্শক এ কে এম শহিদুল হক ও র‍্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ বৈধভাবে কর্মী যাওয়া বাড়ানো এবং পাচারসংক্রান্ত মামলাগুলো দ্রুত বিচারের দাবি জানান। শ্রমসচিব মিকাইল শিপার কারিগরি প্রশিক্ষণের ওপর জোর দেওয়ার আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক অতিরিক্ত সচিব ও বর্তমানে পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের সচিব কামালউদ্দিন আহমেদ মানবপাচারের নানা দিক নিয়ে একটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। আন্তর্জাতিক অভিবাসী সংস্থার বাংলাদেশ প্রধান শরৎ দাসসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংগঠনের প্রতিনিধিরাও সভায় বক্তব্য রাখেন।

No comments

Powered by Blogger.