রানা প্লাজা ধসের বছরে ২৮ হাজার কোটি টাকার পোশাক রপ্তানি বেড়েছে by আসজাদুল কিবরিয়া
সাভারে রানা প্লাজা ধসের বছরটিতে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি বেড়েছে। ২০১৩ সালে বৈশ্বিক পোশাক বাণিজ্যে বাংলাদেশের অংশ বেড়ে হয়েছে ৫ দশমিক ১ শতাংশ, যা এক বছর আগে ছিল ৪ দশমিক ৭ শতাংশ। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) ‘আন্তর্জাতিক বাণিজ্য পরিসংখ্যান-২০১৪’ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে। এতে ২০১৩ সালে বিশ্ব বাণিজ্যের সামগ্রিক চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। ডব্লিউটিওর হিসাবে, রপ্তানিকারক হিসেবে তালিকায় তৃতীয় স্থানটি আরও সংহত করেছে বাংলাদেশ। ২০১৩ সালে বাংলাদেশের বার্ষিক রপ্তানি বেড়ে হয়েছে দুই হাজার ৩৫০ কোটি ডলার, যা ২০১২ সালে ছিল এক হাজার ৯৯৪ কোটি ৯০ লাখ ডলার। অর্থাৎ এক বছরে ৩৫৫ কোটি ১০ লাখ ডলারের (প্রায় ২৮ হাজার ৫৩ কোটি টাকা) রপ্তানি বেড়েছে।
অথচ গত বছরের ২৪ এপ্রিল রানা প্লাজা ধসে সহস্রাধিক শ্রমিক নিহত হওয়ার পর বিশ্বজুড়ে নিন্দা-সমালোচনার মুখে পড়েছিল বাংলাদেশ। তৈরি পোশাকশিল্প মালিকেরা সে সময় বারবার করে বলেছিলেন যে দেশের প্রধান রপ্তানি খাত বিরাট হুমকিতে পড়ে গেছে। তাঁদের আশঙ্কা ছিল, দেশে-বিদেশে নেতিবাচক প্রচারণার কারণে বড় ধরনের ভাবমূর্তির সংকটে পড়ছে দেশ। এতে করে বাংলাদেশের রপ্তানি কমে যাবে।
২০০৯ সালে বিশ্ব রপ্তানি বাজারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের হিস্যা ছিল ৩ দশমিক ৪০ শতাংশ। ২০১০ সালে তা ২৫ শতাংশ বেড়ে হয় সাড়ে ৪ শতাংশ। এর ফলে ২০০৯ সালের পঞ্চম অবস্থান থেকে ২০১০ সালে বাংলাদেশ উঠে আসে তৃতীয় স্থানে। আর ২০১১ সালে শতকরা ২৭ ভাগ প্রবৃদ্ধি নিয়ে বিশ্ববাজারে অংশীদারত্ব বেড়ে হয়েছিল ৪ দশমিক ৮০ শতাংশ।
যোগাযোগ করা হলে বাংলাদেশ তৈরি পোশাক শিল্প মালিক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি আতিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ২০১৩ সালটি ছিল প্রচণ্ড প্রতিকূল একটা বছর। রানা প্লাজা ধসের ঘটনা তো ছিলই। তার চেয়েও বড় হলো বছরজুড়ে ছিল রাজনৈতিক সহিংসতা, অবরোধ, হরতাল। আবার শ্রমিকদের বেতন বৃদ্ধির আন্দোলনও ছিল। এত সব প্রতিকূলতা মোকাবিলা করে এগিয়ে যাওয়ার কারণেই ভালো প্রবৃদ্ধি হয়েছে।
আতিকুল ইসলাম ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্য পাঠাতে কখনো লাখ টাকাতেও ট্রাক ভাড়া করতে হয়েছে। প্রচুর উদ্যোক্তা বিমানে পণ্য পাঠিয়েছেন। এভাবে আমরা ক্রেতাদের কাছে আমাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেছি। উদ্যোক্তা, সরকার ও শ্রমিক মিলে একযোগে কাজ করায় এটা সম্ভব হয়েছে।’
