এমপি রানার নির্যাতনের শিকার ক্ষমতাসীনরাও by মুসতাক আহমদ
কালো শীর্ণকায় শরীরের লোকটির নাম আবু হানিফ। আওয়ামী লীগের ওয়ার্ড সাধারণ সম্পাদক। ডান হাতটি বাঁকা। সোজা করতে পারেন না। হাতের আঙুলে কোনো বোধশক্তি নেই। তার এই হাতে চাপাতির অন্তত ১০টি কোপের দাগ রয়েছে। পাশাপাশি তার দুপায়ে আছে চাপাতির অসংখ্য কোপের চিহ্ন। তার এই করুণ দশা রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপি বা জামায়াত করেনি। নিজ দলের ব্যানারে থাকা একদল সন্ত্রাসীর হামলায় তার এই পরিণতি। ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সম্মেলন আয়োজনের অপরাধে তিনি গুরুতর আহত হয়েছিলেন। স্থানীয় এমপি আমানুর রহমান খান রানার অনুসারীরা হামলা চালিয়ে পণ্ড করে দিয়েছিল সেই সম্মেলন। ওই হামলায় হানিফের মতো একই দশা হয়েছিল আরও ১৪ জন নেতাকর্মীর। এদের কেউ হাত হারিয়েছেন, আবার কেউ বা হারিয়েছেন পা।
হানিফের আরও অপরাধ তিনি হাইকমান্ড এবং জেলা আওয়ামী লীগের নির্দেশ অনুযায়ী ২০১২ সালের ১৮ নভেম্বর অনুষ্ঠিত এই আসনের উপনির্বাচনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেছেন। ঘাটাইলের বিভিন্ন ইউনিয়ন ঘুরে দেখা গেছে কেবল হানিফই নন, নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করায় আরও অসংখ্য দলীয় নেতাকর্মী হামলার শিকার হন। তাদের কারও কারও বাড়ি-ঘর লুট করে আগুন লাগানোরও ঘটনা ঘটেছে। এমনকি বাড়ি ভেঙে গুঁড়িয়ে ফেলার ঘটনাও আছে। ওই সময়ে সন্ত্রাসীদের ধারালো অস্ত্রের কোপে পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নিরীহ মানুষ। দলের প্রতি নিবেদিতপ্রাণ এসব নেতাকর্মীর অনেকে স্ত্রী-পরিজন নিয়ে বর্তমানে খোলা আকাশের নিচে রাত যাপন করছেন।
এই উপনির্বাচনে নৌকা প্রতীক পেয়েছিলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক শহিদুল ইসলাম লেবু। এতে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেন জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক আমানুর রহমান খান রানা। বিদ্রোহী হওয়ার কারণে তাৎক্ষণিক দল থেকে তাকে বহিষ্কার করা হয়। কিন্তু নির্বাচনের পর তাকে ফের স্বপদে বহাল করা হয়। একদিকে দলের পদ ফিরে পাওয়া, অন্যদিকে এমপি হওয়া- এই দুইয়ে মিলে রানা ও তার পরিবার- খানদের পৌষ মাস ফিরে এসেছিল। স্থানীয় সাধারণ মানুষ ও দলীয় নেতাকর্মীরা জানান, এমনিতেই সন্ত্রাসী পরিবার হিসেবে টাঙ্গাইলে ত্রাসের রাজত্ব ছিল। পরিবহন, পতিতালয়, বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বালুমহাল, বালু ঘাট, জলমহালসহ নানা ক্ষেত্রে চাঁদা এবং অস্ত্র-মাদক ব্যবসার কাঁচা টাকায় সোনায় সোহাগা ছিলেন। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে ২০১২ সালের উপনির্বাচন ও ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে এমপি হওয়ার ঘটনা। এতে খান পরিবারে সম্রাট আকবরের রাজত্ব পাওয়ার মতো অবস্থা হয়েছিল বলে মন্তব্য করেন একাধিক স্থানীয় সাধারণ মানুষ।
