সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য by ড. একেএম শাহনাওয়াজ
পঁয়তাল্লিশ
প্রাচীন বাংলায় তিন ধরনের লিপি বা লেখমালা পাওয়া গেছে। যেমন তাম্র শাসন, মূর্তিলিপি ও শিলালিপি। তবে পাঁচ শতকের আগের কোনো লিপি পাওয়া যায়নি। অর্থাৎ মৌর্য শাসন যুগের দু’-একটি উদাহরণ বাদ দিলে গুপ্ত শাসনামল থেকে এ দেশে সুনির্দিষ্ট রাজনৈতিক ইতিহাসের শুরু। পরে পাল রাজাদের ৪০০ বছরের শাসন এনে দেয় জনজীবনে স্থিতিশীলতা। এই সময়কালে বাংলার রাজারা বিভিন্ন সময়ে তাদের বিভিন্ন আদেশ-নির্দেশ জারি করতেন, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে জমি দান করতে রাজাজ্ঞা তামার পাতে লিখে প্রচার করতেন। ফলে এসব তাম্রশাসন অধ্যয়ন করে সমকালের রাজ্য শাসন পদ্ধতি ও জনজীবনের সঙ্গে রাজাদের সম্পর্ক আঁচ করা সহজ। ধর্মবাণী প্রচার, বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণের সময় শিলালিপি খোদাই করা হতো। এসব লিপি উত্তরকালে ইতিহাসের সাক্ষী হিসেবে উপস্থিত হয়েছে। প্রাচীন বাংলায় মুদ্রার ব্যবহার ছিল খুবই সীমিত। এ পর্বে বিনিময়ের প্রধান মাধ্যম ছিল কড়ি। যৎসামান্য যে মুদ্রা পাওয়া গেছে তার ভেতর খোদিত সংকেত, লিপি, চিত্র থেকে সমকালীন ধর্ম ও সংস্কৃতিবোধের কিছু ধারণা পাওয়া যায়।
প্রাপ্ত তথ্য থেকে জানা যায়, প্রাচীন বাংলায় মানুষের নগর ও গ্রামীণ উভয় জীবনেরই অভিজ্ঞতা ছিল। তাতে মনে হয় গ্রামীণ জীবনে বাঙালি ছিল কোমল ও কলুষমুক্ত। অন্যদিকে নগরজীবন ছিল শঠতা ও নৈতিক স্খলনে পরিপূর্ণ। ভাত-মাছ বরাবরই বাঙালির প্রধান খাদ্য ছিল। ভাতের সঙ্গে শাক ও বিভিন্ন সবজি নিুবিত্ত বাঙালির প্রতিদিনের খাবার ছিল। প্রাচীন সূত্রে ডালের উল্লেখ না থাকায় ধারণা করা হয়, মধ্যযুগের আগে বাংলায় তেমনভাবে ডালের প্রচলন হয়নি। তবে বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতা, বিশেষ করে বিয়ে অনুষ্ঠানে খাদ্যের বিভিন্ন আয়োজন হতো। বর্ণনা মতে, এসব অনুষ্ঠানে কলাপাতায় ঘি-সহযোগে গরম ভাত দেয়া হতো। সেই সঙ্গে দেয়া হতো মাছের ঝোল। ধনী গৃহস্থের বাড়িতে বিয়ের আয়োজন হলে সেখানে খাদ্য তালিকায় নানা ধরনের পদ যুক্ত হতো। সেখানে থাকত হরিণ, ছাগল ও পাখির মাংসের তরকারি, পরিবেশন করা হতো হরেক রকম মাছ, দই, পিঠা ইত্যাদি। ভোজের শেষে পান পরিবেশনের রীতি তখনও ছিল। প্রাচীন বাংলার মানুষ পানীয় হিসেবে ডাব, আখের রস, দুধ ইত্যাদি পান করত। মদ্যপানের কথাও বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়।
