ব্যাটসম্যানদের আত্মাহুতিতে ছন্দপতন by ইশতিয়াক পারভেজ

শেষ পর্যন্ত এ উচ্ছ্বাস ধরে রাখতে পারেনি বাংলাদেশ দল
ওদের যে মানের বোলিং, আমাদের ব্যাটসম্যানদের উচিত হবে ওদের দেখেশুনে ভালভাবে খেলা। অবশ্যই ব্যাটিংটায় পরিকল্পনা থাকতে হবে।’ -প্রস্তুতি ম্যাচ শেষে অধিনায়ক ইমরুল কায়েস জাতীয় দলের জন্য সতর্ক বার্তা দিয়েছিলেন এভাবেই। কিন্তু হায়! কোন কাজ হলো না সতর্কতায়। প্রস্তুতি ম্যাচে বিসিবি একাদশ ৯৯ রানে অল আউট হয়েছিল। আর দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে প্রথম টি-টোয়েন্টি জাতীয় দল অল আউট হলো ৯৬ রানে। অথচ বিসিবি একাদশে এই দলের সোহাগ গাজী ছাড়া কোন ক্রিকেটারই ছিলেন না। তাই সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল, সৌম্য সরকারদের বিপক্ষে লড়াই কঠিন হবে বলেই ভাবছিলেন প্রোটিয়া অধিনায়ক ফ্যাফ ডু প্লেসি। কিন্তুবাজে ব্যাটিংয়ে একের পর এক আত্মাহুতিতে ৫২ রানের পরাজয় দিয়ে শুরু হলো দক্ষিণ আফ্রিকা মিশন। অনেক উপর থেকে আছড়ে পড়ার ব্যথাটা খুবই যন্ত্রণাদায়ক। সেই যন্ত্রণাটা চোখে-মুখে উপস্থিত ছিল টাইগার অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজার। তাই সংবাদ সম্মেলনে একটু আমতা আমতা করেই বললেন, ‘১৫০ রান তাড়া করতে গেলে... যেটাই হোক না কেন আমরা আরেকটু চেষ্টা করতে পারতাম।’ মাশরাফির এই এক বাক্যেই বলে দেয় পাকিস্তান ও ভারতের বিপক্ষে যে সাফল্যগাথা রচিত হয়েছিল ব্যাটসম্যানদের কল্যাণে সেই ব্যাটসম্যানরাই গতকাল হয়তোবা অতি আত্মবিশ্বাসে ছিলেন দিশাহারা। সে কারণে উচ্চাভিলাষী শট খেলতে গিয়ে দলের ৮ ব্যাটসম্যানই ক্যাচ দিয়েছেন প্রোটিয়া ফিল্ডারদের হাতে।
৩১ রানে ২ উইকেট পতনের পর জেপি ডুমিনি যখন ক্রিজে আসছিলেন তখনই ডু প্লেসি ঠিক করে ফেলেন এ উইকেটে দেখেশুনে খেললেই লক্ষ্য অর্জন সম্ভব। তাই ৯০ রানে ৪ উইকেট পতনের পরও দক্ষিণ আফ্রিকার সংগ্রহ ১৪৮ রান। কিন্তু জবাব দিতে নেমে কোন পরিকল্পনার ছাপই দেখা গেল না টাইগারদের ব্যাটিংয়ে। শুরুটা তামিম ইকবালের আউট দিয়ে। প্রথম ওভারের ৬ষ্ঠ বলেই অ্যাবোটার শর্ট বলটিকে অহেতুক পুল করতে চাইলেন। কিন্তু সেটি ব্যাটের শরীর ছুঁয়ে ধরা পড়লো উইকেটের পেছনে ডি ককের হাতে। প্রোটিয়া অধিনায়ক অনুধাবন করেছিলেন এ উইকেটে পরে বল করার সুবিধাটাই বেশি হবে। হচ্ছিলও তাই। কিন্তু তামিমের আউট থেকে শিক্ষা নিলেন না তরুণ ওপেনার সৌম্য সরকার। এমন প্রতিপক্ষের রণ কৌশলটাও হয়তো মাথায় আনলেন না। রাবাদার কিছু বাউন্স হওয়া বলটিকে বিনা কারণেই পুল করতে চাইলেন। কিন্তু মনের জোরের সঙ্গে হাতের জোরটা এক হলো না। ডিপ স্কয়ার লেগে জেপি ডুমিনির হাতে তুলে দিলেন সহজ ক্যাচ। ড্রেসিংরুমে ফেরার আগে সংগ্রহ ৭।
