বিদেশী পোশাকে সয়লাব ঈদবাজার
রমজানকে ঘিরে রাজধানীতে জমে উঠেছে ঈদবাজার। বিশেষত সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্র ও শনিবার মার্কেটগুলোতে ব্যাপক ভিড় দেখা গেছে। ব্যস্ত সময় পার করছেন নিম্নবিত্তের ফুটপাথ থেকে শুরু করে উচ্চবিত্তের শপিং মলের বিক্রেতারা। তবে বিক্রির তালিকায় প্রথমে রয়েছে ভারতীয় পোশাক। দ্বিতীয় অবস্থানে পাকিস্তান। তৃতীয় স্থানে রয়েছে দেশীয় পোশাক। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, দেশটির জনপ্রিয় সিরিয়াল, নায়ক, নায়িকার নামে বিভিন্ন পোশাক ছাড়া হয়েছে। গুলিস্তান, বঙ্গবাজার, আজিজ সুপার মার্কেট, নিউ মার্কেট, চাঁদনি চক, গাউছিয়া সুপার মার্কেট, ইস্টার্ন মল্লিকা, ইস্টার্ন প্লাজা, মোতালেব প্লাজা, বসুন্ধরা সিটি শপিং মলসহ বিভিন্ন এলাকার বিপণিবিতান ঘুরে এ চিত্র পাওয়া গেছে। বঙ্গবাজারের আল মক্কা দোকানের স্বত্বাধিকারী আশরাফুল ইসলাম বলেন, ইতিমধ্যেই লক্ষ্যমাত্রার ৭০ ভাগ বিক্রি হয়ে গেছে। ভারতীয় জনপ্রিয় সিরিয়াল কিরণমালা, প্রাচী ও বলিউডের জনপ্রিয় নায়িকা আয়েশা টাকিয়ার নামে নামকরণ করা পোশাকের স্টক শেষ। বাজার মন্দা থাকায় লোকসানের ভয়ে পোশাক তোলায় ছিল সাবধানতা। প্রতিটি পোশাক সীমিত ও দেখে-শুনে নিয়েছেন। আপাতত জিসা নামের পোশাকটি বিক্রি করছেন তিনি। গত কয়েক দিনে কিরণমালা বিক্রি হয়েছে ২০০ পিস, প্রতি পিসের দাম রাখা হয় তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা। প্রাচী বিক্রি হয়েছে ১০০ পিস, প্রতি পিসের দাম রাখা হয় সাড়ে চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা এবং আয়েশা টাকিয়া ও জিসা বিক্রি হয় ১২০ পিস, প্রতি পিসের দাম রাখা হয় আড়াই হাজার থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা। এ ছাড়া পাকিস্তানের লন এক হাজার থেকে এক হাজার তিন শ টাকা, ওয়ান পিস কামিস ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা ও রানা আর্টস বিক্রি হচ্ছে ৩৫০০ থেকে ৩৮০০ টাকা পর্যন্ত। খাজানা শাড়িজের মো. ইশতিয়াক বলেন, পাকিস্তানি থ্রি পিস বেশি চলছে। নানা ধরনের নকশা আঁকা থ্রি পিসের দাম ২৫০০ থেকে ৪০০০ টাকা ও নকশা ছাড়া থ্রি-পিসের দাম রাখা হচ্ছে ৯০০ থেকে ২০০০ টাকা। এ ছাড়া পল্টন, গুলিস্তান ও নিউ মার্কেটের মতো ব্যস্ততম এলাকার ফুটপাথের সব দোকানেও থ্রি-পিস, জামা, জুতা, পাঞ্জাবিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বেশি বিক্রি হতে দেখা গেছে। গুলিস্তান ফুটপাথের দোকানি সুজন বলেন, মানুষের হাতে এখন টাকা নেই। তাই দাম একটু কম পেয়ে ফুটপাথ থেকেই পছন্দের জিনিস বেশি কিনছেন। নিউ মার্কেটের খোলা আকাশের নিচে গড়ে ওঠা ফুটপাথ থেকে পাঞ্জাবি, টি-শার্ট