হেমন্তের নিমন্ত্রণ by সুহৃদ আকবর
ষড়ঋতুর দেশ বাংলাদেশ। ঋতুবৈচিত্র্যের
পালাবদলে এদেশে প্রতি দু’মাস পরপর ঋতু বদল হয়। আর এ ঋতুর পালাবদলে শরতের
পরে নবান্নের উৎসব নিয়ে আসে হেমন্ত। হেমন্তের বাতাসে হলুদ ধানের শীষ দোল
খায়। তা দেখে আমাদের মন দুলে ওঠে। দখিনা বাতাসে পাকা ধানের সুবাস এসে নাকে
লাগে। পাকা ধানের ম-ম গন্ধে ব্যাকুল হয় মন। আকুল হয়ে ওঠে প্রাণ। এমন সময়
দিগন্ত বিস্তৃত মাঠের পর মাঠ পেরিয়ে দূরে বহু দূরে চলে যেতে ইচ্ছে করে। ধান
ক্ষেতে ঝাঁকে ঝাঁকে বাবুই পাখি আসে। কিচিরমিচির গানে মুখর করে তোলে ধান
ক্ষেতের আঙিনা। তখন আমাদেরও পাখি হয়ে যেতে মন চায়। হেমন্তের সকালে নরম রোদে
চিকচিক করে হলুদ ধানের শীষ।
দলে দলে কৃষেকেরা পাকা ধান কাটে আর মনের আনন্দে গান গায়। গায়েঁর ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা বাঁশের ঝুড়ি হাতে ঝরা ধান সংগ্রহ করে। মাটির গর্তে ইঁদুরের লুকিয়ে রাখা ধান বের করে আনতে ভয় পায় না দস্যু ছেলেরা। সে ধান বিক্রি করে ছেলেরা চিঁড়ার মোয়া খায় আর শখের খেলনা কেনে তারা। মেয়েরা ফেরিওয়ালার কাছ থেকে কেনে আয়না, চুলের ফিতা-খোঁপার ফুল আর লিপস্টিক । রাস্তাঘাট খড়ের আস্তরণে ঢেকে যায়। উঠোনের কোণে ধানের আঁটি জমা করে কৃষকেরা। সে ধানের আঁটিকে ছোট ছোট টিলার মতো দেখায়। শুরু হয় ধান মাড়াই আর ধান ভানার কাজ। বেশির ভাগ সময় বাড়ির বউ-ঝিরা ধান সংগ্রহ করে। এ সময় গাঁয়ের প্রতিটি বাড়িতে তৈরি হয় বাহারি পিঠা। নবান্নের আমেজে পুরো গ্রাম হয় মাতোয়ারা। ধান কাটা জমিতে কেউ মটর কেউ বা সরিষার বীজ বপন করে। কিছুদিন পর মটরগাছ বড় হয় আর সরিষা ফুলে ফুলে ছেয়ে যায় পুরো মাঠ। হলুদ সরিষাক্ষেতের আল দিয়ে কিশোর-কিশোরীরা ছুটে বেড়ায়। মেয়েরা চুলের খোঁপায় সরিষা ফুল পরে। এই হলো হেমন্তের চিরচেনা বাংলার রূপ। হেমন্তের রূপ মাধুর্য আমদের আমোদিত করে।
No comments