প্রাচীন বাংলায় নানা রকম আনন্দ উৎসব ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজনের কথা অনেক সূত্রেই বর্ণনা করা হয়েছে। প্রাচীন সাহিত্য ও লিপিমালায় বাঙালিদের মধ্যে নাচ-গান ও বাদ্য-বাজনার প্রচলনের উল্লেখ পাওয়া যায়। পাহাড়পুর ও ময়নামতিতে পাওয়া পোড়ামাটির ফলকে নৃত্যরত নারী-পুরুষের মূর্তি দেখা গেছে। এসব ফলকচিত্র থেকে নানা ধরনের বাদ্যযন্ত্রের পরিচয় পাওয়া যায়। বাংলায় পাওয়া ধাতব ও পাথুরে মূর্তিতেও নৃত্যভঙ্গিমা লক্ষ করা গেছে। শুধু নৃত্য নয়, প্রাচীনকালে নৃত্যগীত সহযোগে এক ধরনের নাট্যাভিনয় প্রচলিত ছিল বলেও জানা যায়। সাধারণত বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানে এবং কখনও কখনও সামাজিক অনুষ্ঠানে নৃত্যগীত ও অভিনয়ের আয়োজন করা হতো। প্রাচীন বাংলায় রাজরাজড়াদের বিনোদনের একটি উল্লেখযোগ্য বিষয় ছিল শিকার যাত্রা, সে যুগে যা মৃগয়া নামে পরিচিত ছিল। তাছাড়া ব্যাধ, শবর, পুলিন্দ ইত্যাদি নিুশ্রেণীর মানুষের জীবিকাই ছিল পশু ও পাখি শিকার।
সামাজিক আমোদ-প্রমোদ হিসেবে আরও কিছু বিষয়ের প্রমাণ মেলে পোড়ামাটির ফলকচিত্রে। এগুলো মধ্যে মল্লযুদ্ধ, কুস্তিলড়া ইত্যাদির কথা উল্লেখ করা যায়। সাহিত্যে রমণীদের জলক্রীড়া, বাগান করা প্রভৃতির কথা বিধৃত ছিল। এ যুগে জনপ্রিয় খেলা হিসেবে পাশার বর্ণনা রয়েছে বিভিন্ন সূত্রে।
প্রাচীন বাংলায় তিন ধরনের লিপি বা লেখমালা পাওয়া গেছে। যেমন তাম্র শাসন, মূর্তিলিপি ও শিলালিপি। তবে পাঁচ শতকের আগের কোনো লিপি পাওয়া যায়নি। অর্থাৎ মৌর্য শাসন যুগের দু’-একটি উদাহরণ বাদ দিলে গুপ্ত শাসনামল থেকে এ দেশে সুনির্দিষ্ট রাজনৈতিক ইতিহাসের শুরু। পরে পাল রাজাদের ৪০০ বছরের শাসন এনে দেয় জনজীবনে স্থিতিশীলতা। এই সময়কালে বাংলার রাজারা বিভিন্ন সময়ে তাদের বিভিন্ন আদেশ-নির্দেশ জারি করতেন, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে জমি দান করতে রাজাজ্ঞা তামার পাতে লিখে প্রচার করতেন। ফলে এসব তাম্রশাসন অধ্যয়ন করে সমকালের রাজ্য শাসন পদ্ধতি ও জনজীবনের সঙ্গে রাজাদের সম্পর্ক আঁচ করা সহজ। ধর্মবাণী প্রচার, বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণের সময় শিলালিপি খোদাই করা হতো। এসব লিপি উত্তরকালে ইতিহাসের সাক্ষী হিসেবে উপস্থিত হয়েছে। প্রাচীন বাংলায় মুদ্রার ব্যবহার ছিল খুবই সীমিত। এ পর্বে বিনিময়ের প্রধান মাধ্যম ছিল কড়ি। যৎসামান্য যে মুদ্রা পাওয়া গেছে তার ভেতর খোদিত সংকেত, লিপি, চিত্র থেকে সমকালীন ধর্ম ও সংস্কৃতিবোধের কিছু ধারণা পাওয়া যায়।