জানতে চাইলে শহিদুল ইসলাম লেবু বলেন, আমার নির্বাচনে যারা নৌকা মার্কার পক্ষে ছিল, তাদের নানাভাবে অত্যাচার-নির্যাতন করা হচ্ছে। বিভিন্ন মামলায় জড়িয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের অন্তত ৮০ ভাগ নেতাকর্মী বর্তমানে নির্যাতিত। তিনি অভিযোগ করেন, টাঙ্গাইলে এখন আওয়ামী লীগই বিরোধী দলের ভূমিকায় রয়েছে। আর স্থানীয়ভাবে সরকারের দায়িত্বে আছেন রানা এমপি।
যুগান্তরের এই প্রতিবেদক ঘাটাইলে অবস্থান করছেন- এ খবর পেয়ে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের বাইরেও অসংখ্য সাধারণ মানুষ ভিড় জমান। জামা-কাপড় খুলে তাদের কেউ মারধরের আঘাত দেখালেন। কেউ নিয়ে এসেছেন হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত স্ত্রী-পুত্র ও ঘরবাড়ির স্থিরচিত্র। কারো হাতে জমির দলিল।
কথা হচ্ছিল ঘাটাইলে রানা এমপির বাহিনীর নির্যাতনের শিকার এমনই একজন দিঘলকান্তি ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ সভাপতি ইকবাল হোসেন খানের সঙ্গে। তিনি হাত, পা ও মাথায় অন্তত ১২টি কোপের চিহ্ন দেখালেন। এসময় গুঁড়িয়ে দেয়া বাড়ির বিভিন্ন স্থিরচিত্র নিয়ে আসলেন। পরে এ নেতার বাড়িতে সরেজমিন দেখা গেল করুণ চিত্র। শুধু টিনের চালার ঘরটি দাঁড়িয়ে আছে। ঘরের বেড়া এমনকি গোসলখানার বেড়া পর্যন্ত কুপিয়ে পিটিয়ে গুঁড়িয়ে দেয়া হয়েছে। এখানেই শেষ নয়, হামলায় তার একমাত্র ছেলে এলএলবির ছাত্র আল আমিন এখন পঙ্গু প্রায়। ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে দীর্ঘদিন চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। কিন্তু আল আমিন আর স্বাভাবিক শরীর ফিরে পায়নি। ইকবাল আবেগমিশ্রিত কণ্ঠে বললেন, আমার অপরাধ আমি নেত্রীর (শেখ হাসিনা) মনোনীত প্রার্থীর পক্ষে ২০১২ সালের উপনির্বাচনে কাজ করেছি। নির্বাচনের পর এ পর্যন্ত আমার বাড়িতে ৩ দফা হামলা হয়েছে। আমার একমাত্র ছেলে আজ পঙ্গু। তিনি চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে বলেন, আমি আওয়ামী লীগ করি, সেটা বড় কথা নয়। কিন্তু আমি তো এদেশের একজন মানুষ। আমার দল ক্ষমতায়। অথচ আমি আজ দেশান্তরী (নির্বাসিত)। আমি আমার বাড়ি-ঘরে যেতে পারি না।
আবু হানিফ দুচোখের পানি ছেড়ে দিয়ে বলেন, বিএনপি বা জামায়াতের কেউ যদি আমাকে এভাবে কুপিয়ে চার হাত-পা পঙ্গু করে দিত তবুও তা আমি মানতে পারতাম। কিন্তু আমার সরকার ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় আওয়ামী লীগের সম্মেলন করাটা যদি অপরাধ হয়, তাহলে এই দুঃখ কোথায় রাখি। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, সবচেয়ে বড় দুঃখ আমি এই অনাচার-নির্যাতনের বিচার পর্যন্ত পাইনি। মামলা করতে গিয়েছি। পুলিশ মামলা নেয়নি।
এ ব্যাপারে স্থানীয় আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক লেবু বলেন, দল গোছানোর এমন প্রতিবন্ধকতা ও সম্মেলন পণ্ড করার ঘটনা অহরহ ঘটা শুরু করলে বাধ্য হয়ে আমরা সম্মেলন করা স্থগিত করে দিই। তার অভিযোগ, পুলিশকে এমপি রানা দলের বিরুদ্ধেও ব্যবহার করছে। বিভিন্ন ইউনিয়নে সম্মেলন ডাকলে পুলিশ দিয়ে তা বন্ধ করে দেয়া হয়। এ কারণে ১২টি ইউনিয়ন ইউনিটের মধ্যে মাত্র সাতটির সম্মেলন শেষ করতে পেরেছি।