কিনেছেন চাকরিজীবী রইস উদ্দিন। তিনি বলেন, দেখে-শুনে কিনতে পারলে ফুটপাথেও ভাল জিনিস পাওয়া যায়। সারা-সাজিদকে নিয়ে মা শারমিন আক্তার এসেছেন আজিজ সুপার মার্কেটে। প্রচণ্ড যানজটের কবলে পড়ে খানিকটা পথ হেঁটেই আসেন। ঘর্মাক্ত ও ক্লান্ত অবস্থায় শারমিন বলেন, আজিজ থেকে ছেলের জন্য একটি পাঞ্জাবি ও মেয়ের জন্য একটি থ্রি-পিস কিনবেন। এদিকে বসুন্ধরা সিটি শপিং মলে শুক্র ও শনিবার উপচে পড়া ভিড় দেখা যায়। পোশাকের দোকানগুলোতেই ছিল সবচেয়ে বেশি মানুষের আনাগোনা। অভিজাত এ শপিং মলে এক ছাদের নিচে অনেক কিছু কেনাকাটার সুযোগ রয়েছে। তাই ক্রেতারাও দল বেঁধে আসছেন এখানে। বিউটি নামের একজন ক্রেতা জানান, দাম একটু বেশি নিলেও বসুন্ধরা সিটির পণ্যের নিশ্চয়তা আছে। ইস্টার্ন প্লাজা, ইস্টার্ন মল্লিকা ও মোতালেব প্লাজার বেশ কিছু শো রুম ঘুরে দেখা যায়, এখানে কটন সিল্কের পাঞ্জাবি চার হাজার ২৫০ থেকে ৫ হাজার ৮৫০ টাকায় এবং এন্ডি কটনের পাঞ্জাবি দুই হাজার ৪৫০ টাকা থেকে দুই হাজার ৯৯০ টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে। সুতি শার্ট বিক্রি হচ্ছে ১৩৯০ থেকে ৩৮৫০ টাকায়। এ ছাড়া সাধারণ প্যান্ট ১৬৫০ থেকে ১৯৫০, গ্যাবাডিনের প্যান্ট ১৫৫০ থেকে ২২৫০, জিন্সের প্যান্ট ৩৫৫০ টাকায় এবং পোলো শার্ট বিক্রি হচ্ছে ৮৯০ থেকে ১২৫০ টাকায়। একই মার্কেটে নতুন এসেছে মেয়েদের টপস, পালাজজো, শাড়ি ও হিজাব। মেয়েদের টপস ১০০০ থেকে ১৮০০, পালাজজো ৫০০ থেকে ১২৫০, ভারতীয় জরজেট শাড়ি ১৮০০ থেকে ৫০০০ টাকা, এক কালার জাপানি জরজেট শাড়ি ৮০০ থেকে ২২০০ টাকায় এবং ছেলেদের শার্ট ১০০০ থেকে ৪৫০০ ও টি-শার্ট ১৫০০ থেকে ৪০০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া ইন্ডিয়ান থ্রি পিস কাশিস বাজারে নতুন এসেছে। বিক্রি হচ্ছে ৫০০০ থেকে ৬৫০০ টাকায়। ইন্ডিয়ান বুটিক ৩০০০ থেকে ৬০০০, দেশী বুটিক ২০০০ থেকে ২৫০০ টাকা এবং পাকিস্তানি লন ১৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সায়কা ফ্যাশনের মালিক হাবিবুর রহমান বলেন, প্রথম দিকে বিক্রি না হলেও বর্তমানে প্রচণ্ড চাপ বেড়েছে। তার শোরুমে মেয়েদের পোশাকের দাম রাখা হচ্ছে ৮ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত। পাঞ্জাবির দোকানি রাকিব জানান, বিভিন্ন আইটেম পাঞ্জাবির মধ্যে ১৬০০ থেকে ২৮০০ টাকা পর্যন্ত দাম রাখা হচ্ছে। তিনি বলেন, বর্তমানে বিক্রির চাপ বেড়েছে। মনে রেখো শাড়িস শোরুমের ইনচার্জ মুক্তার হোসেন বলেন, বুটিকস, শিপনের সুতার কাজ, কাতান, অপরা, চেন্নাই, কাঁঠালি ও সাউথ এসব নতুন সংযোজন। মেয়েদের এসব পোশাকের দাম রাখা হচ্ছে ৪ হাজার থেকে ১২ হাজার টাকা। বিক্রির চাপে ভালভাবে কথা বলতেও পারছিলেন না শো রুমটির এ ইনচার্জ।
No comments