পুলিশি প্রতিবেদন ছাড়াই এমপিপুত্রের পিস্তলের লাইসেন্স by দীন ইসলাম
অস্ত্র
লাইসেন্সের বিদ্যমান নীতিমালা অনুযায়ী পুলিশ প্রতিবেদন ও সর্বশেষ বছর তিন
লাখ টাকার আয়কর প্রদান সনদ ছাড়া অস্ত্রের লাইসেন্স দেয়ার নিয়ম নেই। কিন্তু এ
ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম সংসদ সদস্য পিনু খানের আলোচিত পুত্র বখতিয়ার আলম রনি।
নিজের জীবন ও সম্পদ রক্ষার কথা বলে ‘বিশেষ ব্যক্তিত্বের’ কোটায় পিস্তলের
লাইসেন্স বাগিয়ে নিয়েছেন। যখন তিনি অস্ত্রের লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেন,
তখন তার না ছিল ব্যবসা, না তিনি আয়কর দিতেন। রনির ক্ষমতার দাপট এত প্রবল
ছিল, অস্ত্রের লাইসেন্স দেয়া হলে রনি এর অপব্যবহার করবে না, এ সম্পর্কিত
পুলিশি যাচাই প্রতিবেদন (ভেরিফিকেশন রিপোর্ট) ও ক্রিমিনাল মামলা না থাকার
সনদ নেয়নি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এর পরও তদবিরে জোর থাকায় রনিকে পিস্তল
কেনার অনাপত্তি দেয় তারা। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনাপত্তির পর ঢাকার জেলা
প্রশাসক কার্যালয় থেকে তুরস্কের সেভেন পয়েন্ট সিক্স ফাইভ বোরের পিস্তলের
লাইসেন্স ইস্যু করা হয়। এর ভিত্তিতে রনি ২০১০ সালে তুরস্কে তৈরি ‘টাউরুস’
পিস্তল কেনেন। ওই পিস্তল দিয়েই দুজন নিরীহ মানুষকে হত্যা করে এমপিপুত্র
রনি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সরকারি দলের সংসদ সদস্য পিনু
খানের পুত্র রনি ২০১০ সালে অস্ত্রের লাইসেন্সের জন্য আবেদন করে। তখন তার
মা ছিলেন মহিলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক। পরে তিনি ২০১১
সালে সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য হন। রনির পিস্তল নেয়ার আবেদনে রাজধানীর
একজন প্রভাবশালী তরুণ এমপির সুপারিশ রয়েছে। এর ভিত্তিতে বিষয়টি প্রস্তাব
আকারে পাঠানোর জন্য ঢাকার ডিসির কাছে পাঠানো হয়। ডিসি তার প্রতিবেদনে আয়কর
সনদ ও ভেরিফিকেশন রিপোর্ট নেই জানিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রয়োজনীয়
ব্যবস্থা নেয়ার জন্য পাঠায়। এরপর দ্রুততার সঙ্গে ফাইলটি উঠলে সাবেক
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন তাতে অনাপত্তি দেন। স্বরাষ্ট্র
মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বিদ্যমান অস্ত্র নীতিমালা অনুযায়ী এ ধরনের
একটি অস্ত্রের জন্য আবেদনকারীকে অবশ্যই করদাতা হতে হয়। পাশাপাশি আবেদনের
সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বছরের ন্যূনতম ৩ লাখ টাকা আয়কর দিয়েছেন তার সনদ, বিগত ৩
বছরের আয়কর প্রত্যয়নপত্র এবং আবেদনকারীর বিরুদ্ধে কোন ফৌজদারি মামলা নেই-
এমন ছাড়পত্র দিতে হয়। তবে বখতিয়ার আলম রনির ক্ষেত্রে এসব কোন নিয়ম না মেনেই
অস্ত্রের লাইসেন্স দেয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, পিতৃহীন রনি
উচ্ছৃঙ্খল প্রকৃতির যুবক হিসেবে সর্বমহলে পরিচিত। তিনি ২০১০ সালে যখন
অস্ত্রের লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেন, তখন তার নিজের কোন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান
ছিল না। তবে শেয়ারবাজারে তার বিনিয়োগ রয়েছে। এ অর্থের পরিমাণ সব সময় গোপন
করে চলেছেন তিনি। পিনু খান সংরক্ষিত কোটায় ২০১১ সালে সংসদ সদস্য হওয়ার জন্য
নির্বাচন কমিশনে জমা দেন তাতে ছেলে রনির কোন সম্পদ নেই বলে উল্লেখ আছে।
২০১৪ সালের নির্বাচনী হলফনামাতেও একই তথ্য দিয়েছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা
গেছে, ৯০ দশকের শুরুতে রনি ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিল এবং
ঢাকা কলেজ ছাত্রসংসদ নির্বাচনে সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদপ্রার্থীও
হয়েছিলেন। তবে নির্বাচনে হারার পর রাজনীতি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। কয়েক
বছর আগে রনি তার দুলাভাইয়ের সঙ্গে প্রাক-জাহাজীকরণ পরিদর্শন (পিএসআই) এবং
ক্লিয়ারিং ফরোয়ার্ডিং (সিএন্ডএফ) ব্যবসায় জড়িত হন। এটাই তার মূল আয়ের উৎস
ছিল। এ ছাড়া গত বছর কয়েক বন্ধুর সঙ্গে মিলে বনানীতে ‘কাবানা’ নামে একটি
ক্যাফেও চালু করে। তবে এক মহিলাকে কেন্দ্র করে এক সুদর্শন এমপির সঙ্গে রনি
বিরোধে জড়িয়ে পড়লে কয়েক মাস আগে ক্যাফেটি বন্ধ হয়ে যায়। সর্বশেষ গত ১৪ই
এপ্রিল ইস্কাটন এলাকায় রাতে প্রচণ্ড ট্রাফিক জ্যাম হয়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে রনি
গাড়িতে বসেই নির্বিচারে গুলি চালায়। এতে অকারণেই নিরীহ এক রিকশাচালক ও এক
অটোরিকশাচালক প্রাণ হারান। এ ঘটনায় মামলা হয়েছে। চলছে তদন্ত পর্ব। রনি আছেন
কারাগারে। এরপর থেকে রনির নানা লোমহর্ষক কাহিনীর কথা লোকমুখে শোনা যাচ্ছে।
No comments