কেন এই বিদেশ সফর by কাজী সোহাগ
ভিয়েতনাম, চীন ও ভারত সফর করতে চান জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্যরা। এজন্য সংখ্যা, মাস ও দিন নির্ধারণ করেছেন তারা। তবে কি কারণে এমপিরা এই সফরে যেতে চান তা জানেন না। নিয়ম অনুযায়ী এমপিরা সুনির্দিষ্ট বিষয়ের ওপর অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য বিদেশ যান। তারপর দেশে ফিরে রিপোর্ট করেন ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় নিয়ে তাদের সুপারিশ বা পরামর্শ দেন। কিন্তু কারণ ছাড়াই এই তিন দেশে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ওই কমিটির সদস্যরা। ২১শে এপ্রিল সংসদ সচিবালয়ের কমিটির বৈঠকে ওই তিন দেশ সফরের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। পরে তা অনুরোধ আকারে পাঠানো হয় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে। ২৪শে জুন কমিটির পরবর্তী বৈঠকে মন্ত্রণালয় ওই সিদ্ধান্তের অগ্রগতির কথা জানায়। এ কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন এইচএন আাশিকুর রহমান। সংসদীয় কমিটির কার্যবিবরণীতে এসব তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। এতে কমিটির সিদ্ধান্তে বলা হয়েছে ‘পুরো কমিটিকে একবার ভিয়েতনাম, চীন এবং পরবর্তী সময়ে ভারত সফরের ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সুপারিশ করা হয়’। এর উত্তরে মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, কমিটির সভাপতির কার্যালয় থেকে ১৩ জনের নামের তালিকা পাঠানো হয়েছে। এতে এমপি ছাড়াও কয়েকজন সরকারি কর্মকর্তা রয়েছেন। আগস্টের তৃতীয় ও চতুর্থ সপ্তাহে ওই সফরের ব্যবস্থা করার কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন। কমিটির চাহিদা অনুযায়ী ভিয়েতনামে ৫ দিন ও চীনে ৭ দিন থাকার ব্যবস্থা করা হবে। এ নিয়ে মন্ত্রণালয়ের দেয়া তথ্যে ভারত সফর নিয়ে কিছু বলা হয়নি। তবে কমিটির সদস্যরা দুই দেশ সফর শেষে ভারতে যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। যদিও কমিটির কয়েক সদস্য এ সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত নন। তাদের যুক্তি সরকারি টাকায় বিদেশ সফরের নামে ‘ভ্রমণ’ দৃষ্টিকটু। আবার কয়েক এমপির যুক্তি অতীতে অনেক এমপি একাধিকবার বিদেশ সফর করেছেন। তো আমাদের যেতে বাধা কোথায়। আমরা বিদেশে যাব জ্ঞান অর্জন করতে। তাদের সঙ্গে আমাদের দেশের তুলনা করে ভালো কিছু কাজ করতে। কমিটির সদস্য মুন্সীগঞ্জ থেকে নির্বাচিত এমপি সুকুমার রঞ্জন ঘোষ এ প্রসঙ্গে মানবজমিনকে বলেন, এভাবে বিদেশ যেতে আমি আগ্রহী নই। কারণ সফরের প্রতি আমার কোন মোহ নেই। অতীতেও ছিল না। কমিটির অপর সদস্য সংরক্ষিত মহিলা আসনের এমপি বেগম খোরশেদ আরা হক মানবজমিনকে বলেন, অনেক এমপি তো বিদেশ সফর করে তাই আমরাও যেতে