নামপ্রকাশ না করে স্থানীয় বেশ কয়েকজন জানালেন, এখানে এমপি রানা বিকল্প সরকার। তার রাজত্বে যে-ই মুখ খুলবে তার নিস্তার নেই। ঘাটাইল উপজেলা সদর ও বিভিন্ন ইউনিয়ন ঘুরে দেখা গেছে যেখানে জমি দখল করা হয়, সেখানেই এমপি রানার ভাই আমিনুর রহমান খান বাপ্পীর নামে স্মৃতি সংসদ লিখে সাইন বোর্ড ঝুলিয়ে দেয়া হয়। এমনি একটি সাইন বোর্ড ঝুলছে ঘাটাইলের বাসস্ট্যান্ড চত্বরে। নামপ্রকাশ না করে সেখানকার একজন চা দোকানি জানান, এই জমির প্রকৃত মালিক সুজন-রাসেল নামে দুই ভাই। প্রথমে জমিটি স্মৃতি সংসদের জন্য ভাড়া নেয়। পরে রাসেলকে অস্ত্র মামলায় ফাঁসিয়ে তার কাছে জমি দাবি করা হয়। এরপর অবশ্য মোটা অংকের অর্থ দিয়ে রফা করতে হয়েছে। তবে জমি এখনও দখলমুক্ত হয়নি। এভাবে ঘাটাইলে এ ধরনের প্রায় শতাধিক স্মৃতি সংসদ রয়েছে বলে জানা গেছে। স্থানীয় নেতাকর্মীরা জানান, এ উপজেলায় আওয়ামী লীগ নয়, বাপ্পী স্মৃতি সংসদ করতে হয় সবাইকে।
সাধারণ মানুষ ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের অভিযোগ, এমপি রানার এ অপকর্মের সহযোগী হল স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন। যখন যেখানেই হামলা হয়, তখন পুলিশ সহায়কের ভূমিকায় থাকে নতুবা থাকে নীরব দর্শকের ভূমিকায়। এই অভিযোগের প্রমাণও পাওয়া গেছে। ২৮ জুন হামলা হয় ইকবাল খানের বাড়িতে। ইকবাল খান জানান, আমি বাড়িতে রাত ২টায় যখন হামলা হয় তখন ২টি সাদা মাইক্রো ভর্তি ক্যাডারদের সঙ্গে একটি পুলিশও ছিল। আমার ভাগ্য ভালো, একজন পুলিশ সদস্য ফোন করে আমাকে বাড়ি ছাড়তে বলেন। আমি তখন তড়িঘড়ি দেয়াল টপকে পালিয়ে যাই। ২০১২ সালের ২৪ ডিসেম্বর সন্ধানপুর আওয়ামী লীগের কর্মিসভায় এমপি রানার নির্দেশে সন্ত্রাসী টিটুর নেতৃত্বে হামলা হয়। সেখানে প্যান্ডেল-চেয়ার পুড়িয়ে দেয়। ওই ঘটনায় স্থানীয় পুলিশ মামলা নেয়নি। সর্বশেষ রসুলপুর ইউনিয়নের সম্মেলনও পুলিশ ১৪৪ ধারা জারি করে বন্ধ করে দেয়। ৯ সেপ্টেম্বর ধলাপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ ভবনে ভিজিএফের চাল বিতরণ হচ্ছিল। সেখানে এমপি রানার সেকেন্ড-ইন-কমান্ড টিটুর নেতৃত্বে সন্ত্রাসী উপস্থিত হয়। তারা ১০ বস্তা চাল দাবি করে। চেয়ারম্যান হেমায়েত সিকদার জানান, তিনি চাল দিতে অস্বীকৃতি জানালে টিটু বাহিনী ককটেল বিস্ফোরণ ও ২ রাউন্ড গুলি ফোটায়। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ গুলির খোসা উদ্ধার করে। কিন্তু সন্ত্রাসীদের ধরেনি। এর আগে ২০১২ সালের ২৮ নভেম্বর এই ইউনিয়নের চেয়ারম্যানকে নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করায় মারধর করা হয়। এ ঘটনায় মামলা করতে গেলে থানা নেয়নি। পরে ঢাকা থেকে এসপির সঙ্গে কথা বলেন শেখ সেলিম। এরপর মামলা নেয়া হয়। উপজেলার লখিন্দর মৌজায় ব্যবসায়ী সোহরাব হোসেন ভূইয়ার ২ কোটি টাকার ১২ একর জমি দখল করে নেয় রানা বাহিনী। সোহরাব জানান, এই দখলে পুলিশ সরাসরি ভূমিকা রাখে। এমনকি পুলিশ সেখানে থাকা আনিসসহ অন্য কর্মচারীদের মারধর পর্যন্ত করে। ভূমিতে বর্তমানে শামসু নামে রানা এমপির একজন সহযোগী বসবাস করেন। সেখানে অস্ত্র ও মাদকের সম্ভার গড়ে