‘সরাসরি গুলি বন্ধ করুন, আন্দোলন দেখিয়ে দেবো’ -খালেদা জিয়া by কাফি কামাল
নাটোরবাসীকে আন্দোলনের প্রস্তুতি নেয়ার
আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তিনি বলেছেন, এই অবৈধ
সরকারকে হঠাতে আমাদের করতে হবে। তবে এখনই কর্মসূচি ঘোষণা দিতে চাই না।
আপনারা প্রস্তুতি নিয়ে রাখবেন। যখনই আন্দোলনের ডাক দেবো তখনই ঐক্যবদ্ধ হয়ে
রাজপথে নেমে আসবেন। সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, পুলিশকে দিয়ে সরাসরি গুলি
করা বন্ধ করুন। কথায় কথায় গুলি চালাবেন না। বিএনপি আন্দোলন করতে পারে কিনা
তা দেখিয়ে দেবো। আজ বিকালে নাটোরের নবাব সিরাজউদ-দৌলা সরকারি কলেজ মাঠে ২০
দল আয়োজিত বিশাল জনসভায় তিনি এসব কথা বলেন। খালেদা জিয়া বলেন,
প্রধানমন্ত্রী হওয়ার শখ আমার নেই। আগামীতে তরুণরা নেতৃত্ব দেবে। জীবনের
শেষপ্রান্তে এসে বলতে চাই- আমি আরেকবার আন্দোলন করবো দেশের মানুষের ভোটের
অধিকার ও গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে। বিএনপি ক্ষমতায় এলে মধ্যপ্রাচ্যে বন্ধ
শ্রমবাজার খুলে যাবে মন্তব্য করে বিরোধী জোট নেতা বলেন, শেখ হাসিনা আরব
আমিরাত গিয়েছিলেন। কিন্তু কিছুই করতে পারেননি। কারণ আওয়ামী লীগ মুসলিম
বিশ্বের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ করে ফেলেছে। কিন্তু আমরা ক্ষমতায় এলে
মধ্যপ্রাচ্যে বন্ধ শ্রমবাজার খুলে দিতে পারবো। সেই বিশ্বাস আমাদের আছে।
শেখ হাসিনাকে ‘নব্য হিটলার’ হিসেবে আখ্যায়িত করে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন,
মানুষ বলে শেখ হাসিনা স্বৈরাচার। আমি বলবো তিনি শুধু স্বৈরাচার নন, তিনি
নব্য হিটলার। হিটলারের মতো তিনি মানুষ হত্যা করছেন। খালেদা জিয়া বলেন, শেখ
হাসিনা সরকার হামলা-মামলার মাধ্যমে ক্ষমতায় টিকে আছে। তারা পুরো দেশটাকে
কারাগারে পরিণত করেছে। বিরোধী জোটের কোন নেতাকর্মী আজ মামলার বাইরে নেই।
দেশে আজ আর কোনো গণতন্ত্র নেই। তিনি বলেন, দেশে প্রতিনিয়ত গুম, খুন চলছে।
জনগণের নিরাপত্তা নেই। এভাবে দেশ চলতে পারে না। চলতে দেয়া যায় না। তিনি
বলেন, আজ সারাদেশে বিদ্যুৎ নেই। সরকার লুটপাটের জন্য বারবার বিদ্যুৎ,
গ্যাসের দাম বাড়িয়েছে। এখন আবার দাম বাড়ানোর পাঁয়তারা করছে। এবার দাম
বাড়ালে জনগণ মেনে নেবে না। জনসভার বক্তব্য যাতে সারা দেশে সম্প্রচার করতে
না পারে সেজন্য সরকার বিদ্যুৎ বন্ধ করে রেখেছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
এদেশে বিনিয়োগ আসছে না অভিযোগ করে খালেদা জিয়া বলেন, দেশী-বিদেশী কেউ
বিনিয়োগ করতে সাহস পাচ্ছে না। কেউ বিনিয়োগ করলেই ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী
লীগকে চাঁদা দিতে হয়। তাই দেশে বিনিয়োগ হচ্ছে না। দেশে দরিদ্রতা বেড়ে
যাচ্ছে। খালেদা জিয়া বলেন, আওয়ামী লীগের মধ্যে দেশপ্রেম নেই। তাদের মধ্যে
একটাই প্রেম ‘টাকা আর টাকা’। তাই দেশকে রক্ষা করতে হলে আমাদেরই এগিয়ে আসতে
হবে। দুদককে দুর্নীতিবাজ কমিশন আখ্যায়িত করে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, দুদক
এখন দুর্নীতি দমন কমিশন নয় তারা দুর্নীতিবাজ কমিশন। ক্ষমতাসীন দলের সব
দুর্নীতিবাজকে দায়মুক্তি দিচ্ছে তারা। এখনও যারা দুর্নীতি করছে তাদেরও
দায়মুক্তি দিচ্ছে। নির্বাচন কমিশনকে অথর্ব আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, এই
অথর্ব অপদার্থ নির্বাচন কমিশনের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না। এরা যতদিন
দেশে থাকবে ততদিন দেশে মঙ্গল হবে না। এদের বিদায় করতে হবে। বিচারকরা ন্যায়
বিচার করতে পারছে না মন্তব্য করে খালেদা জিয়া বলেন, বিচারকরা শপথ নেন ন্যায়
বিচার করার জন্য। কিন্তু তারা ন্যায় বিচার করতে পারছে না। আদালতগুলোতে
দলীয় লোক বসিয়েছে আওয়ামী লীগ। এর উদাহরণ হলো- মই্নউদ্দিন-ফখরুদ্দিন সরকার
আমলে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ১৫টি মামলা দিয়েছিল। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের
বিরুদ্ধে ৮ হাজার মামলা দিয়েছিল। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর তাদের সব
মামলা প্রত্যাহার করে নিয়েছে। কিন্তু আমাদের একটি মামলাও প্রত্যাহার করা
হয়নি। দেশে এখন আওয়ামী লীগের জন্য একরকম বিচার আর বিরোধী দল ও সাধারণ
মানুষের জন্য আরেক রকম বিচার। বিচারকদের উদ্দেশে খালেদা জিয়া বলেন, দল দেখে
নয়, সাক্ষ্যপ্রমাণ দেখে ন্যায় বিচার করবেন। কারণ একদিন আল্লাহর কাছে
আপনাদের জবাবদিহি করতে হবে। তখন কি জবাব দেবেন। নাটোর জেলা বিএনপির
সভাপতি অ্যাডভোকেট রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুর সভাপতিত্বে জনসভায় বিএনপির
ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ ২০ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতা
ও বিএনপির কেন্দ্রীয় এবং স্থানীয় নেতারা বক্তব্য রাখেন।
No comments