সাকিব আল হাসানকে এবার প্রমোশন দিয়ে একটু আগে পাঠিয়ে দেয়া হলো। ধরতে হবে দলের হাল। সঙ্গে দলের ব্যাটিং ভরসা মুশফিকুর রহীম। তৃতীয় উইকেটে দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৩৭ রানের জুটি গড়ে দেখালেন আশার আলো। কিন্তু ম্যাচ শুরু হওয়ার ৩ ঘণ্টা আগে মাঠে এসে মুশফিক যে ব্যাটিং অনুশীলনটা করেন সেটি যেন ভুলে গেলেন কিছুক্ষণের জন্য। হঠাৎ করে জেপি ডুমিনির বল হাঁকাতে গিয়ে ডিপ মিড উইকেটে বল উড়িয়ে দিলেন। তবে কোন ভুল করলেন না মিলার সহজ ক্যাচটি লুফে নিলেন সহজেই। জয়ের জন্য একটি বড় জুটির প্রয়োজন ছিল কিন্তু ১৭ রান করে মুশফিক আউট হলে সেটিও ভেস্তে যায়। এবার অবশ্য দলের তরুণ ভরসা সাব্বির রহমানের পালা। পাকিস্তানের বিপক্ষে সাকিব ও সাব্বিরের রেকর্ড জুটিই দলকে বাঁচিয়েছিল পরাজয় থেকে। কিন্তু গতকাল টাইগার তরুণ ছিল আলোর বাইরে। সাব্বির ডুমিনির বল কি বুঝে রিভার্স সুইপ খেলতে গেলেন। কিন্তু ব্যাটের গা ছুঁয়ে সেটিও উইকেটের পেছনে ডি ককের গ্লাভসে। মাত্র ৪ রানেই শেষ এই তরুণের লড়াই।
তবে তখনও ছিলেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। দেশের হয়ে ব্যাট-বল হাতে শীর্ষে উঠেছেন তিনি। এমন রেকর্ড টি-টোয়েন্টিতে আর কোন ক্রিকেটারের নেই। তখন তার সঙ্গে অভিষিক্ত লিটন কুমার। দু’জন ১৪ রানের জুটি গড়ে আশার আলো দেখাচ্ছিলেন। কিন্তু সাকিব যা করলেন তা কেউ আশা করেনি। ভিসার বলে সুইপ করতে গিয়ে শর্ট ফাইন লেগে ক্যাচ তুলে দিলেন ২৬ রানের সময়। তবে এরপর অভিষেকেই ২২ রান করে অধিনায়কের সঙ্গে আবারও আশা দেখালেন লিটন। মাশরাফি-লিটনের ব্যাটে দলের পক্ষে ৭ম উইকেটে ১৫ রানের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ জুটিও আসে। কিন্তু তখনই অধিনায়ক আউট হলেন ৫ রান করে। এরপর লিটনকে সঙ্গ দিতে এসে সোহাগ গাজীর অবদান ৩ রান।  শেষ মুহূর্তে কোন সঙ্গী না পেয়ে লিটনও হাল ছাড়েন। ২৬ বল খেলে হাঁকিয়েছেন একটি ছ’য়ের মার। দলের ৮ম ব্যাটসম্যান হিসেবে প্রোটিয়া ফিল্ডারদের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরেন ড্রেসিং রুমে। এরপর হতাশ মুস্তাফিজ ক্রিজ ছেড়ে স্ট্যাম্পের বল খেলতে গিয়ে মাত্র ১ রানে সরাসরি বোল্ড হলে আকাশ থেকে মাটিতে পড়ে টাইগাররা। রোজা রেখে মাঠে উপস্থিত দর্শকদের ফিরতে হয় একরাশ হতাশা নিয়ে।

No comments

Powered by Blogger.