তোলা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন স্থানীয়রা। তারা আরও বলেন, এখানে রাত নামলে অসামাজিক কার্যকলাপের হাট বসে। এভাবে রানা এমপি ও তার বাহিনীর অসংখ্য সন্ত্রাসী কার্যক্রমের সহযোগী হিসেবে পুলিশ কাজ করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে ঘাটাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ফজলুল কবির যুগান্তরের কাছে দাবি করে বলেন, পুলিশের কোনো সদস্য বা আমি কারও কোনো অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে সহযোগিতা করি না, তা তিনি এমপি হোন বা অন্য কেউ। আমি কাউকে ডরাইয়া কাজ করি না। আর এ ধরনের কোনো ঘটনার অভিযোগ আমার কাছে আসেনি। কেউ মামলাও করতে আসেনি। তবে আপনি সরেজমিন অনুসন্ধান করে যা পান লিখে দিতে পারেন।
এমপি রানার কারণে এলাকা ছাড়তে হয়েছিল এমন আরেকজন নেতা যুবলীগের কেন্দ্রীয় যুগ্ম-সম্পাদক মামুনুর রশীদ। তার অপরাধ ছিল ঘাটাইলের উপনির্বাচনে আয়োজিত সমাবেশে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেনসহ অন্যদের সামনে নৌকা প্রতীকের পক্ষে বক্তৃতা করা। একই সমাবেশে বক্তৃতা করে অপরাধ করেছিলেন টাঙ্গাইল জেলার যুবলীগের তৎকালীন সভাপতি শওকত রেজা। এ কারণে যুবলীগ অফিসে হামলা করে ভাংচুর করা হয়। এখানেই শেষ নয়, পরে জোরপূর্বক তাকে দলীয় পদ থেকেও সরিয়ে দেয়া হয়। আলাপকালে এই নেতা বলেন, আমি ছাত্রলীগের সাড়ে ১১ আর যুবলীগের ১২ বছর সভাপতি ছিলাম। এই সময়ে এরকম চাঁদাবাজি আর দেখি নাই। এমনও ঘটনা রয়েছে, যে দোকানের বাজার দর ১০ লাখ টাকা, সেটি দুই লাখ টাকা দিয়ে দখল করে নিয়েছে তারা। এই নেতা আরও বলেন, জোট সরকারের আমলের চেয়েও আওয়ামী লীগের সাধারণ নেতাকর্মীরা বর্তমানে ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে। সাধারণ মানুষের কথা তো বলারই নয়। এ অবস্থায় এই গুণ্ডাদের প্রতিহত ও রাজনৈতিকভাবে বিতারিত না করলে জেলায় আওয়ামী লীগের রাজনীতি থাকবে না।
অভিযোগ রয়েছে, এমপি রানা ও তার অপর তিন ভাই টাঙ্গাইল জেলাজুড়ে গড়ে তুলেছেন একক আধিপত্য। তাদের এই আধিপত্য থেকে রেহাই পায় না রিকশাওয়ালা, বাসের শ্রমিক, নির্মাণ শ্রমিক, সাধারণ ব্যবসায়ীসহ কেউই। আর এই চার ভাইয়ের বিরুদ্ধে যাবে এমন কোনো ধরনের কথা কারও মুখ ফসকে বের হলেই নেমে আসে তার ওপর নির্যাতনের খড়গ। আর এমপি পরিবারের এসব অপকর্মের কারণে দলের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে। দলীয় নেতাকর্মীদের মাঝে বিরাজ করছে অসন্তোষ। শহরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সর্বত্র সাধারণ মানুষের মুখে এখন একই গুঞ্জন। সাহস করে এসব মানুষ মুখ খুলে কথা না বললেও তারা একে অপরের সঙ্গে ফিসফিস করে এবং আকার-ইঙ্গিতে বিভিন্ন ধরনের কথা বলেন। তবে ভয়ে সরাসরি মুখ খোলেন না কেউই।