প্রাপ্ত তথ্য থেকে জানা যায়, প্রাচীন বাংলায় মানুষের নগর ও গ্রামীণ উভয় জীবনেরই অভিজ্ঞতা ছিল। তাতে মনে হয় গ্রামীণ জীবনে বাঙালি ছিল কোমল ও কলুষমুক্ত। অন্যদিকে নগরজীবন ছিল শঠতা ও নৈতিক স্খলনে পরিপূর্ণ। ভাত-মাছ বরাবরই বাঙালির প্রধান খাদ্য ছিল। ভাতের সঙ্গে শাক ও বিভিন্ন সবজি নিুবিত্ত বাঙালির প্রতিদিনের খাবার ছিল। প্রাচীন সূত্রে ডালের উল্লেখ না থাকায় ধারণা করা হয়, মধ্যযুগের আগে বাংলায় তেমনভাবে ডালের প্রচলন হয়নি। তবে বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতা, বিশেষ করে বিয়ে অনুষ্ঠানে খাদ্যের বিভিন্ন আয়োজন হতো। বর্ণনা মতে, এসব অনুষ্ঠানে কলাপাতায় ঘি-সহযোগে গরম ভাত দেয়া হতো। সেই সঙ্গে দেয়া হতো মাছের ঝোল। ধনী গৃহস্থের বাড়িতে বিয়ের আয়োজন হলে সেখানে খাদ্য তালিকায় নানা ধরনের পদ যুক্ত হতো। সেখানে থাকত হরিণ, ছাগল ও পাখির মাংসের তরকারি, পরিবেশন করা হতো হরেক রকম মাছ, দই, পিঠা ইত্যাদি। ভোজের শেষে পান পরিবেশনের রীতি তখনও ছিল। প্রাচীন বাংলার মানুষ পানীয় হিসেবে ডাব, আখের রস, দুধ ইত্যাদি পান করত। মদ্যপানের কথাও বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়।
প্রাচীন বাংলায় নানা রকম আনন্দ উৎসব ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজনের কথা অনেক সূত্রেই বর্ণনা করা হয়েছে। প্রাচীন সাহিত্য ও লিপিমালায় বাঙালিদের মধ্যে নাচ-গান ও বাদ্য-বাজনার প্রচলনের উল্লেখ পাওয়া যায়। পাহাড়পুর ও ময়নামতিতে পাওয়া পোড়ামাটির ফলকে নৃত্যরত নারী-পুরুষের মূর্তি দেখা গেছে। এসব ফলকচিত্র থেকে নানা ধরনের বাদ্যযন্ত্রের পরিচয় পাওয়া যায়। বাংলায় পাওয়া ধাতব ও পাথুরে মূর্তিতেও নৃত্যভঙ্গিমা লক্ষ করা গেছে। শুধু নৃত্য নয়, প্রাচীনকালে নৃত্যগীত সহযোগে এক ধরনের নাট্যাভিনয় প্রচলিত ছিল বলেও জানা যায়। সাধারণত বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানে এবং কখনও কখনও সামাজিক অনুষ্ঠানে নৃত্যগীত ও অভিনয়ের আয়োজন করা হতো। প্রাচীন বাংলায় রাজরাজড়াদের বিনোদনের একটি উল্লেখযোগ্য বিষয় ছিল শিকার যাত্রা, সে যুগে যা মৃগয়া নামে পরিচিত ছিল। তাছাড়া ব্যাধ, শবর, পুলিন্দ ইত্যাদি নিুশ্রেণীর মানুষের জীবিকাই ছিল পশু ও পাখি শিকার।
সামাজিক আমোদ-প্রমোদ হিসেবে আরও কিছু বিষয়ের প্রমাণ মেলে পোড়ামাটির ফলকচিত্রে। এগুলো মধ্যে মল্লযুদ্ধ, কুস্তিলড়া ইত্যাদির কথা উল্লেখ করা যায়। সাহিত্যে রমণীদের জলক্রীড়া, বাগান করা প্রভৃতির কথা বিধৃত ছিল। এ যুগে জনপ্রিয় খেলা হিসেবে পাশার বর্ণনা রয়েছে বিভিন্ন সূত্রে।
No comments