চেয়েছি। চীন আর ভিয়েতনাম এই দুই দেশ সফর নিয়ে কমিটির কয়েক সদস্যর মধ্যে মতবিরোধ দেখা দেয় বলে জানান তিনি। বলেন, কেউ শুধু চীনে যেতে চেয়েছিল। আবার কেউ ভিয়েতনামে। কেউ বলেছে, চীনে গেলে ভিয়েতনাম মিস করা ঠিক হবে না। তিনি বলেন, বৈঠকে প্রতিমন্ত্রী বেগম ইসমত আরা সাদেক ভিয়েতনামে যাওয়ার বিরোধিতা করেন। পরে কমিটির সভাপতি দুই দেশই সফরের তালিকায় রাখেন। সংশ্লিষ্টরা জানান, নবম সংসদ থেকে এমপিরা সরকারি টাকায় বিদেশ সফরের পাঁয়তারা করছেন। সংসদীয় কমিটিকে কাজে লাগিয়ে এ উদ্যোগ নিচ্ছেন তারা। এ তালিকায় সবচেয়ে এগিয়ে আছেন ব্যবসায়িক এমপিরা। নতুন এমপিরাও পিছিয়েও নেই। বিদেশ সফরের জন্য তারা নিয়মিত ধরনা দেন স্পিকার, চিফ হুইপ থেকে শুরু করে অন্যান্য হুইপদের অফিসে। এমনকি স্পিকারের পিএসের কাছেও অনেক নতুন এমপি নিজেদের বিদেশ সফরের তালিকায় রাখতে আগাম অনুরোধ জানিয়ে রাখেন। এ নিয়ে বিব্রত সংশ্লিষ্টরা। তারা জানান, এমপিরা বিদেশ সফর করলেও তারা ফিরে এসে সংসদ উন্নয়নে কার্যকর কোন সুপারিশ বা পরামর্শ দেন না। এমনকি বাইরের দেশের পার্লামেন্টের সঙ্গে আমাদের দেশের সংসদের তুলনা করে কোন বৈঠকও করেন না। আবার কোন কোন কমিটি বিদেশ থেকে ফিরে পরামর্শ বা সুপারিশ তৈরি করলেও আজ পর্যন্ত তা বাস্তবায়ন করা হয়নি। তবে এ নিয়ে বিদেশ সফর থেকে ফেরত আসা এমপি বা কমিটিকে কোন ধরনের জবাবদিহিতা করতে হয় না। তাই এমপিদের বেশিরভাগ বিদেশ সফর এখন পরিণত হয়েছে ‘ভ্রমণে’। এর বাইরেও এমপিরা ব্যক্তিগত উদ্যোগে নানা প্রতিষ্ঠানের আমন্ত্রণে বিদেশ যাওয়ার পাঁয়তারা করেন। বিশেষ করে সভা, সেমিনার, সিম্পোজিয়াম ছাড়াও তাদের টার্গেটে থাকে বিভিন্ন স্থান পরিদর্শন। আগে এমপিদের বিদেশ সফর যেতে স্পিকারের অনুমতির প্রয়োজন হতো। কিন্তু নবম সংসদের প্রথম দিকে স্পিকারের দায়িত্বে থাকা মো. আবদুল হামিদ (বর্তমানে প্রেসিডেন্ট) একটি রুলিংয়ের মাধ্যমে ওই রেওয়াজ বন্ধ করেন। ২০১০ সালের ৫ই এপ্রিলে দেয়া রুলিংয়ে তিনি বলেন, ‘আজকে অধিবেশন শেষ হয়ে যাচ্ছে পরবর্তী অধিবেশন পর্যন্ত আপনাদের কোথাও যেতে হলে কোন ধরনের অনুমতি নেয়ার প্রয়োজন হবে না। তবে সংসদ অধিবেশন চলাকালীন, আসলে ওই সময়েও আপনাদের ঢ়ৎবাবহঃ করা যায় না সত্যিকার অর্থে। তবু সংসদের যে নানাবিধ সংকট সেজন্য তখন যদি অনুমতির ব্যাপারটি থাকে তাহলে মোটামুটি একটি ভারসাম্য রক্ষা করা যায়। তখনও যদি কারও যাওয়া জরুরি হয় তাহলে অবশ্যই যেতে হবে, অসুস্থ হলে যেতে হবে। সাধারণত যাতে আমাদের সংসদ চলার পথে কোন বিঘ্নের সৃষ্টি না হয় সেজন্য ঐ জিনিসটি থাকার প্রয়োজন আছে বলে মনে করি। সুতরাং এখন থেকে আর কোন মাননীয় সদস্য বাইরে গেলে স্পিকারের কাছে অনুমতি চাওয়া বা অনুমতি নিয়ে যেতে হবে, এটা আর লাগবে না।’ এ সুযোগটি এখন কাজে লাগাচ্ছেন ১০ম সংসদের এমপিরা।
No comments