বৈশ্বিক পরিস্থিতি: বিশ্ববাজারে তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক শীর্ষ ১৫টি দেশের হিস্যা এখন ৮৯ শতাংশ, যা ২০১২ সালে ছিল ৮৭ দশমিক ৫০ শতাংশ। তবে ওই বছর যেখানে ১৫টি দেশের মধ্যে আটটিরই প্রবৃদ্ধি ছিল নেতিবাচক, সেখানে ২০১৩ সালে একটি দেশ (থাইল্যান্ড) ছাড়া সবাই প্রবৃদ্ধির ইতিবাচক ধারায় ফিরেছে। আর বাংলাদেশসহ ছয়টি দেশের রপ্তানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে দুই অঙ্কের ঘরে। যথারীতি এই তালিকায় শীর্ষ স্থানে আছে চীন। দেশটির বৈশ্বিক হিস্যা ৩৮ দশমিক ৬ শতাংশ, যা আগের বছর ছিল ৩৭ দশমিক ৮ শতাংশ। রপ্তানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১১ শতাংশ।
দ্বিতীয় স্থানে ২৭ দেশের সমন্বয়ে গঠিত ইউরোপীয় ইউনিয়নকে (ইইউ) দেখানো হয়েছে ডব্লিউটিও পরিসংখ্যানে। ইইউর হিস্যা অবশ্য বেশ কমে গেছে। ২০১১ সালের ২৮ দশমিক ২০ শতাংশ থেকে ২০১২ সালে নেমে আসে ২৫ দশমিক ৮০ শতাংশে। আর ২০১৩ সালে তা কমে হয়েছে ২৫ দশমিক ৬ শতাংশ। ইইউর ২৭টি দেশকে আলাদা করলে অবশ্য এই তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান আসলে চীনের পরেই বা দ্বিতীয় স্থানে। ডব্লিউটিওর পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা যায়, বিশ্ববাজারে শীর্ষ রপ্তানিকারকদের অবস্থানেরও কিছু পরিবর্তন চোখে পড়ে। গতবার চতুর্থ স্থানে থাকা তুরস্ক নেমে গেছে ষষ্ঠ স্থানে। তার জায়গায় উঠে এসেছে ভিয়েতনাম। বৈশ্বিক হিস্যা হয়েছে ৩ দশমিক ৭ শতাংশ। আর পঞ্চম স্থানে আছে ভারত, গতবার ছিল ষষ্ঠ স্থানে। ভারতের হিস্যা দাঁড়িয়েছে ৩ দশমিক ৬৫ আর রপ্তানির পরিমাণ এক হাজার ৬৮৫ কোটি ডলার।
ডব্লিউটিওর এই পরিসংখ্যান অনুযায়ী, তৈরি পোশাকের বিশ্ববাজারে ভারতের তুলনায় বাংলাদেশের হিস্যা ও রপ্তানি দুই-ই অনেক বেশি। সাম্প্রতিক সময়ে ডলারের বিপরীতে ভারতীয় মুদ্রার বড় ধরনের দরপতনের সুবিধা নিয়ে বাংলাদেশের পোশাকের বাজার ভারত দখল করে নেবে বলে যে কথা বলা হচ্ছিল, তা সত্যি হয়নি। এমনকি ভারতের অ্যাপারেল এক্সপোর্ট প্রমোশন কাউন্সিল (এপিইসি) গত বছর সেপ্টেম্বরে এক পূর্বাভাসে বলেছিল, আগামী দুই বছরের মধ্যে ভারতের তৈরি পোশাক রপ্তানি এক হাজার ৭০০ কোটি ডলারে উন্নীত হবে, সেটিও হয়নি। বরং বাংলাদেশের অবস্থান আরও সংহত হয়েছে।
অথচ গত বছরের ২৪ এপ্রিল রানা প্লাজা ধসে সহস্রাধিক শ্রমিক নিহত হওয়ার পর বিশ্বজুড়ে নিন্দা-সমালোচনার মুখে পড়েছিল বাংলাদেশ। তৈরি পোশাকশিল্প মালিকেরা সে সময় বারবার করে বলেছিলেন যে দেশের প্রধান রপ্তানি খাত বিরাট হুমকিতে পড়ে গেছে। তাঁদের আশঙ্কা ছিল, দেশে-বিদেশে নেতিবাচক প্রচারণার কারণে বড় ধরনের ভাবমূর্তির সংকটে পড়ছে দেশ। এতে করে বাংলাদেশের রপ্তানি কমে যাবে।
২০০৯ সালে বিশ্ব রপ্তানি বাজারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের হিস্যা ছিল ৩ দশমিক ৪০ শতাংশ। ২০১০ সালে তা ২৫ শতাংশ বেড়ে হয় সাড়ে ৪ শতাংশ। এর ফলে ২০০৯ সালের পঞ্চম অবস্থান থেকে ২০১০ সালে বাংলাদেশ উঠে আসে তৃতীয় স্থানে। আর ২০১১ সালে শতকরা ২৭ ভাগ প্রবৃদ্ধি নিয়ে বিশ্ববাজারে অংশীদারত্ব বেড়ে হয়েছিল ৪ দশমিক ৮০ শতাংশ।