এ ব্যাপারে কথা বলতে এমপি রানার সঙ্গে যোগাযোগ করে কথা বলা সম্ভব হয়নি। জেলা আওয়ামী লীগের নেতা ফারুক আহমেদের খুনে তিনিসহ তার চার ভাইয়ের জড়িত থাকার ব্যাপারে আদালতে মোহাম্মদ আলী ও আনিসুল ইসলাম রাজা নামে দুজন জবানবন্দি দেয়ার পর থেকে তাকে প্রকাশ্যে কমই পাওয়া যায়। তাই তার দুটি মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে বন্ধ পাওয়া যায়। তবে জমিজমা দখলের ব্যাপারে জানতে তার অনুজ টাঙ্গাইল পৌরসভার মেয়র ও টাঙ্গাইল শহর শাখার সাধারণ সম্পাদক সহিদুর রহমান খান মুক্তি বলেন, আমি সাড়ে ৩ বছর মেয়র হয়েছি। এ সময়ের আগে-পরে আমরা কোনো জমি দখল করেছি- এটা কেউ প্রমাণ করতে পারলে মেয়রের দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করব।
হানিফের আরও অপরাধ তিনি হাইকমান্ড এবং জেলা আওয়ামী লীগের নির্দেশ অনুযায়ী ২০১২ সালের ১৮ নভেম্বর অনুষ্ঠিত এই আসনের উপনির্বাচনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেছেন। ঘাটাইলের বিভিন্ন ইউনিয়ন ঘুরে দেখা গেছে কেবল হানিফই নন, নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করায় আরও অসংখ্য দলীয় নেতাকর্মী হামলার শিকার হন। তাদের কারও কারও বাড়ি-ঘর লুট করে আগুন লাগানোরও ঘটনা ঘটেছে। এমনকি বাড়ি ভেঙে গুঁড়িয়ে ফেলার ঘটনাও আছে। ওই সময়ে সন্ত্রাসীদের ধারালো অস্ত্রের কোপে পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নিরীহ মানুষ। দলের প্রতি নিবেদিতপ্রাণ এসব নেতাকর্মীর অনেকে স্ত্রী-পরিজন নিয়ে বর্তমানে খোলা আকাশের নিচে রাত যাপন করছেন।
এই উপনির্বাচনে নৌকা প্রতীক পেয়েছিলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক শহিদুল ইসলাম লেবু। এতে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেন জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক আমানুর রহমান খান রানা। বিদ্রোহী হওয়ার কারণে তাৎক্ষণিক দল থেকে তাকে বহিষ্কার করা হয়। কিন্তু নির্বাচনের পর তাকে ফের স্বপদে বহাল করা হয়। একদিকে দলের পদ ফিরে পাওয়া, অন্যদিকে এমপি হওয়া- এই দুইয়ে মিলে রানা ও তার পরিবার- খানদের পৌষ মাস ফিরে এসেছিল। স্থানীয় সাধারণ মানুষ ও দলীয় নেতাকর্মীরা জানান, এমনিতেই সন্ত্রাসী পরিবার হিসেবে টাঙ্গাইলে ত্রাসের রাজত্ব ছিল। পরিবহন, পতিতালয়, বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বালুমহাল, বালু ঘাট, জলমহালসহ নানা ক্ষেত্রে চাঁদা এবং অস্ত্র-মাদক ব্যবসার কাঁচা টাকায় সোনায় সোহাগা ছিলেন। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে ২০১২ সালের উপনির্বাচন ও ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে এমপি হওয়ার ঘটনা। এতে খান পরিবারে সম্রাট আকবরের রাজত্ব পাওয়ার মতো অবস্থা হয়েছিল বলে মন্তব্য করেন একাধিক স্থানীয় সাধারণ মানুষ।
জানতে চাইলে শহিদুল ইসলাম লেবু বলেন, আমার নির্বাচনে যারা নৌকা মার্কার পক্ষে ছিল, তাদের নানাভাবে অত্যাচার-নির্যাতন করা হচ্ছে। বিভিন্ন মামলায় জড়িয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের অন্তত ৮০ ভাগ নেতাকর্মী বর্তমানে নির্যাতিত। তিনি অভিযোগ করেন, টাঙ্গাইলে এখন আওয়ামী লীগই বিরোধী দলের ভূমিকায় রয়েছে। আর স্থানীয়ভাবে সরকারের দায়িত্বে আছেন রানা এমপি।
