রংপুরে ব্যস্ত চুমকি, পাথর এবং পুঁতি বসানোর কারিগররা by জাভেদ ইকবাল
ঈদের
আনন্দকে বাড়ানোর লক্ষ্যে রংপুর জমজমাট হয়ে উঠেছে জামা, শাড়িতে চুমকি, পাথর
এবং পুঁতি বসানোর কাজ। নাওয়া-খাওয়া ভুলে সূক্ষ্মভাবে রাত-দিন চলছে এ কাজ। এ
কাজের সঙ্গে জড়িয়ে আছে রংপুরের রবাটসনগঞ্জ, আলমনগর, বাবুপাড়া, তাজহাট,
মাহিগঞ্জ, জুম্মাপাড়াসহ নগরীর বিভিন্নস্থানে ৩ শতাধিক অসচ্ছল পরিবার।
স্বামী পরিত্যক্ত ও স্বামীহারা পরিবারের গৃহবধূ ও গরিব পরিবারের গৃহিণী
এবং মেয়েরা সংসারের কাজের ফাঁকে, অবসরে এবং লেখাপড়ার পাশাপাশি শাড়ি, জামা
এবং ওড়নায় সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য চুমকি, পাথর এবং পুঁতি বসিয়ে আকর্ষণীয় করে
তোলার কাজ করছেন। এতে করে অভাব-অনটনের সংসারে সচ্ছলতা আসছে তাদের। বাড়তি
আয় করে মেয়েরা তাদের লেখাপড়ার খরচসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাজ সারছেন। এদিকে
শাড়িতে পাথর চুমকি এবং পুঁতি বসানোর পর ওই ওড়না, জামা ও শাড়িগুলো রাজধানী
ঢাকা, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন নামীদামি বিপণিবিতাদের শো-রুমে তিনগুণ বেশি দামে
বিক্রি হচ্ছে। বৃহস্পতিবার নগরীর রবার্টসনগঞ্জ ও মাহিগঞ্জ ঘুরে দেখা যায়,
রাস্তার দু’পাশে গাছতলায়, বাড়ির গলিতে, আঙিনায় ৪-৫ জন করে এক সঙ্গে শাড়িতে
চুমকি বসানোর কাজ করছে। বাহারি নকশায় বিভিন্ন চুমকি ও পুঁতি বসিয়ে সাধারণ
একটি শাড়িকে করছে আর্কষণীয়। বাড়িয়ে দিচ্ছে শাড়ির মান। আয়শা (৩৫) জানায়, এ
কাজ করেই তিন ছেলেমেয়ের সংসারের চালার তিনি। স্বামী অনেক দিন আগে তাকে ছেড়ে
চলে গেছে। তিনি জানান, মূলত থ্রিপিস, ওড়না, শাড়িতে তারা আকর্ষণীয় চুমকি
বসানোর কাজ করতে হয়। একটি শাড়িতে চুমকি ও পুঁতি বসিয়ে ২৫০ টাকা থেকে ৩৫০
টাকা পর্যন্ত পান। এটা ঈদ উপলক্ষে। ঈদ চলে গেলে আরও কম টাকা দেয়া হয়। তিনি
জানান, এখনতো রাত-দিনই চলছে কাজ। খাওয়ারও সময় পাই না। রবার্টসনগঞ্জ এলাকার
ছাত্রী তাহমিদা (১৮) বলেন, বিভিন্ন শো-রুমের মালিকরা তাদের কাছে শাড়ি,
পুঁতি, চুমকি ইত্যাদি সরবরাহ করে। তারা শুধু বিভিন্ন আকর্ষণীয় বস্তু শাড়ি,
জামা ও ওড়নায় মালিকদের দেওয়া নকশা অনুযায়ী শাড়িতে স্থাপন করেন। বিভিন্ন
শাড়িতে কাজের বিভিন্ন মজুরি আছে আবার কাজের তারতম্যের উপরও মজুরি কমবেশি
হয়ে থাকে বলে। একটি সূতি শাড়িতে কাজ করলে ১৫০ টাকা থেকে ২৫০ টাকা পাওয়া
যায়। আবার জরজেট শাড়িতে কাজ করলে ৩০০ টাকা পাওযা যায়। তবে কাতান শাড়ির
মজুরি ১ হাজার টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। লেহেঙ্গা এবং থ্রিপিসের কাজের মজুরি
নির্ভর করে কাপড়ের উপর ভিত্তি করে। মাহিগঞ্জ এলাকার আফসারী বেগম বলেন,
সাধারণ একজন মহিলা একটি সুতি শাড়ি ১ থেকে ২ দিনে, জরজেট শাড়ি ১ সপ্তাহ
এবং কাতান শাড়ি ১০ দিনে করা সম্ভব। তবে পরিবারের অন্য সদস্যরাও এ কাজে
সহায়তা করে থাকেন। শিক্ষার্থী লাবনী বলেন, প্রায় ৫ বছর ধরে তার বোন এবং
মায়ের দেখাদেখি সে ও এ কাজ করছে। এতে তার যে আয় হয় তা লেখাপড়ার কাছে ব্যয়
করে। কারমাইকেল কলেজের অনার্স পড়–য়া ছালমা বেগম জানান, তিনি লেখাপড়ার ফাঁকে
ফাঁকে জাম ও শাড়িতে চুমকি বসানোর কাজ করেন। এতে প্রতি মাসে তার ৩ থেকে
সাড়ে ৪ হাজার টাকা আয় হয়। এ টাকা তিনি প্রাইভেট পড়া এবং সংসারের জন্য ব্যয়
করেন। ব্যবসায়ী আবদুল হামিদ ও কাওসার জানান, ঈদে চাহিদা অনুযায়ী শাড়ি, জামা
ও ওড়না ঢাকা ও চট্টগ্রামের বড় বড় মার্কেটের দোকানিদের সরবরাহ করতে পারছি
না। আমরা সব কিছুই মহিলাদের সরবরাহ করি। আর তারা রাত-দিন কাজ করেও সময়মতো
এসব কাজ ডেলিভারি দিতে পারেন না। এখন কাজের চাপ অনেক বেড়ে গেছে। তারা জানান
তাদের মতো অনেকে রংপুরে এসে এসব কাজ করে নিয়ে যায়। কারণ এখানে কম টাকা কাজ
ভাল পাওয়া যায়। এ কাজ করে রংপুরে ৩ শতাধিক বেশি পরিবারের মহিলা সংসার
চালাচ্ছেন। রংপুর সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর জাহাঙ্গীর আলম তোতা জানান,
শাড়ি, জামা ও ওড়নার চুমকি বসানোর কাজ করে অনেক মহিলা স্বাবলম্বী হয়েছেন।
এতে করে বেকারত্বের অভিশাপ থেকে এখানকার বিভিন্ন বয়সী মানুষ মুক্ত হচ্ছে।
সরকারের ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে এটি একটি সহায়ক ভূমিকা পালন
করছে। এ কাজ আরও ব্যাপকহারে বাড়াতে সরকারি- বেসরকারিভাবে উদ্যোগ নিয়ে একটি
প্রতিষ্ঠান এখানে গড়ে উঠলে ভালো হতো। অনেক স্কুল-কলেজ পড়–য়া মেয়ে এ কাজ
করে তাদের শিক্ষার ব্যয় নির্বাহ করছে। এটা অত্যন্ত ভাল। তবে শ্রম অনুযায়ী
মজুরির দিকে ব্যবসায়ীদের লক্ষ্য রাখা উচিত।
No comments