যোগাযোগ করা হলে বাংলাদেশ তৈরি পোশাক শিল্প মালিক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি আতিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ২০১৩ সালটি ছিল প্রচণ্ড প্রতিকূল একটা বছর। রানা প্লাজা ধসের ঘটনা তো ছিলই। তার চেয়েও বড় হলো বছরজুড়ে ছিল রাজনৈতিক সহিংসতা, অবরোধ, হরতাল। আবার শ্রমিকদের বেতন বৃদ্ধির আন্দোলনও ছিল। এত সব প্রতিকূলতা মোকাবিলা করে এগিয়ে যাওয়ার কারণেই ভালো প্রবৃদ্ধি হয়েছে।
আতিকুল ইসলাম ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্য পাঠাতে কখনো লাখ টাকাতেও ট্রাক ভাড়া করতে হয়েছে। প্রচুর উদ্যোক্তা বিমানে পণ্য পাঠিয়েছেন। এভাবে আমরা ক্রেতাদের কাছে আমাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেছি। উদ্যোক্তা, সরকার ও শ্রমিক মিলে একযোগে কাজ করায় এটা সম্ভব হয়েছে।’
বৈশ্বিক পরিস্থিতি: বিশ্ববাজারে তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক শীর্ষ ১৫টি দেশের হিস্যা এখন ৮৯ শতাংশ, যা ২০১২ সালে ছিল ৮৭ দশমিক ৫০ শতাংশ। তবে ওই বছর যেখানে ১৫টি দেশের মধ্যে আটটিরই প্রবৃদ্ধি ছিল নেতিবাচক, সেখানে ২০১৩ সালে একটি দেশ (থাইল্যান্ড) ছাড়া সবাই প্রবৃদ্ধির ইতিবাচক ধারায় ফিরেছে। আর বাংলাদেশসহ ছয়টি দেশের রপ্তানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে দুই অঙ্কের ঘরে। যথারীতি এই তালিকায় শীর্ষ স্থানে আছে চীন। দেশটির বৈশ্বিক হিস্যা ৩৮ দশমিক ৬ শতাংশ, যা আগের বছর ছিল ৩৭ দশমিক ৮ শতাংশ। রপ্তানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১১ শতাংশ।
দ্বিতীয় স্থানে ২৭ দেশের সমন্বয়ে গঠিত ইউরোপীয় ইউনিয়নকে (ইইউ) দেখানো হয়েছে ডব্লিউটিও পরিসংখ্যানে। ইইউর হিস্যা অবশ্য বেশ কমে গেছে। ২০১১ সালের ২৮ দশমিক ২০ শতাংশ থেকে ২০১২ সালে নেমে আসে ২৫ দশমিক ৮০ শতাংশে। আর ২০১৩ সালে তা কমে হয়েছে ২৫ দশমিক ৬ শতাংশ। ইইউর ২৭টি দেশকে আলাদা করলে অবশ্য এই তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান আসলে চীনের পরেই বা দ্বিতীয় স্থানে। ডব্লিউটিওর পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা যায়, বিশ্ববাজারে শীর্ষ রপ্তানিকারকদের অবস্থানেরও কিছু পরিবর্তন চোখে পড়ে। গতবার চতুর্থ স্থানে থাকা তুরস্ক নেমে গেছে ষষ্ঠ স্থানে। তার জায়গায় উঠে এসেছে ভিয়েতনাম। বৈশ্বিক হিস্যা হয়েছে ৩ দশমিক ৭ শতাংশ। আর পঞ্চম স্থানে আছে ভারত, গতবার ছিল ষষ্ঠ স্থানে। ভারতের হিস্যা দাঁড়িয়েছে ৩ দশমিক ৬৫ আর রপ্তানির পরিমাণ এক হাজার ৬৮৫ কোটি ডলার।
ডব্লিউটিওর এই পরিসংখ্যান অনুযায়ী, তৈরি পোশাকের বিশ্ববাজারে ভারতের তুলনায় বাংলাদেশের হিস্যা ও রপ্তানি দুই-ই অনেক বেশি। সাম্প্রতিক সময়ে ডলারের বিপরীতে ভারতীয় মুদ্রার বড় ধরনের দরপতনের সুবিধা নিয়ে বাংলাদেশের পোশাকের বাজার ভারত দখল করে নেবে বলে যে কথা বলা হচ্ছিল, তা সত্যি হয়নি। এমনকি ভারতের অ্যাপারেল এক্সপোর্ট প্রমোশন কাউন্সিল (এপিইসি) গত বছর সেপ্টেম্বরে এক পূর্বাভাসে বলেছিল, আগামী দুই বছরের মধ্যে ভারতের তৈরি পোশাক রপ্তানি এক হাজার ৭০০ কোটি ডলারে উন্নীত হবে, সেটিও হয়নি। বরং বাংলাদেশের অবস্থান আরও সংহত হয়েছে।
No comments