যুগান্তরের এই প্রতিবেদক ঘাটাইলে অবস্থান করছেন- এ খবর পেয়ে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের বাইরেও অসংখ্য সাধারণ মানুষ ভিড় জমান। জামা-কাপড় খুলে তাদের কেউ মারধরের আঘাত দেখালেন। কেউ নিয়ে এসেছেন হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত স্ত্রী-পুত্র ও ঘরবাড়ির স্থিরচিত্র। কারো হাতে জমির দলিল।
কথা হচ্ছিল ঘাটাইলে রানা এমপির বাহিনীর নির্যাতনের শিকার এমনই একজন দিঘলকান্তি ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ সভাপতি ইকবাল হোসেন খানের সঙ্গে। তিনি হাত, পা ও মাথায় অন্তত ১২টি কোপের চিহ্ন দেখালেন। এসময় গুঁড়িয়ে দেয়া বাড়ির বিভিন্ন স্থিরচিত্র নিয়ে আসলেন। পরে এ নেতার বাড়িতে সরেজমিন দেখা গেল করুণ চিত্র। শুধু টিনের চালার ঘরটি দাঁড়িয়ে আছে। ঘরের বেড়া এমনকি গোসলখানার বেড়া পর্যন্ত কুপিয়ে পিটিয়ে গুঁড়িয়ে দেয়া হয়েছে। এখানেই শেষ নয়, হামলায় তার একমাত্র ছেলে এলএলবির ছাত্র আল আমিন এখন পঙ্গু প্রায়। ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে দীর্ঘদিন চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। কিন্তু আল আমিন আর স্বাভাবিক শরীর ফিরে পায়নি। ইকবাল আবেগমিশ্রিত কণ্ঠে বললেন, আমার অপরাধ আমি নেত্রীর (শেখ হাসিনা) মনোনীত প্রার্থীর পক্ষে ২০১২ সালের উপনির্বাচনে কাজ করেছি। নির্বাচনের পর এ পর্যন্ত আমার বাড়িতে ৩ দফা হামলা হয়েছে। আমার একমাত্র ছেলে আজ পঙ্গু। তিনি চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে বলেন, আমি আওয়ামী লীগ করি, সেটা বড় কথা নয়। কিন্তু আমি তো এদেশের একজন মানুষ। আমার দল ক্ষমতায়। অথচ আমি আজ দেশান্তরী (নির্বাসিত)। আমি আমার বাড়ি-ঘরে যেতে পারি না।
আবু হানিফ দুচোখের পানি ছেড়ে দিয়ে বলেন, বিএনপি বা জামায়াতের কেউ যদি আমাকে এভাবে কুপিয়ে চার হাত-পা পঙ্গু করে দিত তবুও তা আমি মানতে পারতাম। কিন্তু আমার সরকার ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় আওয়ামী লীগের সম্মেলন করাটা যদি অপরাধ হয়, তাহলে এই দুঃখ কোথায় রাখি। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, সবচেয়ে বড় দুঃখ আমি এই অনাচার-নির্যাতনের বিচার পর্যন্ত পাইনি। মামলা করতে গিয়েছি। পুলিশ মামলা নেয়নি।
এ ব্যাপারে স্থানীয় আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক লেবু বলেন, দল গোছানোর এমন প্রতিবন্ধকতা ও সম্মেলন পণ্ড করার ঘটনা অহরহ ঘটা শুরু করলে বাধ্য হয়ে আমরা সম্মেলন করা স্থগিত করে দিই। তার অভিযোগ, পুলিশকে এমপি রানা দলের বিরুদ্ধেও ব্যবহার করছে। বিভিন্ন ইউনিয়নে সম্মেলন ডাকলে পুলিশ দিয়ে তা বন্ধ করে দেয়া হয়। এ কারণে ১২টি ইউনিয়ন ইউনিটের মধ্যে মাত্র সাতটির সম্মেলন শেষ করতে পেরেছি।
নামপ্রকাশ না করে স্থানীয় বেশ কয়েকজন জানালেন, এখানে এমপি রানা বিকল্প সরকার। তার রাজত্বে যে-ই মুখ খুলবে তার নিস্তার নেই। ঘাটাইল উপজেলা সদর ও বিভিন্ন ইউনিয়ন ঘুরে দেখা গেছে যেখানে জমি দখল করা হয়, সেখানেই এমপি রানার ভাই আমিনুর রহমান খান বাপ্পীর নামে স্মৃতি সংসদ লিখে সাইন বোর্ড ঝুলিয়ে দেয়া হয়। এমনি একটি সাইন বোর্ড ঝুলছে ঘাটাইলের বাসস্ট্যান্ড চত্বরে। নামপ্রকাশ না করে সেখানকার একজন চা দোকানি জানান, এই জমির প্রকৃত মালিক সুজন-রাসেল নামে দুই ভাই। প্রথমে জমিটি স্মৃতি সংসদের জন্য ভাড়া নেয়। পরে রাসেলকে অস্ত্র মামলায় ফাঁসিয়ে তার কাছে জমি দাবি করা হয়। এরপর অবশ্য মোটা অংকের অর্থ দিয়ে রফা করতে হয়েছে। তবে জমি এখনও দখলমুক্ত হয়নি। এভাবে ঘাটাইলে এ ধরনের প্রায় শতাধিক স্মৃতি সংসদ রয়েছে বলে জানা গেছে। স্থানীয় নেতাকর্মীরা জানান, এ উপজেলায় আওয়ামী লীগ নয়, বাপ্পী স্মৃতি সংসদ করতে হয় সবাইকে।
