সু চির প্রেসিডেন্ট হওয়ার পথে বাধা দূর হচ্ছে?
মিয়ানমারের পার্লামেন্ট সংবিধানে কিছু গুরুত্বপূর্ণ সংশোধনী আনার কথা বিবেচনা করতে যাচ্ছে। দেশের প্রভাবশালী সেনাবাহিনীর কর্তৃত্ব সীমিত করার পাশাপাশি এর মাধ্যমে গণতন্ত্রকামী নেত্রী অং সান সু চির প্রেসিডেন্ট হওয়ার পথে বাধা দূর হতে পারে। গতকাল শুক্রবার অনুষ্ঠিত নজীরবিহীন এক শীর্ষ বৈঠকে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়েছে। খবর এএফপির। মিয়ানমারে আগামী বছর অনুষ্ঠেয় নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজধানী নেপিডোতে প্রেসিডেন্ট থেইন সেইনের ডাকে শীর্ষ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। প্রেসিডেন্টের সঙ্গে এই বৈঠকে বিরোধীদলীয় নেত্রী সু চি, নির্বাচন কমিশনের প্রধান ছাড়াও শীর্ষস্থানীয় সেনা কর্মকর্তারা যোগ দেন। থেইন সেইন ও সু চি একসঙ্গে হেঁটে বৈঠকস্থলে যান। এর আগের দিন সব দলকে সঙ্গে নিয়ে আগামী নির্বাচন করার জন্য মিয়ানমারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। দুই ঘণ্টার বেশি সময় ধরে চলা বৈঠক শেষে প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র ই তুত সাংবাদিকদের বলেন, আইন অনুযায়ী সংবিধান সংশোধন করার ইস্যুতে তাঁরা পার্লামেন্টে আলোচনা করতে সম্মত হয়েছেন। সংবিধানের কোন কোন ধারা নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে, সে বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলেননি প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র ই তুত।
সংবিধানের একটি ধারা পরিবর্তনের ওপর জোর দিয়ে আসছে সু চির দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি)। এ ধারা অনুযায়ী সংবিধান সংশোধন করতে হলে সেনাবাহিনীর অনুমোদন প্রয়োজন। এনএলডির প্রত্যাশা, এটি সংশোধন করা গেলে অন্য কিছু ধারা পরিবর্তন করারও পথ খুলবে। এর মধ্যে রয়েছে পার্লামেন্টে সেনাদের জন্য সংরক্ষিত আসন এবং প্রেসিডেন্ট হওয়ার ক্ষেত্রে সু চির জন্য প্রতিবন্ধকতা-সংক্রান্ত। সংবিধানে ২০০৮ সালে সংযোজিত একটি অনুচ্ছেদের আওতায় বিরোধীদলীয় নেত্রী সু চি প্রেসিডেন্ট হওয়ার ক্ষেত্রে অযোগ্য। ওই অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তির স্বামী, স্ত্রী কিংবা সন্তানেরা ভিন দেশের নাগরিক হলে তিনি মিয়ানমারের প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচন করতে পারবেন না। শান্তিতে নোবেলজয়ী সু চির প্রয়াত স্বামী মাইকেল অ্যারিস ছিলেন একজন শ্বেতাঙ্গ ব্রিটিশ। তাঁর দুই সন্তানও ব্রিটিশ নাগরিক। সু চিকে প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচনের সুযোগ দিতে হলে পার্লামেন্টের তিন-চতুর্থাংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতায় সংবিধান সংশোধন করতে হবে।
মোট সদস্যের এক-চতুর্থাংশ অনির্বাচিত সেনাসদস্য বলে সংবিধান সংশোধনীর জন্য তাঁদের সমর্থন অপরিহার্য। সু চি সংবিধানে পরিবর্তন আনতে আগে থেকেই চেষ্টা চালাচ্ছেন। গত কয়েক দশক ধরে চলা সামরিক শাসনের ছায়া থেকে সম্প্রতি বেরিয়ে আসার চেষ্টা শুরু করেছে মিয়ানমার সরকারও। এ অবস্থায় আগামী নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ হলে তাতে সু চির নেতৃত্বাধীন বিরোধী দল এনএলডি জয়ী হবে বলে ব্যাপকভাবে মনে করা হচ্ছে। এ নির্বাচনকে দেখা হচ্ছে থেইন সেইন সরকারের নেওয়া গণতান্ত্রিক সংস্কার কর্মসূচির এক গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা হিসেবেও। বৃহস্পতিবার হোয়াইট হাউস জানায়, আগামী নির্বাচন নিয়ে থেইন সেইন ও সু চি দুজনের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন বারাক ওবামা। দুই সপ্তাহ পর আঞ্চলিক এক সম্মেলনে অংশ নিতে এ অঞ্চলে এলে মিয়ানমার সফর করবেন তিনি।
No comments