সাধারণ মানুষ ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের অভিযোগ, এমপি রানার এ অপকর্মের সহযোগী হল স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন। যখন যেখানেই হামলা হয়, তখন পুলিশ সহায়কের ভূমিকায় থাকে নতুবা থাকে নীরব দর্শকের ভূমিকায়। এই অভিযোগের প্রমাণও পাওয়া গেছে। ২৮ জুন হামলা হয় ইকবাল খানের বাড়িতে। ইকবাল খান জানান, আমি বাড়িতে রাত ২টায় যখন হামলা হয় তখন ২টি সাদা মাইক্রো ভর্তি ক্যাডারদের সঙ্গে একটি পুলিশও ছিল। আমার ভাগ্য ভালো, একজন পুলিশ সদস্য ফোন করে আমাকে বাড়ি ছাড়তে বলেন। আমি তখন তড়িঘড়ি দেয়াল টপকে পালিয়ে যাই। ২০১২ সালের ২৪ ডিসেম্বর সন্ধানপুর আওয়ামী লীগের কর্মিসভায় এমপি রানার নির্দেশে সন্ত্রাসী টিটুর নেতৃত্বে হামলা হয়। সেখানে প্যান্ডেল-চেয়ার পুড়িয়ে দেয়। ওই ঘটনায় স্থানীয় পুলিশ মামলা নেয়নি। সর্বশেষ রসুলপুর ইউনিয়নের সম্মেলনও পুলিশ ১৪৪ ধারা জারি করে বন্ধ করে দেয়। ৯ সেপ্টেম্বর ধলাপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ ভবনে ভিজিএফের চাল বিতরণ হচ্ছিল। সেখানে এমপি রানার সেকেন্ড-ইন-কমান্ড টিটুর নেতৃত্বে সন্ত্রাসী উপস্থিত হয়। তারা ১০ বস্তা চাল দাবি করে। চেয়ারম্যান হেমায়েত সিকদার জানান, তিনি চাল দিতে অস্বীকৃতি জানালে টিটু বাহিনী ককটেল বিস্ফোরণ ও ২ রাউন্ড গুলি ফোটায়। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ গুলির খোসা উদ্ধার করে। কিন্তু সন্ত্রাসীদের ধরেনি। এর আগে ২০১২ সালের ২৮ নভেম্বর এই ইউনিয়নের চেয়ারম্যানকে নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করায় মারধর করা হয়। এ ঘটনায় মামলা করতে গেলে থানা নেয়নি। পরে ঢাকা থেকে এসপির সঙ্গে কথা বলেন শেখ সেলিম। এরপর মামলা নেয়া হয়। উপজেলার লখিন্দর মৌজায় ব্যবসায়ী সোহরাব হোসেন ভূইয়ার ২ কোটি টাকার ১২ একর জমি দখল করে নেয় রানা বাহিনী। সোহরাব জানান, এই দখলে পুলিশ সরাসরি ভূমিকা রাখে। এমনকি পুলিশ সেখানে থাকা আনিসসহ অন্য কর্মচারীদের মারধর পর্যন্ত করে। ভূমিতে বর্তমানে শামসু নামে রানা এমপির একজন সহযোগী বসবাস করেন। সেখানে অস্ত্র ও মাদকের সম্ভার গড়ে তোলা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন স্থানীয়রা। তারা আরও বলেন, এখানে রাত নামলে অসামাজিক কার্যকলাপের হাট বসে। এভাবে রানা এমপি ও তার বাহিনীর অসংখ্য সন্ত্রাসী কার্যক্রমের সহযোগী হিসেবে পুলিশ কাজ করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে ঘাটাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ফজলুল কবির যুগান্তরের কাছে দাবি করে বলেন, পুলিশের কোনো সদস্য বা আমি কারও কোনো অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে সহযোগিতা করি না, তা তিনি এমপি হোন বা অন্য কেউ। আমি কাউকে ডরাইয়া কাজ করি না। আর এ ধরনের কোনো ঘটনার অভিযোগ আমার কাছে আসেনি। কেউ মামলাও করতে আসেনি। তবে আপনি সরেজমিন অনুসন্ধান করে যা পান লিখে দিতে পারেন।
এমপি রানার কারণে এলাকা ছাড়তে হয়েছিল এমন আরেকজন নেতা যুবলীগের কেন্দ্রীয় যুগ্ম-সম্পাদক মামুনুর রশীদ। তার অপরাধ ছিল ঘাটাইলের উপনির্বাচনে আয়োজিত সমাবেশে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেনসহ অন্যদের সামনে নৌকা প্রতীকের পক্ষে বক্তৃতা করা। একই সমাবেশে বক্তৃতা করে অপরাধ করেছিলেন টাঙ্গাইল জেলার যুবলীগের তৎকালীন সভাপতি শওকত রেজা। এ কারণে যুবলীগ অফিসে হামলা করে ভাংচুর করা হয়। এখানেই শেষ নয়, পরে জোরপূর্বক তাকে দলীয় পদ থেকেও সরিয়ে দেয়া হয়। আলাপকালে এই নেতা বলেন, আমি ছাত্রলীগের সাড়ে ১১ আর যুবলীগের ১২ বছর সভাপতি ছিলাম। এই সময়ে এরকম চাঁদাবাজি আর দেখি নাই। এমনও ঘটনা রয়েছে, যে দোকানের বাজার দর ১০ লাখ টাকা, সেটি দুই লাখ টাকা দিয়ে দখল করে নিয়েছে তারা। এই নেতা আরও বলেন, জোট সরকারের আমলের চেয়েও আওয়ামী লীগের সাধারণ নেতাকর্মীরা বর্তমানে ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে। সাধারণ মানুষের কথা তো বলারই নয়। এ অবস্থায় এই গুণ্ডাদের প্রতিহত ও রাজনৈতিকভাবে বিতারিত না করলে জেলায় আওয়ামী লীগের রাজনীতি থাকবে না।
অভিযোগ রয়েছে, এমপি রানা ও তার অপর তিন ভাই টাঙ্গাইল জেলাজুড়ে গড়ে তুলেছেন একক আধিপত্য। তাদের এই আধিপত্য থেকে রেহাই পায় না রিকশাওয়ালা, বাসের শ্রমিক, নির্মাণ শ্রমিক, সাধারণ ব্যবসায়ীসহ কেউই। আর এই চার ভাইয়ের বিরুদ্ধে যাবে এমন কোনো ধরনের কথা কারও মুখ ফসকে বের হলেই নেমে আসে তার ওপর নির্যাতনের খড়গ। আর এমপি পরিবারের এসব অপকর্মের কারণে দলের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে। দলীয় নেতাকর্মীদের মাঝে বিরাজ করছে অসন্তোষ। শহরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সর্বত্র সাধারণ মানুষের মুখে এখন একই গুঞ্জন। সাহস করে এসব মানুষ মুখ খুলে কথা না বললেও তারা একে অপরের সঙ্গে ফিসফিস করে এবং আকার-ইঙ্গিতে বিভিন্ন ধরনের কথা বলেন। তবে ভয়ে সরাসরি মুখ খোলেন না কেউই।
এ ব্যাপারে কথা বলতে এমপি রানার সঙ্গে যোগাযোগ করে কথা বলা সম্ভব হয়নি। জেলা আওয়ামী লীগের নেতা ফারুক আহমেদের খুনে তিনিসহ তার চার ভাইয়ের জড়িত থাকার ব্যাপারে আদালতে মোহাম্মদ আলী ও আনিসুল ইসলাম রাজা নামে দুজন জবানবন্দি দেয়ার পর থেকে তাকে প্রকাশ্যে কমই পাওয়া যায়। তাই তার দুটি মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে বন্ধ পাওয়া যায়। তবে জমিজমা দখলের ব্যাপারে জানতে তার অনুজ টাঙ্গাইল পৌরসভার মেয়র ও টাঙ্গাইল শহর শাখার সাধারণ সম্পাদক সহিদুর রহমান খান মুক্তি বলেন, আমি সাড়ে ৩ বছর মেয়র হয়েছি। এ সময়ের আগে-পরে আমরা কোনো জমি দখল করেছি- এটা কেউ প্রমাণ করতে পারলে মেয়রের দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করব।
No comments